–মন খারাপ?
 –হুম।
 –আর কতদিন এভাবে চলবে?
 –জানিনা।
 –কেনো নতুন করে জীবন শুরু করছো না?
 –নতুন করে জীবন শুরু করা সম্ভব নয়।
 –তোমায় রোজ দেখি মন খারাপ করে বসে থাকো কিন্তু কেনো?
 –কি করবা জেনে?
 –যদি তোমার মন খারাপ ভালো করে দিই।
 –পারবা না।
 –তবুও চেষ্টা করবো।প্লিজ আমায় বলো কেনো এতো মনমরা হয়ে বসে থাকো তুমি।
 –আচ্ছা অনেক্ষন হলো এইখানে আসছি এইবার বাসায় যেতে হবে।
 –না আগে বলো তারপর তোমায় যেতে দিবো।
 –কেনো জেদ করছো?যেনে কি আমার হারানো সব ফিরিয়ে দিতে পারবা?পারবা না।আচ্ছা থাকো আমার এখন যেতে হবে বাই।
 –এই শুনো শুনো।
 .
 পিছনে আর ঘুরে তাকালাম না তাকালে হয়তো কারু করুণাময় মায়াভরা চেহারা দেখতে হতো।চারিদিক ঝাপসা দেখছি কারন চোখ ভর্তি অশ্রু।অতীত কে যতই ভুলতে চেষ্টা করি ততই আরো মনে পরে কেনো ভুলতে পারিনা।এখন গন্তব্য বাসার পথে বেশিদূর না ১০মিনিট হাঁটলেই পেয়ে যাবো।কেনো যেনো পা চলছেনা শুধু বারবার অতীত মনে পরছে।অনেক কষ্টে বাসায় আসলাম।আম্মুকে বললাম এক গ্লাস পানি দিতে।শরীরটাও খুব ক্লান্ত শুয়ে পরলাম।চোখ টা লেগে এসছে খুব ঘুম পাচ্ছে।উপরে ফ্যানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই চোখ বুঝে ঘুম চলে আসলো।
 দূর থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে আমার দিকে আমিও তার দিকে দৌড়ে যাচ্ছি হটাত সে থেমে গেলো আমিও থামলাম।মেয়েটা মিলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের ভিতর আমি আর হাটতে পারছিনা।আমার পায়ে মনে হয় কে যেনো শিকল পরিয়ে দিছে।মেয়েটা হাত বারিয়ে করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখি ঘামে ভিজে গেছে।পানি পিপাসা লাগছে বড্ড পাশেই পানি।পানি হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলাম।নাহ্ কিছু ভালো লাগছেনা কি করবো আমি কি করলে এই কষ্ট থেকে নিস্তার পাবো আমি।কেনো তুমি আমার জীবনে আসলা আবার কেনো চলে গেলা।দরজা আটকিয়ে দিলাম দিয়ে খাটে এসে বসলাম কাঁদতে মন চাচ্ছে।চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে কিন্তু মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছেনা।চোখ গেলো অরুণির দেওয়া নীল ডায়রি টার দিকে।এটাই তার দেওয়া প্রথম ও শেষতম উপহার।ও বলেছিলো যখন আমি পাশে থাকবো না তখন এই ডায়রি পড়তে।হুম আমি রোজ পড়ি ডায়রি টা।মা দুপুরে খাবার জন্য ডাকছে।খেতে ভালো লাগছেনা একবার আম্মু কে বললাম এখন খাবোনা আমি তবুও জোর করে নিয়ে গেলো খাবার টেবিলে।
 .
 –রাকিব এইভাবে আর কতদিন (খেতে খেতে বাবা বলে উঠলো আর আমি মাথা নিচু করে আছি)
 –দেখ বাবা জীবন কারু জন্য থেমে থাকেনা।(মা)
 –মা আমি নতুন করে জীবন গড়তে পারবোনা।প্লিজ আমায় আর নতুন করে জীবন গড়তে বলোনা।
 –দেখ বাবা সবারি তোঁ আর সব আশা পূরণ হয়না তেমনি তোরও হয়নি এতে তোঁ তোর কোন দোষ নেই আর সেই মেয়েরও কোন দোষ নেই।(মা)
 –তোঁ আমায় এখন কি করতে বলছো?
 –দেখ বাবা আমাদের অনেক বয়স হইছে।তোর বাবা আজকাল ঠিকমতো কাজ করতেও পারেনা আর আমারও বাসায় একা একা থাকতে ভালো লাগেনা তাই বলছি কি এবার একটা বিয়ে করে নে।
 –মা তোমাদের আর কতবার বলবো আমি বিয়ে করতে পারবোনা তবুও কেনো একি কথা বারবার বলো।মানুষের মন একটাই আর মন একজনকেই দেওয়া যায় সবাই কে নয়।
 –রাকিব আমি তোর বাবা হয়ে তোর কাছে অনুরোধ করছি তোর জন্য বিয়ে না করলি অন্তত আমাদের জন্য একটা বিয়ে কর।আমাদের একটা মেয়ে দরকার যে আমাদের আগলে রাখবে।(কি করবো ভাবছি অনেকদিন হলো সবাই কে না করে আসছি কিন্তু আর কতো না করবো এইবার হ্যাঁ টা বলেই দিই)
 –হ্যাঁ আমি রাজি তোমরা মেয়ে দেখো।
 –মেয়ে আমাদের দেখা হয়ে গেছে শুধু এখন বিয়ের তারিখ ঠিক করা।(আম্মু আর আব্বু আজ ভিষন খুশি আর খুশি হবেনা কেনো তাদের একমাত্র ছেলের বিয়ে।তাদের সুখেই আমি সুখী)
 কিছুক্ষণ পর বাবা এসে জানিয়ে দিয়ে গেলো বিয়ের তারিখ।আজ থেকে পনেরো দিন পর আমার বিয়ে।আমার সেইদিকে কোন খেয়াল নেই।বাসা থেকে বেড়িয়ে এলাম কিছুক্ষণ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।
 .
 –কিরে সারাদিন এতো মেয়েদের মতো ঘরে বসে থাকিস কেনো?(রহিম)
 –সবিই তো জানিস তাহলে আবার বলিস কেনো?
 –দেখ মামা অনেক হইছে এইবার বিয়ে করে নে।
 –হুম মামা।
 আরো কিছু বন্ধুরা আসলো আড্ডা দিতে।সবার সাথে আলাপ করা শেষ হলে বাসার পথে রওনা দিলাম।শরীর টা খুব ভার ভার লাগছে।বাসায় এসে রাতের খাওয়ার পর বাবা বললো কালকে আমার জন্য মার্কেট করতে যাবে আমি বললাম আমি যাবোনা কে শোনে কার কথা যেতেই হবে।খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম।অরুণির দেওয়া ডায়রি টা পড়তে খুব মন চাচ্ছে।ঘরের দরজা আটকিয়ে পড়তে শুরু করলাম কিছুক্ষণ পড়ার পর ডায়রি টা ধরে কাঁদতে শুরু করলা “অরুণি কেনো করলা এমন টা আমি কি অপরাধ করছিলাম যার কারনে আমায় এতোবড় শাস্তি দিলা আমিতো বেশীকিছু চাই ছিলাম না তাহলে কেনো এমন করলা।আমি তোমায় ছাড়া অন্য কোন নারীর সাথে কিভাবে সংসার করবো?বলো অরুণি বলো চুপ করে থেকোনা।তুমিতো সবাই কে ফাকি দিয়ে অনেকদূর চলে গিয়ে অনেক আনন্দে আছো কিন্তু আমি যে অনেক কষ্টে আছি”
 –রাকিব এই রাকিব ঘুম থেকে ওঠ এখন।
 মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল।টেবিলের উপর রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছিলাম।উঠে ফ্রেস হয়ে বাহিরে গিয়ে দেখি আপু,দুলাভাই,আর আমার ভাগ্নি রিতু আসছে।
 –কি সালা বাবু ঘুম তাহলে ভাঙ্গল।
 –হুম দুলাভাই।কখন আসছেন?
 –এইত মাত্র আসলাম।
 .
 অনেক্ষন দুলাভাই আর রিতুর সাথে দুষ্টামি করলাম কিছুক্ষণ বাদে বাবা এসে বললো রেডি হতে শপিং করতে যাবে।রেডি হয়ে সবার সাথে শপিং করতে গেলাম।অনেককিছু কেনার পর জুতার দোকানে যাওয়ার সময় তৃষ্ণার সাথে দেখা হলো।
 –আরে তৃষ্ণা তুমি এখানে?
 –আমারো একি প্রশ্ন।সবাই কে নিয়ে দেখছি আসছো।তা কি বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য আসছো নাকি?
 –হুম।(ওর মুখটা দেখলাম শুকিয়ে গেলো।হুম ও আমায় ভালোবাসে এটা আমি জানি কিন্তু আমার মনে জায়গা করে নিতে পারেনি)
 –ভালোতো।আমিও বিয়ের শপিং করতে এসেছি।
 –কিহ।ভালোতো(বুকের মাঝে মোচড় দিলো)
 কেনো ওর জন্য আমার এমন হবে।
 –আচ্ছা বাই হয়তো আর আমাদের দেখা হবেনা।আমার বিয়ের দাওয়াত রইলো।
 .
 আর কিছু বললাম না চলে আসলাম ওর কাছ থেকে এদিক আমাদের শপিং করা শেষ।বাড়িতে আসলাম শরীর টা খুব ক্লান্ত তাই এসেই সুয়ে পরলাম।রাতে খাবার ও খেলাম না রিতু এসে অনেকবার ডাকলো তবুও গেলাম না।কিছুক্ষণ বাদে ঘুমিয়ে গেলাম।প্রতিদিন যে স্বপ্ন দেখতাম আজ সেই স্বপ্ন দেখলাম না আজ একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।বিছানা থেকে উঠে ছাদের দিকে পা বারালাম।মনটা ভিষন খারাপ কিন্তু কেনো?অনেক্ষণ ভাবার পরেও যখন কারণ খুজে পেলাম না তখন আবার প্রথম থেকে ভাবতে শুরু করলাম।হুম এখন অংকটা সমাধান করতে পারলাম।যখন থেকে শুনেছি তৃষ্ণার বিয়ে তখন থেকে মন খারাপ কিন্তু কেনো ওর জন্য আমার মন খারাপ হবে?তবেকি আমি ওরে…না না এটা হতে পারেনা।আমি কেনো ওরে ভালোবাসতে যাবো।সেইরাত ছাদেই কাটালাম।এইভাবে তৃষ্ণার কথা ভাবতে ভাবতে কাটতে থাকলো দিন।দেখতে দেখতে দশটা দিন কিভাবে চলে গেলো বুঝতেই পারলাম না।তৃষ্ণা যেখানে বসে থাকতো সেখানে আমি রোজ গেছি কিন্তু তার দেখা পাইনি।কেনো যেনো তাকে খুব দেখতে মন চাচ্ছে।
 .
 আজ আমার বিয়ে সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত।আমাদের যত আত্মীয় সজন আছে সবাই আসছে সবার মুখেই খুশির আমেজ শুধু আমি ছাড়া।আমার সব ফ্রেন্ডরা আসছে।সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর এখন গাড়িতে গিয়ে বসবো।মনটা কেমন জানি করছে মনে হচ্ছে কিছু একটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি দুলাভাই আর কিছু বন্ধু এক গাড়িতে আর বাকিরা অন্য গাড়িতে।গাড়ি ছুটে চলেছে সা সা করে বাতাস ভেদ করে।গাড়ির ভিতর ওরা কত কথা বলছে কিন্তু আমি মন মরা হয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছি।গাড়ি এসে থামলো বিয়ে বাড়ির গেটে সবাই বিয়ের গেট আটকিয়ে তারা টাকা তোলার চেষ্টা করছে আমার এইসব নেকা মনে হচ্ছে আবার এটাও ভাবলাম আমার মনে কোন রং না থাকতে পারে কিন্তু তাদের তো আছে।বিয়ের সময় কবুল বলার সময় শুধু নাম টা শুনেছি।আম্বিয়া,হ্যাঁ নাম তার আম্বিয়া এখনো দেখিনি তাকে এবং কি যখন তাকে নিয়ে গাড়িতে বসছি তখনও তাকে একবারও দেখিনি।
 .
 মানুষ বাসর রাতে সবার সাথে আড্ডা দিয়ে ঘরে যায় কিন্তু আমি ছাদে দাড়িয়ে আকাশের তাঁরা গুনছি।কিছুক্ষণ বাদে দুলাভাই ও কিছু বন্ধু এসে আমায় ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে গেলো।ঘরে ঢুকেই প্রথমে যে কথাটা বললাম সেটা হলো।
 –দেখুন আম্বিয়া আপনাকে আমি বিয়ে করেছি এটা সত্য আপনার যেটা দরকার সেটাই এনে দিবো কিন্তু আপনাকে আমি আমার মনে যায়গা দিতে পারবোনা।
 –আমাকে তোমার পায়ের কাছে একটু যায়গা দিলেই হবে আমার বেশীকিছু চাইনা।(কথাটা কেমন চেনা চেনা লাগছে মনে হয় কোথাও শুনেছি আবার তুমি তুমি করে বলছে আমায়)
 –আচ্ছা আপনি বিছানায় শুয়ে পরুন আমি ফ্লোরে শুয়ে পরছি।
 –না না তুমি উপরে সুয়ে পরো আমি নিচে শুবো।
 –যেটা বলছি সেটাই করেন।
 বালিশ আর কম্বল নিয়ে নিচে সুয়ে পরলাম।আজ যেনো ঠান্ডা একটু বেশিই পরছে।শীতে কাঁপতে কাঁপতে ঘুম আসলাম।
 রোজ এলার্ম এর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে কিন্তু আজ একটা মেয়ের ডাকে ভাঙ্গলো।ঘুমের ঘোরেই তাকে বললাম।
 –কে আপনি?আমার ঘরে কেমনে আসলেন(বলেই আবার ঘুম)
 –আমি তোমার কালকে বিয়ে করে আনা বউ।
 –আমি কখন বিয়ে করেছি আমি তো বিয়ের স্বপ্ন দেখেছি।
 –চোখটা খুলে দেখো একবার।
 চোখটা কচলাতে কচলাতে খুললাম।
 একি এটা কি।এ আমার ঘরে কি করছে?আমার বিয়ে করা বউ কোথায়?
 –এএএ তুতুমি?আমার কালকে বিয়ে করা বউ কই?
 –বিয়ে করা বউ কই মানে?ওই আমি তোমার বউ।
 –আমার বউ তো আম্বিয়া।
 –আমার নাম আম্বিয়া জাহান তৃষ্ণা।
 –সবাই মিলে আমায় এইভাবে মুরগি বানাইছো?
 –হুম এইবার বিছানা থেকে ওঠো।
 –তৃষ্ণা একটা কথা বলি?
 –হুম বলো।
 –কেনো আমায় বিয়ে করলা?আমার ভিতর তো কিছু পাইবানা।আমি একটা মরিচীকা।
 –কিছু পাই আর না পাই তোমাকে পেলেই হবে।যাওতো এইবার ফ্রেস হয়ে এসো।
 –হুম।
 সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে পরলা সেই জায়গাতে যেখানে অরুণির সাথে রোজ ঘন্টার পর ঘন্টা বসে কথা বলতাম।জায়গা টা দিনে দিনে পরিবর্ত হয়ে যাচ্ছে।ওইতো গাছটা,এই গাছের তলায় বসে থেকে অরুণির সাথে কথা বলেছি ফোনে।কিছুক্ষণ বসে থাকলাম সেখানে।মনে পরছে পুরনো স্মৃতি কতো দুষ্টমি কতো আহ্লাদ সব কেমন জেনো নিমিষে শেষ হয়ে গেলো।
 .
 উহু ধ্যাত এই সময়ে কে আবার ফোন দিলো।বাসা থেকে ফোন দিছে এই বাসার লোকগুলোও না কেমন জানি।
 –হুম মা বলো।
 –কই তুই হা তোর শ্বশুর বাড়ি থেকে লোক আসছে তাবাদে পাড়ার সবাই আসছে তোকে আর বৌমা কে দেখতে তাড়াতাড়ি বাসায় আঁয়।
 –হুম যাচ্ছি।
 .
 বাড়ি ভরা লোকজন তার ভেতর বেশী মেয়েরা কয়েকজন চেনা মেয়ে থাকলেও বাকিদের আটা ময়দার জন্য দেখা যাচ্ছেনা।এর মাঝে কয়েকটা ছেলেকে আমি জানি এরা মেয়ে বাড়ি থেকে আসছে আশিক,হিমেল,মহুয়া,রিচি এরা সবাই তৃষ্ণার কাজিন এদের পিক আমায় দেখিয়েছে।সবার সাথে আলাপ করার পরে ঘরে গেলাম।
 একি আমার ঘরে এতো আটার বস্তা কেনো?যেদিকে তাকাই সেদিকেই আটার বস্তা।চোখ গেলো টেবিলের দিবে একটা মেয়ে কি জেনো পড়ছে কিছুক্ষণ বাদে খেয়াল করলাম ও অরুণির দেওয়া ডায়রি টা পড়ছে সাথে সাথেই কেরে নিলাম তার হাত থেকে।
 –সরি আপু আপনি এইটা পড়তে পারবেন না।
 মেয়েটা শুধু করুন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে কারণ সে কিছুটা হলেও কারু দম বন্ধ করা আর্থনাত করার লেখা পড়েছে।
 সারাদিন এত খাটনির পর এখন সময় একটু বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার।অরুণির ডায়রি টা নিয়ে বিছানায় সুয়ে পড়লাম।ওহ্হো লাইটে আলোতে লেখাগুলো ঠিক ভালো ভাবে চোখে পড়ছেনা চশমা টা কোথায় রাখলাম খুজে পাচ্ছিনা।
 –এই নাও তোমার চশমা(তৃষ্ণা চশমা টা দিলো)
 –ধন্যবাদ।
 –একটা কথা বলার ছিলো তোমায়।
 –হুম বলে ফেলো।
 –কি আছে এই ডায়রি তে যেটা আমার বান্ধবির কাছ থেকে ওইভাবে কেড়ে নিলা আর কেনইবা পড়ছো এটা?প্লিজ বলো আমায়।
 –আরে কিছুনা এমনি পড়ি এটা আমি।
 –তাহলে আমার বান্ধবি কেনো বললো এর ভিতর কারো আর্তনাদ এর কথা আছে বলো আমায় আজ আর কোন বাহানা নয় আজ আমায় বলতেই হবে।
 –(আমি জোরে বলে উঠলাম)শুনবা সেই আর্তনাদ এর কথা শুনবা সেই চার দেওয়ালের মাঝে আটকে থাকা একটি মেয়ের কথা শুনো তাহলে।
 .
 আজ থেকে দুই আগের কথা।তখন ছিলো শীতকাল কলেজের সব বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করি এইবার ঘুরতে যাবো কিন্তু কোথায় যাবো সেটা মাথায় আসছিলো না।অনেক্ষণ ভাবার পর রহিম বলে উঠলো এইবার সে তাদের গ্রামে বেড়াতে নিয়ে যাবে।আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম সাথে আরো কয়েকজন এর মাঝে দুইজন বললো কক্সবাজার যাবে কিন্তু আমি তাদের অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম যেতে।আমার অনেকদিনের স্বপ্ন গ্রাম গঞ্জ এ ঘুরতে যাওয়ার আজ যখন সুযোগ পেয়েছি তবে ছাড়ছিনা।আমরা মোট সাত জন ঘুরতে যাবো এরমধ্যে রাজের গাড়ি আছে তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম ওর গাড়িতেই যাবো।হুম যেমন ভাবা তেমন কাজ ঠিক হলো কালকেই যাবো।আমি,রাজ,নয়ন,রহিম,রনি,রানা
 ,মাহফুজ এই কয়জন আমরা।সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম রাজ ড্রাইভিং করছে আর আমরা উল্লাস করছি এর মাঝেও গাড়ির ভিতর একটা গান ছাড়া হয় “গ্রাম গঞ্জের এই রাঙামাটি”।প্রায় তিন ঘন্টার পর পৌছলাম শ্রীধাইকুড়া গ্রামে।এটা রহিম দের গ্রাম।গ্রামের ছোট বাচ্চা গুলো গাড়ির পিছনে ছুটছে।গাড়ি এসে থামলো রহিমদের বাড়ির উঠানে।বাড়ির ভিতর থেকে রহিমের। মা-বাবা ও রহিমের ছোট্ট বোন।রাতে অনেক গল্পগুজব করে খাওয়া দাওয়া করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো।আমার আবার একটা অভ্যাস আছে ফজরের আজান দিলে ঘুম ভাঙ্গে আজকেও ভাঙ্গলো উঠে নামাজ পরে বাহিরে হাঁটতে বের হয়ে গেলাম।কিছু চিনি না এইখান কার তাই বেশিদূর গেলাম না।দূরে একটা পুরনো মন্দির দেখতে পাচ্ছি।একটু কাছে যেতেই দেখলাম এক অপূর্ব দৃশ্য।
 একটা মেয়ে,হুম একটা মেয়ে মন্দিরের মূর্তির সামনে হাত জোর করে দাঁড়িয়ে আছে,পরনে তার একটা চাদর।ঠোটে মিষ্টি কালারের লিপস্টিক দেওয়া উমমম দেখতে একেবারে স্বপ্ন কুমারী।এদিকে রহিম আমায় ডাকতে শুরু করছে।ওর দিকে তাকিয়ে বললাম এইখানে আয়।এদিকে তাকাতেই মেয়েটা উধাও।
 –কিরে রাকিব এতো সকালে এইখানে কি করিস?
 –দোস্ত একটা মেয়েকে দেখলাম মন্দিরে এসেছে কি সুন্দর দেখতে।
 –মেয়ে আর এতো সকালে।দোস্ত রাতে মনে হয় তোর ভালো ঘুম হয়নি।
 –তাহলে কি মেয়েটা ভুত ছিলো?
 –হতেও পারে এই জায়গা টা ভালো না।
 –চল এখন ব্রাশ করে নাস্তা করবো।
 –হুম চল।
 তারপর সবাই একসাথে নাস্তা করে গ্রামটা দেখতে গেলাম।এতো সুন্দর দৃষ্ট আমি আগে কখনো সামনা সামনি দেখিনি।এখন শীতকাল তাই চাষিরা ধান কেটে পিঠা বানাতে ব্যস্ত কয়েজনার বাড়িতে পিঠাও খেলাম এটাই তো জীবন।সারাদিন ঘুরাঘুরি করে কাটালাম।রাতে শুবার সময় ঘরিতে এলার্ম দিয়ে রাখলাম।আজকেও সকালে উঠলাম উঠে ব্রাশ করতে করতে পুরনো মন্দিরের দিকে গেলাম।হুম আজকেও মেয়েটা ঠিক কালকের মতো করে আছে।এভাবে আমি তাকে চারদিন দেখছি,পঞ্চম দিনে দেখতে গেলাম তাকে।
 কি ব্যাপার আজকে সে কই গেলো?যে মেয়ে রোজ আমার আগে আসে এইখানে সে আজকে আসছেনা কেনো?অসুস্থ নয়তো?
 –ওই এইখানে কি?
 পিছন থেকে এক নরম হাত কাঁধে হাত রেখে কথাটা বললো।
 –কো কো কই কিছুনাতো এমনি হাঁটতিছি।
 –এমনি হা এমনি। আপনাকে আমি রোজ দেখি ওই গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখেন আমায়।দেখেতো এই গ্রামের মনে হচ্ছেনা।কার বাড়িতে আসছেন? নাম কি?
 –রহিমদের বাসাতে বেড়াতে আসছি। আমার নাম রাকিব।
 –ওই রহিম টেকোদের বাসায় আসছেন সালা এক নাম্বারের খাটাস।
 –আপনার নাম কি?
 –কেনো বলবো আপনাকে? আর শোনেন কাল থেকে জেনো এইখানে না দেখি আপনাকে।
 –আচ্ছা দেখা যাবে।
 –আচ্ছা মানে আবার দেখলে পা ভেঙ্গে লুলা বানিয়ে দেবো।
 –আচ্ছা বাবা যাচ্ছি।
 .
 এই বলে চলে এলাম সেখান থেকে।
 –কিরে ওরে পছন্দ হয় নাকি?(রহিম কোথা থেকে এসে আমায় কথাটি বললো)
 —হুম মামা শুধু পছন্দ নয় ভিষন পছন্দ হয়।
 –বুঝলাম কিন্তু দেখ রাকিব এটা কখনো সম্ভব নয় আমরা এক ধর্মের ওরা আরেক ধর্মের।
 –তাতে কি হয়েছে।আগে এটা বল ওর নাম কি?
 –অরুণিতা পুরো নাম অরুণিতা বোস।
 –ওয়াও নামটা খুব সুন্দর রে নামের মতোইই ঝাঝ তার।
 –হুম চল এবার সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
 –হুম চল।একটা কথা বল ওদের বাড়ি কই?
 –ওইদিক একটা সাদা রং এর বাড়ি দেখতে পাচ্ছিস?
 –হুম।
 –ওই বাড়ির পাশের বাড়িটা ওদের।
 .
 সারাদিন ঘুরাঘুরি করলাম বেশ কয়েকবার অরুণিতার বাসার সামনেও গেছি কিন্তু দেখা পাইনি।এখন শুধু অপেক্ষা সকালের।ওর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।সকালে ঘুম ভাঙ্গলেই চলে গেলাম পুরনো মন্দিরের কাছে।আজকেও মেয়েটা প্রতিদিনের মতো হাত জোর করে প্রার্থনা করছে।আজ যেনো তার রুপ উপচে পরছে।গাছটাকে ধরেই ভাবনায় ডুবে গেলাম।ভাবনায় ছেদ পরলো অরুণির ডাকে।
 –ওই আপনাকে না আমি এইখানে আসতে মানা করছি তবুও কেনো আসছেন?
 –কই বলছেন?আপনি বলছেন ওইখানে না যেতে দেখুন আমি ওইখানে যায়নি।
 রাগে গজগজ করতে করতে চলে যাচ্ছে অরুণি দিলাম এক ডাক।
 –অরুণিতা।
 বালিকা তার রাগ মাখা মুখ নিয়ে এমন ভাবে পেছনে তাকলো যে আমি মাটিতে পরে গেলাম।তা দেখে সেকি হাসি তার থামার কোন নাম ই নাই তার।তবে তার তাকানোর দৃশ্য টা আমার হৃদয়ের ভিতর দাক টেনে গেলো।এইভাবে রোজ সকালে তাকে দেখার জন্য যেতাম সেখানে এরর মাঝে অরুণির সাথে আমার ভালো বন্ধুক্ত হয়ে যায়।অরুণির একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগে সেটা হলো বাচ্চাদের মতো জেদ করা।এর মাঝেই ওদের গ্রামে মেলা হয়।মেলার দিনে অরুণিকে অনেকগুলো রেশমি চুড়ি কিনে দিই তাতেই মেয়েটা ভিষন খুশি হয়।এই করতে করতে একদিন তাকে প্রপোজ করে বসি কিন্তু অরুণি একটা কথাই বলেছিলো।
 –এটা সম্ভব না।
 –কেনো অরুণি এটা সম্ভব।
 তারপর অনেক ঘুরাঘুরি কান্নাকাটির পর অরুণিতা রাজি হয়।নতুন এক জীবনে পা দিই আমি।খুব ভালো লাগতো তার শ্বাসন জীবন টাকে মনে হতো স্বর্গ।যেদিন ঢাকা আসবো সেদিন সকালবেলা তার সাথে ওই মন্দিরে দেখা করতে যাই।আমার যাওয়ার কথা শুনে সোকি কান্না তার আমার হাত এমন ভাবে ধরেছিলো জেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবো।
 মনটা ভিষন খারাপ অরুণিতা কে রেখে যাচ্ছি তাই।আঠারো দিন থাকলাম এই গ্রামে।
 সকালে নাস্তা করে ব্যাগ গুছিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।অরুণিতাকে খুব দেখতে মন চাচ্ছে।ওইতো অরুণি দূরে দারিয়ে আছে।আমার তখন কেমন যে লাগছিলো বলে বোঝাতে পারবোনা।মনে হচ্ছিলো দেহো থেকে কলিজাটা আলাদা হচ্ছে।গাড়ি স্টার্ট দিলো রাজ আর আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে অরুণিতার বলা রেকর্ড করা কথা গুলো শুনছি।সারাটা পথ মন খারাপ করে আসছি।বাড়িতে এসেই অরুণিকে ফোন দিয়ে জানালাম আমরা পৌছেছি আর কান্নাকাটি করতে বারন করলাম।এরপর থেকে শুরু হলো আমাদের ফোনে কথা বলা।ওই বট গাছ টার নিচে বসে প্রতিদিন কথা বলেছি আমরা।সব রিলেশনে কোন না কোন সমস্যা থাকে তেমনি আমাদেরও ছিলো।একদিন ফোনে কথা বলার সময় অরুণির বড় ভাই দেখে ফেলে জার কারনে ওর পরিবার থেকে ওর বিয়ে ঠিক করে।এর পর দুইদিন আমাদের কথা হয়না তারপর হটাত একদিন আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে।ফোনের ওপাশে কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি।
 –রাকিব আমায় প্লিজ এখান থেকে নিয়ে যাও নইলে এরা আমায় বিয়ে দিবে।
 –অরুণি আমি এই দুই দিন কথা বলতে না পেরে পাগল হয়ে গেছি।রেডি থেকো আজ রাতেই আমরা পালাবো।
 .
 রাত একটা আমি আর রহিম দারিয়ে আছি ওই মন্দিরের কাছে।ওইতো দূরে কাউকে দেখতে পাচ্ছি হুম এটা অরুণি আসছে।এসে হাপাতে হাপাতে বললো।
 –তাড়াতাড়ি চলো বাসা থেকে বেরনোন সময় দাদা দেখে ফেলছে।
 গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সময় ই গ্রামের লোকজন এসে আমাদের আটকিয়ে ফেলে।অরুণিকে এসেই দুটো থাপ্পড় দেয়।তারপর আমায় বলে।
 –দেখো ভাই তুমি এক ধর্মের আর আমরা এক ধর্মের এটা কখনো সম্ভব নয়।তুমি যদি আমার বোনকে সত্যিই ভালোবেসে থাকো তাহলে ত্যাগ করো তোমার ধর্ম।
 পিছপা হয়ে যাই আমি পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে গেলাম।অরুণিকে তার ভাই নিয়ে যাচ্ছে।বারবার অরুণি পেছনে তাকিয়ে মায়াময় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছ।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে চলে আসলাম ঢাকা।তার প্রায় চারদিন পরে অরুণির নাম্বার থেকে কল আসে।রিসিভ করার সাথে সাথেই একটা ছেলের কান্না ভরা আওয়াজ ভেসে আসলো।
 –হ্যালো রাকিব আমি অরুণিতার ভাই বলছি।
 –হ্যাঁ বলেন।
 –অরুণি আর নেই ভাই।অরুণি আত্মহত্যা করছে।
 হাত থেকে টুপ করে ফোনটা ফ্লোরের উপর পরলো সাথে আমিও পরে গেলাম তারপর আর কিছু মনে নেই।যখন হুস আসে তখন আমি হাসপাতালের বেডে।আম্মু বললো আজ তিনদিন ধরে এইখানে আমি।পরে চলে যাই সেই গ্রামে যেখানে জরিয়ে রয়েছে অনেক স্মৃতি। খুব কান্না করি সেদিন বারবার ফিরে পেতে চাই অরুণিকে।পরে অবশ্য অরুণির ভাই আমার কাছে ক্ষমা চায় কিন্তু আমি যে তাকে কোনদিন ক্ষমা করবোনা আর করবো কেনো তার জন্য আমি আমার অরুণিকে হারিয়েছি।ও সুইসাইড নোটে কি লেখছিলো জানো?”এই জীবনে যদি আমি তোমার না হতে পারি তাহলে আমায় কেউ পাবেনা।আমার অবর্তমান সময়ে আমার লেখা নীল ডায়রি টা পড়বা তাহলে আমায় তোমার আশেপাশে পাইবা”এই সেই নীল ডায়রি যেটাকে আমি এখনো পড়ি।
 চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার টুপটুপ করে তৃষ্ণাও মনে হয় কাঁদছে।মৃদু এক কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।চোখ গেলো ঘরের দরজার কাছে দারিয়ে থাকা লোকগুলোর দিকে।বাবা-মা,আশিক,হিমেল মহুয়া,তামিম সহ আরো কয়েকজন শুনছিলো আমার কথাথা।কারো চোখে পানি চিকচিক করছেতো অন্য জনার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পরছে।সবাই যখন চলে গেলো তখন তৃষ্ণা বললো।
 –এতো কষ্ট তোমার?আমায় ভালোবাসতে না পারলা আমায় একটু ভালোবাসতে দিও।কষ্টটা তোমার শেষ করতে না পারলাম তবুও চেষ্টা করবো।আমি তোমায় ভালোবাসি রাকিব।
 কিছু বললাম না হয়তো ও পারবে।
 
  
 Loading...
Loading...













