আমার পাশে যে মেয়েটা শুয়ে আছে ও ইরা। ইরা আমার বউ, আমার দুই সন্তানের মা।
বিয়ের পঁচিশ বছরে এসেও আমি তার চোখে কখনও কোনো অভিযোগ দেখিনি, কোনো চাওয়া কিংবা পাওয়াতেও তৃপ্ততা দেখিনাই।
বিয়ের পনেরো বছরে আমি জানতে পারি আমার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, ইরার কৈশোর আর যৌবনের অর্ধেক সময় জুড়ে যে মানুষটা ছিল সে রাসেল।
সময়ের ব্যবধানে রাসেল ফিকে হয়ে গেছে কিন্তু হারায়নি। আমার আর ইরার জীবনে ঠিকই রয়ে গেছে।
যেদিন আমি ইরার ডায়েরীতে রাসেলের কথা পড়ছিলাম ইরা তখন ঘুমাচ্ছিল, সেদিন প্রথম মনে হলো ইরা ভালো নেই, সুখে নেই!
ইরা আর রাসেল স্বপ্ন দেখেছিল সংসার করার, ছোট ছোট দুইটা ছেলেমেয়ে থাকবে সেই সংসারে। আমার আর ইরার আজ সংসার হয়েছে, ছোট ছোট দুইটা ছেলেমেয়ে আজ বড় হয়েছে। ইরার চুলেও পাক ধরেছে।
যেদিন আমার আর ইরার বিয়ে হলো সারাটা সময় ইরা খুব স্বাভাবিক ছিল।
আমি সেদিন একবারের জন্য বুঝতে পারিনি ইরা কোনো একসময় রাসেলের জন্য বউ সাজার স্বপ্ন দেখেছিল, ইরার চোখে আমি সেই স্বপ্ন ভাঙার কোনো ছাপ দেখিনি, হয়ত স্বপ্ন ভাঙার আওয়াজটা ইরার মনে হচ্ছিল আমি শুনিনি, আমিযে ইরা দায়িত্বে ছিলাম মনে না!
গত পঁচিশ বছর আমি ইরাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ করার সুযোগ পাইনি। খুব নিখুঁত ভাবে ইরা আমার সাথে সংসার করে গেছে আর করছে।
ইরার ডায়েরীটা পাওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝেই ইরাকে জিজ্ঞাসা করে বসতাম, ইরা ভালো আছো তুমি??
ইরা যখন ক্লান্তিতে ঘেমে একাকার হয়ে আমার পাশে এসে বসত কিংবা ছেলেমেয়ের টিফিন তৈরীর মাঝে আমি যখন চা’য়ের জন্য তাড়া দিতাম ইরা কোমরে কাপড় গুঁজে চা দিতে আসলেই আমি হুট করে জিজ্ঞাসা করতাম, ইরা তুমি ভালো আছো? ইরা কখনওই জবাব দেয়নি।
আমি চাইতাম ইরা একবার মন খুলে সত্যিটা বলুক। আমি চাইতাম ইরা অন্তত একবার দম নিয়ে বলুক, আমি ভালো নেই। এত ঐশ্বর্য,স্বামীর ভালবাসা আর সন্তানের মমতায় আমি ভালো নেই।
আমাদের মেয়ের জন্য যখন পাত্রপক্ষ আসা যাওয়া শুরু করলো ইরা তখন মেয়েকে জিজ্ঞাসা করল মেয়ের কাওকে পছন্দ আছে কি না, আমার মেয়েটা ভরসা পেয়েছিল।
নির্দ্বিধায় লুকিয়ে রাখা মানুষটাকে সামনে নিয়ে এসেছিল। আমি ইরাকে কোনো বাধা দেইনি। কোনো মা চায়না তার সন্তানের জীবন তার মতই হতাশা আর না পাওয়ার হোক।
ইরা ঘুমাচ্ছ, কাল ওর মেয়ের বিয়ে। সারা বাড়ি আলোকিত হয়ে আছে। কিন্তু বিয়ের পঁচিশ বছর পরেও আমি ইরার মন আলোকিত করতে পারিনি।
ইরার মাথায় হাত রাখলাম। ও পিছনে ফিরে চাইতেই জিজ্ঞাসা করলাম, ইরা তুমি ভালো আছো?? ইরা ঠোঁটের কোনায় মুচকি হাসি নিয়ে আবার ওপাশ ফিরে গেল। আমি আরো একবার বুঝে নিলাম ১ মিনিট আগে বিয়ের ছাব্বিশ বছরে পা দিয়েও ইরা ভালো নেই!