অপেক্ষা

অপেক্ষা
১৯৮৫ সালের এক সকালের কথা। শোবার ঘরে কে যেন কথা বলছে, “ তুমি আরো খাও বীনা, আরো খাও। খাইতে খাইতে মোটা হইয়া যাও। তখন তোমারে জড়িয়ে ধরতে আরো বেশি ভালো লাগবে! ” অদিতি উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে আসলো। শ্রাবণ লোকটি এতো রোমান্টিক নয়! সারাক্ষণ বীনার সাথে ঝগড়া করে। কখনো তাঁরা কোনো বিষয়ে একমত হতে পারে না! আর তাঁর ঘর থেকেই এমন কথা ভেসে আসছে! অদিতি দরজার কাছে আসতেই বীনা টের পেয়ে গেলো! অদিতি লজ্জা পেয়ে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করলো। বীনা ডাকলো, “ কে অদিতি? লুকাচ্ছিস কেনো? ভেতরে আয়। ” অদিতি মাথাটা নুইয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতেই শ্রাবণ জিজ্ঞেস করলো, “ কী ব্যাপার অদিতি? বাচ্চাদের পড়াশোনার কী খবর? ” অদিতি আস্তে করে বললো, “ জি ভালো। কিন্তু দুয়েকটা বাচ্চা খুব দুষ্টু। খালি মারামারি করে!
“ এমন তো হবেই। বাচ্চারা দুষ্টু না হলে কি চলে? আচ্ছা তোমরা কথা বলো। আমি চেম্বারে যাচ্ছি। ”
শ্রাবণ হাতে কীসের একটা কাগজ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। বাড়ির কাছেই চেম্বার। অদিতি এবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। শ্রাবণকে সে ভয় পায়। লোকটা বেশ বদমেজাজি। আজকে কীভাবে এতো অমায়িক ব্যবহার করলো তাঁর মাথায় ঢুকছে না! জিজ্ঞেস করলো, “ কী ব্যাপার দি? আজকে তোমার বেটার কী হইছে? এতদিন তো মোটা হওয়ার কারণে নানান কথা শুনাতো। আজকে আরো খেয়ে খেয়ে মোটা হওয়ার কথা বলছে? ঘটনা কী? ” বীনা মুচকি হেসে বললো, “ পুরুষ মানুষ বুঝা বড় দায় অদিতি। আর আমার উনি তো রংধনুর মতো। সাত রঙ উনার। কোনদিন কোন রঙ ধারণ করবে আমিই বুঝি না! ” অদিতি ভাবলো বিয়ে খুব জটিল বিষয়। বিয়ে করা যাবে না। জিজ্ঞেস করলো, “ সব পুরুষই এমন নাকি? ”
“ কিজানি, আমার তো তাই মনে হয়। ”
“ আচ্ছা, আমি তাহলে যাই এখন। বাচ্চারা চলে এসেছে। পড়াতে হবে। “
“ আচ্ছা শোন, তোর নামে যে এক আগন্তুক চিঠি পাঠাতো। তাঁর সাথে দেখা হয়েছে? ”
“ আর বলো না দি। লোকটা মনে হয় খুব ভীতু। সামনে আসে না। পুকুরপাড়ে চিঠি রেখেই চলে যায়। ”
“ আচ্ছা তাই, আজকে চিঠিতে কী লিখেছে? “
“ লিখেছে, তুমি আজকে শাড়ি পরবে অদিতি। আমি রাতে তোমাকে দেখতে আসবো।
বলো তো এটা কোনো কথা? এখন আমি শাড়ি পাবো কই? এই মাসে একটা শাড়ি কিনবো ভাবছি! “
“ বাহ, দেখা হয়নি এখনোই তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছো। বিয়ের পর তো একেবারে বর পাগল হবে! ”
অদিতি কথাটা মেনে নিতে পারলো না।
“ নাহ দি, কারো কথায় শাড়ি পরলেই যে তাঁকে বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তাছাড়া আমি বিয়েই করবো না। আমার আবার রাগ একটু বেশি। দেখা গেলো সে একটু ধমক দিতেই আমি তাঁর নাকে ঘুষি মেরে দিলাম। তখন কী হবে একটু ভেবে দেখেছো? “
বীনা হেসে বললো, “ বুঝেছি আমি, যা তুই এখন। বাচ্চারা না এসে পড়েছে? ” অদিতি নিজের ছোট্ট ঘরটায় এসে পড়লো। সে কিন্তু হিন্দু নয়। নাম তাঁর অনন্যা ইসলাম। কিন্তু শ্রাবণ ডাকে অদিতি বলে। সে নামেই এখন সবাই ডাকে। নিজের বোনের মতো দেখে সে। মেয়েটার মা বাবা মারা গিয়েছে অনেক আগে। তারপর খালার কাছে মানুষ। এখন সে বড় হয়েছে। একা একা থাকতে পারে। তাই নিজের বাড়িতে চলে এসেছে। গ্রামে একটা ছোট বাচ্চাদের স্কুল আছে। খুবই কম ছেলেপেলে সেখানে পড়ে। সেখানে একমাত্র মেয়ে শিক্ষিকা অদিতি। বাড়িতেও কিছু ছেলেপেলে আসে পড়তে। এদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু হলো আহসান। চুলগুলো সে কাটে না। জমিদার বংশধর তো। ভাবসাবও কম না। অদিতি বললো, “ আহসান, তুমি সামান্য অঙ্কটা পারলে না। দুই আর দুই যোগ করলে কতো হয়? “
“ অদিতি তুমি পারো না। দুই আর দুই যোগ করলে বাইশ হয়। ”
“ নাহ, চার হয়। ”
“ নাহ, বাইশ হয়। “
“ তোমাকে আমি কিন্তু এখন বেত দিয়ে মারবো আহসান! একটা দিনও তুমি বাড়ির কাজ করো না! “
“ তোমাকে গুম করে দেবো, সাবধান এমন কথা বলবে না! ”
“ তুমি কি ডাকাত? “
“ নাহ, আমি আহসান। ”
অদিতি মুচকি হাসলো। এই ছেলের সাহস আছে। খালি পড়ালেখায় মন নেই! আহসানকে সবচেয়ে বেশি পছন্দও অদিতির। এর কারণ হলো সেই আগন্তুকের প্রথম চিঠিটা আহসানই দিয়েছিলো। আহসান সেই মানুষটাকে একবার দেখেছে।
রাতভোর অদিতি সেই মানুষটার কথাই ভাবে। কতো সুন্দর হাতের লেখা তাঁর। লোকটাও মনে হয় বেশ সুদর্শন হবে। সে সামনে কেনো আসে না? পুকুরপাড়ে চিঠি দিয়েই নিজের কাজ শেষ মনে করে কেনো? অদিতিকে ভয় পাওয়ার কিছু আছে? লম্বা চুলের শ্যামলা একটা মেয়ে সে। না আছে বড় ভাই বা চাচা। যে ভয় পেতে হবে। সে কিন্তু চাইলেই অদিতির সামনে আসতে পারে। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। জানালা খুলতেই দেখতে পেলো অতিদি। কিছুটা ভয়ও পেলো সে।
“ কে? কে আপনি? ”
লোকটার গায়ে মনে হয় পাঞ্জাবি। আবছা আলোয় এরকমই লাগছে। লোকটা নিশ্চয়ই সে। যে প্রতিদিন পুকুরপাড়ে চিঠি রেখে যায়। আজকে অদিতি শাড়ি পরেছে। গত পরশু শাড়ি কিনেছিলো। এজন্যই মনে হয় দেখতে এসেছে এই লোকটা। অদিতি আবারো বললো, “ আপনি কি সেই মানুষটা? যেই মানুষটা আমাকে প্রতিদিন চিঠি লেখে? ” লোকটা জবাব দিলো, “ হ্যাঁ অদিতি। আমিই সেই মানুষটা। শাড়িতে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। “
“ আপনি তো আমাকে দেখেননি। তাহলে কীভাবে বলছেন শাড়িতে আমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে? আমি বের হই? “ নাহ অদিতি, তুমি বের হয়ো না। ঘরেই থাকো। বের হলে তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবে। “
“ কেনো? আপনি কি ভূত? নাকি আপনার রাজপুত্রের চেহারা দেখে? “
“ আমি এতো কিছু তোমাকে বলতে পারবো না। তবে তোমাকে ধন্যবাদ শাড়ি পরার জন্য। “
“ আপনার ধন্যবাদ আপনার কাছেই রাখেন। আমি আপনাকে দেখবো। আপনি অন্ধকারে লুকিয়ে রাখছেন কেনো নিজেকে? “
“ বললাম না, আমাকে দেখলে তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবে। ”
“ তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমি বের হচ্ছি। ”
“ আমি চলে যাবো তাহলে। ”
“ আচ্ছা, দাঁড়ান। আপনার পরিচয়টা কি একটু দেওয়া যাবে? নাম কী? কোথায় থাকেন? “
“ আমি সমর দেব। পাশের গ্রামেই থাকি! ” অদিতি অবাক কণ্ঠে বললো, “ আপনি কি হিন্দু? “
“ হ্যাঁ, এজন্যই তোমার সামনে আসি না। আমার বাবা খুব ভয়ংকর একজন মানুষ। যদি জানতে পারে আমি কোনো মুসলিম মেয়েকে চিঠি লিখছি। আমাকে মেরেই ফেলবে। সাথে তোমাকেও। ”
“ বুঝলাম, আপনি হিন্দু বলেই আপনাকে দেখে অজ্ঞান হওয়ার কী আছে? “
“ সেটা আরেক কথা। অন্যদিন বলবো। “
“ নাহ, আজকেই বলেন। নাহলে আমি আর আপনার চিঠি পড়বো না। “
“ সেটা তুমি পারবে না। ”
“ আচ্ছা, এভাবেই কি আমাদের দিন যাবে? আপনি আমার সামনে আসবেন না? আমাকে বিয়ে করবেন না? ”
“ নাহ অদিতি। তুমি অপেক্ষা করো। আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে আবার তোমার কাছে আসবো। তোমাকে বিয়ে করবো। ”
“ তার আগে একটিবারের জন্য আপনাকে দেখি? প্লিজ আপনি সামনে আসেন। নাহলে আমি বের হই? “
“ আবার কথা হবে অদিতি। ভালো থেকো। ”
বলেই লোকটা চলে গেলো! অদিতি অনেকক্ষণ ডাকার পরেও আর জবাব মিললো না। ঘর থেকে বের হয়েও খুঁজেছে সে, পায়নি। পুরুষ মানুষের কণ্ঠে এতো গভীরতা থাকে? এতো মুগ্ধতা আর মায়া থাকে? সমরের সাথে কথা বলে এখন অদিতির মনে হচ্ছে। ঝগড়া করার জন্য হলেও এমন একটা মানুষ চাই! কিন্তু তাঁর অপেক্ষা আর শেষ হয় না। সমর শুধু চিঠিই লিখে যায়। সামনে আসে না। খুঁজ করতে লাগলো অদিতি। পাশের গ্রামে সমর নামে কজন ছেলে আছে? তেরো জন সমরের খোঁজ পাওয়া গেলো। এরমধ্যে সাতজনই বিবাহিত, একজন ডাক্তার আর পাঁচ জনের বয়স দশের নিচে! সেই ডাক্তার ছেলের আবার বিয়ের কথাবার্তা চলছে! তাঁর গলার কণ্ঠও গভীর না। শুকনা গলা। মিহি স্বর। এই ছেলে সেই সমর না! সকাল সকাল বীনা ডাকছে। অদিতি চুলায় ভাতের পাতিলটা মাত্র বসিয়েছে।
“ বীনা দি, কী হয়েছে? “
“ তোর ভাই ডাকছে। একটু শুনে যা তো। “
ভাতের পাতিলটা চুলা থেকে নামিয়ে রাখলো অদিতি। আগুনও নিভিয়ে দিলো। শ্রাবণের কাছে গিয়ে সে বুঝলো, আজকে শ্রাবণ খুবই রেগে আছে! চোখ লাল তাঁর।
“ অদিতি। “
“ হ্যাঁ, ভাইয়া। “
“ তোমাকে নাকি একটা ছেলে চিঠি দেয়? তুমিও নাকি তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো? “
অদিতি কিছুই বলতে পারলো না। মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। “ কথা বলো না কেনো? তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে। মুসলিম একটা মেয়ে। বিয়ের চিন্তা না করে এসব কী করছো? এগুলো ভালো না। ” বীনা অবাক হয়ে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে রইলো। বীনাকে সে বলেছিলো অদিতিকে ডাকতে, একটা খুশির সংবাদ আছে। আর অদিতি আসতেই কীভাবে শাসাচ্ছে মেয়েটাকে!
“ অ্যাই, কী হলো তোমার? অদিতিকে বকছো কেনো? মেয়েটার সুসংবাদ কী সেটা বলো। ” বীনা কথাটা বলে শেষ করতেই শ্রাবণ বললো, “ অদিতির জন্য একটা ছেলে দেখেছি। ছেলে ডাক্তার। সমর দেব নাম। পাশের গ্রামেই বাড়ি। তাঁকে বলে দাও। যেন চিঠি আদানপ্রদান বন্ধ করে। নাহলে খুব খারাপ হবে! ” বীনা মুখে হাত দিলো। কীসব অদ্ভুত কথা বলছে শ্রাবণ!
“ পাগল হয়ে গেলে নাকি? অদিতি মুসলিম আর তাঁর জন্য তুমি হিন্দু ছেলে দেখছো? ” শান্ত গলায় এবার শ্রাবণ বললো, “ ওহ, আমার তো মনেই ছিলো না! অদিতি, আমার ভুল হয়ে গেছে রে। যা তুই! ছেলেটাকে আমি না করে দেবো। ” শ্রাবণ আর কিছু বললো না। চেম্বারের দিকে রওনা হলো। এক ডাক্তার অন্য ডাক্তারকে পছন্দ করে বেশি। যে কোনো ক্ষেত্রে। শ্রাবণের বেলাতেও মনে হয় তাই হয়েছে। সমর শ্রাবণের কাছে আসতেই সে রাজি হয়ে গিয়েছিলো। ভুলেই গিয়েছিলো অদিতি মুসলিম। চেম্বারে মন খারাপ করে বসে আছে সে। একটু পরেই সমর আসলো।
“ আদাব দাদা। “
“ আদাব, সমর বসো তো। তোমাকে একটা কথা বলতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। অদিতি তো মুসলিম। আমার মনেই ছিলো না। ”
“ এতে কোনো সমস্যা নেই। ভালোবাসা তো ধর্ম মানে না। আমি অদিতির ধর্মকে সম্মান করি। আর আশা করি সেও আমার ধর্মকে সম্মান করবে। আমার মাকে ভালোবাসবে। আমার বাবাকে ভালোবাসবে। ” শ্রাবণ টেবিলে মাথা ঝুঁকে বসলো। সে বুঝতে পারছে না কী করবে এখন। এদিকে অদিতি বীনাকে বললো, “ আমাকে কে সবসময় চিঠি দেয় জানো দি? পাশের গ্রামের সমর নামের একটা ছেলে। কিন্তু ডাক্তার সমরই সেই মানুষটা কিনা আমি বুঝতে পারছি না! ” অদিতি মাথায় হাত দিয়ে বললো, “ তোর কথা হয়েছে নাকি? সামনে এসেছিলো? “
“ কাল রাতে যে শাড়ি পরেছিলাম। সে দেখতে এসেছিলো। কিন্তু আমি তাঁকে দেখিনি। আড়ালে থেকে কথা বলেছে! ”
বীনা বললো, “ উনি আসুক। আমি ব্যাপারটা বলছি। রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু সকালে মনেই হচ্ছে না তা। কড়া রোদ ওঠেছে। খালি গায়ে রোদ পোহাতে ইচ্ছে করছে সমরের। বাড়িতে মানুষজনের অভাব নেই। পরশুই তাঁর ছোট কাকা বিয়ে করেছে। মেয়েছেলে চারদিকে। এমন অবস্থায় খালি গায়ে রোদ পোহানো যাবে না। সমরের মা ডাকলো, “ চেম্বারে যাবি না? “
“ যাবো, একটু পরে। রোদটা ভালো লাগছে। ”
“ নাহ, হঠাৎ রোদে শরীর খারাপ হয়। “
“ মা আমি ডাক্তার। আমাকে শেখাবে না কখন কী করলে শরীর খারাপ হয়। ”
“ ডাক্তার হয়েছিস বলে ভাবিস দুনিয়ার সব জেনে গেছিস? ”
সমর আর কথা বাড়ালো না। মায়ের চেয়ে বেশি দুনিয়ায় কেউ জানে না। সে খেয়েদেয়ে চেম্বারের দিকে রওনা দিলো।
শিমুল গাছে ফুল ধরেছে। কিছু ফুল রাস্তায় পড়ে আছে। সমর আবিষ্কার করলো শিমুল ফুল ভালোবাসার প্রতীক না। কেউ ভালোবেসে কাউকে শিমুল ফুল দেয় না। দিনটা আজকে অন্যরকম। সবকিছু পরিষ্কার লাগছে। রাতে বাতাসে রাস্তাঘাটের সব ধুলোময়লা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। চেম্বারে বসতেই এক মেয়ে উপস্থিত। বোরকা পরা মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। সমর বললো, “ জি, আপনার কী সমস্যা? ” মেয়েটা বললো, “ ডাক্তার মশাই, আমার বুকে ব্যথা। আমি কী করবো? “
“ ওহ আচ্ছা, আসলে আমি তো দাঁতের ডাক্তার। আপনি শাহিন সাহেবের কাছে যান। তিনি এই ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। পাশের চেম্বারেই উনি বসেন। ” মেয়েটা জবাব দিলো, “ নাহ ডাক্তার মশাই, আপনাকেই এর একটা সমাধান করতে হবে। “
“ আপনার দাঁতে কোনো সমস্যা আছে? “
“ নাহ, কিন্তু প্রত্যেকদিন চিঠি পড়ে বুক ব্যথা করে! ” সমর চুপ হয়ে গেলো। শরীরে যেন পানিয়ে শুকিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর বললো, “ আপনার নাম কী? ”
“ আমার নাম সুমাইয়া। ”
“ তাহলে আপনি প্রতিদিন চিঠি কোথায় পান? ডাকটিকিটে কাজ করেন? “
“ নাহ, পুকুরপাড়ে কে যেন রেখে দিয়ে যায়। সমর এবার দাঁড়িয়ে বললো, “ আপনি কি অদিতি? ”
“ নাহ তো, আমি সুমাইয়া। আপনার কাছে এসেছি বুক ব্যথা নিয়ে। ”
“ দেখুন, আপনি যদি অদিতি হোন, তাহলে আমি আপনার বুকের ব্যথা সারতে পারবো। তা নাহলে আপনার শাহিন
সাহেবের কাছে যেতে হবে। ”
“ কেনো? অদিতি কী আপনার বিয়ে করা বউ? “
“ আমি এতো কথা বলতে পারবো না। ”
“ আপনি তো দেখতে এতো সুন্দর না। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কী আছে শুনি? অবশ্য ছেলে মানুষ বেশি সুন্দর হলে মেয়ে মেয়ে লাগে! ” সমরের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে অদিতিই এসেছে! বললো, “ অদিতি? বসো। দাঁড়িয়ে আছো কেনো? “
“ বসে কী করবো? আপনি তো বুক ব্যথা সারতে পারেন না। আমি শাহিন সাহেবের কাছে যাচ্ছি। “
“ আরেহ নাহ। আমি সব ব্যথাই সারতে পারি। ”
“ আপনি তো মানুষ ভালো না। কথায় কথায় জবান বদলান! “
বলেই অদিতি বের হয়ে গেলো! সমর পিছু পিছু যাওয়ার সময় পেলো না। এর মাঝেই একজন বৃদ্ধ দাঁত ব্যথায় চেম্বারে এসেই পড়ে গেলেন! সমর বৃদ্ধাকে চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো! পরদিন সমর আর চিঠি লিখলো না। নিজেই হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলো। পুকুরপাড়ে সে অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে। অদিতির দেখা মিললো দুপুরে। সকালে এসেছিলো সে। ততক্ষণে সূর্য মাথার উপরে উঠে গেছে। অদিতি এসেছিলো শাক নিতে। সমর সামনে পরতেই সে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলো! সমর বললো, “ ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে কিছু করবো না! “
“ আমি ভয় পাচ্ছি না! অন্ধকারের মানুষ হঠাৎ দিনদুপুরে উদয় হওয়ার কারণ? ”
“ বলতে এসেছি তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। “
“ কীসের অপেক্ষা? ”
“ আমাকে বিয়ে করার। “
“ আমি আপনাকে বিয়ে করবো কেনো? “
“ জানি না। কিন্তু তোমাকে করতে হবে! “
“ আমি অপেক্ষা করতে পারবো না। “
“ তুমি পারবে। একটু অপেক্ষা করো। আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে তোমাকে বিয়ে করবো। “
বলেই হাঁটতে শুরু করলো সমর। সাদা পাঞ্জাবিতে লোকটাকে দারুণ লাগে। অদিতি মুগ্ধ হয়ে সমরের হেঁটে যাওয়া দেখছে। সে জানে, এই লোকটার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে, একটুও সমস্যা নেই তাঁর!
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত