গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। একটু আগে জান্নাতের সাবেক প্রেমিকা পিয়ানো বাজিয়ে গেলো আমার গালে! হাত গালে নিয়ে ফিরে আসছি আর ক্যাবলার মতো ভাবছি ব্যাপারটা কি হলো আমার সাথে! কি করলাম আমি!
জান্নাতের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে নীলসাদার জগতে। প্রথম প্রথম কথা হতো না কারণ কেউ কাউকে বার্তা পাঠাতাম নাহ। পরবর্তীতে আমিই বার্তা পাঠাতে শুরু করি আর ধীরে ধীরে কথা হতে হতে ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই আর তারপর ভালো লাগা ভালবাসা শুরুতেই জানতাম ওর জীবনে আগে একজন ছিলো আর আমিও বলেছিলাম আমার জীবনেও কেউ ছিলো।
—ভালবাসার তিক্ত অভিজ্ঞতা জান্নাতকে কতটা কঠোর করে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওরে আবার আমার ভালবাসায় আবদ্ধ করতে আমার যে কত রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে তা আমিই জানি। মন থেকে অবিশ্বাসের পর্দা তুলে ফের বিশ্বাস স্থাপন করতে দিন রাত এক করে দিয়েছিলাম আমি। কি করবো! মেয়েটা যে প্রথম কথায়ই আমার মন কেড়েছে সব সময় চোখে কাজল পরতে পরতে চোখদুটো এতোই মায়াবী করে রাখতো যে আমি চোখ ফেরাতাম না।
যখন দেখতাম শুধু মন ভরে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতাম ওর পাণে। হাসিটা ছিল আরও পছন্দের কারণ হাসলে ওর গালে টোল পরতো যা ওরে আরও সুন্দরী আরও মায়াবী করে তুলতো। এই সব কিছুর পরেও আমাকে নিয়ে ওর ভয়ের কোনো শেষ ছিল নাহ। আমাকে ফোন দিতে সে ভয় পেতো, যদি বিরক্ত হই! আমাকে মন খুলে কিছু বলতো না, যদি নেকামো ভাবি! আমার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতো আর বলতো ওর নীল পদ্ম ওর বাবার হাতে। নীল পদ্মটা হচ্ছে ওর ভালবাসার চাবি! কারো সাথে আবদ্ধ হওয়ার মানেই হচ্ছে নীল পদ্ম আদান-প্রদান। প্রথম ভুল করেছে তাই এইবার সে নিজের জীবন আর পরিবার নিয়ে বধ্য পরিকর।পছন্দের ফুল ছিল তার কাঠগোলাপ কিন্তু ভালবাসা নীলপদ্ম! অনেক কষ্ট করে কাঠখড় পুড়িয়ে যখন আবদ্ধ হলাম ভালবাসায় তখনই উপদ্রব হয়েছে ওর সাবেকের!
এতোকষ্ট দিয়ে ফেলে রেখে যখন গিয়েছে তখন তার কোনো খবর ছিল না আর এখন যখন জান্নাত নিজেকে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তুলছে অন্য কারো ভালবাসায় তখন তার হয়তো সহ্য হচ্ছে না যদিও জান্নাতের তাকে নিয়ে কোনো রকম মাথা ব্যাথা নেই তাও সে অশান্তি সৃষ্টি করছে আমাদের মাঝে। আজ আমি আর জান্নাত বেরিয়েছিলাম একটু ঘুরাঘুরি করে শীতের ছোয়া গায়ে নিতে আর তার সাথে রোদের মিষ্টি হাসি উপভোগ করতে। সব কিছুই ঠিক ছিলো কিন্তু শেষ বেলায় ওরে বিদায় জানিয়ে ফেরার পথে ঘটলো অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনা না। দলবল নিয়ে এসে হুমকি দিল আমায় আর পিয়ানো বাজিয়ে চলে গেলো আমার গালে পারতাম আমিও কিছু করতে তবে করিনি কিছুই কারণ সে তো জান্নাতের এককালীন ভালবাসা ছিল। তবে কিছু কথা বলতে ছাড় দেইনি মোটেই,
–আপনি যদি তারে এতোই ভালবাসেন তাহলে ছেড়ে গেলেন কেনো?
–তার প্রতি আপনার এতো মায়া তাহলে কিভাবে গেলেন ওর রোদ হাসানো মুখে বৃষ্টি ঝড়িয়ে?
–আপনাদের মতো ছেলেদের এমন দুমুখো স্বভাবের ফলেই সত্যি কারের ভালবাসার ছেলেগুলো আজ অবহেলিত কারণ ধোকা দিবেন আপনারা আর ফল ভোগ করবে তারা।
—কখনো ভেবে দেখেছেন একটা মেয়ে কতটা বিশ্বাস আর ভরসা করে একটা ছেলের সাথে জড়ায়? হ্যাঁ মানছি সব ভালবাসা পূর্নতা পায় না কিন্তু তাই বলে অন্য কাউকে বাধা দিবেন কেনো! যদি বাধাই দেন তবে নিজে ছেড়ে এলেন কেনো??
—যখন খুশি ভালবাসবেন যখন খুশি ছেড়ে যাবেন তাতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু আপনি যাওয়ার পর তার কি হাসতে নিষেধ নাকি!
—আপনি কি এটা চান যে সে শুধুই আপনার কথা ভেবে তার আকাশ মেঘের আড়ালে ঢেকে রাখবে! সে অন্য কারো হতে পারবে না! নাকি তার ভালবাসার আর অধিকার নেই!
মূলত এই কথা গুলো বলার পরেই পিয়ানোটা বাজিয়েছেন আমার গালে! আমিও আর কোনো কথা না বলে চলে এসেছি কারণ ওদের কথা শুনলে হয়তো আমিও ওদের মতো চিন্তা ভাবনা করতে পারি কারণ প্রতিটি মানুষেরই নিজের অবস্থান সম্পর্কে কোনো না কোনো ব্যাখ্যা থাকে। যা তাকে তার অবস্থানের সত্যতা নিশ্চিত করিয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিৎ এমন কারো কাছ থেকে ব্যাখ্যা না শোনা যে নিজেই আছেন পথভ্রষ্ট পথিক হিসেবে…
যাকে ভালবাসেন তাকে ভালবাসার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় সন্মান আর তার ভালবাসা,ভাল লাগা গুলো নিজের ভাবতে শিখুন। ভালবাসলেই সেটা যে পূর্নতা পাবে তা একদম নয় কিন্তু তাই বলে ভেবে নিবেন না যে আপনি চলে যাওয়ার পরেও সে সারাক্ষণ আপনাতেই বিভোর থাকুক। হ্যাঁ মনের মাঝে ছোট্ট কুটিরে আপনি জায়গা পাবেন অবশ্যই। কিন্তু তাই বলে স্বার্থপরের ন্যায় আপনার কষ্টে তাকে বিভোর থাকতে হবে বা আপনি ছাড়া তার জীবনে কেউ আসবে না এগুলো ভাববেন না। যদি এমনটাই হয় তাইলে বোঝা যাবে তার প্রতি আপনার যেটা ছিল সেটা মোটেই ভালবাসা নয়।