পুরুষের পুরস্কার

পুরুষের পুরস্কার
অনেক দিন তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয় না, তা প্রায় মাস খানেক হবে। স্বামী আমান বিছানায় ছটফট করে কিন্তু স্ত্রী নাদিয়ার কোন সারা পাওয়া যায় না। আগে অনেকটা জোর করেই নিজের অধিকার আদায় করতো আমান, কিন্তু এখন আর করে না। কেন যেন নিজেকে ধর্ষক ধর্ষক মনে হয়। ভালোবাসা হীন শরীর যেন সেক্স টয়ের মতো । সবকিছু পাওয়া হয় তবুও যেন কিছুই পাওয়া হয় না। এ নিয়ে অনেক ঝগড়া হয়েছে তাদের মাঝে কিন্তু সমাধান কিছুই হয়নি, কারণ ডাক্তার যে জায়গায় বলেছে তার স্ত্রীর কোন যৌন সমস্যা নেই সমস্তটাই মানসিক সমস্যা সেখানে আমানের কি করার থাকতে পারে ।
আমানের সাথে নাদিয়ার বিয়ে হয়েছে প্রায় ছয় মাস কিন্তু আমানের প্রতি নাদিয়ার ভালোবাসা তৈরি হয়নি কিন্তু আমানকে না ভালোবাসার কোন কারণ নেই। সে দেখতে সুন্দর, ভালো চাকরিও করে তবুও কেন যেন নাদিয়া আমান কে এড়িয়ে চলে। আমান নাদিয়ার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখেছে, বিয়ের আগে কারো সাথেই তার সম্পর্ক ছিল না, উল্টো ছেলেদেরকে নাকি নাদিয়া প্রচণ্ড ভাবে এড়িয়ে চলতো । আমান একটা হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে সুন্দরী ললনাদের আনাগোনা । আজ কেন যেন প্রচণ্ড ভাবে ইচ্ছে করছে নিজের কামুকতাকে টাকার বিনিময়ে নষ্ট শরীরে বিলিয়ে দিয়ে আসতে। কারণ বিয়ের আগে শরীরটাকে সংযত রাখতে পারলেও বিয়ের পর এটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তখন শরীর,শরীরকে চায় বাঁধাহীন রেলগাড়ির মতো অথচ আজ একমাস শরীরহীন আমান। হোটেলের প্রবেশ পথেই একটা হোঁচোট খেয়েছে আমান। হোঁচোট খেয়ে দাঁড়াতেই তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে রোগা মতো একটা লোক যে কিনা বাঁশের কঞ্চি থেকেও সরু।
– কী ভাই সাহেব মাল লাগবোনি? ভালো ভালো মাল আছে হোটেলের চার তলায়। একেবারে কচি মাল, এখনো ইউজ হয় নাই তয় রেট একটু বেশি, খাইয়া মজা পাইবেন ।
আমান লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে, কি অবলিলায় বিশ্রী ভাষায় কথা গুলো বলে যাচ্ছে লোকটি, মুখে এতটুকু আটকাচ্ছে না লোকটার কথা জন্য কিংবা হোঁচোট খাওয়ার জন্য’ই হোক, কেন যেন এখন আর ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে না। কামুকতা হঠাৎ করেই ফুটে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেছে আমানের।
– কী ভাই উপরে যাইবেন না?
– না ভাই উপরে যাব না, এমনি দেখতেছিলাম
– উপরে যাইবেন না তাইলে এইখানে ভেবলাকান্তের মতো দাড়ায় রইছেন কেন,
যান এখান থেকা।
লোকটার ধমক খেয়ে সেখান থেকে সরে পরেছে আমান কিন্তু বাসায় আশার পর মনের ইচ্ছেটা আবারো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো মোচর দিয়ে উঠছে। নিয়ম মাফিক খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পরেছে আমান এবং নাদিয়া কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই আবার সেই নিশুত কালো অন্ধকার একটি ঘর, শব্দহীন দুটি প্রাণ তবে একটি মনে জেগে উঠেছে কামনা, এবং কাছে পাওয়ার আকুতি।
– প্লিজ গায়ে হাত দিবেন না, ভালো লাগেনা আমার।
– কিন্তু আমার যে একটা শারীরিক চাহিদা আছে, সেটা কী তুমি বুঝ ?
