করোনায় মৃত একটি লাশ দাফনের হৃদয়স্পর্শী গল্প

করোনায় মৃত একটি লাশ দাফনের হৃদয়স্পর্শী গল্প

একটি লা’শ দা’ফ’নের- ছবিতে করোনা আ’ক্রা’ন্ত হয়ে এক মৃ’ত ব্যক্তির লা’শ দা’ফ’নের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে । খুব সতর্কতার সঙ্গে নামানো হলো, যেন কারো শ’রী’রে স্প’র্শ না লাগে। তারপর জা’না’জা। কমপক্ষে এক মিটার করে দূরত্বে দাঁড়িয়ে ১৫ জনের মতো মানুষ। তারা জা’না’জা পড়ালেন মৃ’ত ইসমাইল মোহাম্মদ আবুদুল ওয়াহাবের। তারপর লা’শ নেয়া হলো ক’ব’রের কাছে। কেউ হাত দিয়ে ক’ফিন ধরলেন না। ক’ফিনের কাছে গেলেন ৫ জন।

তার মধ্যে তিনজন সাদা পিপিই পরা। অন্যরা অন্য রঙের। দু’জন ক’ফিনের সামনে ক’ফিনের কাঠের নিচ দিয়ে রশি প্রবেশ করিয়ে দিলেন। অন্য দু’জন পিছন দিকে একই পদ্ধতিতে রশি লাগিয়ে দিলেন। চারজন রশির সাহায্যে ক’ফিনটি আলগা করে তুললেন। রশির সাহায্যেই তা কবরে নামিয়ে দিলেন।

এরপর শেষ করলেন দা’ফ’ন অনুষ্ঠান। এতে লা’শকে মোটেও হাতের স্প’র্শ দিতে হয় নি। এ যেন রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও তালতলা ক’ব’রস্তানে দা’ফ’ন করা মোহাম্মদপুরের সেই মৃ’ত মায়ের দা’ফ’নের মতোই।

ইসমাইলের এই দা’ফন বাড়িতে বসে এ দৃশ্য অনলাইনে লাইভ দেখছিলেন ইসমাইলের মা ও অন্য ৬ ভাইবোন। তারা ইসমাইলের দা’ফ’ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পর্যন্ত না পারায় হাউমাউ করে কাঁদছেন। তাদেরও করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাই কোয়ারেন্টিনে ঘরের ভিতর। এমন হৃদয়স্পর্শী ঘটনা বৃটেনের ব্রিক্সটনের।

বৃটেনে এ যাবত যত মানুষ মা’রা গিয়েছেন তার মধ্যে ইসমাইলই সবচেয়ে কম বয়সী। তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। সে সোমবার একটি হাস’পাতালে মা’রা গেছে। তাকে দা’ফ’ন করা হয়েছে শুক্রবার বিকেলে। এ সময় সেখানে যেসব শোকার্ত মানুষ উপস্থিত ছিলেন তাদেরকে পরস্পর থেকে দুই মিটার দূরত্বে থাকতে বাধ্য করা হয়।

তারা যাতে নিরাপদ থাকেন এ জন্য দেয়া হয় নিরাপত্তামুলক পোশাক, গ্লোভস এবং মাস্ক। তারা যে পদ্ধতিতে ইসমাইলকে কবরে নামিয়ে দা’ফ’ন শেষ করেছেন তা শুধু অনলাইন তার মা ও ৬ ভাইবোন প্রত্যক্ষ করেছে। দক্ষিণ লন্ডনের ব্রিক্সটনে সোমবার দিনের প্রথম ভাগে কিংস কলেজ হাস’পাতালে একা একাই ম’রে পড়ে থাকে ইসমাইল।

এরপর তাকে চিসলেহার্স্টে এটারনাল গার্ডেনস মুসলিম বারিয়াল গ্রাউন্ডে দা’ফ’ন করা হয়। এতে শোকার্ত স্বজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তার দুই চাচা ও কাজিনরা। তাদেরকে দেয়া হয়েছিল পিপিই পোশাক। সবাইকে জানাজার সময় কমপক্ষে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করা হয়। জা’না’জা পড়ান ক’ব’রস্তানের একজন হুজুর। তারপর রশির সাহায্যে যখন ইসমাইলকে অন্ধকার মাটির প্রকোষ্ঠে নামিয়ে দেয়া হতে থাকে, তারা সেখানে দাঁড়িয়ে বুক ভরা ব্য’থা নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু তা প্রত্যক্ষ করেন।

বৃটেনে ভ’য়া’ব’হ করোনা ভাইরাস এভাবেই একের পর এক মানুষের প্রা’ণ কেড়ে নিচ্ছে। এসব মৃ’ত মানুষকে স্বজনরা পর্যন্ত স্প’র্শ করতে পারছেন না। প্রিয়জনের দা’ফ’ন এতটা আ’ত’ঙ্কি’ত পরিবেশে হবে এমনটা কেউ কল্পনাও করতে পারেন নিন। বলা হয়েছে, ৬০ বছরের বেশি বয়স এমন বৃটিশ নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি মা’রা’ত্মক অ’সুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

তবে তরুণ, শিশু বা কিশোর বয়সীদের মধ্যেও এমন বিয়োগবিধূর মৃ’ত্যুর ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ বেশ কয়েকজন তরুণ, যুবা মা’রা গেছেন করোনা ভাইরাসে। এর মধ্যে রয়েছেন দু’জন নার্স। সম্প্রতি এমন বেশ কয়েকজন যুবক-যুবতী মা’রা গেছেন করোনা ভাইরাসে। তার মধ্যে রয়েছে ১৯ বছর বয়সী শেফ লুকা ডি নিকোলা, ৩৩ বছল বয়সী ফার্মাসিস্ট পুজা শর্মা, ২৮ বছর বয়সী পেইন্টার ও ডেকোরেটর এডাম হারকিনস সুলিভান প্রমুখ।

ইসমাইলের পিতা পাঁচ বচর আগে ক্যান্সারের সঙ্গে ল’ড়া’ই করে মা’রা গেছেন। ইসমাইলের মা সাদিয়া তার ৭ সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। কিন্তু শেষ বারের জন্য নিজ হাতে সন্তানের লা”শটাও স্প’র্শ করতে পারলেন না। একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা, তার সঙ্গে সেই সন্তানের লা’শ স্প’র্শ করতে না পারা- এই দুই ক’ষ্টে তিনি পাথর হয়ে গেছেন। তাকে বাধ্য করা হয়েছে অনলাইনে দা’ফ’ন অনুষ্ঠান দেখতে।

সে দৃশ্য বার বার দেখছিলেন আর চেতনা হারিয়ে ফেলছিলেন সাদিয়া। কি করে সহ্য করবেন এত বড় আ’ঘা’ত! কোন মা পারেন তার সন্তানের মৃ”ত্যু মেনে নিতে! কোন মা পারেন তার সন্তানকে শেষ বিদায়ের আগে স্প’র্শ ছাড়া ছেড়ে দিতে! কোন মা পারেন এমন কঠিনকে মেনে নিতে!!

ডেইলি মেইল লিখেছে, ইসলামী রীতিতে মৃ’তদে’হকে প্রথমে মসজিদে নেয়া হয় জা’না’জার জন্য। কিন্তু বর্তমানে সব মসজিদ বন্ধ। তাই ইসমাইলকে কোনো মসজিদে নেয়া হলো না। তাকে ম’র্গ থেকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হলো ওই ক’ব’রস্তানে। সেখানেই ১৫ জনের মতো মানুষ তার জা’না’জা পড়ালেন। তারপর লা’শ নামিয়ে দিলেন ক’ব’রে। কি করে এই ক’ষ্ট সইবেন মা সাদিয়া!!!

ইসমাইলের আগে থেকে কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল না। শো’কগ্রস্ত পরিবার তাকে অতিশয় ভদ্র ও দয়ালু মনের বালক বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসমাইলের ছিল হৃদয়কাড়া হাসি। গত শুক্রবার তার শ’রী’রে করোনা ভাইরাস পজেটিভ ধরা পড়ে। এর মাত্র তিন দিন পরেই ফুসফুস ও হার্ট কাজ না করায় সে মা’রা যায়।

বৃটেনে জানামতে, সেই প্রথম শিশু, এই ভাইরাসের কাছে প্রা’ণ হারালো। ইসমাইলের পারিবারিক বন্ধু মার্ক স্টিফেনসন বলেছেন, ইসমাইলের ছোটভাই ও বড় বোনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের হাল্কা লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাদের শ’রী’রের তাপমাত্রা বেড়েছে। মুখের স্বাদ ন’ষ্ট হয়ে গেছে। মার্ক স্টিফেনসন এই শোকার্ত পরিবারটির জন্য সাহায্যের একটি তহবিল গঠন করেছেন। এর নাম দিয়েছেন- গো ফান্ড মি

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত