ছ্যাকা

ছ্যাকা
-মেয়েটা সুন্দরী না?? বাবার কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-কিহ? বাবা রাগী রাগী চোখ করে বললো,
-আমার দিকে তাকাস কেন ছাগল?
তোর পিছনে তাকা..আমি এইবার নিজেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে নিলাম। হ্যা,অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে সামনেই দাড়িয়ে আছে৷ হাতে একটা নীল রঙের ফাইল। বাম পাশের চেয়ারে একজন বৃদ্ধা মহিলা বসে আছে। বাবার চোখের সমস্যার কারণে আমি আর বাবা ডাক্তারের কাছে এসেছি। বাম চোখে জ্বালাপোড়া করে। এরই মাঝে বাবা একটি মেয়েকে দেখতে পেয়ে আমাকে দেখানোর চেস্টা করে যে মেয়েটা সুন্দরী কি না আমিও বিনা বাক্যব্যায়ে বলে দেই,
-মাশাল্লাহ…অনেক সুন্দরী..
মেয়েটাও হয়ত পাশের বৃদ্ধা মহিলার কোন সমস্যার জন্য এখানে এসেছে। মেয়েটার পরনে নীল রঙের বোরকা এবং তার সাথে ম্যাচিং হিজাব। মুখটা খোলা এবং ঠোটের নিচে ছোট্ট একটা তিল আছে। তিলটা এমনভাবে ফুটে উঠেছে যে আমার চোখ ঝলসে যাচ্ছিলো। আমি আড়চোখে বাবার দিকে তাকালাম। বাবাও তার অদুর ভবিষ্যতের ছেলের বউয়ের দিকে হয়ত তাকিয়ে আছে। ধুরু এসব কি চিন্তা করতেছি?? হয়ত মেয়েটা বিবাহিত। তার শ্বাশুড়িকে নিয়ে এসেছে?? হতে পারে,আবার নাও হতে পারে৷ কি করবো বুঝে উঠতে না পেরে ভ্যাবলার মতো মেয়েটার ঠোঁটের নিচের তিলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ করেই মেয়েটার পাশে যে মহিলাটা বসে আছে,সে আমার দিকে তাকালো। তারপর তার চোখ চলে গেলো বাবার দিকে। মুহুর্তেই তার চোখমুখে আনন্দের এক ঝিলিক দেখতে পেলাম।
-আরে…মাহমুদ না?? বলতে বলতে মহিলাটা চেয়ার থেকে এদিকে এগিয়ে এলো। সাথে মেয়েটাও এলো।
বাবাও এতক্ষন মহিলাটাকে দেখে নাই। এবারে দেখার সাথে সাথেই তার মুখের হাসিটা প্রায় কান ছুয়ে ফেললো।
-আরে লতিফা ফুফু…তুমি এইখানে?? বাবার কথা শুনে বুঝলাম,মহিলাটা আব্বুর কোন এক সম্পর্কের ফুফু হয়। বাবা মাথার পিছনে চুলকে বললো,
-কেমন আছো ফুফু?
-এইতো আছি ভালোই। তোর কি অবস্থা?
-এইতো চলছে। তা এখানে কেন??
-বয়স হয়েছে তো। চোখে আজকাল কম দেখি। তাই নাতনিকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এলাম।
-বাহ ও ফারুক ভাইয়ার মেয়ে বুঝি? কত বড় হয়ে গেছে। নাম কি মা তোমার? মেয়েটা মুচকি হেসে বললো,
-ফাইজা..
-মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর নাম বাবার সাথে বাবার সেই ফুফু আরো টুকটাক কিছু কথা বললো। আমি এদিকে এদিক-ওদিক তাকানোর বাহানায় বারবার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছি। এরই মধ্যে ডাক্তারের সিরিয়াল চলে আসলো। বাবাকে দেখিয়ে বাকি কাজ সেরে চেম্বার থেকে বের হলাম। আমি কিছু না বলে মাটির দিকে তাকিয়ে আছি। বাবা বলে চলেছে,
-মেয়েটা অনেক সুন্দরী। তাই না? আমি মাথা আরো নিচু করে লজ্জায় লাল হয়ে বললাম,
-হুম্ম…অনেক সুন্দরী। বাবা গলায় একটু জোর দিয়ে বললো,
-চিন্তা করতেছি,মেয়েটাকে ঘরের বউ করে আনবো আমার মনে তখন ১০০০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সাথে সাথে লাড্ডু উড়তেছে। তারাতাড়ি করে বললাম,
-সত্যি বলছো বাবা?
-হুম্ম। মেয়েটাকে আমার ছেলের বউ হিসেবে অনেক মানাবে। আমি লজ্জায় আইসক্রিমের মতো গলে যেতে লাগলাম।
-বাবা…তোমাকে কি বলে যে…
-হুম্ম…তিসানও অনেক খুশী হবে। লোকজন বলবে,তিসান একজন দারুণ বউ পেয়েছে… আমার আত্মা ধ্বক করে উঠলো।
-মানেহ???
-তিসানের জন্য তো অনেক দিন ধরেই মেয়ে খুজছিলাম অবশেষে পেলাম। এখন তো তুই ও ভাবির হাতের রান্না খেতে পারবি বাবার কথা শুনে আমার কানের চারপাশে ধুম তানা নানা নানা মিউজিক বাজতে থাকলো। মেয়েটাকে দেখার পর ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার একজন বড় ভাই ও আছে। রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে পরলাম। দাড়িয়ে পরা দেখে বাবা বললো,
-কিরে? দাড়িয়ে পরলি যে?
-তুমি হাটতে থাকো,আমি আসছি… বাবা আগেআগে হাটতে লাগলো। আমিও পিছে পিছে বাপ্পারাজের মতো সেন্টি খেয়ে গান ধরলাম,
-প্রেমের সমাধি গড়ে,মনের শিকল ছিড়ে পাখি যায়,উড়ে যায়।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত