প্রতিক্ষা

প্রতিক্ষা

আমার মত একটা অপদার্থকে কি দেখে চাকরীটা দিল বুঝলাম না, বোঝার দরকারও নাই ৷ খুশির খবর এটা যে, উঠতে বসতে “অকর্মার ঢেকি”টা তো আর কেউ বলতে পারবে না ৷ এবার মিমের সামনে দাড়াতে আর কোন বাধা নেই আমার ৷
:
আমার নাম সিহাব৷ গতকাল পর্যন্ত বাপের আন্ন ধ্বংসকারী বলে ভূসিত বেকার ছেলে ছিলাম ৷ তিন বছর আগে পড়াশুনা শেষের পুর্ব মুহুর্তে মিমকে দেখে দ্বিতীয়বারের মত ক্রাস খাই ৷ আমার জীবনে প্রথম প্রেম আসে মাধ্যমিকে ৷ প্রেম না বলে এটাকে ইমপ্রেসান বলা যেতে পারে, যেটার মেয়াদ ছিল ছয় মাস ৷ তারপর মেয়েটা ওন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে ৷ প্রেম জিনিসটা কি তখন না বুঝলেও এটা বুঝেছিলাম যে, এটা সবার জন্য না ৷
:
তিন বছর আগে-
– এই যে, শুনছেন? এই যে ব্লাক ভাইয়া ৷ (মিম)
মনে হলো আমাকে ডাকছে, কারন আমার টি-সার্ট ও প্যান্ট দুইটাই ছিলো কালো ৷ পিছন ফিরে দেখলাম একটা মেয়ে, মনেহয় নতুন ৷
– জি, আমাকে বলছেন? (আমি)
– হ্যা ৷
– আমার নাম তো ব্লাক না ৷
– আমিতো আপনার নাম জানিনা, সরি ৷
– আচ্ছা, বলেন কি বলবেন?
– আমি কলেজে নতুন ভর্তি হতে এসেছি, কিন্তু করতে হবে কিছু বুঝতে পারছি না ৷
– আচ্ছা চলুন, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি ৷
– Thank you.
তারপর থেকে মাঝে মাঝেই দেখা হত ওর সাথে, কথা হতো ৷ কোথাও আমার মনের মধ্যে একটা বড় যায়গা তৈরি হয়েছিল ওর জন্য ৷ কিন্তু কোনদিন বলার সাহস হয়নি ৷ পরিক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওর সাথে যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায় ৷
তিন বছর পর আজ ওর সামনে গিয়ে দাড়াবো ৷ মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরছে ৷ এমন কি এটাও জনিনা ওর বিয়ে হয়েছে কিনা ৷
ওর কোন ফোন নাম্বার ছিল না আমার কাছে, কিন্তু ঠিকানাটা ছিল ৷ গেলাম ওর বাড়ির সামনে, কলিং বেল চাপতেই এক মধ্যবয়সি মহিলা দরজা খুলল ৷ ভাবলাম মিমের মা হবে ৷ মিমের কথা জিগ্গেস করাতে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন পৃথিবীতে এলিয়েন দেখছে ৷
– তোমার নাম সিহাব ?
– হ্যা (অবাক হওয়ার পালা)
তারপর উনি আমাকে একটা ছোট কাগজ এনে দিলেন ৷ একটা ঠিকানা লেখা ৷
– মিম এটা তোমায় দিতে বলেছিল ৷ ওরা ১বছর আগে এখান থেকে চলে গেছে ৷
দেরি না করে মিমের দেওয়া ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ৷
:
বিকাল ৪টা, একটা প্রাথমিক স্কুলের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি আমি ৷ না, এটা মিমের দেওয়া ঠিকানা নয় ৷ মিমের দেওয়া ঠিকানাটা ছিল ওদের নতুন বাসার ৷ সেখানে গিয়ে ওর মায়ের কাছ থেকে শুনলাম গত তিন বছরের ঘটনা ৷ এক বছর আগে মিমের বিয়ে হয় ৷ শশুরবাড়ির লোকজন ও তার স্বামী তার উপর অনেক অত্যাচার করতো ৷ একদিন তার স্বামী অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনে ৷ তার উপর নির্যাতন দিন দিন বাড়তে থাকে ৷ অাট মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়, মিম তখন গর্ভবতী ৷ কিন্তু তার উপর যে অত্যাচার হয় সেটা তার বাচ্চার উপরও পড়ে ৷ পৃথিবীর মুখ দেখা হয়না একটি নিষ্পাপ শিশুর ৷ এরপর মিমের জীবন থেকে সমস্ত চঞ্চলতা হারিয়ে যায় ৷ এখন সে এই স্কুলে শিক্ষকতা করে, বাচ্চাদের সাথেই সবসময় থাকে ৷
স্কুল ছুটি হল ৷ মোটা ফ্রেমের চশমা আর কালো পাড়ের সাদা শাড়ি পরা একটা মেয়ে বের হলো ৷ মিমকে দেখে চেনার অবস্থায় নেই ৷ আমাকে দেখে থমকে দাড়ালো ৷
– আপনি, এত দিন পর? (মিম)
– চলো, একটু বসি ৷ (আমি)
গলাটা ধরে আসছে ৷ আমার পাশে বসে আছে মিম, তবে তিন বছর আগের সেই মিম নয় ৷ কেন জানি মিমের এই অবস্থার জন্য নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছিলো ৷ আর ভুল করতে চাই না ৷
– মিম,একটা সুযোগ দেবে?
– কিসের?
– তোমার হাতটা ধরার ৷
– অনেক দেরি হয়ে গেছে ৷
– ভুলটা আমার ছিলো, সুধরানোর একটা সুযোগ দেবে না?
– দেবার মত আমার কিছুই নেই ৷
বলে অন্যদিকে তাকালো সে ৷ আমি আস্তে করে ওর হাতটা ধরলাম ৷ আমার দিকে তাকালো সে, চোখে পানি ৷ বুঝলাম না সুখের নাকি দুখের ৷ বুঝতে চাইও না ৷ তবে আজকের পর ওই চোখে আর কোনদিন কষ্টের অশ্রু আসতে দেব না ৷

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত