লাকির নিজের আপন ভাই কে কেমন জানি পশু পশু লাগছে আজ,
কি রকম হিংস্র হয়ে আছে।
বাসায় চিৎকার চেঁচামেচি করে রাগে গজ গজ করে বাহির হয়ে গেলো ।
এদিকে লাকি তো পাগল প্রায় কি ভাবে লিমন কে বিষয়টা জানানো যায়, তখন চিঠির যুগ ছিল।
লাকি জানে তার ভাইটা কেমন ,
ঢাকা ভার্সিটির রাজনৈতিক করা রক্ত গরম ছাত্র।
তার সাথে কোন একটা বড় হলের সভাপতি তাই লাকির ভয়টা একটু বেশী।
রাতে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে আর লিমন এর কথা চিন্তা করছে ও ঠিক আছে তো?
*
হঠাৎ আলো এসে চোখে পড়লো লাকির ভালো করে তাকিয়ে দেখে বেশ দূরে পুকর পাড়ের কবর স্থান থেকে আলো আসছে।
বুজতে পারলো পাগলটারই এ কাজ হাতে ইশারা দিয়ে চুপি চুপি বাহিরে গেলো।
লিমন কাছে আসতেই বুকের সাথে মাথাটা রেখে সে কি কান্না।
আরে পাগলী এত কান্না করছো কেনো আমি ঠিক আছি ছোট ভাই এর নাগালের বাহিরেই ছিলাম।
পাগলিটার কপালে ভালোবাসার স্পর্স দিয়ে হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো থাকলে বিপদ বাড়বে ।
লিমন এর বাড়ি প্রায় দশ মাইল দূরে ভালোবাসার টানে এতদূর এসে প্রায় দেখা করে ।
*
কথায় আছে না ভালোবাসা বাঁধা আসলে তা আরো মজবুত হয় সাথে কয়েক গুন বেড়েও যায় ওদের ক্ষেত্রে তাই হলো।
লিমন এখন আর বাসায় যায় না লাকিদের পাশের এলাকায় দূর সম্পর্কে ভাগনীর বাসায় থাকে।
থাকে বলতে শুধু রাতে দুই চার ঘন্টা ঘুমায় আর সব সময় লাকিকে নজরে রাখে ।
নজরে রাখার কারন হলো পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেয় না কি সেই ভয়ে।
*
স্কুল থেকে আসার পথে হঠাৎ করে লিমন হাজির ও ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বললো তুমি এখানে?
এখনি বাসায় যাও খারাপ কিছু না হতে,
লিমন কিছু তেই শুনলো না তাই বাধ্য হয়েই কথা বলতে বলতে আসতেছে।
কিছু দূর হাটার পর এই পথেই মাহমুদ কে দেখতে পেলো ( লাকির ভাই এর নাম)।
লিমনের হাত চেপে ধরে বলছে প্লিজ তুমি পালিয়ে যাও।
কিন্তু লিমন শুনলো না। হাতটা আরো শক্ত করে ভরসা দিয়ে বললো
তুমি চিন্তা করো না আজ ভাই এর মুখোমুখি হবো যা আছে কপালে তাই হবে।
*
লিমন কে ধরে বাড়ি নিয়ে আসলো:
লিমন : ভাই আমি লাকি কে শান্তি তে রাখবো।
মাহমুদ :••••••••••••
লিমন: আমার অনার্স শেষ হতে আর এক বছর।
তার পরেই কিছু একটা করবো ইনশাআল্লাহ, আমি তো বাবা মা এর একমাত্র সন্তান ও মা এর কাছে সুখে থাকবে মা ও মেনে নেবে।
মাহমুদ: দেখ ভাই তোর কারনে আমার বোন এর অনেক বদনাম হইছে তুই পিছু ছেড়ে দে।
লিমন : আমার থেকে ভালো ওকে কেউ বুজবেনা।
আমার থেকে বেশি ভালোবাসতে কেউ পারবে না।
প্লিজ ভাই দয়া করেন ও কে সর্ব সুখ দিবো ।
মাহমুদ:মাথা গরম করবি না,
তোর কারনে আমার ফ্যামিলির সম্মান অনেক নষ্ট হচ্ছে।
ভালো ভাবে বলছি আর জেনো লাকির সাথে না দেখি ওর বিয়ে ঠিক ।
লিমন: লাকির তো এখনো বিয়ের বয়স হয় নাই।
আপনি একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে অশিক্ষিতের মতো কাজ করছেন কেনো?
মাহমুদ: এই ছেলে আমার বুদ্ধি লোপ পাইছে না কি ?বলেই কলার ধরে মারার জন্য তেড়ে আসলো।
.
তখনি মাহমুদ এর মা বাঁধা দিলো।
কলার ছেড়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো ওরে চলে যেতে বলেন না হয় ওর মা ওর লাশের ও খোঁজ পাবে না।
*
লিমন এখন পাগল এর মত করছে
কারন ও তার মা এর মাথায় হাত দিয়ে কসম খেয়ে বলছে লাকির সামনে আর যাবে না।
ছেলের এ অবস্তা দেখে লিমন এর মা লাকির ঘনিষ্ট কয়েক জন কে ধরে বিয়ের ব্যপারে বুঝাতে কিন্তু ফলে শূন্য ছাড়া কিছুই হলো না।
*
আজ এক জীবন্ত লাশ এর বিয়ে হচ্ছে বিদায়ের বেলায় লাশটার চোখে পানি নেই।
শশুর বাড়ির সবাই কানাকানি করছে রাজপুত্র এর মতো জামাই পেয়ে খুশিতে কান্না আসছে না।
এদিকে লিমন তো কথা বলতে ভুলে গেছে।
মা ধরে খাওয়াই দিলে মন চাইলে খায় না হয় এভাবে থাকে।
এদিকে লিমনের মা আল্লার কাছে বিচার দিচ্ছে ।
*
আজ সতেরো বছর পরেও লিমন এর জন্য চোখের পানি ঝরে লাকির।
তার কারনেই ছেলেটা আজো সংসারী হতে পারেনি।
ষোলটা বছর অভাগী মা ছেলেটা কে কাছে পায়নি দূর প্রবাসে পড়ে আছে।
লিমন যদি সংসার করতো তাও নিজের অপরাধ কম মনে হতো ।
হয়তো মনে একটু শান্তি পেতো।
.
এদিকে লাকি তিন সন্তান এর মা হয়েও মন টা দিতে পারেনি তার স্বামীকে।
এরকম হাজারো লাকি সংসার করে সুখে থাকার অভিনয় করে সন্তান এর মুখের দিকে তাকিয়ে দায়িত্ববান হয়।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক