সুখ বিষর্যণ

সুখ বিষর্যণ

প্রবাসেই চার বছর কাটছে রিয়াদের। ভালো একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকুরি করে। বিদেশে থাকাকলীন সময়ে বাংলাদেশী এক মেয়ের সাথে তার পরিচয় হয় ফেসবুকে। মেয়েটির নাম ছিল শান্তা। ধীরে ধীরে শান্তা আর রিয়াদের সম্পর্কটা প্রেমে বদলে যায়। প্রবাসের কষ্টের অবসান হিসেবে রিয়াদ বেছে নিয়েছিল কাজ শেষে শান্তার সাথে কথা বলা।

অদ্ভুত আনন্দ পেত এটা করে সে। ৪ বছর পর রিয়াদ দেশে আসে । দেখা করে শান্তার সাথে। মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দরী। এককথায় পরীর মত। রিয়াদ শান্তার কথা বাড়িতে বলে। বাড়ির লোক বলতে তো শুধুই রিয়াদের মা । উনি রাজি হয়ে গেলেন। সমস্যা হলো শান্তার পরিবার নিয়ে। রিয়াদের বংস টাকা পয়সা সব ঠিক থাকলেও প্রশ্ন উঠে তার বিদেশ থাকা নিয়ে।

ওদিকে শান্তার বাবা-মা চান সরকারী চাকুরিজীবির সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে। কিন্তু রিয়াদের ভালবাসায় শান্তাকে তার কাছে টেনে এনেছিল। রিয়াদের কথায় বাড়ি ছেড়েছিল শান্তা। তাদের বিয়ে হয় এবং ২ মাস পরে শান্তাকে মায়ের কাছে রেখে রিয়াদ আবারো বিদেশ যায়।

আবার প্রহর গুনে গুনে কস্টে কাটতে থাকে রিয়াদ আর শান্তার জীবন। ১ বছর পর রিয়াদ ছুটি আসে। এই এক বছরে চিন্তায় শান্তা কেমন যেন হয়ে গেছে। কিছুদিন পর রিয়াদ চলে যাবে। তাই শান্তাকে নিয়ে ঘুরছে বেশ। এরই মাঝে শান্তা একটু অসুস্থ তাই রিয়াদের আর বিদেশ যাওয়া হলোনা। মেয়েটির কান্না দেখে রিয়াদ আর যেতে পারেনি। সংসারে তাদের এক বছর পর একটি মেয়ে জন্ম নেয়। ভালোই চলছিল তাদের জীবন। রিয়াদও দেশে একটি কোম্পানী যয়েন করে। সুখের সময়গুলো কাটছিলো বেশ ভালো। রিয়াদের ইচ্ছে ছিল বাচ্চাটার বয়স এক
বছর হলেই সে আবার বিদেশে যাবে।

হঠাৎ শান্তা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নেয় রিয়াদ। রিপোর্ট করে জানতে পারে শান্তার ব্লাড ক্যান্সার। বড়জোর তিনমাস বাচবে। ডাক্তার বলেছে যা যা ইচ্ছে করে সাধ্য মত পূরণ করতে ভালো মন্দ খাবার খাওয়াতে সময় আর বেশি নেই। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে রিয়াদ।

কথাটা গোপন রাখে রিয়াদ। ভালোবাসার মানুষটিকে হারাতে হবে জেনে ভেতরে ভেতরে গুমড়ে কাদে সে। চিকিত্তসা চলাকালীন দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকাতে নিয়ে ঘুরে রিয়াদ। কক্সবাজার ঘুরতে এসে এক রাতে শান্তা একটু বেশেই দুষ্টুমি করছিলো। সেদিনের আলাপ,,

-আচ্ছা আমি যদি মরে যায় তুমিকি আর একটা বিয়ে করবে? শান্তার মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে আতকে ওঠে রিয়াদ। ওকে বুঝতে না দিয়ে বলে- “চুপ পাগলি ওমন কথা বলবে না।”

-আচ্ছা আমায় তুমি অনেক ভালবাসো তাইনা?? হুম।

-যদি কখনো হারিয়ে যায়? আমি হারাতে দেবো না।

-তুমি আমায় নিয়ে এত ঘুরছো কেন বলতো?? আরে পাগলি এমনিতেই। বিয়ের পর তোমায় বেশি সময় দিতে পারিনি তাই।

-আচ্ছা আমার কি অসুখ হয়েছে বলোতো, আমি কি মারা যাব? উ-ম পাগলি তোমার কিছু হয়নি। এখন ঘুমাও তো বাবু উঠে পড়বে কিন্তু।

-উঠুক। উঠলে কে সামলাবে শুনি??

-তুমি সামলাবে। না এখন আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাও বলছি।

-না আমি ঘুমাবো না। দেখ শান্তা ঘুমাও বলছি।

-আমি ঘুমালে কিন্তু আর উঠবোনা।

এই বলে রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে শান্তা ঘুমিয়ে পড়ে চিরদিনের মত আর উঠেনা। যেখান থেকে সুখের দিনের শুরু সেখানেই ভালবাসা গুলো হারিয়ে যায়। এভাবেই রিয়াদ তার ভালবাসা শান্তাকে কক্সবাজারে বিষর্যন দেয়। একেবারেই হারিয়ে যায় রিয়াদের শান্তা।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত