চাঁপা কষ্ট

চাঁপা কষ্ট
রাজ:-আমি জানি তুমি আমায় এখনো নগন্য মনে করো।
তুমি আমায় এখনো পাগল ভাবো। তুমি মনে করো আমি তোমার জন্য কষ্ট পাই। তুমি ভাবছো তোমায় ছেড়ে আমি অনেক কষ্টে আছি। তুমি কী আমার কথা কখনো শুনেছো?তা হলে শোনো আমি আর তোমার জন্য কষ্ট পাই না। আমার আর তোমার কথা মনে পড়লে চোখে জল আসে না। তোমার মনে পরে তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার কথাগুলো। সেই দিন তো আমি তোমার সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু তুমি এই নগন্য ছেলেটা কে খেয়াল করো নি।
তুমি এই টুকো ভেবে দেখোনি আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসতাম। আরে তোমাকে ভালোবাসতাম বলেই আমি রাতের পর রাত জেগে নিজের বাড়ির কাজ না করে তোমার বাড়ির কাজ করে দিতাম আর স্যারের হাতে মার খেতাম। আর আমি তোমাকে ভালোবাসতাম বলেই আমি আমার পকেট খরচ বাঁচিয়ে তোমার জন্য একটি করে ছোট গিফ্ট কিনে আনতাম। আরে আমি তোমাকে ভালোবাসতাম বলেই তোমাকে যারা বিরক্ত করতো তাদের সাথে ঝগড়া করতাম। তুমি বুঝতে পারতেনা আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসতাম। তোমার মনে পড়ে আমি যে দিন কলেজে সবার সামনে বলেছিলাম আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি তোমায় বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তুমি আমায় উত্তরে কী বলেছিলে সেটা আজও আমার কানে বাজে মায়াবতী। রাজ মায়বতীকে কথাগুলো বললো। মায়াবতী অতীতের কথা ভাবতে লাগলো।
মায়াবতী:-তুমি কী পাগল হয়ে গেছো? তোমার কোনো কাজ নাই, তুমি এই সব কী শুরু করেছো। তুমি কী ভাবছো তুমি আমাকে ভালোবাসার কথা বললেই আমি রাজি হয়ে যাবো। কোথায় তুমি আর কোথায় আমি।তোমার মতো ছেলেকে ভালোবাসা তো দূরের কথা কেও বন্ধুও ভাববে না। এর থেকে তুমি পড়া শুনা করো, আমায় ভালোবাসার কথা বলতে এসেছে হুহ যত্তসব। আরে তোর মতো ছটো লোক কে আমি ভালোবাসবো হাহাহা হাসালে। আর ভালো কথা আমার একটি বয়ফ্রেন্ড আছে। নাম কী জানো রিফাত,ওর বাবা কোটিপতি। আর তোমার তো কিছুই নাই। খেয়ে দেয়ে কাজ নাই আমাকে ভালোবাসার কথা বলতে এসেছে যাও দূর হও। (ভাবলো মায়াবতী কথাগুলো)
রাজ:-আমি তোমার থেকে এই ব্যবহারটি মোটেই আসা করি নি সেদিন। সত্যিই তুমি আমায় ঠিকি বলেছিলে এই পৃথিবিতে আমাদের মতো গরিব দের কোনো মূল্য নেই।মনে পড়ে আমার সেদিনের বলা কথা গুলো। কিন্তু আজ আমি আর ওরকম নেই। তোমার জন্য এখন আমার বুকে একটুও চিনচিনে ব্যাথা হয় না। কারণ আমি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছি। আমি নিজেকে গড়তে শিখেছি। আমি বাঁচতে শিখেছি।
তোমাকে ধন্যবাদ সেই দিনের জন্য, যে দিন তুমি আমায় অবহেলা করেছিলে। তুমি আমায় ঘৃণা করেছিলে। আর তুমি আমার হাত দুইটি ছেড়ে দিয়েছিলে। যার জন্য সে দিন আমি নিজেকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছিলাম এবং আমি এখন নিজেকে নিজের মতো তৈরি করতে শিখেছি। যদি তোমার, আমার প্রতি কোনো রাগ থেকে থাকে তবে আমি দুঃখিতো তোমার যা ইচ্ছে আমায় তুমি তাই করতে পারো।মনে আছে সেদিন বলেছিলাম আমি সব সময় গরিব থাকবো না।এক দিন সময় আমারও আসবে। আমি সেই দিনের অপেক্ষাই থাকবো। আর সময় মানুষকে বদলে দেয়। আজ হয় তো সময় তোমার সাথে, কাল হতে পারে সময় আমার সাথে থাকবে। দেখলে তাই হয়েছে এখন আমার সব আছে। আর তুমি কোটিপতি হতে চেয়েছিলে না হু তাই আমি বলেছিলাম আমি আর তোমার জন্য কষ্ট পাবো না।তুমি তোমার কোটিপতি বিএফকে নিয়ে সুখে থেকো।দেখলে আমি আর কষ্ট পাই না তোমার কথা ভেবে আমি আর আমার চোখের জল নষ্ট করি না। শুধু তোমায় নিয়ে দেখা স্বপ্ন গুলো মনে পড়লে কষ্ট হয় আমার খুব কষ্ট হয়। কারণ আমি তোমাকে এখনও ভালোবাসি মায়াবতী।
মায়াবতী:-তাহলে আমাকে আজ আপন করে নাও।
রাজ:-না দরকার নেই কোনো।মনে আছে আমার সেই কথা অনেক অবহেলা অপমান সহ্য করে আমি শেষমেষ কলেজ পরিবর্তন করেছিলাম। জানেন প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত প্রতিটা মিনিট প্রতিটা সেকেন্ড আমি কান্না করতাম। যখন মনে পরতো আপনার বলা কথাগুলো যে আপনার সাথে আমার যায়না।তখন আমি নিজেকে গড়তে শুরু করলাম।এখন আমার সব আছে।আমার বাবা মা ভাই বোন তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসাতেই আমার বুক ভরে গেছে বাড়তি কারো ভালোবাসা রাখার জায়গা আমার নাই।
আমি একা থাকতে শিখে গেছি।আমার সকল কষ্ট বুকের মাঝে দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে গেছে।চাইনা সেই মোচড়ানো কষ্টগুলো আবার নতুন করে চারাগাছ এর মতো হয়ে আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠুক।আর আপনার কোটিপতি রিফাতকে নিয়ে সুখী হন এই কামনা করি।এখন আমার যেতে হবে।আসলে কলেজটাতে আমার অতীতের কাহিনি গুলো মিশে আছে। আর এই কলেজ থেকে আমি বাস্তব জীবনের শিক্ষা পেয়েছি তাই এসেছিলাম।আর হ্যা এই নিন এই গরিব ফকিন্নি ছেলেটার কার্ড যদি কখনও দরকার মনে হয় তাহলে এই গরিবকে স্মরন কইরেন।ঠিকই সাধ্যের মধ্যে হলে সাহায্য করবো।জানেন তো গরিবেরা আবার সৎ হয় ধনীদের মতো অহংকারী হয়না।ভালো থাকবেন সবসময় এবং সুখী হন।
মায়াবতী:-তোমার মায়াবতীকে আজ এতো কাছে পেয়েও রেখে দিচ্ছো।
রাজ:-আসলে আমার জীবনে যেই মায়াবতী ছিলো সে মারা গেছে ৩ বছর আগেই।এখন আমার জীবনটা অন্যরকম।আমার ভেতরটা ধূসর মরুভূমি।চারিদিকে শুধু বালুচর যার মধ্যে শুধু মরিচীকা দেখা যায় কাছে গেলে নদী নাই তাই পানি পীপাসাতে আমার ভেতরের হৃদয়টা একদম মরে গেছে।ভালোবাসা নামক জিনিসটা গরমে পঁচে গলে শেষ হয়ে গেছে।ভেতরের আমিটা আর কোনো কিনারা খুজে পাইনা যতোদূর চোখ যায় শুধু বালুচর দেখা যায়।
মায়াবতী:-রাজ কি করবো আমি এখন?
রাজ:-কোনো কটিপতির ছেলেকে বিয়ে করে সুখী হন।
ইমন:-রাজ চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। (রাজের বন্ধু ইমন)
রাজ:-হুম চলো।
মায়াবতী:-আবার কবে দেখা হবে?
রাজ:-হয়তো কোনো এক বৃষ্টমুখর দিনে ঠিক যেমন প্রথম দেখা হয়েছিলো বৃষ্টিতে ভিঁজতেছিলো আমার মায়াবতী আর আমি তাকে দেখতে দেখতে নিজেও ভিঁজে গেছিলাম।এরকম একটি দিনে হয়তো আমি আবার আসবো।
দোআ করি খুব ভালো থাকবেন। সুখী হন।সেদিন ও চেয়েছি আজ ও চাইবো ভালো থেকো।আমি দূর থেকেই তোমাকে ভালোবাসবো মায়াবতী।
কথাগুলো বলে রাজ চলে যাচ্ছে।হঠাৎ থেমে চোখ দুটি মুছে আবার হাঁটা ধরলো গাড়ির দিকে।মায়াবতী অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রাজের দিকে।রাজ গাড়িতে উঠলো আর ইমন গাড়ি স্টার্ট করলো। গাড়িটা এখন চলছে।মায়াবতী অতীতের বলা কথাগুলো ভাবছে আর মাটির দিকে তাকিয়ে নিরবে কাঁদছে। হঠাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো।রাজ গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছে।আর ভাবছে হয়তো রাজের অতীতের কষ্টের কথা শুনে আকাশ ও কষ্ট পেয়েছে তাই কান্না করে দিলো।রাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো ভালো থেকো মায়াবতী।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত