বাবার চেহারাটা মনে পড়ে না ফাতেমার। তিন বছর আগে এক হরতালের দিন রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পিকেটারদের হামলায় আহত হয়ে মারা যায় ওর বাবা। আট বছরের শিশু ফাতেমার চোখে সেই তিন বছর আগে দেখা বাবার মুখটা এখন অনেকটাই ঝাপসা। ওর শুধু মনে আছে বাবার পরনের সবুজ কালো রঙয়ের চেক লুঙ্গিটার কথা। বস্তির কেউ অমন লুঙ্গি পরে ঘরের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে ফাতেমার এক ফোঁটা হৃৎপিণ্ড ধক্ করে ওঠে। সে ছুটে গিয়ে ঘরের চাটাই দেওয়া বেড়ার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে দেখার চেষ্টা করে লোকটাকে।
পুরাতন ভাঙ্গা টিনের সাথে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া মুরগীর খোপের মতো ছোট্ট একখানা ঘর। এই ঘরে সারাদিন বন্দী হয়ে থাকে ফাতেমা। নড়বড়ে বাঁশের খুঁটির ওপর বাঁশ বিছানো মেঝে। মেঝের কয়েক হাত নিচ দিয়ে কলকলিয়ে বয়ে যাওয়া নোংরা কালো পানি থেকে উঠে আসে কেঁচো আর নানারকম পোকামাকড়। এক সময়ের খাল এখন পুতিগন্ধময় নালা। ফাতেমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী কুকুর ছানা ভোলা। সে আছে বলে ফাতেমার রক্ষা। ভোলা থাবা মেরে পোকামাকড় তাড়িয়ে দেয়। মাঝে মধ্যে দু’একটা পোকা তুলে সে মুখে চালান করে। দেখতে পেলে ফাতেমা কষে ধমক দেয়। ভোলা তখন কুঁ কুঁ করে ঘরের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে ফাতেমার দিকে। ফাতেমা হাত ইশারা করলে সে আনন্দে ছুটে এসে কোলে চড়ে দুই পা ফাতেমার দুই কাঁধে তুলে দেয়। ফাতেমা ওকে আদর করতে করতে বলে, ‘তর ভুখ লাগছে?’ কুকুর ছানাটা চোখ পিট পিট করে এদিক ওদিক মাথা নাড়ায়। ফাতেমা ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ‘এট্টু সবুর কর ভোলা। মায়ে অহনই আইয়া পড়বো।’
মা না এলে তো ফাতেমার নিজেরও খাওয়া নাই। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘরের নড়বড়ে দরজায় তালা দিয়ে জয়গুন কাজে চলে যায়। এই বস্তিতে মানুষ নামের কয়েকটা খবিশ আছে। ফাতেমার মতো আট বছরের শিশুকন্যাকে দেখেও তাদের জিব থেকে লালা ঝরে। পালাদার কালুর ব্যাটা বরকত একবার ঘরে ঢুকে ফাতেমার ওপর চড়াও হতে গিয়ে ভোলার কামড় খেয়ে পালিয়েছে। পরে ইনজেকশনের টাকার জন্য কালুর বউয়ের সাথে জয়গুনের ঝগড়ার শেষ নাই।
বেলা বারোটা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ফাতেমাকে না খেয়ে থাকতে হয়। এই সময়টুকু সে ভোলার সঙ্গে খেলা করে কাটিয়ে দেয়। পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। তবু নিজের চেয়ে অবলা প্রাণী ভোলার জন্য ওর কষ্ট বেশি। বারোটার পর জয়গুন তার শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে এক গামলা খাবার নিয়ে ঘরে ফেরে। বস্তির কল থেকে এক বালতি পানি এনে ঘরের এক কোনায় ফাতেমাকে দাঁড় করিয়ে গোসল করায়। বাঁশের ফাঁক গলে সে পানি নেমে যায় নিচের নালায়। ফাতেমা আবদার করলে মাঝে মাঝে ভোলারও গা ধুয়ে দেওয়া হয়। তারপর জয়গুন গামলা থেকে দু’মুঠো তুলে নিজের মুখে দিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে আবার ঘরে তালা দিয়ে চলে যায়।
বস্তি পার হয়ে চওড়া পাকা রাস্তার ওপাশে সাত তলা ফ্ল্যাট বাড়ির ছয় তলায় পাশাপাশি দুটো ফ্ল্যাটে কাজ করে জয়গুন। স্বামী বেঁচে থাকতে একটা ফ্ল্যাটে কাজ করতো সে। এখন দুটো ফ্ল্যাটে কাজ করেও সে কুলিয়ে উঠতে পারে না। বেতনের টাকা ঘর ভাড়া দিতেই শেষ। গনি মিয়ার গুণ্ডারা ঘর ভাড়া নিতে আসে। তাদের লাল লাল চোখ দেখে ভয় পায় জয়গুন। সারা মাসের ঘাম ঝরানো টাকাগুলো ওদের হাতে তুলে দিতে গিয়ে ওর কলিজা ছিঁড়ে যায়। ভাড়া দিতে দেরি হলে অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ শুনতে হয়। ঘর ছেড়ে দেবার হুমকি শুনে জয়গুনের বুক থর থর করে কাঁপে।
টিনের গামলায় পাঁচমিশেলি খাবার। সাদা ভাত, রুটি বা পরোটার আধ খাওয়া টুকরা, ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট হাড় হাড্ডি, শসার ফালি, আধ খাওয়া কেক, মাছের টুকরা, মাংসের ঝোল। কপাল ভালো হলে মাংসবিহীন বিরিয়ানি, এমন কী দু’এক টুকরা মাংসও। আগের রাতের বাসি খাবারের সাথে সকালের নাস্তার মিশেল। ফাতেমা মাংসের হাড্ডিগুলো ভোলাকে দিয়ে দেয়। ভোলা আনন্দে লেজ নাড়তে নাড়তে তীক্ষ্ণ দাঁত দিয়ে হাড্ডিগুলো কামড়া কামড়ি করে। ফাতেমা রুটি বা পরোটার এক টুকরা নিজের মুখে দিয়ে আর এক টুকরা ভোলার মুখে দেয়। কেকটাও ভোলার সাথে ভাগাভাগি করে খায়। ভোলা মাঝে মাঝে অধৈর্য হয়ে গামলায় থাবা মারে। শসার টুকরা ছিটকে পড়ে যায়। ফাতেমা চোখ পাকিয়ে ধমক দিলে ভোলা কুঁ কুঁ আওয়াজ করে সরে যায়। দরজার কাছে গিয়ে সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ফাতেমা হাসিমুখে হাত ইশারা করে ডাক দিলে দুলতে দুলতে ছুটে এসে খাবারের চারপাশে লেজ নাড়িয়ে ঘুরতে থাকে। ফাতেমা ওকে কোলে তুলে নিয়ে ঝোল দিয়ে ভাত মাখিয়ে একমুঠো নিজে খায়, আর এক মুঠো ওর মুখে তুলে দেয়। মাঝে মাঝে আদব কায়দা ভুলে গিয়ে ভোলা গামলায় মুখ দিয়ে বসে। তখন আবার ফাতেমার ধমক খেয়ে সে কোল থেকে নেমে যায়।
ভোলাকে ছাড়া খেতে পারে না ফাতেমা। গামলা থেকে ঝোল মাখানো ভাত তুলে মেঝের ওপর ছড়িয়ে রেখে সে ডাক দেয় ভোলাকে, ‘অই বেয়াদব, খাড়ায়া আছস ক্যান? জলদি আইয়া খাইয়া ল।’ ফাতেমা মাছের কাঁটা বেছে খানিকটা ভাতের সাথে নিজে খায়, খানিকটা ভেঙ্গে ছড়িয়ে দেয় ভোলার ভাতের ওপর। ভোলা কিন্তু তখন বেশ খায়। চেটে পুটে সবটুকু খেয়ে সে ফাতেমার কাঁধে দুই পা তুলে জিব বের করে হ্যা হ্যা করে। ওর জিব থেকে লালা ঝরে ফাতেমার ফ্রক ভিজে যায়। ফাতেমা বলে, ‘বুঝছি, তর ঝাল লাগছে।’
ভোলার পানি খাওয়ার জন্য একটা ফাটা প্লাস্টিকের বাটি আছে। ওতে পানি ঢেলে দিলে সে মাথা নামিয়ে চুক চুক শব্দ করে পানি খায়। পাশে বসে ভোলার পানি খাওয়া দেখে মজা পায় ফাতেমা। নিজের হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে ভোলার এঁঠো মুখ যত্ন করে ধুয়ে দেয় সে। ছেঁড়া ফ্রকে হাত মুছে সে ভোলাকে কোলে তুলে নেয়। আগে ভোলাকে সাথে নিয়ে বস্তির মধ্যে খেলতে যেত ফাতেমা। কিন্ত বস্তির বদমাশ ছেলেমেয়েদের অত্যাচারে সেখানে বেশিক্ষণ খেলা হতো না। ওরা ভোলাকে খুব উত্যক্ত করে। ভোলাও ঘন ঘন তাড়া করে ওদের। তারপর এক সময় ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে ফাতেমার কাছে। এখন ঘরের দরজায় তালা দেওয়া থাকে বলে বাইরে খেলতে যাওয়া হয় না। ঘরের মধ্যে কিছুক্ষণ খেলা করে ঘুম পায় ফাতেমার। পাটাতন ভাঙ্গা তিন পায়া চৌকির এলোমেলো বিছানার ওপর ভোলাকে কোলে নিয়ে সে শুয়ে পড়ে। ভোলাকে রাক্ষস খোক্ষসের গল্প শোনাতে শোনাতে এক সময় সে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। ঘুমন্ত ফাতেমাকে ছেড়ে কোথাও যায় না ভোলা। সে তার কোলের কাছে কাত হয়ে নিশ্চুপ শুয়ে থাকে। ফাতেমা যতক্ষণ ঘুমায়, ততক্ষণ সে ওভাবেই পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে নিচের নালা থেকে উঠে আসা পোকামাকড় গুলোকে তাড়ানোর জন্য চৌকি থেকে নেমে যায়। তারপর আবার চৌকিতে উঠে ফাতেমার কোলের কাছে এসে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে।
সন্ধ্যের পর থেকে বস্তিতে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে জয়গুন। অতটুকু ছোট মেয়েটা তার সারাদিন একা থাকে ঘরে। জয়গুনের চোখে মুখে সব সময় উৎকণ্ঠার ছাপ। আগে দু’একদিন ফাতেমাকে সাথে করে ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছিল সে। পিছে পিছে ভোলাও চলে আসে। ফ্ল্যাটের কেউ পছন্দ করে না এসব। সবাই বিরক্ত হয়। বেশি বিরক্ত হলে তারা জয়গুনকে কাজে জবাব দিয়ে দিতে পারে। তাই নাড়ি ছেঁড়া বুকের ধনটাকে বস্তিতে ফেলে এসে কাজ করতে হয় তাকে। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে বস্তিতে। দু’হাতে ঝড়ের মতো কাজ করেও দুটো বাসার কাজ শেষ হতে চায় না। বড়লোকের বাসায় কাজের শেষ নাই।
ছয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে জয়গুন মাঝে মাঝে তাকিয়ে থাকে রাস্তার ওপাশে বড় বড় ভবনগুলোর দিকে। আগে এই ভবনগুলোর একটাও ছিল না। তখন বস্তিটা দেখা যেত। এক দেড় বছরের মধ্যে জাদুমন্ত্রবলে উঁচু উঁচু ভবনগুলো গজিয়ে গেল আর আড়াল করে ফেললো বস্তিটাকে।
এখন রাত আটটা বাজে। জয়গুনের ছটফটানি বেড়ে যায়। তার হাতে এখনো অনেক কাজ। সিরামিকের বাসন কোসন সিঙ্কের ওপর রেখে ডিশ ক্লিনার দিয়ে ঘষামাজা করতে গিয়ে বেখেয়ালে একটা বোল নিচে পড়ে ঝন ঝন শব্দ করে ভেঙ্গে যায়।
‘কী ভাংলে, ফাতেমার মা?’ বোলের ভাঙ্গা টুকরা গুলো কিচেনের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে গৃহকর্ত্রী রেগে আগুন, ‘এত তাড়াহুড়ো করো কেন বল তো? ধীরে সুস্থে কাজ করতে পারো না?’
গৃহকর্তা সন্ধ্যের পর থেকে ঘরে বসে মদ খান। তার জন্য ফ্রিজ থেকে বরফ, ঠাণ্ডা পানি, আঙ্গুর, রেস্টুরেন্ট থেকে আনা বার-বি-কিউ চিকেন ইত্যাদি ট্রেতে করে সাজিয়ে ঘরে দিয়ে আসতে হয় জয়গুনকে। আজ তিনি সেগুলো সময় মতো পাননি বলে চেঁচামেচি করছেন। জয়গুন কোনটা ছেড়ে কোনটা করে!
ভোলা আজ সন্ধ্যের পর থেকে খুব অস্থির। সে বার বার ফাতেমার ফ্রকের নিচে কামড়ে ধরে তাকে দরজার কাছে টেনে নিয়ে যেতে চায়। সে এমন করছে কেন বুঝতে পারে না ফাতেমা। ঘরের বাইরে লোকজনের ছোটাছুটি আর হৈ চৈ এর শব্দ। মনে হয় বস্তিতে ঝগড়া লেগেছে। ছোটখাটো ব্যাপারে ঝগড়া ফ্যাসাদ আর মারামারি এই বস্তির নিত্য দিনের ঘটনা। প্রথম প্রথম আতংকিত হলেও এখন এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ফাতেমা। সে কুপী বাতির আলোয় একটা ছেঁড়া বইয়ের পাতা খুলে ছবি দেখতে থাকে। কিন্তু ভোলা নাছোড়বান্দা। সে লাফ দিয়ে চৌকিতে উঠে কুঁ কুঁ আওয়াজ করতে করতে ফাতেমার ফ্রক কামড়ে ধরে। ওর ছটফটানি দেখে বকা দেয় ফাতেমা, ‘অই ভোলা, কী হইছে তর? অমন করস ক্যান?’
সাইরেনের আওয়াজ শুনতে পায় জয়গুন। একটানা ‘ওঁয়াও’ ‘ওঁয়াও’ আওয়াজে বুকের ভেতর কেমন যেন করে। এই শহরে দমকল ও পুলিশের গাড়ির সাইরেন খুবই পরিচিত শব্দ। তবু জয়গুনের তা’ ভালো লাগে না। সাহেবের বড় মেয়ে পূর্ব দিকের বারান্দায় বসে কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। তার ডাক শুনে বারান্দায় আসে জয়গুন।
‘তোমাদের বস্তিতে বোধহয় আগুন লেগেছে, ফাতেমার মা।’
‘এ্যাঁ!’ চমকে ওঠে জয়গুন, ‘কী কন, আফা?’
সাহেবের মেয়ে কান থেকে হেড ফোন না খুলে হাত ইশারায় পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে আবার গানের সাথে সাথে পা ঠুকতে থাকে। জয়গুন ভীত সন্ত্রস্থ চোখে তাকিয়ে দেখে, উঁচু উঁচু ভবনগুলোর পূর্ব দিকের আকাশ লাল। রাতের অন্ধকার চিরে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠে যাচ্ছে আকাশের দিকে। সাইরেনের বিকট শব্দে চারদিক প্রকম্পিত করে একটার পর একটা দমকলের গাড়ি ঢুকে পড়ছে রাস্তার ওপাশে গলির ভেতর। গলি মুখ ছাড়িয়ে বড় রাস্তার ওপর অসংখ্য নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধের গগন বিদারী আহাজারি। আতংকে বুক ফাটা আর্তনাদ করে ওঠে জয়গুন, ‘আল্লারে! মোর ফাতেমা একা রইছে……….।’ দিক বিদিক জ্ঞানশূন্য জয়গুন লিফটের অপেক্ষা না করে উন্মাদের মতো মাতম করতে করতে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে যায়।
সারা বস্তিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ঘরের চার দেয়ালে চাটাইয়ের বেড়া ও বাঁশের খুঁটি পোড়ার পট পট আওয়াজ। মাথার ওপর চালা থেকে পলিথিন গলে গলে পড়ছে। উদ্বাহু আগুন চার দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে ফাতেমাকে। কাঁদতে কাঁদতে ঘরের এক দিক থেকে আরেক দিকে ছোটাছুটি করছে সে। উন্মত্ত আগুনের নির্মম গ্রাসে ছোট হয়ে আসছে তার পৃথিবী।
জ্বলন্ত বাঁশের মেঝে থেকে একটা বাঁশ খুলে নালায় পড়ে গেছে। সেই ফাঁকে পা আটকে যাওয়ায় উঠতে পারছে না ফাতেমা। সর্বগ্রাসী আগুন মেঝের নিচে থেকেও পুড়িয়ে দিচ্ছে ওকে। যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদছে সে। ফাতেমার জ্বলন্ত ফ্রক কামড়ে ধরে ওপর দিকে টেনে আনার চেষ্টা করছে ভোলা। এক সময় দু’জনের শরীরেই দাউ দাউ করে ধরে যায় আগুন। অবোধ কুকুর ছানাটা তবুও অসহায় মানব শিশুর অগ্নিদগ্ধ কাপড়টা কামড়ে ধরে থাকে। ছটফট করতে করতে এক সময় স্তব্ধ হয়ে যায় দুটো নিস্পাপ দেহ। হিংস্র আগুন তবুও ছাড়ে না ওদের। পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া দেহ দুটো পোড়া বাঁশের সাথে সাথে পড়ে যায় নর্দমায়।
জয়গুন পাগলী চাবি খুঁজে বেড়ায়। দুষ্ট ছেলেমেয়েরা ঢিল ছোঁড়ে তাকে। সমস্বরে বলে, ‘জয়গুন, তোর চাবি নাই।’ জয়গুনের জটা চুলের ভেতর থুকথুকে উকুন। সে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বিড় বিড় করে নিজের সাথে নিজেই কথা বলে। অসংলগ্ন কথাবার্তা। ‘কান্দিস না। তগো লাইগা রান্না করছি।’
‘কী করছস, পাগলী?’
‘ঘরে তালা দিয়া রাখছি।’
‘পাগলী কী কয়?’
জয়গুন পাগলীর পা ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। কাপড় চোপড় বেসামাল। সে পা টেনে টেনে হাঁটে আর বিড় বিড় করে বলে, ‘মোর চাবি কই?’
‘জয়গুন, তোর চাবি নাই!’ এক ঝাঁক নুড়ি পাথর ছুটে আসে ওর দিকে।