অবিশ্বাষ ও অশান্তি

অবিশ্বাষ ও অশান্তি

ঈদের দিন রাত্রি স্বামী-স্ত্রীর ঝামেলা….
স্ত্রী – আজ ঈদ আজকেও তোমাকে রিনা র বাড়িতে যেতে হবে??
স্বামী – খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে
– আজকের দিন টা অন্তত ছাড় দাও
– আগামী সোমবার কেসের শেষ শুনানি আছে,আমাকে যেতেই হবে
– আজকে যেয়ো না সোনা, কাল সকালে যাবে
-তা হই না সোনা তাতে দেরী হয়ে যাবে
– না না থাকো না, দেখো মুন্নির শরীর টা খুব খারাপ ( মুন্নি আমার ৫ বছরের মেয়ে)
– এতো জিদ ভালো না দীপা,
– কি আমি জিদ করছি, ??? আর তুমি কি করছো?? সেই তখন থেকে অনুনয় করছি তবুও তোমার মন গলছে না
আমাই তুমি বলতে পারবে আমরা শেষ ছয় মাস স্বামী-স্ত্রী হওয়ার পরেও কেন একই বিছানাই ঘুমাই না, গত ছয় মাসে তুমি একবারো বাজার করেছো, মুন্নিকে একদিনও স্কুলে দিয়ে এসেছো,,আমার সাথে ৫মিনিট বসে কথা বলেছো। কিংবা একসাথে বসে খাবার খেয়েছো???? কেন কেন??? বলতে পারবে আমি একা একটা মেয়ে মানুষ বাড়িতে সারাদিন কি করে এতো কাজ করবো,বা একা থাকবো।।
শুধু টাকা দিলেই পিতার দায়িত্ব পালন করা হইনা….
গত কয়েকমাস ধরে এই কথা রোজ রাতেই শুনছি, তাই মিটিমিটি হাসছি আর কান হাত চেপে বসে আছি
হ্যা দীপা যা বলছে তার এক বর্ণও মিথ্যা নই।। আমি একজন উকিল ( পাবলিক প্রসিকিউটর), একটা কেস নিয়ে শেষ ছয় মাস পরিবারের দিকে নজরই দেওয়া হইনি।যার হয়ে কেস লড়ছি তার নাম রীনা…. বিখ্যাত নারী নির্যাতন কেস। বিখ্যাত বললাম এই কারনে যে, রীনা আসলে এক মন্ত্রীর ছেলের বউ।। মিডিয়া এটাকে বিখ্যাত করে তুলেছে সংগে আমাকেও, অনেক হুমকি আসার পরেও কেস ছাড়িনি।। ছাড়ার প্রশ্নই আসে না, একা একটা মেয়ে যদি লড়ে যেতে পারে কেসটা আমি ছেলে হয়ে রাজনিতী বিদ দের ভয়ে কেস ছাড়বো কেন! এর আগেও আমি এমন অনেক কেস লড়েছি এবং জিতেওছি।।
এইসবই ভাবছিলাম আর তখনই দীপার একটা কথা কানে আসলো
-রীনা র সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক…. আমি জানতে চাই, যে রাত বিরেতে কথা নাই বার্তা নাই তার ফ্ল্যাটে কিসের জন্য যাও…. আমাকে আজ বলতেই হবে তোমাকে
– এইসব কি উলটা পালটা বলছো
– আমি উলটা পালটা বলছি না???( চিৎকার করে)
-আস্তে কথা বলো, লোকে শুনতে পাবে
– লোকে শুনুক তোমার চরিত্রের কথা,
– দীপা বেশি বাড়া বাড়ি হয়ে যাচ্ছে বলছি কিন্তু, তুমি তোমার সীমা লংঘন করছো,ভেবো না চুপ করে বসে আছি মানে আমি কিছু করবো না
– আমি তোমাকে তখন থেকে এতো কথা বলছি আর তুমি কানে আঙ্গুল দিয়ে হাসছো আর আমাকে বলছো বাড়াবাড়ি করছো, কি করবে আমাকে??? মারবে নাও মারো দেখি তোমার কত সাহস???
– বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে বলছি তা না হলে সত্যি সত্যি আমি হাত তুলতে বাধ্য হবো
– বেরিয়ে যাবো মানে ! এটা আমার বাড়ি, ভুলে গেছো??? বিয়ের সময় দেনমোহোর এর বদলে এই ফ্ল্যাট আমার নামে দিয়েছিলে।। তুমি বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে….
-তার এই কথা শুনে আমি অবাক, এতো টা নিচে সে নামতে পারে,বললাম ঠিক আছে থাকো তুমি তোমার বাড়িতে, এটা বলেই আমি কেসের ফাইল নিয়ে মুন্নিকে কোলে নিতে গেলাম
– খবরদার ওকে হাত লাগাবে না, একজন উকিল হয়েও জানো না ও এখন আমার দায়িত্ব এ থাকবে!!
আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে সোজা গ্রামের বাড়ি তে মায়ের কাছে। নদীর এপার আর অপার গাড়িতে ১০ মিনিট লাগে গ্রামে আস্তে।। মা আমাকে দেখে অবাক
– কি রে বাবু এতো রাতে এখানে??? এই তো ঘন্টা খানেক হলো তোরা গেলি।।
– কিছু না, শরীর টা খারাপ বলে রুমে ঢুকে পড়লাম

এই কইদিন একেবারে ব্যস্ত ছিলাম কিছুই খোজ নেওয়া হইনি, রীনার কেস ও জিতে গেলাম।।
কিন্তু এবার লড়তে হবে নিজের ডাইভোর্স কেস…. এইসব ভাবতেই কেমন যেন লাগলো।
সবাই জেনে গেছে ঝামেলার কথা, মা একবারো আমাকে জিজ্ঞেস করেনি কি হয়েছে, মা এমনই। আমার যখন ১৪ বছর আর ছোটো বোনের ১০ বছর বয়স তখন আব্বু মারা যায়,তবুও মা এক ফোটা জল ফেলে নি। নিজে শিক্ষাকতা শুরু করলেন আমাদের দুইজনকে বড়ো করলেন।। তার পর নিজেরই প্রিয় ছাত্রি এবং আমার বোনের বান্ধবি দীপার সাথে বিয়ে ঠিক করলেন আমার, কিছুই বলিনি কারন আমি জানি আমার মা কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেই না। তিনি অনেক ধৈর্যশীল। আব্বুও উকিল ছিলেন, আব্বুকে পুরোদমে সহযোগীতা করে গেছেন ১৫ বছরের সংসার জীবনে।। কখনো বিরোধিতা করেনি। ভেবে ছিলাম দীপাও এমন হবে। আর হয়েছিলোও তাই কিন্তু জানি না এই ৬ মাসে কি হলো যে সে এমন করলো। শেষপর্যন্ত আমাকে অবিশ্বাস করলো।
কোর্ট এ গিয়ে অবাক ডাইভোর্সের কারন হিসাবে সে তুলে ধরেছে আমার অবৈধ সম্পর্ক। মাথা ঘুরে গেলো।
তাকে বললাম একটু এদিকে সরে আসো কিছু কথা আছে
– যা বলবেন সবার সামনে বলুন মিষ্টার খান। কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম
এবার ধমক দিয়ে বললাম
– কি বললাম শুনতে পাচ্ছো না ! তাতে কাজ হলো
-বলেন
– এইসব কি???
– কিসের কি??
– একটা ঝামেলাতেই ডাইভোর্স
– হ্যা আপনাকে আমি মুক্তি দিতে চাই, রীনা র সাথে আপনি অনেক সুখে থাকবেন
সংগে সংগে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম
– তুমি ভালো করেই জানো রীনা র সাথে আমার কোনো রিলেশন নাই তারপরেও এতোকিছু।। আমাকে না হলে তুমি অপমানিত করলে কিছু বলছি না কিন্তু একটা একটা মেয়ে হয়ে তোমার আর একটা মেয়ের গায়ে কালি লাগাতে এতটুকু বিবেকে লাগলো না, সে আজ ৬ মাস ধরে নিজের সম্মান ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করছে আর তুমি তাকে….. ছিঃ আমি স্বপ্নেও ভাবিনি তুমি এমন করবে।
আর সে দিন কি বলছিলে আমরা শেষ ৬ মাস একসাথে ঘুমাইনি কেন, কারনটা বলে রাখছি শুনে রাখো
তোমার নাকি আলো জ্বললে রাতে ঘুম আসে না কিন্তু আমাকে রাত জেগে কেস স্টাডি করতে হবে তো আমাকে আলাদা রুমে থাকতে হবে না তো কি করতে হবে বলো
আর সেদিন ঈদের কথা বলছিলে তুমি একটা রোজাতেও তুমি ভোর বেলা রান্না করেছো???
প্রত্যেক্টা দিন আমি করেছি আর তুমি মুন্নি কে নিয়ে ঘুমিয়ে ছো, এই কারনে তুমি সকালে মুন্নিকে স্কুলে নিয়ে যেতে আর বাজার করতে কিন্তু আমি দিনের বেলা ঘুমাতাম। আর কিসের জবাব চাই তোমার বলো???
থাপ্পড় খাওয়ার পর থেকেই দীপা চুপ।।
বাসর রাতে তুমি কি বলেছিলে!! তোমার সম্পদের প্রতি কোনো লোভ নাই, কিন্তু তুমি ফ্ল্যাটের মালিকানা দাবী করে বসলে।। আমি একবারও ডাইভোর্স এর কথা ভাবলাম না আর তুমি সেটাই করে বসলে। একটা মেয়ে সবসময় চেষ্টা করে সংসার বাচানোর আর তুমি…. ।। তুমি নারী জাতির কলঙ্ক। ছিঃ
৯৫ %পুরুষ জীবনে একবার হলেও তার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে আমি কোনো দিনও চাইনি সেই ৯৫ % এর মধ্যে পড়তে কিন্তু তুমি আজ বাধ্য করালে।
চলো আমি সাইন করে দিচ্ছি, বলে তার হাত ধরে হিড় হির করে টেনে ঘরের ভীতরে নিয়ে আসলাম সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো দীপার মা আমাকে
– বাবা ও তো ছেলেমানুষ কিন্তু তুমি তো জ্ঞানী
– আন্টি ক্ষমা করে দিয়েন আমাই, এটা বলেই আমি সাইন করে মা কে নিয়ে আর একবার মুন্নি কে চুমু দিয়ে চলে আসলাম। সে তো আমাকে ছাড়তে চাই না তবুও জোর করে চলে আসলাম। আব্বু মারা যাওয়ার দিন আমরা কেও কাঁদিনি কিন্তু আজ আমরা মা ছেলে দুইজনেই কাঁদলাম।।
ক্লান্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না সন্ধ্যে বেলা ঘুম ভাঙছে কেও যেন বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে, হুড়মুড় করে ফিরে দেখি মুন্নি আমার উপর বসে আছে। আমার মামুনি টাকে জড়িয়ে ধরালাম সংগে সংগে আওয়াজ পেলাম পায়ের গোড়াই কে যেন বসে কাঁদছে। আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে দীপা ওটা।
উঠে বসলাম….।। বললাম
– খুসি হওনি??? (ঘ্যাম মেরে)
হু হু করে কাঁদতে লাগলো,আর আমার পা জড়িয়ে ধরলো সাথে মুন্নিও কাঁদতে লাগলো।।
বললাম চূপ করো নাহলে আবার একটা থাপ্পড় মারবো…
মারো আমাকে আমি অনেক ভুল করেছি
চুপ করো বলছি
আমাকে ক্ষমা করে দাও এমন ভুল আর জীবনেও করবো না।
কিসের ভুল??? ভুল তো আমার যে আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি বলে জড়িয়ে ধরলাম আবারো কাঁদতে লাগলো
তুমি চলে আসার পরে আমি আর থাকতে পারিনি সাথে সাথে পেপার ছিড়ে ফেলেছি কাঁদতে কাঁদতে এখানে ছুটে এসেছি, তোমাকে ছাড়া থাকতে হবে ভাবতেই আমার বুক ফেটে যাচ্ছিলো।।
পেপার তো নাহলে ছীড়ে ফেললে কিন্তু আমার প্রতি তো তোমার অবিশ্বাস থেকেই গেলো
না সে তো আমি রাগের মাথাই বলেছি
– আর ফ্ল্যাট?
– ওটা বিক্রী করে দিবো, আজ থেকে এইখানে থাকবো।।
-আমার কথা??
-যা বলবে তাই শুনবো
– পরের বার শেহেরী কে রান্না করবে??
– দুজনেই
– শুধু তুমি করবে, আমি গত ৭ বছর ধরে রান্না করছি
– না আমি পারবো না একা
– তাহলে এই বাড়িতে জাইগা নাই
– মুখ চিমসে গেলো।।
ইয়ার্কিও বোঝেনা মেয়েটা, নাকি আমাকে ইমোশোনাল করার জন্য এমন করছে তাই বা কে জানে
বললাম
– ঠিক আছে আমিও উঠবো সাথে মাও থাকবে এবার একটা…. দাও
– ধুর বলেই উঠে পালিয়ে গেলো
-এখুনি কিন্তু প্রমিস করেছো আমি যা বলবো তাই শুনবো
– এইটা ওর বাইরের জিনিস
– ঠিক আছে আজ রাতে ৬ মাসের পাওনা সুদে আসলে তুলে নিবো।।
– তোমার সাথে এক বিছানাই ঘুমালেই তো
-তাহলে কোথাই শুবে??
-মায়ের কাছে
-মুন্নি থাকবে দাদির কাছে।
– আমি মেঝে তে ঘুমাবো, বলেই হাওয়া
আর কিছু বললাম না রাতে দেখে নিবো কিন্তু একি বউ যে সত্যি সত্যি মায়ের ঘরে ঢুকেছে।। মা কি কাজে বাইরে বেরিয়েছে আর সাথে সাথে ঘরে ঢুকে অকে কোলে তুলে নিয়েছি। এই ছাড়ো… মা দেখে ফেলবে।।
মুখের কথা মুখেই থাকলো মা ঘরে ঢুকে পড়লো, আমি চিরকালই নির্লজ্জ টাইপের ওকে নিয়ে মায়ের ঘর থেকে পালিয়ে আসলাম কিন্তু দীপা লজ্জাই লাল হয়ে গেল। নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম।।
– ছয় মাসের পাওনা!!! বলেই লাফিয়ে পড়লাম
বাকি টা ইতিহাস
কী হলো এখনো শুনতে হবে না কি???
যান যান অন্যের বেড রুম ঢুকতে না ই…..

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত