অনেকদিন পর আজ ফেসবুকে এসেছে মেঘ।হ্যা অনেক দিন তো বটেই।তা প্রায় তিন বছর তো হবেই।হুম তিন তিনটা বছর ফেসবুক থেকে দূরে আছে মেঘ।যে কিনা এক সময়ে ফেসবুক ছাড়া একটা মিনিটও থাকতো না।ফেসবুক সেলিব্রেটিদের ভিতরে ছিল অন্যতম।ওর লেখালেখির হাত খুব ভাল ছিল।অনেক গল্প লিখতো।তবে সবই এই ফেসবুকের ভিতরই সীমাবদ্ধ ছিল।একটা বই বের করার ইচ্ছা ছিল।কিন্তু তিন বছরের ব্যবধানে তা এখন অতলে।
ফেসবুকে ঢুকতে দেখলো শ খানেকের ওপর ম্যাসেজ,হাজার খানেকের ওপর নোটিফিকেশনস।তবে বেশির ভাগই এক বছর আগের। ম্যাসেজগুলো ওপেন করল মেঘ।বেশির ভাগ ম্যাসেজেরই ধরণ একই রকম।”ভাইয়া আপনার কি হইছে।কোথায় আছেন।এফবি তে আসেন না কেন।নতুন স্টোরি দেন প্লিজ।” এরকম ই বেশির ভাগ।সব ম্যাসেজ সিন করলো না মেঘ।নোটিফিকেশনস গুলোও দেখলনা।চলে গেল নিজের প্রোফাইলে।সর্বশেষ ১৪-৪-২০১৪ তে পহেলা বৈশাখের লাল পাঞ্জাবীতে ছবি আপলোড করা।8k লাইক আর 1k কমেন্টস প্রায়।তবে রিপ্লে দেওয়া হয়নি কোনো কমেন্টেরই।তার গল্পগুলোতেও 2k,3k লাইক পড়ত।কখনো বা তারও অনেক বেশি। এরপর সে চলে গেল ফ্রেন্ডলিস্টে।ও খানে শুক তারা নামের একটা আইডিতে ঢুকে তার মেসেজ অপশনে গেল।কিন্তু না।কোনো মেসেজই নেই।সেই তিন বছর আগের শেষ মেসেজ।এতটা নিষ্ঠুর মানুষ হতে পারে তা সে কখনো ভাবিনি হয়ত।কিছুটা হতাশ হয়ে বসে রইল।কিছু একটা হয়ত মনে করতে চাইছে সে।হয়ত পুরোনো কোনো স্মৃতি।যেটা ঘটেছিল তিন বছর আগে।
ফেসবুকে তার জনপ্রিয়তার খাতিরে বন্ধুরও অভাব ছিলনা।রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করতে করতে একসময় তার লিমিট শেষ হয়ে গেল।কিন্তু মেসেজেরর তো আর লিমিট নেই।এমনি একদিন একটা অচেনা আইডি থেকে মেসেজ অাসল।আইডির নামটা ছিল “শুক তারা”।মেঘ চেষ্টা করতো সকলের মেসেজের ই রিপলে দেওয়ার চেষ্টা করত।সেই সুবাদে এটারও রিপলে দিল।
–hlw..how r u?? ( শুক তারা)
–ভাল।আপনি?? (মেঘ)
–hmmm…vloi.
–হুম
–ki kren??
–ফাকা মাঠে একা একা বসে আছি।
–aka kno??
–কিছু সময় একা থাকতে খুব ভাল লাগে।
–hmmm..ta thik.
–আপনি কি করেন?
–aito bose bose onk diner akta issa puron krteci..
–কি ইচ্ছা?জানতে পারি??
–hmm..ta bla jai
ami akjner pagla fan..onk diner issa clo tar sthe aktu ktha blbo..aj sei issa ta puron krteci..r tar jnno apnk thanks..
–বুঝলাম।তবে ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই।তা অনেক দিনের ইচ্ছা এতোদিন পর পুরোন হলো কেনো??
–voi lgto..apni jdi rply na den..abar ato boro akjn celebraty kina ki blben..khub voi lgto..
— তা এখন কি মনে হচ্ছে??বাঘ নাকি ভাল্লুক??
–oti sadharon akjn osadharon manus!!
–এতটা বাড়িয়ে বলার দরকার ছিলনা।তবে আমি সাধারণ একজনই।কোনো সেলিব্রেটি নয়।ভালো লাগে তাই লেখা লেখি করি।আর কিছুই নয়।
–ami apnr sb gulo lekhai poreci..osadhar
on lekha apnr..sb lekhai ato ta reality ace j vlo lgte baddho..
–ধন্যবাদ।চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেওয়ার।
–asca apni boi ber kren na kno??
–এমনিই।
–ata kno ktha hte parena..
–হয়তো তাই।।অন্য কোনোদিন বলবো।।এখন আর সময় দিতে পারছিনা।ভালো থেকো।
–ok.bye.
সন্ধ্যায় বাসায় আসলো মেঘ।রাতের বেলা আরো একটা গল্প পোস্ট দিল।গল্পটার নাম ছিল “অপ্সরী”। এখানে অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়ের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।যাই হোক,যে কোনো কারনে সেদিন রাতে গল্পটা পোস্ট দেওয়ার পর আর ফেসবুকে যায়নি সে।কিন্তু ঘরের ভিতর ব্রডব্যান্ড কানেকশন থাকায় ওয়াইফাই অন ছিল।যার ফলে অনেক মেসেজের টোনও শুনতে পাচ্ছিল সে।কিন্তু কোনোটাই সিন করেনি সে। পরদিন সকাল ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই গাদি গাদি মেসেজ।কিছু কিছু রিপলে দিল।আর কিছু রেখে দিল পরবর্তী সময়ের জন্য।এর ভিতরই আরো কিছু মেসেজ আসলো।তবে একই আইডি থেকে।সেই শুক তারা থেকে।বাধ্য হয়ে কনভারসেশনটা অন করল।আর তাতেই দেখা গেল প্রায় ২০/২৫ টা মেসেজ তো হবেই.
–ki khbr?ki krcen.?
abr r akta stry??wait akhkn e porteci..
wow!!oshadhaaron!kivbe paren apni??
ki bapar??ktha blcen na kno??nsg gulo seen o krcen na??
oh!apni to celebraty..onk busy..sbr sma seen kra jaina..
ato pat naoa vlo noi kintu..ontoto seen to krben..
ok..thken apni..
ai jnnoi ktha blte voi pasclm..sudhu sdhi ksto plm..
good night!vlo thkben.
good morning!!
ki bapar??fb te aslen abr..tao amr sms seen krlen na..
vlo..krte hbena..bye
এতগুলো মেসেজ দেখে মেঘ কি করবে বুঝতেছেনা।অবশেষে রিপ্লে দিলো।
–সরি।আমি রাতে ফেবুতে ছিলাম না।ওয়াইফাই অন ছিল।আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত।
–that’s ok..
–অনেক কষ্ট পাইছেন??
–hmmm
–সত্যিই আমি অনেক দুঃখিত।মাফ করা যায়না??
–hmmm..jai..jdi amr sthe messenger e call die aktu ktha blen..
–ওকে মেঘ কল দিল।
–হ্যালো (মেঘ)
–হ্যালো।কথা বলছেন না কেন?
— কি হলো?কথা বলেন। কেটে গেল কলটা।আবার মেসেজ
–আপনার কণ্ঠটা অনেক সুন্দর। (শুক তারা)
–আপনি কথা বলছিলেন না কেন?
–এমনি।আপনার কণ্ঠ শুনছিলাম।
–কি বলব বুঝছিনা।
–বুঝতে হবেনা।
–হুম।তা আপনি হঠাৎ বাংলা কি বোর্ডে কেন?
–ইংরেজিতে কেমন যেন ভাল লাগছেনা।
–ওহ!আচ্ছা আমার এই পাগলি ফ্যানের নামটা জানতে পারি কি??
–হুম।জানতে পারেন। “রাত্রী”
–অনেক সুন্দর নাম কিন্তু।
–আপনার নামটা আরো সুন্দর।মেঘ।
–থাক হইছে।আমি এখন কাজে যাবো।বাই।বিকালে কথা হবে..
–ওকে।বাই।
এভাবে সকাল,বিকাল,রাত চ্যাটিং চলতে থাকলো মেঘ আর রাত্রীর।আস্তে আস্তে ১দিন,২দিন করতে করতে মাস হয়ে গেল।আপনি থেকে তুমি তে চলে গেছে তারা।শুরু হয় নতুন এক লাভ স্টোরির।যে স্টোরির নায়ক মেঘ আর নায়িকা রাত্রী।তবে এই স্টোরিটা শুধু মাত্র অনলাইনেই সীমাবদ্ধ ছিল।এটাই তাদের দুনিয়া।অফলাইন বলতে শুধু ফোনেরকথা বলা। এখন মেঘ অন্য কারো রিপ্লে দেওয়ার সময়ই পাইনা।তবে স্টোরি লেখা বন্ধ করেনি।আর রাত্রীও জানতে পারলো যে মেঘ টাকার অভাবে বই বের করতে পারছেনা।তখন সে নিজে টাকা দিতে চাইলেও মেঘ রাজি হয়না।পরে অবশ্য অনেক রিকুয়েস্ট এর পর রাজি হয়।এভাবে কেটে গেলো পুরো ২টা মাস।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো মেঘ এখনো রাত্রীর কোনো ছবি দেখিনি।অনেকবার দেখতে চেয়েছে।কিন্তু রাত্রী দেয়নি।প্রতিবারই তার একই কথা একবারে সরাসরি দেইখো।কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের দেখা করাও হয়না।তবে মোবাইলে নিয়মিতই কথা হতো। ১৪ই এপ্রিল।পহেলা বৈশাখ। মেঘ ওর কিছু বন্ধুদের অনুরোধে ঢাকাতে পহেলা বৈশাখ পালন করতে গেল।সকালে শোভা যাত্রা শেষ করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিল।বিকালে ওর বন্ধুর বাসার পাশ দিয়ে হেটে বেড়াচ্ছিল।ব্যস্তময় রাস্তা।বাস,সিএনজি,লেগুনা চলাচল করছে।এর ভিতর দিয়েই অনেকে রাস্তা পার হচ্ছিল।যা ছিল অনেক ঝুকিপূর্ণ।
হঠাৎই একটি চিৎকার।পরক্ষণেই থমকে গেল মেঘের চোখ।ওর ই সামনে একটা বাস একটা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল।কয়েক সেকেন্ডের ভিতর রক্তে লাল হল পিচ ঢালা কালো রাস্তা।অনেকেই চারিদিক থেকে ছুটে এল।তবে সবার আগে মেঘই ছুটে গেল।যেহেতু তার সামনেই ছিল।সকলের সহযোগিতায় মেঘ ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।এর মধ্যে মেয়েটির পরিবারের লোকজনও চলে এসেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে মেয়েটিকে বাচানো সম্ভব হয়নি।ডাক্তারদের ভাষ্য মতে।হাসপাতালে আনার আগেই ও মারা যায়।মেয়েটির বাবা,মার কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশটা ভারী হয়ে যায়।তাদের সান্তনা দেওয়া ভাষা নেই।এই অবস্থাতেই লাশ বাড়িতে নিয়ে গেল।মেঘের বন্ধুর বাসার পাশেই বাসা। দাফন হতে দেরী হবে।মেঘের জামায় রক্তের দাগ লেগেছিল।তাই বাসায় চলে গেল চেইঞ্জ করার জন্য।
বাসায় গিয়ে চেইঞ্জ করে রাত্রীকে ফোন দিল।এতক্ষণ ফোন দিতে পারিনি হয়তো অনেক রাগ করছে।কিন্তু সব কিছু শুনলে আর রাগ করবেনা।এসব ভাবতে ভাবতেই রাত্রীকে কল দিল।হঠাৎ মেঘের পকেটের ভিতর আর একটা ফোন বেজে উঠল।কিন্তু ওর তো মাত্র একটা ফোন।তাহলে এটা কার?তখন মনে পড়ল যে ফোনটা এক্সিডেন্ট করা মেয়েটার।ওর বাবাকে কল দিয়ে ফোনটা নিজের পকেটেই রাখছিল ও।এখন ঐ ফোনে আসা কলটা রিসিভ করার জন্য ফোনটা বের করল। কিন্তু এ কি!! এই ফোনে যে মেঘের নাম্বার থেকেই কল এসেছে। আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না মেঘের।কি করবে ও কিছুই বুঝতে পারছেনা।কেমন যেন চিৎকার করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।কিছুক্ষণ একমনে এক পলকে দাড়িয়ে রইল ও।তারপর হঠাৎই ফ্লোরে পড়ে গেল ও।
চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় দেখতে পেল।পাশে ওর বন্ধুরা।ওরা কিছুই বুঝে উঠার আগেই মেঘ চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।ওর কান্না যে দেওয়াল ভেঙ্গে বেরিয়ে যাবে।অনেক চেষ্টা করেও ওকে থামাতে পারলো না।ও সেই রক্ত মাখা জামা ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে শান্ত করা হয়।এভাবেই চলতে লাগল কয়েকদিন।আস্তে আস্তে ওর কান্না করা বন্ধ হয়ে যায় ঠিকই।কিন্তু সেই সাথে একেবারেই চুপচাপ হয়ে যায় মেঘ।আস্তে আস্তে অনেক অসুস্থও হয়ে পড়ে।মাঝে মাঝে ঘুমের ঘরে চিৎকার করে উঠত।কেমন একটা পাগল পাগল হয়ে গিছিলো।অনেক চিকিৎসার পর দীর্ঘ তিন বছর সুস্থ জীবনে ফিরে আসে সে। কিন্তু অতীত তো কারো পিছু ছাড়েনা।
আজ ফেসবুকে ঢুকে এত আইডির ভিতর থেকে রাত্রীর আইডি খুজে পুরোনো মেসেজ গুলো দেখে আবার কাঁদতে শুরু করে।আজ কেও ওকে নিষেধ করছেনা।ও কাঁদুক।মনটা হাল্কা হোক।এতেই ভাল থাকবে মেঘ।মেঘ তো কেঁদে ভালো থাকছে।কিন্তু রাত্রী কেমন আছে।জানতে খুব ইচ্ছা করে মেঘের।এতদিন মেসেজ,কল দেওয়া হয়না,রাগ করছে না তো আবার।মেয়েটা অনেক বেশি অভিমানী ছিল।এখনো কি অভিমান করে?এখনো কি মেঘের জন্য কাঁদে।খুব জানতে ইচ্ছা করে মেঘের।কিন্তু সে যে আজ সত্যকারেই সন্ধ্যা আকাশের শুক তারা হয়ে আছে।আর ফেসবুকে সেই শুক তারা নামের আইডি টা আজ বিজ্ঞানের ভাষায় ধ্রুব।তবে রাত্রীর কথা মতো মেঘ একটি বই বের করবে।যার নাম হবে “শুক তারা”।