আত্মহত্যা

আত্মহত্যা

“মধ্যরাত, বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।সোহান সাহেব ও তার স্ত্রী লুবনা ঘুমাচ্ছে।হঠাৎ কিছু শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় লুবনার। ভালো করে কান পেতে শুনতে পেলো কেউ কথা বলছে ওদের দরজার সামনে।কয়েকবার সোহান সাহেব কে ডাকা হলেও উনি উঠলেন না। সারা দিন অফিস করে ক্লান্ত তিনি। অগত্যা লুবনা নিজেই দরজা খুললো।কিন্তু দরজার সামনে কাউকে দেখতে পেলোনা। চারপাশে তাকিয়ে বৃষ্টির মাঝেও দেখলো কেউ একটা হেটে যাচ্ছে। ছাতা মাথায় লুবনা বের হয়ে আসলো।

ঘন্টা দুয়েক পরে সোহান সাহেবের ঘুম ভাঙ্গলো। স্ত্রীকে বিছানায় না দেখে তিনি বাসা থেকে বের হলেন।ভোর হয়ে আসছে বৃষ্টি এখন তেমন নেই। বাগানের দিকে গিয়ে দেখলেন তার স্ত্রীর লাশ আম গাছে ঝুলছে। চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ। ভয়ে সোহান সাহেব সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়। সকালে বাসার কাজের মেয়ে এসে সোহান সাহেব কে বাগানে অজ্ঞান আর লুবনা’র লাশ শনাক্ত করে, ভয়ে আর আতঙ্কে আশেপাশে’র বাসায় চেচিয়ে বলে। পাড়ার লোকে আমাদের খবর দেয়।

” বুঝলাম, তা আমাকে এসব বলার কারন?” প্রশ্নটা মিস আয়শার।’
“আপনি কি মিসেস সোহান কে চিনেন?”
“হুম পরিচিত। কলেজে এক সাথে পড়তাম। ”
“কলেজের বান্ধবির সাথে এখনো কথাবার্তা হয়? ”
“না এতো দিন ছিলোনা মাসেক ছয়েক আগে ওর আর আমার হঠাৎ ই দেখা হয়। তারপর থেকেই টুকটাক কথা হতো।”

“আচ্ছা এই সপ্তাহে কি ওদের বাসায় যাওয়া হয়েছে আপনার?” “ইয়ে মানে, কেনো বলুন তো? ” আমরা ঘঠনা স্থলে তেমন কিছুই পাইনি। কিন্তু আপনি তো একজন ক্রাইম স্পেশালিষ্ট থ্রিলার রাইটার। যদি ঘঠনা স্থলে গিয়ে সব কিছু দেখে একটু বলতেন ঠিক কি ভাবে খুন হয়েছে বলে মনে হয় আপনার তবে কেইসটা এগুতে সুবিধা হতো আমাদের।

~আচ্ছা চলুন।

মিস আয়শা চৌধুরী।বয়স ৩২ এর কাছাকাছি হলেও এখনো বিয়ে করেনি। পেশায় থ্রিলার রাইটার।আর কেইসে তার আর একটা পরিচয় হলো। মিসেস লুবনা’র কলেজের বন্ধু। কলেজ লাইফে তাদের সম্পর্ক ছিলো হাড্ডাহাড্ডি। কে কত কোন দিকে ভালো তা প্রমাণেই তাদের কলেজ লাইফ শেষ হয়। এরপর অবশ্য আর কথা হয়নি কিন্তু গত এক মাস আগে একটা পার্টিতে দেখা হয় ওদের। তারপর ফোন নাম্বার দেওয়া নেওয়ার পর্ব শেষে লুবনা তার স্বামী সোহান সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আয়শা চৌধুরী অনেকটা অবাক হয় সোহান কে দেখে। কারণ সোহান সেই ব্যক্তি যার জন্যে এখন অবধি মিস আয়শা চৌধুরী বিয়ে করেনি। ভার্সিটি সিনিয়র ছিলো সোহান। বরাবরই হ্যান্ডসাম লুকে থাকতো। ব্যাচ টপারও ছিলো বটে।

আয়শা’র আর সোহানের সেকি প্রেম! ভার্সিটির বেস্ট জুটি ছিলো তারা।কিন্তু হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে সোহান চলে যায় দেশের বাইরে। আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি আয়শার সাথে। দেশে ফিরে এসেছে বিয়ে করেছে এসবের কিছুই জানেনা আয়শা চৌধুরী। আয়শার জীবনের অর্ধেক অংশ যার জন্য অপেক্ষায় কেটেছে আজ এতো বছর পর তারই বান্ধবী’র সাথে দেখে নিজেকে সামলানো ঠিক কতোটা কঠিন তা উনি ব্যতীত হয়তো কেউ জানেনা। এরপর বেশ কিছুদিন তিনি ডিপ্রেশনেও ছিলেন। মিরাজ সাহেব ও মিস আয়শা চৌধুরী এখন সোহান সাহেব এর ড্রয়িং রুমে বসে আছে। পুরো বাড়িটা মিস আয়শা চৌধুরী ভালো করে দেখছেন। মি. সোহান পাশের সোফায় বসা। চোখে মুখে শোকের ছাপ।

“চলুন তো মি.মিরাজ সাহেব, একবার বাগানটা ঘুরে আসা যাক।”
“চলুন ”
“ঠিক কি কি হয়েছিলো বলে আপনার মনে হয়? ”

এবার আয়শা চৌধুরী বলতে আরম্ভ করলো, মধ্যরাত, লুবনা দরজায় কড়া নড়া শুনে বাইরে এলো কিন্তু কাউকে দেখলোনা। কিন্তু বাগানের দিকে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে তাই কিউরিসিটি বসতো এগিয়ে যায় দেখতে। কিলার সেখানেই ওৎ পেতে ছিলো ঝোপটার আড়ালে । দেখুন, “পায়ের ছাপ ছিলো এখানে কিন্তু কিলার খুব সাবধানের সহিত তার প্রমাণ ও শেষ করে তবেই যায়। খুব ঠান্ডা মাথায় সব কিছু মুছা হয়েছে। একজনই কিলার ছিলো। তা জুতার ছাপেই বুঝা যাচ্ছে।” “হ্যাঁ সত্যিই তো!” ” যাইহোক বাকিটা শুনেন, লুবনা ঝোপ ছাড়িয়ে যেতেই কানের কাছে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করা হলো।তারপর গলায় রশি দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া লুবনাকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে দেয় কিলার। যাতে ফরেন্সসিস রিপোর্টে ধরা পড়ে মৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলে হয়েছে অর্থাৎ আত্মহত্যা। ”

“অসাধারণ প্ল্যান। বাহ্, এতো দিন জানতাম আপনি খুব ভালো ডিটেকটিভ স্টোরি ক্রিয়েট করেন কিন্তু আজ সামনে থেকে দেখলাম আপনি গল্পের বাইরেও স্টোরি ক্রিয়েট করেন। “কি বলতে চাইছেন মিস্টার মিরাজ? এইটা খুন? জ্বি না এইটা আত্মহত্যা । লুবনাকে কে কেনো খুন করবে? আর হ্যাঁ আপনি মনে রাইখেন ওর বাচ্চা হয়না বলে তার স্বামী আজকাল খুব বেশিই ইগ্নোর করতো ওরে। অথচ যেখানে তার স্বামীর সমস্যা। এই দেশে জানেন তো, এখন অবধি এসব বিষয়ে সবার আগে নারী’র উপরই দোষ আসে৷ “সরি ম্যাম আপনাকে বলা হয়নি, ঘঠনা স্থলে একটা প্রমাণ কিলার রেখে গেছে। তার পকেট ডাইরি।যা দেখেই আসলে আমার মনে হয় খুন এইটা।

একটা আশ্চর্যের বিষয় হলো ম্যাম, সেই ডাইরির প্রথম পাতায় আপনার নাম ঠিকানা, ফোন নাম্বার লেখা।” “কি? প প পকেট ডাইরি?” এতো এতোটা সময় নিয়ে সব প্রমাণ লুকিয়েছি শেষে কিনা পকেট ডাইরিটা ফেলে এলাম? এতো কাঁচা কাজ করে ফেললাম আমি? এবার তো সব শেষ।”এসব ভেবে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে আয়শা চৌধুরী। মিস আয়শা চৌধুরী, খুন আর আত্মহত্যা’র ফারাকটা অন্ততপক্ষে বুঝার ক্ষমতা আছে আমার। আরে আরে একি, ম্যাম যে অজ্ঞান হয়ে গেলো। কেই ধর উনাকে”। ছয়মাস পরের ঘটনা, মাঝ রাতে ইন্সপেক্টর মিরাজের ফোনে কল আসে। ফোনের অপর পাশে একজন মহিলা’র কন্ঠস্বর ভেষে আসে,” গিয়ে দেখুন সোহান সাহেব আত্মহত্যা করেছে। “এইটুকু বলেই জনৈক মহিলা কল কেটে দেয়।

মিরাজ ঘটনা স্থলে যায়, গিয়ে দেখে সোহান সাহেবের লাশ ঝুলে আছে সেই গাছে যেখানে ঝুলে ছিলো লুবনার লাশ।সব কিছু খুটিয়ে দেখে কিন্তু এবারে আর কোনো প্রমাণ নেই তার কাছে। পারার লোকে বলাবলি করছে ভূতের কাজ।এই বাড়িতে ভূত আছে। হঠাৎ ঝোপের আড়ালে একটা কাগজের টুকরো পায় যেখানে লেখা,” মিস্টার মিরাজ সাহেব,কিছু পেয়েছেন কি? পেলে জানিয়ে রাখবেন” মিরাজ সাহেব কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় কেসটাকে নেহাতি আত্মহত্যা বলে শেষ করে দিলো। পরদিন সকালে মিরাজ সাহেব নিউজ পেপারের একটা হেড লাইনে চোখ আটকে গেলো,”জেলখানায় কয়েদির ফাসিতে ঝুলে আত্মহত্যা

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত