বিকাল ৫টা___
নিলয় পোশাক পড়ে রেডি হচ্ছে! কিছুক্ষন পরই নিশাত নিতে আসবে! না গেলে পাগলি মেয়েটা অনেক রাগ করবে,তাই আগেভাগে রেডি হয়ে থাকাই ভালো!
.
যত তারাতারি যাওয়া যা তত তারাতারিই আবার বাসায় ফিরা যাবে!!
.
বলতে না বলতে ঘরের দরজায় টিং টিং আওয়াজ হল! নিলয়ের বুঝতে বাকি রইলো না কে এসেছে, নিলয় দরজা খুলে দিল!
.
–কি রে তুই দেখি একদম রেডি!(নিশাত)
.
–রেডি না থেকে উপায় আছে,তুই কি না নিয়ে ছাড়বি??(নিলয়)
.
–তা অবশ্য ঠিকই বলেছি! তুই যেতে না চাইলেও টেনে ধরে নিয়ে যেতাম!!
.
–আচ্ছা চল যাওয়া যায়!!
.
–ওকে চল!
.
নিলয় আর নিশাত বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় চলে আসে! কোথাও রিকশা দেখা যাচ্ছে না!
.
কিছুটা দূরের পথ হেটেও যাওয়া যাবে না! নিলয় একা হলে একটা কথা ছিল কিন্তু নিশাত এতটা পথ হাটতে পারবে না!
হঠাৎ-ই কিছু দূরে একটা খালি রিকশার দেখা
মিলে!!
.
–ঐ মামা যাইবা(নিলয়)
.
–কই যাইবেন??
.
–রমনা পার্কে!
.
–হ যামু,৭০ টেকা দিবেন!!
–ভাড়া তো ৩০ টাকা ৭০ টাকা চাইছেন কেন???
.
–আমার চাওয়া আমি চাইছি,গেলে যাইবেন না গেলে নাই!!
.
আর কোথাও রিকশা দেখা যাচ্ছে না,এটা ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না ভেবে দু’জনে রিকশায় উঠে পরে!
.
নিশাত আর নিলয় দু’জনে খুবই ভালো বন্ধু! নিলয় যখন অর্নাস ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল!, তখন ওদের সীট পাশাপাশি পড়েছিল! আর সেখান থেকে ওদের পরিচয় এবং
অল্প কিছু দিনেই ভাল বন্ধুত্ব হয়ে উঠে!
.
নিশাত মনে মনে নিলয়কে অনেক পছন্দ করে কিন্তু মুখ ফুটে কখনও বলতে পারে না! ভয় একটাই যদি বন্ধুত্বও নষ্ট হয়ে যায়! তাই বার বার বলতে গিয়েও বলা হয়ে উঠে না!
.
২
রমনা পার্কে পৌছাতে ২০মিনিটের বেশি সময় লাগলো না!
.
রিকশা ভাড়া মিটিয়ে,দু’জনে পার্কের ভিতরের নিলিড়িবিলি একটা বেঞ্জে গিয়ে পাশাপাশি বসে পরে!
.
নিশাত এক দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে! কিছু একটা বলতে গিয়েও মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে বার বার!
.
–কিরে ড্যাব-ড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন? কিছু বলবি??(নিলয়)
.
–নিলয়ের কথায় নিশাত বাস্তবে ফিরে এসে বলে,,ক,,কই কিছু না তো!!
.
–তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
.
–আচ্ছা নিলয় তুই কি কাউকে ভালোবাসিস??
.
–ভালোবাসি তা ঠিক না,,তবে একজনকে খুব ভালো লাগে!!
.
নিশাতের মুখ উজ্জল হয়ে যায়! নিশাতের ধারনা মেয়েটি তাহলে ও নিজেই!
.
–আচ্ছা তাহলে ওক বিলস না কেন, যে তুই ওকে ভালোবাসিস!!
.
–যদি রাজি না হয়! তখন তো ওর কাছে খারাপ হয়ে যাবো! তাই বলি না!!
.
–বলে তো দেখ,,রাজিও তো হয়ে যেতে পারে!!
.
–তুই যখন বলছিস,,তাহলে কাল একটু চেষ্টা করে দেখবো!
.
নিশাতের মনের ভিতর আনন্দের বন্যা বয়ে চলছে! কি রেখে কি বলবে খুজে পাচ্ছে না! দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে! নিশাতের দিকে তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছে!!
.
–কিরে তুই এমন করছিস কেন?(নিলয়)
.
–না এমনিতে,চল সময় অনেক হয়েছে এবার উঠি,,দেড়ি করলে বাসায় গিয়ে বকা খেতে হবে!!
.
–ওকে চল তাহলে,,আমারও বাসায় একটা কাজ আছে!!
.
দু’জনে বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে পরে! সরাসরি গেট দিয়ে বেড়িয়ে রাস্তা এসে রিকশা নেয়! নিশাতকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে,নিলয়ও বাসায় চলে আসে!!
.
এদিকে নিশাত খুশিতে আত্নহারা হয়ে বাসায় এসে ছুটাুছুটি করছে! কি করবে খুজে পাচ্ছে না! কাল নিলয় যখন ভালোবাসার কথা জানাবে তখন ও কি করবে? জরিয়ে ধরবে? নাকি লজ্জায় মুখ লুকাবে এসব একা একা ভাবছে! সারারাত এসব ভাবতে ভাবতেই কেটে গেল!
.
পরেরদিন__বিকাল ৪টা
ক্রিং..ক্রিং করে একবার ফোন বেজে মাত্রই নিশাত ফোন রিসিভ করে!
.
–হ্যা নিলয় বল??
.
–কিরে ফোন কি হাতে ধরেই ছিলি নাকি?
একবার বাজতেই রিসিভ করলি!!
.
–হ্যা,
.
–তুই কি একটু বাসার সামনে আসতে পারবি?
.
–মাত্র ১০ মিনিট অপক্ষা কর আসছি! টুট..টুট
.
নিশাত আগে থেকে রেডি ছিল তাই শুধু ব্যাগটা নিয়েই ঘর থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল! রিকশা একটা নিয়ে সরাসরি নিলয়ের বাসায় সামনে নামে!
.
নিলয়ও আগে থেকে বাসার সামনে দাড়িয়ে ছিল! নিশাত কে নামতে দেখা মাত্রই এগিয়ে যায়! এবং রাস্তা পাশে থাকা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়!
.
রেস্টুরেন্টে গিয়ে দু’জন চেয়ার টেনে মুখমুখি বসে!!
.
–কিরে এখানে আনলি কেন??(নিশাত)
.
–তোকে একটা সারপ্রাইস দেওয়ার জন্য!!
.
–তারাতারি বলনা আমার যে আর দেড়ি সহ্য হচ্ছে না(উৎসাহিত হয়ে)
.
–একটু অপেক্ষা কর!!
.
হঠাৎ করেই পিছন থেকে বলে উঠলো,,সরি সরি সরি আমার আসতে একটু লেট হয়ে গেল!
.
নিশাত পিছন ফিরে অবাক চোখে হা করে তাকিয়ে আছে–
.
–কিরে ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন!
তোকে যার কথা বলছিলাম ওই সেই মেয়ে হিমি!!
.
–হায় নিশাত আপু,হিমি নিশাতের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়!
.
নিশাত কি বলবে বুঝতে পারছে না! গলা শুকিয়ে গেছে! বুকের বা পাশটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে! কন্ঠনালি কেপে উঠছে!
.
–হায়,(নিশাত)
.
–আমি আপনার কথা নিলয়ের মুখ থেকে শুনেছি! আপনি নাকি অনেক ভাল!
.
–তাই না!! আচ্ছা আমি উঠি তোমরা কথা বলো! আমার একটা গুরুত্বপূর্ন কাজ আছে!!
.
–উঠি মানে এখানে বস!!
.
–নারে নিলয় মাথাটা কেমন যে হঠাৎ ব্যাথা করছে তাছাড়া আমার একটা কাজ আছে!!
.
এই বলে নিশাত দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে রিকশা নিয়ে সরাসরি বাসায় চলে যায়! সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছে! কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না!
.
৫
নিশাত ঘরের দরজা বন্ধ করেছে সেই কখন! কিন্তু দরজা খুলছে না! বাড়ির সবাই অনেকক্ষ যাবৎ ডাকাডাকি করছে কিন্তু ভিতর থেকে কোন সারাশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না!
.
অবশেষে দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে সবাই নির্বাক হয়ে যায়! নিশাত অনেক সুন্দর করে সেজেছে! লাল শাড়িতে নতুন বউের মত লাগছে! তার সম্পূর্ন শরীরটা উপরে থাকা স্লিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে!
.
হাতে ছোট্র একটা চিরকুট রয়েছে যেখানে লিখা; ভালো থেকো তুমি,ভালো থেকো! এই জীবনে পেলাম না তাতে কি? আমার ভালোবাসা সত্যি
হলে পড়ের জীবনের আশায় থাকলাম! আমার ভালোবাসা না হয় প্রকাশ করতে পারলাম না! তাতে কি? না হয়”অপ্রকাশিত ভালোবাসা”ই থেকে গেল!!!!