স্বার্থপর মা

স্বার্থপর মা

কাজ সেরে সবে মাত্র ফ্রি হয়েছি আর তখনই আমার স্ত্রীর ফোন এলো। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বউ বলতে শুরু করলো,

– শুনো না! আম্মু আসছে।
– ঘরে বাজার নেই? আমাকে কি এখন আবার বাজারে যেতে হবে?
– আমার আম্মু নয় তোমার আম্মু আসছে। কথাটা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো আমার। কোনো রকম নিজেকে সামলে বললাম,

– কি বলছে?
– বারান্দায় বসে আছে আর ঘরে তো তালা দেয়া ছিলো আগে থেকে। আমার সাথে তেমন একটা কথা হয়নি।
– তোমার কথা বলার দরকার নেই আমি আসছি। তারপর দেখছি। আর হ্যাঁ আর কে আসছে?
– আর কেউ না আম্মু আর রিমি আসছে।

সকালে খেয়ে কাজ করতে আসছি। শীতের সকালে কাজ করা কষ্টদায়ক হলেও জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হয়। সারাদিন কষ্ট করে কাজ করে সন্ধ্যার আগে বাড়িতে যাচ্ছি। ক্লান্ত শরীর যেনো চলছেই না। তখনই বউ ফোন করে কথা গুলো বললো। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে আমার। দ্রুত পা চালিয়ে বাড়িতে এসে দেখি আমার মা নামক মহিলা আর আমার বোন বারান্দায় বসে আছে। ওদেরকে দেখে রক্ত যেনো মাথায় উঠে গেলো। মায়ের কাছে গিয়ে বললাম,

– এখানে কি? কেনো আসছো এখানে?
– এখানে কেনো আসছি সেটার কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে? আমার অধিকার আছে বলেই এখানে আসছি।
– কৈফিয়ত দিতে হবে মানে? অবশ্যই দিতে হবে। আর অধিকার অধিকার করিস! কিসের অধিকার তোর এখানে? এখানে তোর কোনো অধিকার নেই। আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা এখনি।
– বাড়ি থেকে বের হব ক্যান? আমার বাড়িতে আমি আসছি। মহিলার কথা শুনে শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো। চেচিয়ে বললাম,

– এটা তোর বাড়ি না। এটা আমার বাপের বাড়ি। আমার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে তোরে দেখলে। আমার চোখের সামনে থেকে যা এখনি।
– ক্যান মারবি আমারে?
– আমার সামনে বেশিক্ষণ থাকলে আমি সেটাই করবো।
– তো মার! মার আমাকে। দাড়িয়ে কেনো আছিস?
– আমার ধৈর্য হারা করিস না। তুই যে মা সেটা আমি সত্যি সত্যি ভুলে যাবো। আমার বাড়ির আশেপাশে যেনো তোকে কোন দিন আসতে না দেখি। যদি দেখি তোর ঠ্যাং ঠুং আস্ত থাকবে না। মাকে যখন কথা গুলো বলছিলাম তখনই পাশ থেকে কাকা বলতে লাগলো,

– ধ্রুব ও তোর মা এসব কি বলছিস?
– কাকা তুমি একটাও কথা বলবা না। ওরে যে আমি এতক্ষণ মারিনি সেটা ওর ভাগ্য। আর ও কিসের মা আমার?

আমার মা যদি হত তাহলে আমার কথা চিন্তা করতো। করেছে কখনো? করেনি। যদি করত তাহলে এমন কাজ করতে পারতো না। ও আমার মা না। আমার কেউ নেই। আমার কথায় কাকা চুপ হয়ে গেলো। এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

– এখনো এখানে বসে কেনো? বেরিয়ে যেতে বলেছি না?
– ঘরের তালা খুলে দে রিমির জামা কাপড় নিয়ে চলে যাচ্ছি।
– একটা সুতোও তুই এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবি না। একটা জিনিসে হাত দে হাত কেটে রেখে দেবো একদম।
– তো আমার জামা কাপড় আমি নেবো না? ঐ জামাকাপড় আমার স্বামী দিছে তোরা না।
– একদম কথা কবি না। তুই তোর মায়ের মত একটা শয়তান। যদি তুই আমার বোন হইতিস তাইলে আমার কথা শুনতিস। আজ দশ পনের দিন ঐ মহিলার কাছে গিয়ে পড়ে থাকতিস না। আর তুই আমার বোন না। তোর মাকে নিয়ে এখান থেকে বের হ নয়তো তোদের দুইটারে আজকে সাপ পিটান পিটাবো।

– আয় রিমি চল এখান থেকে কিছু নিতে হবে না।
– হ্যাঁ যা যা। আর এই বাড়িতে যেনো তোকে কোনো দিন না দেখি।

তোর মত মায়ের দরকার নেই। যে মা সন্তানের চিন্তা না করে নিজের চিন্তা করে সে মা! মা না। মা আর বোনকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু রাগ এখনো কমছে না! জানি আজ আর কমবে না। কাজ থেকে আসার কারণে এই শীতের ভিতরে গোসল করতে হবে। তবে রাগের কারণে শীত না লেগে গরম লাগছে। গোসল করে রাতে কোনো রকম খেয়ে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে নিজের ভাগ্যের কথা ভাবছি আর দুচোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমার ভাগ্যটা যে এমন হবে কখনো কল্পনাও করিনি। আমার আব্বা যখন বেঁচে ছিলো আমাদের সুখ শান্তির অভাব ছিলো না।

কিন্তু আমার মা এমনই একজন মা যে আমার কথা কখনো ভাবেনি। সে তার বাবা মা ভাই বোনকে নিয়ে ভাবতো। আব্বা যা কিছু আয় রোজগার করেছে সেসব আমার মা তার বাবা মা ভাই বোনকে খাইয়েছে। একটা গরু বিক্রি করলে সে টাকাও তার বাপের বাড়িতে পাঠাতো। আমার আব্বাকে একদম নিঃশ্ব করে ছেড়ে ঐ মা নামক মহিলা আর ওর বাবা মা ভাই বোন। একটা মুরগী জবাই করলেও তার রান্না করে তার অর্ধেকের বেশি বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিত। আমার মা যতটা শয়তান তার থেকে বড় শয়তান ওর বাবা মা ভাই বোন। আমি যে একটা ছেলে আর আমারো যে একটা ভবিষ্যৎ আছে সেদিকে ঐ মহিলার কোনো খেয়াল ই নেই। সারাক্ষণ ওর বাবা মা ভাই বোনকে নিয়ে ভাবতে থাকে।

আমার বোন সেটাও হয়েছে মায়ের মতন। আমি যে ওর ভাই সেটাও ও ভাবেনা। বিয়ে দিয়েছি কিন্তু মা যা বলবে তাই করবে। আমার মাকে এতটা ঘৃনা হচ্ছে যে বলার মত না। সেদিন যখন শুনলাম মা বিয়ে করেছে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো। আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ার মতন অবস্থা হলো আমার। কিন্তু অন্যের মুখ থেকে শুনেছি বলে খুব একটা বিশ্বাস হচ্ছিলো না আবার মনে ভয়ও হচ্ছিলো। তবে কি মা সত্যিই বিয়ে করেছে? এটা কিভাবে সম্ভব? আব্বা মারা গেছে ১লা বৈশাখের দিন। আর আব্বা মারা যাওয়ার একবছর যেতে না যেতেই মা বিয়ে করবে? কিভাবে সম্ভব? চিন্তা করলাম বোনকে ফোন দিয়ে কথাটা শুনবো দেখি ও কিছু জানে কিনা। রাতের বেলা এক চিপায় গিয়ে ফোন দিলাম বোনকে। ঐপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ করলে ফিসফিস করে বললাম,

– রিমি তোকে একটা কথা বলবো। তুই বল কাউকে বলবি না। আর যদি বলিস তাইলে আমার মরা মুখ দেখবি।

যেহেতু কথাটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক তাই বোনকে আমার কসম দিলাম যাতে ও কাউকে না বলে। আমার বোনকে ততটা চিন্তিত মনে হল না আমার কথায়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আছে বলে মনে হচ্ছে। ঐ পাশ থেকে বোন বললো,

– কি কথা বলবি?
– মা নাকি আবার বিয়ে করেছে? ঐপাশ থেকে আমার বোন খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,
– হ্যাঁ করেছে।

বোনের এমন উত্তর শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। যেনো বিষয়টা খুবই নরমাল কিন্তু আমার কাছে অনেক কঠিন। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

– কেনো করেছে? আব্বা মারা গেছে দশ এগারো মাস হলো। এখনই বিয়ে করলো? আমাদের কথা একটু চিন্তা করলো না? আমরা কি মায়ের কেউ না।

কথাটা বলে বোনের উত্তরে অপেক্ষা না করেই ফোনটা কেটে দিলাম। কথা বলার মত শক্তি নেই আমার। কি করে পারলো এই কাজটা করতে? ঘরে এসে অঝোর ধারায় কান্না করতে লাগলাম। আমার বউ আমাকে শান্তনা দিচ্ছে কিন্তু আমার কোনো শান্তনাতে মনকে শান্ত করতে পারছি না। আব্বা মারা গেলো আর মাথার উপর থেকে ছায়াটা হারিয়ে ফেললাম। এখন মা ও দুরে চলে গেলো? চারপাশ যেনো অন্ধকার হয়ে যেতে লাগলো। ধিরে ধিরে সেই অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলাম আমি। আব্বাকে হারিয়ে মাকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আব্বা মারা গেছে কিন্তু মা তো বেঁচে আছে এখন সেই মা ই নিজের সুখের কথা চিন্তা করে আমাকে পর করে দিলো। শুনেছিলাম মা মারা গেলে বাপ হয় তালয় কিন্তু আমার মা কি হলো? ঠিক দুইদিন পর মা বাড়িতে এলো। আমি কিছু না জানার ভান করে মায়ের সাথে কথা বলতে লাগলাম। এক পর্যায়ে মা বললো,

– ধ্রুব আমি বিয়ে করেছি। কথাটা শোনা মাত্রই চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো। চোখের পানি যেনো কোনো বাঁধা মানছে না। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ধরা গলায় মাকে বললাম,

– মা এটার কি খুব দরকার ছিলো? আমরা কি কেউ না তোমার? আব্বা নেই এখন তুমিও থেকেও যদি না থাকো তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমি যে বড্ড একা হয়ে গেলাম। আমার যে কেউ থাকলো না মা। কথা গুলো বলছি আর কাঁদছি। আমার প্রশ্নের উত্তর মা এভাবে দিলো,

– দেখ ধ্রুব, তোর বাবা বেঁচে নেই। গরীব আমরা আর আমাদের কাজ করে খেতে হয়। তোর বাবা বেঁচে থাকলেও আমার অন্যের খেতে কাজ করতে হত।
– আব্বা সুস্থ থাকতে তোমার কাজ করতে হয়নি। কাজ করতে দিত না কিন্তু যখন অসুস্থ হলো তখন কাজ করতা। দরকার ছিলো না কাজ করার তাও করলা কিন্তু সেই কাজের যে টাকা হত! সেসব তোমার বাপ মা ভাই বোনকে খাওয়াইতা আমাদের কে না।

– আমি আয় রোজগার করে কি তোদের খাওয়ায় নি? সব আমার বাপ ভাইদের খাওয়াইছি?
– না খাওয়াও নি। সব তোমার বাপ ভাইদের খাওয়াইছো। সেই বুঝতে শিখলে ধরেই দেখে আসছি তোমার কাছে তোমার বাপ ভাই ই সব। মাসে তিন চারবার তারা আসে আর খেয়ে যায় আর নিয়ে যায়। একটা শাকের পাতা যদি রান্না করছো তবুও তাদেরকে দিয়ে আসছো অর্ধেক আর বাকিটা আমাদের জন্য। আমার কথার উত্তরে মা বললো,

– তোর যা মনে হয় বল। আর আমার বিয়ের কারণটা তোকে বলি। তোর বাবা নেই আমার কাজ করে খেতে হয়। কতদিন কাজ করে খাবো আমি? কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো পুরুষের সাথে কথা বলতে কেউ দেখে তাহলে বলবে না জানি তার সাথে আমার কি চলছে। আগে তোর বাপ বেঁচে ছিলো কেউ কিছু বলতে পারতো না কিন্তু এখন তো নানা জনে নানান কথা বলবে। আর আমার নিজেরও একটা ভবিষ্যৎ আছে সেসব চিন্তা করে আমি বিয়ে করেছি।

– হ্যাঁ সেটাই বলো তোমার ভবিষ্যৎ এর জন্য বিয়ে করছো। আর আগে যে যুক্তি দিলা ওটা কোনো কাজের যুক্তি না। তুমি একা যে স্বামী হারা এমন না। আরো কত মানুষ আছে। তারাও কি লোকের কথার ভয়ে ছেলে মেয়ের চিন্তা না করে বিয়ে করে ফেলছে? একটা বার চিন্তা করলা না আব্বা নেই আর তুমিও যদি চলে যাও তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমার কি হবে? আমি সকালে কাজে যায় আর রাতে আসি। সারাটা দিন আমার বউ বাড়িতে থাকে একা। আমি কাজ করলেও আমার মনটা থাকে বাড়িতে।

তুমি বাড়ি থাকলেও তো আমার চিন্তা হত না যে মা আছে। আমার বউকে দেখে রাখবে। একটু নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারতাম। কিন্তু এখন কি করবো? কে দেখে রাখবে? কেউ তো নেই? আমার ফিরতে অনেক রাত হয় আর একা একটা মেয়ে বাড়িতে কিভাবে থাকবে বা আমিও তাকে একা রেখে কাজে কিভাবে মন দেবো? বাড়িতে বসে থাকলে তো আমার দিন চলবে না! না খেয়ে থাকতে হবে। বেঁচে থাকতে গেলে কাজে তো যাওয়াই লাগবে। এখন তো আমরা দুইজন আছি। সব দিন যে আমরা দুইজন থাকবো এমনটা তো না। আমাদের তো ছেলে মেয়ে হবে। কি করবো আমি! আমাকে একটু বলতে পারো? তুমি বাড়িতে বসে থাকলেও আমার জন্য উপকার হত। মাথার উপর ছায়াটা থাকতো। কিন্তু আমাকে অথৈ সাগরে ফেলে তুমি নিজে সুখি হওয়ার জন্য! নিজে ভালো থাকার জন্য বিয়ে করেছো বাহ মা বাহ! তোমার তুলনা হয় না। মায়েরা সন্তানের জন্য সন্তানের সুখের জন্য জীবন দিতে পারে আর আমার মা আমাকে গভীর সমুদ্রে ফেলে নিজে ভালো থাকার জন্য চলে গেলো। তুমি কি আসলেই আমার মা?

ভাবতেও ঘৃণা হয়। আমি কোথাও যেতে পারিনা। কোথায় গেলে মানুষ বলে তোর মা নাকি আবার বিয়ে করেছে? আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনা। কি ই বা বলার আছে আমার? নানান জনে নানান কথা বলে আর সেসব আমাকে শুনতে হয় আমাকে! তোমাকে না। লজ্জায় আমার পড়তে হয় তোমার না। আজ যখন সেই বিয়ের কথা সত্য হলো আর তোমার মুখে সেটা শুনলাম! বিশ্বাস করো আমি মাটির তলে ঢুকে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে আমার। কি করে পারলা এমন কাজ করতে? আব্বা মারা গেলো আর তুমি বছর না ঘুরতেই বিয়ে করলা। আব্বার কথা চিন্তা করে, আব্বার ভালোবাসার কথা চিন্তা করেও তো বাকি জীবন পার করতে পারতা। যাই হোক ভালোই করেছো নিজের সুখ নিজে খুজে নিয়ে। আমার কথা তোমার ভাবতে হবে না আমার কেউ নেই।

মাকে কথা গুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে উঠে চলে গেলাম। মায়ের সামনে থাকতেও ইচ্ছা করছে না আমার। তারপর দুই দিন থেকে মা নানী বাড়ি চলে গেলো। শুনেছি সেখানে সেই লোকটার সাথে থাকবে। মা যাওয়ার সময় বলে গেছিলো আবার আসবে হাড়ি পাতিল আর প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো নিয়ে যেতে। আর তাই হয়তো আজ এসেছিলো। আমার আব্বার হাতের জিনিস আসছে নিয়ে যেতে তার নতুন সংসারে। আমার জন্যও একটা বার ভাবলো না। আব্বা একটু জমি কিনেছিল আমার কাকার কাছ থেকে। আর সেই জমিটুকু আব্বাকে বুঝিয়ে নিজের নামে করে নিয়েছিলো মা। কয়েক দিন আগে নানা বাড়ি গেছিলাম সেই জায়গার দলিলটা আনতে। আমার নানা মামা আর বড় খালা আমাকে মারতে আসছিলো কেনো জমির দলিল নিতে গেছি এই কারণে।

আমার মা ও আমাকে অনেক কথা শুনেছিলো। আর ওর ভাই বোনেরা আমার নামে মামলা করবে বলে হুমকিও দিলো কিন্তু আমার মা আমাকে জায়গার দলিলটা দিলো না। তবে এটা বলেছিলো আমার এখানকার বসত বাড়ি বিক্রি করে ওখানে মায়ের কাছে গিয়ে থাকতে। আমার বাপের জায়গা বেচে আমি ওখানে গিয়ে থাকি আর আমাকে একদম পথে বসিয়ে দিক। আমার ভাবতেও অবাক লাগে আমার নিজের মা আমার সাথে এমনটা করলো। ওখান থেকে অনেকটা মার খেয়ে আমি খালি হাতে বাড়িতে আসি। আসার পরেও সেদিন রাতে মাকে ফোন করে কান্না কাটি করি কিন্তু আমার মা আমাকে বলে কেনো ফোন করেছিস? আমি ফোন করে কান্না করছি আর আমাকে এই কথা বললো। কথা বলার ভাষাটা হারিয়ে ফেললাম তখন। ফোন কেটে কান্না করতে থাকলাম।

আব্বা মারা যাওয়ার পর ঘরে দশ হাজার টাকার মতন৷ ছিলো আর সে টাকাটাও মা নিয়ে তার বাপ ভাইদেরকে খাওয়াইছে। একটা ছাগল ছিলো কয়েক দিন আগে সেটাও বিক্রি করে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছিলো। বিয়ের কথা জানার আগে সমিতি থেকে বিশ হাজার টাকা তুললো আর সে টাকা থেকে মাত্র চার হাজার টাকা আমাকে দিয়ে ষোল হাজার টাকা বাপের বাড়িতে নিয়ে গেলো। আর সেই বিশ হাজার টাকার লোন এখন আমাকে শোধ করতে হচ্ছে। মা বিয়ে করে নিজে ভালো থেকে আমাকে ডুবিয়ে দিয়ে গেছে। এটাই আমার মা। যার কাছে সন্তান কিছু না। তার নিজের বাপ ভাই বোন সব। আমার মামা নানা শয়তানেরা আমার মাকে বিয়ে দিছে হয়তো সেই লোকটার কাছ থেকে খাওয়ার জন্য। আমার কথা কেউ ভাবলো না।

আমার বাবা নেই আর মা থাকতেও নেই। আজ এত বড় পৃথিবীতে একা আমি। জীবনটা হয়তো অনেক কষ্টে কাটবে কিন্তু বেঁচে থাকবো। কঠিন হবে জীবনের পথ চলা তবে জীবন সংসারে থেমে থাকবো না। চলে যাবে জীবনের প্রতিটা দিন সুখে আর দুঃখে। আমার কেউ নেই কিন্তু আমার চিন্তা নেই। যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে। আর আল্লাহ যার আছে তার আর কারো দরকার হয় না। আমার মা নিজে ভালো থাকার জন্য, নিজে সুখে থাকার জন্য যখন আমাকে পর করে দিলো। তখন সুখে থাকুক। ভালো থাকুক আমার মা।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত