দীর্ঘ ৫বছর চাকরি করার পর আজ বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে এসেছি। যদিও বা পড়াকালীন সময় থেকেই চাকরি জীবন শুরু। বসে আছি বাবা মায়ের সাথে।কেন যেন ভিষন বিরক্ত লাগছে। বিয়ে করবনা এমন কোন কথা তো কাউকে দেয়নি তাহলে এমন কেন অস্থির লাগছে?হয়ত প্রথমবার তাই।সামনে নানান রকম নাস্তা সাজানো কিন্তু খাওয়ার কোন ইচ্ছেই আমার হচ্ছেনা। অবশেষে মেয়েকে নিয়ে আসা হলো।আমার ইচ্ছা সত্ত্বেও আমি তার দিকে তাকাতে পারছিনা। কিন্তু হঠাৎ ই একটা চেনা কন্ঠস্বর শুনে বুকটা ধক করে উঠল।এবার তাকিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।মেয়ের সাথে দাড়িয়ে ছিল আমার অতিত।যার সামনে আমি বিগত ৬বছরেও যায়নি আজ সে আমার সামনে দাড়িয়ে। ইরা। ও এতক্ষনে আমাকে খেয়াল করল। ওর ভেতরে কি হচ্ছে তা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করল।ইরা আমার দিকে আর তাকিয়েছে কিনা আমার জানা নেই।আমি যতবারই তাকিয়েছি ওর দিকে ওর চোখে পানি ছলছল করতে দেখেছি কিন্তু ওর চোখ আমার চারপাশে না তাকিয়ে জানালার বাইরে।ভিষন অস্থিরতা কাজ করছে আমার ভেতরে।মনে হচ্ছে দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যায়।কিন্তু সেটাও আমি পারবোনা।কথার এক পর্যায়ে মেয়ের সাথে অন্য রুমে পাঠানো হলো।এবার ইরা নিজেও আমাকে উঠতে বলল।আমার ভেতরে একপ্রকার রাগ শুরু হল।ও আমাকে কিভাবে উঠে অন্য মেয়ের সাথে ঘরে যেয়ে কথা বলতে বলছে?আমি উঠে দাড়ালাম।ওর দিকে তাকিয়ে আমি দেখানো ঘরে চলে গেলাম। এতক্ষণে আমি মেয়েটাকে দেখলাম।তার চেহারাই কোন খুত নেই কিন্তু কেন জানি কোন মায়া কাজ করছিলনা যাতে করে আমি বারবার তাকাবো।আমার প্রথম প্রশ্নটাই ছিল তার জন্য বেশ অদ্ভুত।
:-আপনার সাথে বোরখা পড়া মেয়েটা কে ছিল?
সে:-জ্বি আমার বান্ধবি।।
:-ও আচ্ছা।
কথা চলাকালিন সময়ে জানলাম তার নাম অনি। সেসব কিছুই আমার মাথায় ঢুকছিল না।কোনরকম কথা শেষ করে বের হব তখন দেখলাম ইরা দাড়িয়ে। হাসি দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, মেয়ে পছন্দ হয়েছে তো আপনার? ওর হাসিটা একদম বুকে গিয়ে বাধল। বরাবারই আমার রাগ জেদ ইরার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।এবার আমি সবার সামনে গিয়েই বলেদিলাম আমি এই বিয়েতে রাজি। ইরার দিকে তাকিয়ে দেখবার প্রয়োজনবোধ আর করলাম না।কারন আমি জানি ও হাসছে।মেয়েটাকে আমি খুব ভালভাবেই চিনি।ওর বুক ফেটে যাবে ঠিকই তবুই মুখে হাসি ও ঠিক রাখবে।ভিষন জেদি মেয়ে। ৬বছর আগে ওর আর আমার ব্রেক আপ হয়।
আমি ওকে বলেছিলাম তুমি চলে গেলেও আমার কিছু হবেনা।হ্যা ও সত্যি চলে গিয়েছিল।আর ফেরেনি।চেষ্টা করেছি ২/৩ মাস পরপর একটা ম্যাসেজ দিয়ে।আসেনি কার কি?আমারো দায় নেই।৩বছরের রিলেশন ছিল আমাদের।এমন কোন ভালো আর খারাপ কথা নেই যেটা আমি ওকে বলিনি।ও কাদতো তাতে কি?পরে তো আমি সরি বলেছি।
কিন্তু শেষ কথাটা এত বড় করে নিবে ভাবিনি। ওর প্রতি এমন কোন দায়িত্ব নেই যেটা আমি পালন করেছি।শুধুমাত্র ফেসবুকে ও কারসাথে কথা বলবে,কাকে ব্লক দিবে,কোথায় যাবে এসব ছাড়া।এগুলো হয়ত ওর কাছে একপ্রকার টর্চার ছিল।তাতে আমার কি? মেয়েটা প্রচন্ড বাচ্চা টাইপ ছিল।ওকে বেশি কিছু দেওয়ার প্রয়োজন পড়তনা।একটা কোন আইসক্রিম আর চকলেট ই যথেষ্ট ছিল।আমাকে খুব মারত।তবে সেটা ভালবেসে।ভালই লাগত ওর হাতে মার খেতে। মেয়েটা বেশ ভালো মিশতে পারত।সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় ছিল ওর হাসিটা।আমার কেন যানি ওর হাসিটা ভাল লাগত।
প্রথমে আমি ওর কেয়ার করতাম খুব কিন্তু ধিরে ধিরে ওর প্রতি আমার টান কমে আসে।বাড়তে থাকে বিরক্ত।খুব অবহেলা করতাম তবুও ও সব সহ্য করত।কাদতো আর ম্যাসেজ দিত আমাকে।আমি ওসব গায়ে দিতাম না।এত ঢং কিসের?আমি ছেলে মানুষ এত সময় আমার নেই।যদিও আমি তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকতাম।
মেয়েটা তাও আমার খেয়াল রাখত। আমাকে অনেক ভালবাসত।ওর ফোন ম্যাসেজে আমি বিরক্ত হয়ে যেতাম।রাগে বলেই দিয়েছিলাম,দরকার ছাড়া আমার ইচ্ছে করেনা তোমার সাথে কথা বলতে। ও কয়দিন খুব চেষ্টা করেছিল আমায় বিরক্ত না করার কিন্তু পারেনি।রাতে ছাদে বসে কাদতে কাদতে ম্যাসেজ দিয়েছিল।তাতে আমার কি?কাদুক।আমার ওত সময় ছিলনা।
মেয়েটার কান্না কেন যেন আমার বিরক্ত লাগত।যদিও বা একদিন এই মেয়ের সামান্য কান্নায় আমার বুক চিরে যেত।
ওকে আমিই এনেছিলাম ভালবেসে আমার জিবনে।মেয়েটা ধিরে ধিরে আমায় ভালবেসে ফেলে।আমার শত অবহেলায়ও ওর ভালবাসা কখনো কমেনি। আজ ৬বছর হলো মেয়েটা কাদছে। আমি জানি ও আমাকে এখনো ভালবাসে।দ্বিতীয় ভালবাসাটা ওর পক্ষে সম্ভব নয় তা আমার বেশ ভালো করেই জানা।ওকে আমি চিনি।। ইতিমধ্যে বাসায় আমার বিয়ে নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।তাদের একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। কিন্তু আমি যেন অতিতে আরো ডুবে গেছি।সাতার টা যেন আমার বরাবরেরই অজানা। তাতে কি?আমি ইরার কাছে হারতে পারবোনা।বিয়েটা আমাকে করতেই হবে।।। এরই মধ্য আমার ভাবনা ছেদ করল মা ঘরে এসে।
মা:-এই অনয়? কিরে এত কি ভাবছিস?
:-কই কিছু নাতো।কিছু বলবে?
মা:-আরে তুই তো অনির সাথে একবারো দেখাই করলিনা। কাল যা একবার ঘুরে আই।
:-কোথায় যেতে হবে বলো?
মা:-আরে আমি কি বলব।এই নে অনির নাম্বার।তুই কথা বলে নিস।
অামার হাতে অনির নাম্বার এখন।নাহ কথা বলার কোন ইচ্ছে নেই আমার।ম্যাসেজে দিয়ে রাখি। ইরাকে দেখাতেই হবে আমি ওকে ছাড়াই ভালো আছি। ম্যাসেজ দিয়ে মনটা কেমন আনচান করছে।৬বছর আগে ইরার দেওয়া প্যাকেট টা তো খোলা হয়নি।আজ কি খুলে দেখব? রাগে ওটা ফেলে রেখেছি।ইরা বলেছিল পুড়িয়ে ফেলতে।কিন্তু কেন জানি পারিনি। ধুলোয় জমে আছে প্যাকেট টা। ধিরে ধিরে আমি খুললাম।একটা শার্ট পুরোনো আমার দেওয়া কিছু জিনিস আর একটা চিঠি।শার্ট টা বেশ সুন্দর।তবে নষ্ট হয়ে গেছে। চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম আমি।
জানি তুমি ভালো আছো।কারন আমি তোমাকে আর বিরক্ত করিনা।খুব জ্বালাতাম তোমায় তাইনা?আমি কথা দিয়েছি আর তোমায় বিরক্ত করবনা। আমি জানি আমার প্রতি আর কোন টান তোমার নেই।আর তুমি জানো আমি জোর কখনো করিনা। তুমি মুক্তি পেতে চাও তাও এই ইচ্ছেটাও পূরন করে দিলাম তোমার। আমি পারিনি কাউকে ভালবাসতে আর হয়ত পারবোও না।কারন তোমাকে বড্ড ভালোবাসি যে। তোমার পরিবার নিয়ে ভালো থেকো দোয়া করি। নিজের খেয়াল রেখো। ইরা,, অজান্তেই চোখ থেকে দু ফোটা পানি বেরিয়ে এলো। একি আমি কাদছি কেন?এসব ন্যাকামো তো ইরা করে আমার মানায় না। সকালে বেরিয়ে পড়লাম অনির উদ্দেশ্যে।বরাবরের মত আজও লেট হলো। অনির সাথে ইরা দাড়িয়ে। ইরা বেশ হাসিখুশি হয়ে বলল,ভালো আছেন?
আমি মাথা নেড়ে হ্যা জবাব দিলেও একে জিজ্ঞেস করতে পারিনি সে কেমন আছে।৩জনে বসে পড়লাম।ইরা কথা বেশি বলা অভ্যাস আজও রেখেছে। ওকে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছিল।যে মেয়েটা আমার অবহেলায় ফুপিয়ে কাদতো আজ সে এতকিছু অনায়াসে হাসিমুখেই সহ্য করছে। কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এলো।ইরা নিজে থেকেই পরিচয় করিয়ে দিল। ও ছেলেটার পাশে যখন দাড়ালো আমার বেশ রাগ হচ্ছিল।কিন্তু কেন?ওতো ৬বছরে নাজানি কত ছেলের সাথে মিশেছে।কই আমি তো ভাবিনি? আমি জানি ছেলেটা ওর বয়ফ্রেন্ড না।আমি ইরা কে চিনি।ওরা আমাদের বিদায় দিয়ে চলে গেল।ইরা ছেলেটার হাত ধরলো যেভাবে আমার ধরতো।কেন যেন ভিষন হিংসে হচ্ছে। অনি নিজে থেকেই বলে উঠল, ছেলেটা ওর ফ্রেন্ড।
:-ওর বয়ফ্রেন্ড বা বর নেই?
অনি:-না ওর তো বিয়ে হয়নি।মাস্টার্স শেষ করে জব করছে এখন।আর ওর বয়ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু সে ছেড়ে যাবার পর আর কোন সম্পর্কে জড়ায়নি।আমার ধারনা এখনো তাকেই ভালোবাসে।।।
আমি জানি আমার ইরা এমনি।নাহ ওতো আর আমার ইরা না।আমি ওর চলে যাওয়াটা দেখছি এখনো।চোখদুটো আমার ঝাপসা হয়ে আসছে। ইরা তুমি জিতে গেছ।আজও তুমি আমার উপর বিরক্ত নও।আজও তুমি হাজার ছেলের ভিড়ে আমাকে ভালবাসো। আজও তুমি আমায় ভেবে কাদো। হেরে তো আমি গেছি। ভালো থেকো তুমি।