“আমি মুক্তি চাই। দয়া করে আমায় মুক্তি দাও।” টানা তিন ঘন্টা মিটিং শেষে ক্লান্ত শরীরে অফিস থেকে ফিরছিল শুভ্র। ফোনটা পকেট থেকে রাখার সময় এরকমই একটা মেসেজ আসে। মেসেজ পাঠিয়েছে লাবণ্য। শুভ্রর ভালোবাসার মানুষ লাবণ্য। মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে যায় শুভ্রর। সাথে সাথে ডায়াল করে লাবণ্যের নাম্বার। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। পরপর চারবার কল দেয়ার পর কলটা কেটে দিয়ে মেসেজ পাঠায় লাবণ্য- “কল দিবে না প্লিজ। আমার সমস্যা আছে।”
মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায় শুভ্রর। ওর ভালোবাসার কাঙ্গালিনী লাবণ্য আজকাল ওকে ভিষণ ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। কল দিলে ঠিকঠাক মত রিসিভ করছে না। ভালোভাবে কথা বলছে না। যাও একটু কথা হয় সে সময়টা ঝগড়া করেই চলে যায়। শুভ্র লক্ষ করেছে আজকাল বড্ড বেশী ঝগড়া করে লাবণ্য। অকারণে সে ঝগড়া করে। যার কোন ভিত্তি খুঁজে পায় না শুভ্র। সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশাল ঝগড়া হয়ে যাবে। অতঃপর কল কেটে বন্ধ করে ফেলবে ফোন।
আজও কোন কথা বার্তা ছাড়া’ই মেসেজ পাঠিয়েছে মুক্তি চাই। রাগ উঠে যায় শুভ্রর। কিন্তু সে রাগকে বহুকষ্টে কন্ট্রোল করে। পাল্টা মেসেজ পাঠায়- ” ঠিক আছে। আমি তোমাকে মুক্তি দেবো। তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দাও। কি অপরাধ আমার? কি করেছি আমি?” মেসেজটা সিন হয়, রিপ্লাই আসে না। ” জবাব দাও লাবণ্য! চুপ করে থেকো না। কি দোষ করেছি আমি সেটা বলে যাও। কথা দিচ্ছি, পিছু থেকে ডাকবো না আর।” প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর লাবণ্যর মেসেজ- ” আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে শুভ্র। মনে হয় বিয়েটা হয়ে যাবে।” মেসেজ দেখে একটুও চমকালো না শুভ্র। ধীর গলায় বলল, বিয়ের কথা?! সে তো কয়দিন পর পরই হয়। বিয়ে তো আর হয় না। এবারো না হয় সেভাবেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিবে।
— না, শুভ্র। এটা আমি পারব না। আমি এভাবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে পারব না।
– মানে?
— মানে আমি এ বিয়েটা করছি।
– কি বলছ কি এসব? তোমার ধারনা আছে কি বলছ?
— হ্যা, শুভ্র। আমি কথাগুলো ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মস্তিষ্কে বলছি। আমি এ বিয়েটা ভাঙ্গতে পারব না। আর তোমাকেও বিয়েটা ভাঙ্গতে দেবো না।
– আমার অপরাধ?
— শুনেছি লোকটার অনেক টাকা আছে। যেটা তোমার নেই।
– মামমমমমমমানে? লাবণ্য তুততততুমি এসব…
— অনেক ভেবে চিন্তে তবেই এ সিদ্ধান্তে আসলাম। আর তাছাড়া ঐ লোকটা আমায় যতটা সুখে রাখতে পারবে ততটা তুমি কখনো আমায় রাখতে পারবে না।
– কয়টা টাকার জন্য তুমি আমাদের সম্পর্কটা নষ্ট করে দিচ্ছ?
– কি ছিল না আমার মধ্যে? মন প্রাণ উঁজার করে তোমায় ভালোবেসেছিলাম। বিনিময়ে এই প্রতিদান দিলে তুমি আমায়?
— শুধু ভালোবাসা দিয়ে জীবন চলে না শুভ্র। জীবনে বাঁচতে হলে টাকা চায়। টাকা। যেটা তোমার নেই।
– ব্যস, অনেক হয়েছে লাবণ্য। আর নয়। আর শুনতে চাচ্ছি না আমি। যাও। যেখানে খুশি সেখানে যাও তুমি। মুক্তি দিলাম তোমায়। চিরমুক্তি।
আর মেসেজ আসে না কোন। শুভ্র ওর হাতের ফোনটা ছুঁড়ে মারে সোফায়। টিভিটা ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সোফাটা উল্টে পাল্টে ফেলে। চেয়ারটা লাথি মেরে দুরে সরিয়ে দেয়। টেবিলের উপর থেকে ফ্রেমে বন্দি লাবণ্যের ছবিটা বারান্দার দিকে ছুঁড়ে মারে। গলার টাই ধরে টেনে, প্রচন্ড রাগে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে ফেলে। ক্লান্ত শুভ্র একসময় ঘুমিয়ে যায়। সকালে ফোনটা ওপেন করতেই ভেসে উঠে লাবণ্যর দেয়া শেষ মেসেজ- ” ঐ লোকটার অনেক টাকা আছে শুভ্র। আমি অনেক সুখে থাকব। তাই বিয়েটা করছি। দয়া করে তুমি বিয়েতে কোন বাঁধা দিও না। তাহলে আমি মরে যাব।” রাগে দুঃখে শুভ্র থরথর করে কাঁপছে আর মনে মনে ভাবছে- ” শেষমেষ কি না আমি এমন একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম। মন নয় টাকায় যার কাছে বড়। ছি!…” অফিস থেকে তিনদিনের ছুটি দিয়েছে। অলরেডি একদিন চলে গেছে।
পরদিন সকাল সকাল শুভ্র গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সেই গ্রাম, যে গ্রামে শুভ্রকে বহুবার যেতে হয়েছিল লাবণ্যর বিয়ে ভাঙ্গার জন্য। নাহ, আজ কোন বিয়ে ভাঙ্গতে যাচ্ছে না শুভ্র। আজ যাচ্ছে দীর্ঘ একমাস ধরে যে কথাটা ভিতরে চেপে রেখেছিল সে কথাটা বলতে। শুভ্র যাচ্ছে ওর অনেক টাকা বেতনের চাকরী হয়েছে, লাবণ্যকে সেটা জানাতে। লাবণ্যর অবহেলার জন্য যে কথাটি শুভ্র বলতে পারেনি এতদিন আজ সে কথাটি বলবে। আজ বলবে, ‘তুমি যাকে বিয়ে করতেছ তার থেকেও অনেক অনেক বেশি টাকার বেতন পাই আমি। সকাল ১০টার দিকে শুভ্র লাবণ্যদের গ্রামে এসে পৌঁছে। লাবণ্যর নাম্বারটা বন্ধ দেখাচ্ছিল বিধায় কল করে ওর একমাত্র বান্ধবীর মত কাজিন রিমাকে।
– হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভাইয়া কেমন আছেন?
– যেমন রেখেছেন।
— মানে কি?
– রিলেশনের আগে যে বোনকে বলেছিলেন খাঁটি হিরা সেই আজ বলছে টাকার কাছে ভালোবাসা কিছু না। এই আপনার খাঁটি হিরা?
— কি বলছেন ভাইয়া? ও বিয়েটা করবে?
– জ্বি, ও বিয়েটা করবে। আমাকে কাল রাত্রে জানালো। আচ্ছা, বাদ দেন। আমি আপনাদের স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি আপনার বান্ধবীকে নিয়ে আসুন। ওকে আমার একটা সারপ্রাইজ দেয়ার আছে।
— কিন্তু ভাইয়া ও তো অসুস্থ অনে
– কি বললেন?
— না, কিছু না। আমি আসছি। আপনি ৫মিনিট দাঁড়ান।
কল কেটে দেয় রিমা। মাকে জানায়, মা তোমাকে বলেছিলাম না শুভ্র ভাইয়ার কথা। শুভ্র ভাইয়া আসছে। স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি তো জানোই ওনি আমার কত উপকার করেছিলেন। তাই যেভাবেই হোক তোমার ঐ শয়তান ভাসুর কন্যাকে এ বাসায় নিয়ে আসো।
রিমা দৌঁড়ে যায় স্কুলের পাশে। গাড়ি নিয়ে শুভ্র দাঁড়িয়ে। মুখে হাত দিয়ে বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করে রিমা- ভাইয়া, এটা কার গাড়ি? তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে শুভ্রর জবাব, চাকরী হয়েছে। সেখান থেকে নতুন গাড়ি এবং বাড়ি দুটোই পেয়ে গেছি বোনাস হিসেবে। সে কথায় বলার জন্য আসছি। তা কোথায় আপনার বান্ধবী? আনন্দে আত্মহারা রিমা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কিছু না বলে দ্রুত গাড়িতে গিয়ে বসে সে। ভাইয়া, ও আমাদের বাসায় আছে। চলুন…
কিছু বলেনি শুভ্র। গাড়িতে গিয়ে বসে। স্টার্ট দেয় গাড়ি। মিনিট ক্ষাণেকের মধ্যে কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছে যায় ওরা। ইতস্তত শুভ্র রিমাদের বাসায় ঢুকে। রিমার মা পূর্বেই টেবিলে খাবার দিয়ে রেখেছিলেন। শুভ্র সেসবের কিচ্ছু মুখে দেয়নি। এদিকে ওদিক তাকিয়ে শুধু লাবণ্যকে খুঁজতে থাকে। রিমা ওর মাকে পাঠায় লাবণ্যকে আনার জন্য। কিছুক্ষণ পর ওনি ফিরে আসেন। সরাসরি শুভ্রকে জানান- ” বাবা! ও খুব অসুস্থ। কিছুক্ষণ আগে মাথা ঘুরে পরে গেছিল। এখন ঘুমুচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গলে আসবে। ততক্ষণে তুমি খেয়ে নাও।”
অসুস্থ কথাটা শুনে শুভ্রর ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। রিমার জোড়াজুড়িতে এবং ভদ্রতার খাতিরে যাও একটু ভাত নিয়ে বসছিল সেটাও গলা দিয়ে নামছে না আর। হাত ধূয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ে শুভ্র। পাশ থেকে রিমার মায়ের জবাব, সে কি বাবা! প্লেটের ভাত’তো প্লেটেই রইল। তুমি তো কিচ্ছু খেলে না। একটা হাসি দেয় শুভ্র। আসলে আন্টি পেট ভরা ছিল। রিমা আপু কি একটু রুমে আসবেন কথা ছিল। রিমা শুভ্রর পিছুপিছু পাশের রুমে ঢুকে। খাটের একপাশে বসে শুভ্র। রিমা বসে চেয়ারে।
– লাবণ্য এত অসুস্থ আমাকে আগে কেন জানাননি?
— জানতে চেয়েছেন কখনো?
– কবে থেকে ওর এই অবস্থা?
— যবে থেকে ওর মায়ের ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পরেছে।
– মানে? কিসব উল্টাপাল্টা বকছেন?
— ওনি আমার আপন জ্যাঠিমা ভাইয়া। মিথ্যে বলার প্রশ্নই উঠে না।
– ওকে, ফাইন। এটা বলেন কবে থেকে আন্টির এই অবস্থা।
— মাস তিনেক আগে এটা ধরা পরেছে।
– ওহ, এবার বুঝলাম ওর বদলে যাওয়ার কারন। বিয়েটা তাহলে মিথ্যে, তাই না?
— না ভাইয়া। বিয়েটা হচ্ছে।
– মানে কি? ওর মায়ের এ অবস্থা আর ও….?
— আসলে ভাইয়া আমাদের অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন। ওদের অবস্থা আরো শোচনীয়।
ভিষন হতদরিদ্র ওরা। লাবণ্যর যে লোকটির সাথে বিয়ে হচ্ছে সে লোকটি বিবাহিত, দুইটা ছেলে মেয়ে আছে।আসলে লোকটি লাবণ্যর মায়ের চিকিৎসার সব টাকা দিবে বলে ওর বাবা রাজি হয়ে গেছে।
– আর লাবণ্য? সে কি রাজি???
— রাজি না হয়ে যাবে কোথায়? মাকে যে বড্ড ভালোবাসে।
— আমার সাথেই থাকে ও। মায়ের চিকিৎসা হবে, মা আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবে, এটা করবে, ওটা করবে, এসব বলে দিনে অনেক হাসে। কিন্তু রাত্রে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদে।
– আমায় একটু ওদের বাসায় নিয়ে যাবেন?
— কেন?
– আমায় অবহেলার শাস্তি দেবো ওকে।
— মানে ভাইয়া আপনি ওর মায়ের???
– শহরে ভালো সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করব।
শুধু ওর মায়ের নয় ওর ছোট দু’ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচও আমি বহন করব। আমি এখন অগ্রিম কিছু টাকা দিয়ে যাবো। আপনি শুধু একটু হেল্প করোন। রিমা ওর মাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলে। ওর মা জানায়, যা হওয়ার হয়ে গেছে। মনে হয় না ভাইজান বিয়েটা ভাঙ্গবে।
৬মাস পর_ আনুষ্ঠানিকভাবে লাবণ্যর বিয়েটা হয়ে যায়। অনেক বড়সড় অনুষ্ঠান করে বিয়েটা হয়েছে। বর মহাশয়ের অনেক টাকা আছে মানতে হবে। বাসর ঘরটা এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যে লাবণ্যর ঘোর লেগে যায়। ওর কেবলি মনে হচ্ছিল, এটা ওর আর শুভ্রর স্বপ্নের সাজানো সেই ঘরটি। যে ঘরটিকে নিয়ে পরিকল্পনা করে ওরা অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছিল।
“এই নিন ভাবি। সেই কখন থেকে কান্না করতেছে। নিন। কোলে নিন।” ঘোর কাটে লাবণ্যর। ফিরে তাকায় পিছনে। ৪মাসের ছোট্ট বাচ্চাকে লাবণ্যর কোলে তুলে দেয় ননদ সুইটি। লাবণ্য ননদকে প্রশ্ন করে- ” কার বাবু এটা?” স্মিতহাস্যে ননদের জবাব, কার আবার? ভাইয়ার। স্তব্ধ হয়ে যায় লাবণ্য। মুখ দিয়ে কোন কথা সরছে না। ওকে জানানো হয়েছিল লোকটির বউ নেই, ছোট ছোট দুইটা ছেলে মেয়ে আছে। কিন্তু এত ছোট যে হবে সেটা ও কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি।
বাচ্চা দিয়ে ননদ চলে যায়। বোকা লাবণ্য একটু একটু করে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়। ফ্যাল ফ্যাল করে বাচ্চাটা লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে আছে। লাবণ্য বাচ্চাটিকে কাঁধে শুইয়ে ঝাকুনি দিতেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর ননদ এসে বাচ্চাটিকে নিয়ে যায়। শুয়ে পড়ে লাবণ্য। বড্ড মিস করছে শুভ্রকে। মন তো আগেই মরে গেছে। থাকার মধ্যে দেহটা আছে। সেটাও অন্যের কাছে সমর্পণ করে দেয়ার আগে শেষবারের মতো শুভ্রর কন্ঠ শুনার জন্য কল দেয়। রিং হয় কিন্তু রিসিভ হয়নি। আবারো কল দেয়। এবারো রিং হয় কিন্তু রিসিভ হয়নি। আবার কল দিলে কেটে দেয় শুভ্র।
বিছানায় শুয়ে পড়ে লাবণ্য। গুমড়ে কাঁদতে থাকে। রুমের দরজা খুলার শব্দ হয়। লাবণ্য বুঝতে পারে লোকটি আসছে। দ্রুত চোখের জল মুছে নেয়। নিঃশব্দে লোকটি পাশে এসে শুয়ে পড়ে। দশমিনিট অতিবাহিত হয়ে যায়। একটুও নড়েনি লাবণ্য। লোকটিও ক্ষাণিকটা কাছে এগুনো ছাড়া কথা বলেনি কোন। কেটে যায় মিনিট পাঁচেক। লোকটি আরেকটু এগিয়ে আসে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায় লাবণ্য। মিনিট পাঁচেক পর লোকটি আরো একটু এগিয়ে আসে। মিনিট দশেক পর লাবণ্যর অনেকটা কাছে চলে আসে। শরীরের সাথে শরীর স্পর্শ করে। গলা শুকিয়ে আসে লাবণ্যর। অন্ধকারেই লোকটি লাবণ্যর ঠোঁট স্পর্শ করে। শুষে নেয় ঠোঁটের সবটুকু স্বাদ। মিনিট পাঁচেক পর ছেড়ে দেয় লাবণ্যকে। লাবণ্য কাঁদতে পারছে না। দলার মত কিছু একটা কুন্ডলী পাঁকিয়ে আছে ওর গলার ভিতরে। মনের সম্পূর্ণ ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে, নিদারুণ কষ্ট বুকে চেপে লাবণ্য সে রাত্রে নিজেকে সপে দেয় অজ্ঞাত লোকটির কাছে।
সকালে ঘুম ভাঙ্গলে লাবণ্য লোকটিকে দেখতে পায় না। টেবিলে সবাই ব্রেকফাস্ট করছে আর লাবণ্য সোফায় ছোট্ট বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বসে আছে। সবার খাওয়া শেষ, বর মহাশয়ের আসার নাম নেই। বাচ্চাটিকে বড় ভাবি কোলে নিয়ে রুমের দিকে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে। লাবণ্য প্লেট, চামচ ধূয়ে না খেয়েই রুমে চলে যায়। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হয়। পুরো দিনের ভিতর লাবণ্য একবারো ওর বরের মুখ দেখেনি। “শুনেছি লোকটার বয়স আছে অনেক, তাই বলে এত বয়স যে আমার সামনে আসতে লজ্জা পাচ্ছে। মনে মনে ভাবে লাবণ্য।”
লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়েছিল লাবণ্য। ফোনের দিকে তাকায়। ভাবে- রাত অনেক হয়েছে, ভাবি তো এখনো বিজয়কে(বাচ্চা) দিয়ে যাচ্ছে না। যাই। বিজয়কে নিয়ে আসি। বিছানা থেকে উঠতে যাচ্ছিল লাবণ্য। রুমে ঢুকে লোকটি। অন্ধকার রুম। লাবণ্যর কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝাপিয়ে পড়ে ওর উপর। মিটিয়ে নেয় মনের খায়েশ। চোখের জল ছেড়ে দেয় লাবণ্য কিন্তু সে কান্নার কোন শব্দ হয়নি। রাত্রে হার কাঁপিয়ে জ্বর আসে লাবণ্যর। লোকটির একটা হাত লাবণ্যর উপর পরতেই শিউরে উঠে। জড়িয়ে ধরে লাবণ্যকে। শক্ত করে জড়িয়ে। জড়িয়ে ধরার ধরন দেখে মনে হচ্ছে পারলে লাবণ্যকে কলিজায় ভরে রাখবে। লাবণ্যর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এদিকে লোকটি জড়িয়ে ধরেই ক্ষান্ত হননি, কান্না করারও শুরু করে দিয়েছে।
বহুকষ্টে মুখ খুলে লাবণ্য, পানি। লোকটি লাবণ্যকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করে। বিছানায় উঠে বসে লাবণ্য। লাইটটা জ্বালিয়ে অবিন্যস্ত শাঁড়িটা গুছিয়ে নেয়। রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা তুলে তাকায় লাবণ্য। চমকে যায়। পানির গ্লাস হাতে স্বয়ং শুভ্র দাঁড়িয়ে। স্তব্ধ হয়ে যায় লাবণ্য। মুখ দিয়ে কোন কথায় বের হচ্ছে না ওর। দ্রুত পানিটুকু খেয়ে নেয় সে। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে মাথা ঘুরে পরে যায়। ধরে ফেলে শুভ্র। জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে লাবণ্য ফিরে তাকায় শুভ্রর দিকে। যেন সে জানতে চাচ্ছে এসব করার কারণ কি? দৃষ্টির সে ভাষা বুঝে নেয় শুভ্র। চোখেরই জল ছেড়ে দিয়ে ভেঁজা গলায় জবাব দেয়- “শাস্তি”