– আমার বুঝার, না বুঝার কিছু আসে যায় না, আমি এইসব কে ঘৃণা করি।
– তবে বিয়ে করেছিলে কেন ?
– আমি আমার নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেনি, বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি মাত্র।
-কে তোমাকে বাধ্য করেছে?
– আমার বাবা
– তোমার বাবা!
– হ্যাঁ আমার বাবা। সে খুবই অসুস্থ ছিল আর যখন দেখলো আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়া স্বত্ত্বেও বিয়েতে রাজি হচ্ছি না তখন তিনি একেবারে ভেঙে পড়লেন। বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন কেন আমি বিয়ে করতে চাইনা? কেন আমার বিয়েতে এতো অনীহা? কিন্তু আমি তাকে কোন উত্তর দিতে পারিনি তবে তার মৃত্যুর আগে তাকে বাধ্য হয়ে কথা দিতে হয়েছিল, আমি বিয়ে করব এবং করেছিও
– কিন্তু তুমি তো বিয়ের ধর্মটাকেই অবজ্ঞা করে যাচ্চ দিন দিন ।
– আমার কিছু করার নেই, আমি যে পুরুষ জাতিটাকে ঘৃণা করি
– কিন্তু কেন নাদিয়া, কেন?
– সে কথা আমি আমার বাবাকেও বলতে পারিনি আপনাকেও পারবো না।
– কেন বলতে পারবেনা?
– সে কথা কাউকে বলা যায়না, কাউকে না, কাউকে না
কথাটা বলেই ফুপিয়ে ফুুপিয়ে কাঁদছে নাদিয়া, সে কান্নায় কি ছিল আমান জানেনা শুধু এতটুকু জানে অবশ্যই কোন বড় কারণ লুকিয়ে আছে তার মনসপটে যেটা সে কাউকে বলতে চায়না বা বলতে পারেনা । আমানের মনে খুব মায়া হয় আলতো করে ছুঁয়ে দেয় নাদিয়াকে
– দেখ নাদিয়া, তুমি আমাকে ভালোবাস বা নাই বাস তবুও আমি তোমার স্বামী তবুও আমি তোমার আপনজন। পবিত্র কালামে আবদ্ধ হয়েছি এক সাথে একটা জীবন পার করবো বলে এখন যদি তোমার দুঃখ গুলো আমার সাথে শেয়ার না কর তবে আমি তোমার দুঃখ গুলো কিভাবে লাঘোব করব বা কিভাবে আমরা সুখী হবো বলো? নাদিয়ার কাছ থেকে কোন প্রতি উত্তর আসে না, আসে শুধু কান্নার করুণ শব্দ। প্লিজ নাদিয়া চুপ করে থেকো না, বলো। তোমার জীবনে যাই ঘটে থাকুক না কেন আমাকে বল, আমি সেটার সমাধান দিতে না পারবো না হয়তো কিন্তু তোমাকে সামান্য সান্ত্বনা তো দিতে পারবো।
– না আমি বলতে পারবো না, কিছুতেই না। শেষে আমাকেই আপনি ঘৃণা করা শুরু করবেন, তখন এই শরীরটাকে আর কাছে পেতে ইচ্ছে হবে না আপনার।
– আমি জানিনা তোমার অতীতে কি এমন ঘটেছে যার জন্য পুরো পুরুষ জাতির প্রতি তোমার ঘৃণা জন্মে গেছে তবে এতটুকু আমি বলতে পারি তোমার জীবনে যাই ঘটে থাকুক না কেন তোমার প্রতি আমি বিমুখ হবো না, এই আমি তোমার গা ছুঁয়ে কথা দিলাম।
এবার নাদিয়া হয়তো কিছুটা নরম হয়ে এসেছে, এবং বলতে শুরু করে তার ফেলে আসা জীবনের কলঙ্কিত অধ্যায়,,,
আমি তখন সবেমাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ি, বয়ঃসন্ধিকাল, তখনও ছেলেমানুষি পনা গা থেকে ধুয়ে যায়নি। একবার বায়না ধরলাম বড় আপুর সাথে তাদের বাসায় বেড়াতে যাব । তখন দুলাভাই কুমিল্লা শহরে জনতা ব্যাংকে চাকরি করেন, এবং আপু পড়াতেন একটা প্রাইমারী স্কুলে, থাকেন সরকারি কোয়াটারে । বেড়াতে আসার দুইদিন তাদের বাসায় আনন্দেই কাটলো কিন্তু হঠাৎ লক্ষ করলাম দুলাভাই, ছোট গিন্নি গিন্নি বলে আমার সাথে দুষ্টুমি করার চেষ্টা করছেন এবং মাঝে মাঝে গায়ে হাত দিচ্ছেন তখন আমি সেটাকে তেমন গাঁয়ে মাখিনি কিন্তু তৃতীয়দিন লক্ষ করলাম তার চাহনীতে কেমন যেন একটা কামুকতা ভাব, তবে সেটা আমার কাছে মোটেই ভালো ঠেকলো না।
দুলাভাই বাসা থেকে সকাল আটটায় বেরিয়ে যায় আসে বিকাল পাঁচটায় এবং আপুর স্কুলের চাকরি সকাল নয়টা থেকে বারোটা আর ফেরার সময় তাদের ছোট মেয়ে লামিয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসে। এই মাঝের সময়টুকু আমি টিভি দেখে সময় কাটাই। সেদিন হঠাৎ করে দুলাভাই সকাল দশটায় বাসায় এসে হাজির। আমি দুলাভাই কে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার দুলাভাই অসময়ে বাসায় এসে পারলেন যে?সে উত্তর দিল তার নাকি শরীর ব্যাথা করছে তাই এসে পরেছে। দুলা ভাই তার রুমে চলে গেল তখনও আমি টিভি দেখছিলাম হঠাৎ করে দুলাভাই তার রুমে ডাক দিলেন এবং বললেন তার শরীর টিপে দিতে। আমি তো তার কথা শুনে বেকুব হয়ে গেলাম এবং মশকরা করে বললাম, আমি কী আপনার বউ যে শরীর টিপে দিব? সে বললো বউ না, ছোট গিন্নি, এদিকে আস এদিকে । আমি যখন তার কথাকে অগ্রাহ্য করে চলে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করেই তিনি আমার হাত চেপে ধরলেন এবং অনুনয় বিনয় করে বলতে লাগলেন তার শরীর টিপে দেওয়ার জন্য কিন্তু আমি বারবারই অগ্রাহ্য করছিলাম। এক সময় যখন সমস্ত অনুরোধ বিফলে গেল, তখন আমি তার বীভৎস রূপ দেখতে পেলাম। হঠাৎ করে তিনি আমাকে তার বুকের সাথে লেপ্টে নিলেন এবং বলতে লাগলেন তুই আমাকে একটু সুখ দেনা ছোট গিন্নি, অনেক গুলো টাকা দেব তোকে আর কাউকেই কিছু বলবো না।
তার কথা শুনে যে না আমি চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছি আর ওমনি তিনি আমার মুখ চেপে ধরলেন এবং তার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাকে বলৎকার করতে লাগলেন। না আমি সেদিন নিজের সতীত্বকে রক্ষা করতে পারিনি। তার লালসা মেটানোর পর সে আমাকে হুমকি দিলেন, যদি এই ঘটনা আমার আপাকে বলি তবে সে তাকে তালাক দিবে এমনকি খুনও করতে পারে। সেদিন আপার সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য হোক কিংবা ভয়ে কাউকেই কিছু বলতে পারিনি তবে সেদিনই আমি আপার বাসা থেকে চলে আসি। এরপর থেকে আর কখনোই সেই জানোয়ারের মুখোমুখি হইনি। সেই ঘটনার পর থেকে পুরুষ জাতির প্রতি আমার হৃদয় থেকে ভালোবাসা উঠে গেছে, আর এই জন্যই শারীরিক সম্পর্কটেকে আমি প্রচণ্ড ভাবে ঘৃণা করি আর ঘৃণা করি পুরুষের প্রতি বিশ্বাস কে।
আমান খুব মনযোগ নিয়ে নাদিয়ায় হৃদয়বিদায়ক ঘটনা শুনছিল আর মনে মনে ভাবছিল পুরুষ জাতি আসলেই খারাপ এমনকি সেও খারাপ, তাই যদি না হতো তবে সেও নাদিয়ার সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতো না আর পারতো না নিজের কামুকতাকে মেটানোর জন্য স্ত্রীর অগচরে পতিতালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে। তবে তার পরবর্তীতে কি করণীয় সেটা সে মনে মনে এঁকে ফেলেছে কারন কুমিল্লা এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়,,,, হঠাৎ ভুত দেখার মতো আমানকে দেখে চমকে গেছে নাদিয়ার সেই বদমাশ দুলাভাই আনোয়ার । সে চিন্তাও করতে পারেনি ঢাকা থেকে তার সাথে দেখা করার জন্য নাদিয়ার বর এখানে আসতে পারে। সেকি এখানে এসেছে শুধু তার সাথে দেখা করার জন্য না অন্য কোন কারণ আছে!
– কি ব্যাপার আমান, তুমি এখানে হঠাৎ ?
– হ্যাঁ হঠাৎ’ই বলতে পারেন আমার অন্য কোন কাজ নেই এখানে, শুধুমাত্র আপনার সাথে দেখা করার জন্যই ঢাকা থেকে এখানে আসা।
এবার সত্যি সত্যি আনোয়ারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠেছে। মনের ভেতর অনেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। কিবা কারন থাকতে পারে তার সাথে দেখা করার জন্য?
– তো বাড়িতে না গিয়ে অফিসে আসলে কেন ?
– প্রয়োজনটা শুধু আপনার সাথে তাই বাসায় যাইনি, সরাসরি আপনার কাছে চলে এসেছি তবে অফিসেও আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো না, বাইরে কোথাও গিয়ে আলোচনাটা করতে চাই । পাঁচটা বাজতে আর বেশি সময় বাকি নেই, বাইরে কোথাও বসা যাবে মফস্বল শহরে এমন একটা বড় রেস্তোরা ভাবাই যায় না। অভিজাত্য ফুটে আছে হোটেলের চারিপাশে, তবে মানুষের আনাগোনা খুব একটা নেই, কথা বলার জন্য একটা উৎকৃষ্ট একটি স্থান। মুখোমুখি বসে আছে আমান এবং আনোয়ার, কারো মুখেই কোন কথা নাই কিন্তু আনোয়ারের মুখাবয়ে ফুটে উঠেছে অস্থিরতা ভাব।
– কি ব্যাপর কথা বলছ না কেন?
– কথা বলতেই তো এসেছি তবে কথাটা কিভাবে শুরু করব ঠিক বুঝতে পারছি না
– কি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাও তুমি ?
– আচ্ছা পুরুষ মানুষের যৌন চাহিদা আছে ঠিক কিন্তু বউ থাকার পরেও সে যদি কোন নাবালিকা মেয়েকে জোর করে ধর্ষণ করে তবে তার কি শাস্তি হওয়া উচিত ?
– কি শাস্তি হওয়া উ,, চি,, ত,, আমি কি করে ব,,ল,,ব,,?
– কেন জানবেন না। আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ, বাংলাদেশেরের সম্মানিত নাগরিক আপনাকে তো অবশ্যই জানতে হবে
– সবার সবকিছু জা,,ন,,তে হবে এমন কোন ক,,থা আছে নাকি
আনোয়ার তোতলাচ্ছে, মুহূর্তের ভেতর শরীরের লোম কূপ গলে ঘাম ছুটছে তার, কপাল ঘেমে গেছে, ভিজে গেছে শার্টের অধিকাংশ । আমানের চোখে ব্যাপারটি এড়িয়ে গেল না। এমন হওয়াই স্বাভাবিক, ধর্ষক বলে কথা ।
– কি ব্যাপার দুলাভাই এসি রুমে বসেও ঘামছেন কেন ?
– কই নাতো, মনে হয় এসিটা নষ্ট
– এসিটা নষ্ট না, নষ্ট আপনি, নষ্ট আপনার চরিত্র, নষ্ট আপনার ব্যক্তিত্ব বোধ।
– কি বলছ আবোল তাবোল ?
– আমি আবোল তাবোল বকছি না, ঠিকই বকছি। লজ্জা করলো না এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে জোর করে ধর্ষন করতে? লজ্জা করলো না বোনের সমতুল্য মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করে দিতে? শুধু ওর জীবনটাই আপনি নষ্ট করেনি, তার সাথে নষ্ট করেছেন আমার জীবন, নষ্ট করেছেন পুরুষের প্রতি মেয়েটির শ্রদ্ধাবোধ । এখন মেয়েটি পুরুষদের সাংঘাতিক ভাবে ঘৃণা করে, শুধু ঘৃণাই করে না স্বামী নামের মানুষটির কাছে বিয়ের পর সে ইচ্ছে করে কখনোই আসেনি । সুখ কি জিনিস স্বামী বেচারা কখনোই অনুভব করে দেখেনি আজ পর্যন্ত ।
– এইসব কথা আমাকে বলার মানেটা কি ? আমি কার জীবন নষ্ট করেছি? কাকে ধর্ষন করেছি ?
– আমার স্ত্রী নাদিয়ার, আপনার স্ত্রীর ছোট বোনের,,,,
– দেখ, এতক্ষন অনেক উল্টা পাল্টা কথা বলেছে আর যদি আর একটা উল্টা পাল্টা কথা বলেছ তবে তোমার খবর খারাপ করে দেব
– দুলাভাই কুল,,, কুল। এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছু নাই। আমি জানি আপনি স্বীকার করবেন না, স্বীকার করার কথাও না কারণ পাপীরা কখনো পাপ স্বীকার করে না ।
– দেখ সব জিনিসের একটা লিমিট আছে বলে দিলাম ।
– হু লিমিট তো অবশ্যই আছে, পাপেরও আছে । পাপ যখন পাহাড় সমান হয়ে যায় তখন সেটা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, সেটা দুমরে মুচরে নিজের গায়েই ধ্বসে পরে। এখন আপনার গায়ে ধ্বসে পরার সময় হয়েছে। ধ্বংস হওয়ার আগে নিজের পাপ স্বীকার করুন, নাদিয়ার কাছে ক্ষমা চান, আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন ।
– দেখ আমান, তুমি আমার আত্মীয়, নাদিয়ার স্বামী । আমি কোন পাপ করিনি যার জন্য কারো কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।আশা করি এই ধরনের আলাপ নিয়ে আমার কাছে আর কখনো আসবে না । চলি,, বাসায় ফিরতে হবে অনেক কাজ পরে আছে
– শুনুন শুনুন যাওয়ার আগে একটা কথা শুনে যান,,, আপনি যখন আপনার পাপ স্বীকার করলেনই না তখন হয়তো এমন এক দিন আসবে যখন পাপ স্বীকার করার অবকাশ পাবেন না, কারণ পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। আনোয়ার, আমানের কথা শুনে একটা বিকৃত হাসি দিয়েছে, সেই হাসিতে চেহারায় ফুটে উঠেছে তাচ্ছিল্যের ভাব, যেন এইসব পাপ কর্ম তার নিত্য দিনের সঙ্গী।
– আমি কারো কাছে নত স্বীকার করি না আর ক্ষমা ! সেতো আকাশ কুসুম কল্পনা ।যাই ভালো থেকো
আনোয়ার চলে যাচ্ছে, আমান আনোয়ারের চলে যাওয়া পথ পানে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে আমি হয়তো সাক্ষী প্রমাণের অভাবে তোমার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবো না কিন্তু আল্লাহ কাছে সাক্ষী প্রমাণের কোন প্রয়োজন নেই অবশ্যই তিনি সুক্ষ্ম বিচারক, বিচার তোমার একদিন হবেই ।
মাত্র দুই বছর পরের ঘটনা,,, যে মানুষটি বলেছিল আমি কারো কাছে নত স্বীকার করি না, সে মানুষটি আজ নত জানু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাদিয়া নামের মেয়েটির সামনে। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। বারবার করজোড় করে ক্ষমা চাচ্ছে কিন্তু নাদিয়া নির্বিকার নিষ্প্রান, কোন সহানুভূতি তার মাঝে নেই, নেই কোন প্রতি উত্তর, কারণ সবকিছু ক্ষমা করা গেলেও ধর্ষককে কখনোই ক্ষমা করা যায় না, যদিও বা আনোয়ার নামের মানুষটির জীবনে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে সেটা কাটিয়ে উঠা কখনোই সম্ভব নয়। প্রথমত অফিসের নারী কর্মচারীকে যৌন উত্তক্ত করায় তার চাকরি গেছে, দ্বিতীয়ত তার গোপন অঙ্গে পঁচন ধরেছে, পঁচন ধরেছে তার সংসারে। সত্যি আজ সে বিধাতার কাছে তিরষ্কারের নামে পুরষ্কৃত হয়েছে ।
একটি মাত্র মেয়ে, যে কিনা প্রেমিক নামের ধর্ষকের কাছে বারবার ধর্ষিত হয়েছে। শুধু ধর্ষিত হলেই কথা ছিল না, আজ সে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কিন্তু ধর্ষকের কোন দেখা নেই যাকে বাবা পরিচয় দিয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটানো যায়। কারো পাপের শাস্তি হয়তো অন্য কারো উপর বর্তায় না কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা বলে দেয় একজনের শাস্তি তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও অনেক সময় ভোগ করে থাকে। আপনি কাউকে ধর্ষন করবেন আপনার মেয়ে অন্য কারো দ্বারা ধর্ষিত হবে, আপনার স্ত্রী অন্য কারো সাথে পরকিয়া নামের ধর্ষনের স্বীকার হবে,আপনি টের পাবেন, হয়তো পাবেন না, কিন্তু আপনার পাপের শাস্তি আপনাকেই পেতে হবে, হয়তো এই দুনিয়ায় নয়তো ঐ দুনিয়ায় ।
ও আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি নাদিয়া হয়তো তার দুলাভাইকে ক্ষমা করতে পারেনি কিন্তু পুরুষ মানুষের প্রতি তার যে ভয় ছিল, ছিল অনেক খানি ঘৃণা সেটা আস্তে আস্তে দূর হয়ে গেছে আর সেই অসাধ্য সাধন করেছে তার স্বামী আমান । প্রথম প্রথম হয়তো তার অনেক কষ্ট হয়েছে তারপরেও তার অঘাত ভালোবাসা আর সহমর্মিতা নাদিয়ার মানসিক সমস্যা দূর করতে সহায়তা করেছে। এখন নাদিয়ার কোল জুড়ে এক ছেলে সন্তান খেলা করে তবে কেউ জানেনা এই সন্তানটি আবার ধর্ষক হয়ে উঠে কিনা! না, সেই সম্ভাবনা নেই, কারণ ধর্ষকের পরিবার থেকেই ধর্ষক তৈরি হয় ভদ্র পরিবার থেকে ভদ্র সন্তান, আম গাছে কখনো কাঠাল ধরেনা।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত