সেদিনটা ছিলো শুক্রবার
.
বছর কয়েক আগের কথা। নতুন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয় প্রিয়ন্তি।
প্রথম দিন-ই প্রেমে পড়ে যায় সুদর্শন এক ছেলে দেখে।
দুজন ই এক কোচিং সেন্টারের এবং পড়ার সময় ও এক-ই। প্রথম দিনেই
অনেকবার দুজনের মধ্যে চোখাচুখি হয়।
তাদের ব্যাচ এর মধ্যে তারা দুজন ই বলতে গেলে সবার চাইতে
সুন্দর।
কিছুদিন পর ছেলেটির নাম জানতে পারে। তার নাম সিফাত। এ
কয়েকদিনে চোখে চোখে তাকানোর হার টা ও একটু বেশিই
বেড়েছে। সাথে যোগ হয়েছে মুচকি হাসিও। একজন
আরেকজনকে দেখলে ঠোটের কোণে উজ্জ্যলতা
ফুটে উঠে। উঠতি বয়স দুজনের ই। সবেমাত্র ক্লাশ নাইনে উঠা ।
সে হিসেবে দুজনেই এখন এক স্বপ্নিল পৃথিবীর নিঃশ্বাস বুকের
গহীনে ঢুকাচ্ছে।
,
এভাবেই মাস দেড়েক কেটে গেলো। একদিন সবাই বলছে
তারা পিকনিকে যাবে। সবাই রাজি হলো। প্রিয়ন্তি কখনও পিকনিকে
যায় নি তবুও অনেকটা সিফাতের জন্য রাজি হলো। পিকনিকে
গেলে হয়তো নতুন কিছু হতেও পারে,সে আশায় সে রাজি
হলো।
পিকনিক স্থানটা সাফারি পার্ক ঠিক করলো।পরদিন সকালে রওনা
দিলো। আজকে তাদের চোখের পাতা যেন নড়ছেই না।সবাই
আনন্দে মেতে উঠেছে অন্যদিকে তারা একজন
আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার আনন্দে মেতে
উঠেছে। গাড়ি গিয়ে থামাতেই
একেকজন একেকদিকে যেতে লাগলো। প্রিয়ন্তি একটু
আলাদা হয়ে যায় সেই সুযোগটা সিফাত নিজের করে নেই। পিছু
হাটতে হাটতে একসময় সামনে গিয়ে বলেই ফেললো,
–প্রিয়ন্তি আজ তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে
একটা মুচকি হাসি দিয়ে প্রিয়ন্তিও জবাব
দিলো,
–তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে
–প্রিয়ন্তি আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি মনে হয়
–ওহহ তাই
–হ্যা।তোমায় না দেখলে ভালো লাগে না আমার
–প্রেম করবা নাকি
–ইচ্ছে তো রয়েছে
–তাহলে তো হয়েই গেলো
–কি?
–কি আর। আমরা দুজন প্রেম করব
দুজন দুজনকে ভালোবাসবো
–সত্যি?
–হ্যা। আমিও তোমায় ভালোবাসি
,
শুরুটা হয়ে যায় এভাবেই প্রেমের। সেদিন পিকনিকটা সবচেয়ে
বেশি উপভোগ করেছিলো তারা দুজন। দিনটা ই ছিলো প্রেমময়। এরপর থেকে প্রতিদিন রাত জেগে কথা।
কৌচিং শেষে ঘুরতে যাওয়া। এ রেস্টুরেন্ট ও রেস্টুরেন্ট সবজায়গায় যাওয়া ছিলো
প্রধান কাজ। দিনগুলো তাদের শত আনন্দে কাটতো। বন্ধু
বান্ধবরা বলতো
এমন প্রেম নাকি জীবনেও দেখে নাই। সারাদিন ই হাসি লেগে
থাকতো।চোখে জলের প্রশ্নই উঠে না। এভাবেই যেতে
লাগলো দিনকাল। সম্পর্কটা দীর্ঘস্থায়ী হলো। দেখতে
দেখতে দুবছর পার হয়ে গেলো। এরপর তারা দুজন কলেজে
ভর্তি হয়। তখনও তাদের সুখের স্রোত প্রবাহমান।
,
একদিন
,
মেয়েটি হুট করে অসুস্থ হয়ে যায়। প্রচন্ড জ্বরের আক্রমণ।
দুদিন গেলো বিছানা থেকে উঠতেই পারলো না। ঔষদে ও কাজ
হচ্ছে না তেমন। চতুর্থ দিনের ঘুমটা যখন ভাঙ্গে সকালে।
মেয়েটি অনুভব করলো
চারদিক অন্ধকার। চিৎকার শুরু করলো, ‘মা আমিতো কিছুই দেখতে
পারছি না, চারিদিক অন্ধকার দেখাচ্ছে কেন মা?’
তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নেওয়া হলো ;ডাক্তাররা বলে দিলো
তার টাইফয়েড জ্বরের ফলে চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে
গিয়েছে। মেয়েটা সেখানেই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো
ডাক্তার যখন বললো ভালো হবে না চোখদুটো। বাসায় নিয়ে
আসা হলো প্রিয়ন্তিকে। বাসায় যেন,কান্নার রোল পড়লো।
সবাই কেঁদে যাচ্ছে অবিরত। একটা অন্ধ মানুষ কতটা কষ্টে
জীবন পরিচালনা করে সেটা প্রিয়ন্তি হারে হারে টের পাচ্ছে।
কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না এ অবস্থাকে।
গভীর রাতে সিফাত ফোন করলো,
তার এ অবস্থা জেনে ফোনটা কেটে দিলো। প্রিয়ন্তি
চেয়েছিলো কথা বলতে দীর্ঘসময়। কারণ এ একটা মানুষের
কন্ঠটা ই তাকে কষ্টের মাঝেও সুখ দিতে পারে।
দিন যেতে লাগলো একটু একটু করে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
করছে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে প্রিয়ন্তি।সিফাত একদিন দুদিন পর
পর ফোন দেয়। কিছু সময় কথা বলে। সেও কেমন জানি
আগের মতো নাই।তবুও প্রিয়ন্তি সুখী সে তো খোঁজ
নেই।
,
একদিন
,
সিফাত ফোন করে বললো,
–কতদিন দেখিনি তোমায়। দেখতে খুব ইচ্ছে করছে
–কি করে বাহিরে যাব।কেউ তো দেবে না যেতে
তারপর সিফাত বুদ্ধি বের করলো
তার এক বান্ধবীকে পাঠাবে তাকে গিয়ে আনতে তার বান্ধবীর
জন্মদিনে থাকার জন্য।
যেই কথা সেই কাজ। অতঃপর এ প্ল্যান এ প্রিয়ন্তি রাজি।
পরদিন সকালে প্রিয়ন্তির বাসায়
প্রিয়ন্তির এক বান্ধবী তাকে গিয়ে
নিয়ে আসে। প্রিয়ন্তির মা অমত করলেও পরে যেতে দেয়
ঠিকি।
প্রিয়ন্তি তাড়াতাড়ি গিয়েই বসে রইলো । সিফাত আসছে
প্রিয়ন্তিআগেই বুঝতে পেরেছে
কারণ তার শ্রবনশক্তিটা ঠিকি আছে । সিফাতের হেটে আসার শব্দ
সে শুনতে পাচ্ছে। সিফাত কাছে আসার পর ই সিফাতকে জড়িয়ে
ধরে কান্না শুরু করলো প্রিয়ন্তি। সিফাত শান্তনা দিলো। সে পাশে
ছিলো এবং থাকবে।
তারা সারাদিন আড্ডা দিবে ভেবে নিলো তাদের বান্ধবীকে বাসায়
চলে যেতে বললো,
যাওয়ার সময় হলে ফোন দিলে এসে যেন প্রিয়ন্তিকে নিয়ে
যায়।
সিফাত প্রিয়ন্তি কে তারপর এক জায়গায় নিয়ে চললো। প্রিয়ন্তি
জিগ্যেস করে কোথায় নিয়ে যাও
সিফাত বললো,’তার পরিচিত একটা জায়গায়,’
একটু পর তাকে একটা রুমে নিয়ে যায়
আর কিছু বলার আগেই পশুর মতো তার উপর জাপিয়ে পড়ে
শত চেষ্টা আর শত চিল্লাচিল্লিতেও কাজ হয় নি।
ধর্ষিত হতে হয় প্রিয়ন্তি নামক অন্ধ মেয়েটিকে। তাকে রুমে
রেখেই চলে যায়। সেখান থেকে
তার বান্ধবী খোঁজ পেয়ে নিয়ে আসে। সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন
অবস্থায় পড়ে ছিলো। তাকে হাসপাতালে
নেওয়া হয় সবার অজান্তে ।ট্রিটমেন্ট করে রাতে তাকে বাসায়
নিয়ে আসা হয়।
প্রিয়ন্তি কখনও ভাবেনি তার প্রিয় মানুষটি এমন করবে। ভাবেনি তার
জীবনটাকে ধ্বংস করে দিবে । এরপর আর কেনোদিন
কোনো খোঁজ পাই নি
সিফাতের । তবুও প্রিয়ন্তি এখনও চাই সে ভালো থাকুক।
বদলে যাক তার পশুময় জীবন।
ভালো থাকুক সর্বদা।
আমি না হয় হলাম সর্বহারা।
কিছুই তো রইলো না জীবনে
ভালো হয়ে যাক তারা
যারা সেদিন করেছিলো আমায়
অস্তিত্বহারা..।।