একটি দুঃখজনক দিন

একটি দুঃখজনক দিন
খুব কাছের এক বান্ধবী ফোন করে বলল..’রুবেল ফ্রি থাকলে চল শপিং করে আসি।’ প্রসুর অভারে মাঝে এমন বড়লোকি কথা শুনে মেজাজ আধা খারাপ হলো৷ বললাম….
-আমরে মফিজ পাইছস? তোর সাথে শপিং করতে কেন যাব?
–আরে রাগিস কেন গাঁধা, আমি নিজে তোকে আজ শপিং করে দিব।
-কসকি দোস্তী?
–সত্যি দোস্ত, একদম খাঁটি কথা৷
বান্ধবীর সরল সোজা কথা শুনে আমার কলিজায় পাম্প হওয়া শুরু করলো৷ মুহূর্তেই নিজের মাঝে একটা বড়লোক বড়লোক ভাব চলে আসলো। ছোট বোনের ব্যাক্তিগত ড্রয়ার থেকে পারফিউম চুরি করে ইচ্ছেমতো মারলাম। ভাগ্যিস ও স্কুলে গেছে নইলে খবর ছিল৷ তবে পারফিউম কোমন জানি বিদঘুটে গন্ধ মনে হচ্ছে। আবার একটু একটু ঘ্রাণও পাচ্ছি। অত খেয়াল করলাম না। আব্বার পকেট তল্লাসি করে মাত্র ১০০ টাকা পেলাম। উপায় না পেয়ে আম্মার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ১ হাজার টাকা মেরে দিলাম। বলাতো যায়না যদি বান্ধবী আবার মার্কেটে মাইনকা চিপায় ফেলে রেখে চলে যায়। চলে গেলাম মার্কেটে। বান্ধবী আমায় দেখে সেই লেবেলের খুশি হলো। বিনিময়ে আমিও আবুল মার্কা হাসি দিলাম। আমাকে বলল….
–এত দেরি করলি কেন? কতক্ষণ যাবত ওয়েট করছিলাম।
-আরে রাস্তায় জ্যাম ছিল তাই।
–আচ্ছা চল তোকে শপিং করিয়ে দেই।
-সত্যি দিবি নাকি ঢপ?
–আচ্ছা ঢপ হলে কি তোকে এখানে আনতাম?
-না বিশ্বাস হয়নারে।
–তাহলে চল হ্রামি….
বলেই বান্ধবী আমায় টানতে টানতে নিয়ে গেলো মার্কেটে। আমি অবাক চোখে এসব দেখছি, কাহিনী কি তালোই? কেমনে কি? গুনে গুনে বান্ধবী আমায় একটা শার্ট, প্যান্ট, একটা পাঞ্জাবি কিনে দিলো৷ আমি আহাম্মক হয়ে এসব দেখলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। যে বান্ধবী আমায় পাচ টাকার ঝালমুড়ি পর্যন্ত খাওয়ায় না সে করালো শপিং। নিজেকে সার্থক বন্ধু মনে হচ্ছে। শপিং শেষে বান্ধবী বলল….
–এখনো অবিশ্বাস হচ্ছে?
-ধুর নারে, তুই সত্যিই অনেক ভালোরে দোস্ত। অনেক ধন্যবাদ।
–আরে এসব বলা লাগবেনা, চল রেস্টুরেন্টে তোকে সারপ্রাইজ দিব। আমিও খুশিতে গুলুমুলু হয়ে গেলাম। বান্ধবী রেস্টুরেন্টে গিয়েই একটা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো৷ সেই টেবিলে চেয়ারে বসা একটা ছেলে, আমার সমানই। বান্ধবী আমাকে দেখা করিয়ে দিয়ে বলল….
–রুবেল সারপ্রাইজ, এটা তোর হবু দুলাভাই। বাবু ওটা তোমার শালা। আমাকে দেখে বান্ধবীর বফ হাত বাড়িয়ে দিলো আমিও হাত মেলালাম। কিন্তু অবাক হলাম তখন যখন বান্ধবী বলল….
-রুবেল শপিং ব্যাগ গুলো দে তোর দুলাভাই কে, এগুলো তার জন্য। এই নাও বাবু এগুলো তোমার জন্য উপহার। তোমার আর রুবেলের হাইট একই তাই তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ওর মাধ্যমে কিনেছি। মুহূর্তেই মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো৷ মুঝে মারো তালোই, মুঝে মারো। মুই এ জীবন নেহি রাহুঙ্গী। এটা কি হলো, ভাবতে পারছিনা। মুহূর্তেই ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। বান্ধবী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল…
–তোকে অনেক কষ্ট দিলাম দোস্ত, যা বাসায় গিয়ে রেস্ট করগে। বলেই বান্ধবী ওর বফকে নিয়ে চলে গেলো। আমি খাম্বার মতন দাঁড়িয়ে রইলাম। তখনই আম্মা ফোন দিলো, রিসিভ করতেই হুংকার দিয়ে বলল….
–হ্রামি তুই আমার টেকা চুরি করছস। তোরে আমি এই শিখিয়েছি?
-সরি আম্মা।
–আজকের পর বাসায় আসবিনা, আসলে বেঁধে পিটাবো৷
বলেই আম্মা ফোন কেঁটে দিলো। আহারে! শালার কুত্তা ভাগ্য। শপিং ও হলোনা, বাসায়ও জায়গা হলোনা। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে ফুটপাত দিয়ে হাটছি, ছোট বোনের কল আসলো।
–ঐ কুত্তা তুই আজকেও আমার পারফিউম নিছস?
-ডিপ্রেশনে আছিরে বনু।
–আচ্ছা শোন, বাসায় আসিসনা মা কুপাবে।
-জীবনডা বেদনারে, কেউ বুঝলনা।
–হরে ভাই তুইও বুঝলিনা, পারফিউমের বদলে মশা মারা স্প্রে মারছিস শরীরে…!
-মানে?
–আমি জানতাম তোর চোখ আমার পারফিউমে পরছে, তাই ওটা সরিয়ে মশা মারা স্প্রে রেখেছি। যাজ্ঞে ভালো থাকিস ভাউয়ু, লাপ্পুউউ সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো। এরজন্যই কি পারফিউমের গন্ধ বিদঘুটে লাগছিলো? খোদাহ! আমার সাথেই কেন এমন হয়? এত ডিপ্রেশন নিয়ে বাচা যায়না। ও নানিহ মুঝে মারো, মুঝে মারো ইয়ার।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত