ডাইনি টিকটিকি

ডাইনি টিকটিকি

পরী র অভ্যাস টিকটিকি দেখলেই সে টিকটিকি
র লেজ কেটে ফেলে । কত বকা খেল তার মা
বাবার কাছে । যখনি পড়তে বসে তখনি দেয়াল
এ তাকিয়ে দেখে টিকটিকি লেজ নারাচ্ছে। সে
সাথে সাথে তার স্টিল এর স্কেল দিয়ে ঠাশ করে
কেটে ফেলে দেয়..নিচে লেজ টা পরে লাফাতে
থাকে । লেজের নাচুনি দেখে তার খুব মজা লাগে।আর টিকটিকি গুলা দৌড় দেয় প্রাণের
ভয়ে । একদিন একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো পরী র সাথে। রাতে তার বাবা মা গেল দাওয়াত এ। তার স্কুলে পরীক্ষা ছিল তাই যায় নি। সে আর কাজের মেয়েটা বাসায় রয়ে গেল। মা যাবা
র আগে বলে গেল -পরী,, তুমি ত আমার লক্ষ্মী
মেয়ে ! টিকটিকি না মেরে পড়তে বস।!! ঠিকাছে??
-আচ্ছা মা। আমি আর টিকটিকির লেজ কাটবো না। তার মা আদর করে কপালে চুমো দিয়ে চলে গেল। পরী চকলেট খেতে লাগলো আর অংক করতে লাগলো। পাশে কাজের মেয়ে ফুলি। ফুলি যখন রান্না বসাতে গেল অমনি সে লাফ দিয়ে উঠে দেয়ালে এতক্ষণ যে
টিকটিকি টা লেজ নারাচ্ছিল সেইটা কেটে দিল।
তখন দেখল আরেকটা টিকটিকি.. বেশ বড় আর কালো.. চোখ গুলা কেমন অদ্ভুত। আর লেজ টাও কেমন অদ্ভুত করে নাড়াচ্ছে। পরী
যখন কাছে গেল,, তখনি সেইটা লাফ দিয়ে পরী
র হাতে পড়ল.. পরী ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো। ফুলি তাড়াতাড়ি রান্না ঘর থেকে এল।
কিন্তু পরীর হাত থেকে কোন মতেই টিকটিকি টা
ছুটছে না। ফুলি অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর ওই
টা ছুটল। পরীর হাত এর মাংস উঠে গেছে। এই
টা দেখে পরী খুব ভয় পেল। ফুলি আর পরী অবাক হয়ে দেখলো..টিকটিকি টা পরীর হাত
থেকে ছিড়ে নেওয়া মাংস টা খাচ্ছে আর একটা
হাসি র আওয়াজ শুনতে পেল। বুঝতে পারলো
এইটা টিকটিকি র হাসি. .কিন্তু টিকটিকি হাসে
কেমনে ??? পরী ভয়ে চুপ মেরে গেল। ফুলি বলল- কত্তবার আফা না কইরা গেসে, ,কোন কথা ত হুনেন না। দেখছেন ত কান্ড টা। না জানি
টিকটিকি র রুপে ওই টা কি ছিল। পরী অবাক
হয়ে ফুলি র কথা শুনতে লাগল। কিছুক্ষণ পর
তার বাবা মা আসলো। পরী সব কথা খুলে বলল,,তার বাবা ধমক দিল – টিকটিকি আবার
হাসে কেমনে ? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তুমার,
আর টিকটিকি কি কুমির যে তুমার হাত এর মাংস খাবে। যত্তসব বুজরুকি কথা। কিন্তু পরী
র মা বিশ্বাস করল। রাতে পরী ঘুমোতে যাওয়ার
সময় একটা টিকটিকি কে দেখলো.. কিন্তু লেজ
কাটতে তার মন চায়নি। সে তার হাতের দিকে
তাকালো যেখানে কামড় দিয়েছিল টিকটিকি।
পরী একটু অবাক হয়ে গেল..সে দেখলো ক্ষত
স্থান টা একটু বড় হয়ে গর্ত হয়ে গেছে আগের
থেকে। তার কেন যেন কান্না এসে গেল,,চুপ করে শুয়ে পড়ল। হঠাৎ রাতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল..সে ভয় পেয়ে ফুলি কে ডাকতে গিয়ে টের
পেল তার ক্ষতস্থান টা কেমন সুড়সুড় করছে।
সে তার বিছানার পাশের টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দেখল,,অসংখ্য টিকটিকি তার ক্ষত
স্থান থেকে মাংস ছিড়ে খাচ্ছে..সব গুলা টিকটিকি লেজ বিহীন। পরী ভয়ে চোখ বুঝে চিৎকার দিল। ফুলি আর তার মা দৌড়ে এল। পরী চিৎকার করে বলতে লাগলো – মা আমার হাত টা টিকটিকি খেয়ে ফেললো। তার মা এসে
দেখে তার মেয়ের হাত দিয়ে রক্ত পড়তেছে.. আর ছোট কামড় এর দাগ। মেয়েকে কোলে
নিয়ে শান্ত করতে লাগলো তখন দেয়ালে চোখ
পড়লো। দেখল-বেশ বড় সর কাল একটা টিকটিকি। ফুলি বলল- খালাম্মা এই টাই পরী রে কামড় দিসিল। তখনি টিকটিকি টা চলে গেল
রাতে ফুলি আর পরীর মা পরীর সাথে ঘুমাল।
সকালে পরী র হাত টা ফুলে গেল.. আর হাত টা
কাছে নিয়ে দেখতে গিয়েই কিছু মাংস আপনা
আপনি খসে পড়লো। পরী র মা বেশ ঘাবড়ে গেল। তিনি বিকেলে এক হুজুর এর কাছে নিয়ে
গেল পরীকে,, হুজুর দেখে বলল- আপনার মেয়ে ভুলে এক ডাইনিকে মেরে ফেলেছে। যার
প্রতিশোধ তুলতে এসেছে আরেক ডাইনি। পরী
র মা অবাক হয়ে গেল..টিকটিকি আবার ডাইনি!!! হুজুর তখন বলল- ডাইনি রাতে টিকটিকি হয়ে থাকে,, তার লম্বা বেণী টা লেজ হয়ে যায়,,আর ডাইনি এর সব শক্তি তার বেণী তে থাকে,, কোন নিষ্পাপ বাচ্চা যদি সেই ডাইনি র চুল অথবা .লেজ কেটে ফেলে তাহলে তার মৃত্যু হয়। ওই টিকটিকি সহজে পরীর পিছু ছাড়বে না।আর কালদিন পর চন্দ্রগ্রহণ
হবে তখন তারা চাইবে পরীকে বলি দিয়ে ওই মৃত ডাইনির জান ফিরিয়ে আনতে।
-এখনকি হবে ??? আমার মেয়ে কে কি বাচানো কোন ভাবেই সম্ভব না !!!!
-আপনি আপাতত বাসায় যান,,আর মেয়েকে একা ছাড়বেন না। কাল আমি আপনার বাসায়
যাবো। ফুলি কে বাসায় একা রেখেএসেছিলেন,, তার জন্য ও চিন্তা হচ্ছে পরীর মা র। মেয়েটা অনেক ভালো.. পরীকে খুব আদর করে। এমন সময় গাড়ি খুব জোরে ব্রেক মারল। -কি হল ড্রাইভার ??
– সামনে কি যেন পড়লো,, একটু দেখে আসি।
পরী গভীর ভাবে ঘুমোচ্ছে তার মার কোলে। না
জানি কি পড়লো সামনে। কোন বিপদ ঘটতে যাচ্ছে না ত !! ড্রাইভার বলল- ম্যাম একটা কাল
বিড়াল। একদম পিষে গেছে ।
-কাল বিড়াল..!!তুমি দেখে শুনে গাড়ি চালাতে পারো না। এখন তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাও,,তুমার
স্যার বাসায় আসার টাইম হয়ে যাচ্ছে.। পুরো
রাস্তা ভয়ে ভয়ে আসল পরীর মা।যাই হোক কিছু হয়নি। রাতে খাবার এর সময় কল এল।
পরীর মা র ফোনে হুজুর এর ছেলে কল দিসে।
-হ্যালো,,
-হ্যালো,, আন্টি আব্বা মারা গেছে !!
-কি বল ? কেমনে?? কিছুক্ষণ আগেই ত তুমাদের বাসায় গিয়ে কথা বলে আসলাম। আমি আসতেছি। এই বলে পরীর বাবা মা পরী
ফুলি সবাই গেলো। হুজুর এর লাশ দেখে পরীর
মা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। পুরো শরীর থেকে মনে হচ্ছে রক্ত মাংস চুষে নিয়ে গেছে কেউ ।আর হুজুর এর চোখ ঠিকরে বের হয়ে আছে,, মুখ হা করা জিভ দেখা যাচ্ছে। তারা আর থাকেনি পরীর বাবা শুধু হুজুর এর বাসায়
থেকে গেলো। কি করবে কিছু বুঝে পাচ্ছে না।
কাল দিন পর,,চন্দ্রগ্রহণ। তখন শুনতে পেল কে
যেন ভারি গম্ভীর গলায় বলল- তুই কি ভেবেছিস,, তর মেয়েকে বাঁচাতে পারবি !! তর মেয়ে আমার বোন কে মেরেছে । ডাইনিকে মেরে ফেলেছে,, আমি ত জান না নিয়ে যাব না । শুধু
কালকের দিন টা আছে,, যত খুশি আদর করে
দে তর মেয়ে কে। পরীর মা আর ফুলি এইসব
শুনে দেয়ালে তাকালো, সেই টিকটিকি ,, অদ্ভুত রক্ত হিম করা এক হাসি দিল। সারারাত মেয়েকে ধরে কান্না করলো,, ভোরে ফজর এর নামাজ পরল। সারা দিন মেয়ের সাথে খুব হাসা হাসি করল। সময় যাচ্ছে আর টেনশন বাড়ছে।
ফুলি হঠাৎ তার সব বেতন এর টাকা আর একটা নতুন শাড়ি পরীর মা র কাছে দিয়ে বলল- খালাম্মা,, কাল আমার মা আইব, ,এই টাকা গুলা আর এই শাড়ি টা দিয়েন। আর আমার মাকে আপনার কাছেই রেখে দিয়েন।
পরীর মা আর কিছু জিজ্ঞেস না করে বলল – আচ্ছা ঠিকাছে। রাত হয়ে গেছে, আর কিছুক্ষণ পর চন্দ্রগ্রহণ। ফুলি গোসল করে এসে পরীর সাথে খেলতে লাগলো, পরীর মা পরীর ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে জানলার পাশে বসে রইলো। পরীর খিলখিল হাসি তার মা র বুকে এক অনিশ্চিত বিপদের ঘন্টার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বার বার,, কিভাবে কি করবে কিছুই জানে না। হঠাৎ চিৎকার শুনে পরীর মা র ধ্যান ছুটল। একি !! ফুলি এরকমভাবে ছটফট করছে কেন। পরী দৌড়ে তার মা র কাছে গেল,, পরীর মা ফুলি কে ধরে বলল- এই তর কি হয়েছে ফুলি !!
– খালাম্মা,, পরীরে আর কোনদিন টিকটিকি মারতে দিয়েন না।
-এই তুই কি বলছিস এসব !!,,, তখনি শুনতে পেল এই বিশ্রী হাসি। দূরে সরে যা,, এই মেয়ে কে বলি দেয়া হবে,, আজ ভর দুপুরে সে আমাকে ডেকে এনে তার আত্মা আমাকে দিয়ে দিয়েছে। এখন তাকে বলি দিব। ফুলি তখন হাওয়া তে ভাসতেছে,,জানলা টা আপনা আপনি খুলে গেসে, ,ফুলি হাওয়া তে ভেসেভেসে চলে গেছে। পরীর মা পরীকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বাড়ির পিছে গেসে ফুলিকে আনার জন্য, কেঁদে কেঁদে । গিয়ে দেখে অসংখ্য কালো শাড়ি পরা ডাইনি লম্বা বেণি দুলিয়ে দুলিয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন মন্ত্র বলতেছে, একটা পাথর এর উপর ফুলি আর পাশে একটা বুড়ো টাইপ এর মহিলা,,বেণী টা কাটা,, যা পরী কেটেছিল। পরীর মা জোরে জোরে বলছে,, ছেড়ে দাও ওকে, ,ওর কোন দোষ নেই,,তুমাদের পা এ পড়ি ছেড়ে দাও। এমন সময় এক কুপে ফুলি র গলা কেটে ফেলে দিল,, পরীর মা র আর কিছু মনে নেই………….সকালে হাসপাতালে পরীর মা কে ভর্তি করা হয়েছে.. আর পুলিশ এসে ফুলি র লাশ নিয়ে গেছে। পরীর মা ফুলি কে দেখতে চেয়েছিল,, কিন্তু দেখতে দেয়নি পরীর বাবা । এদিকে ফুলি র মা এসেছে,, পরীর
মা ফুলি র কথা মত,, টাকা আর শাড়ি দিয়ে, তার মাকে রেখে দিল,, ফুলি মারা যাবে বলেই এইগুলা তার কাছে দিয়ে গিয়েছিল,,কেন তখন ফুলি কে কিছু জিজ্ঞেস করেনি,,পরীর মা শুধু এই অনুশোচনায় ভোগে..আর পরী..এখন একা একা কথা বলে, ,জিজ্ঞেস করলে বলে ফুলির সাথে কথা বলতেছে…….!!

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত