নিস্তব্ধ

নিস্তব্ধ

আবিদের আজ মন খারাপ। মন খারাপের কারণ বলতে তার গার্লফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে গেছে। চলে যাওয়ার সময় বলে গেছে সে চিটার, ঠক, ফালতু একটা ছেলে!

তার সাথে নাকি আর যাই হোক সম্পর্ক বিল্ডআপ করা যায় না। এসব কথা বলেছে কারণ, আবিদের ফোন আধাঘন্টা ওয়েটিং ছিলো!

আবিদের প্রেমিকা গেছে এটাতে তার যতোটা না মন খারাপ হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি মন খারাপ হচ্ছে এই ভেবে যে, তাকে কেন ঠক, ফালতু ছেলে বলা হলো! অন্য কিছু তো বলতে পারতো। আর একটা মানুষের ফোন ওয়েটিং থাকতেই পারে! ব্যক্তিত্ব বলে কি তার কিছুই নেই!

মনে মনে গার্লফ্রেন্ডের উপর রাগ হচ্ছে তার যেই রাগটা তাকে দারুণ ভাবে অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে! কিছুই করতে ভালো লাগছে না আবিদের!

হঠাৎ তার মাথায় এলো তার বন্ধু রাতুলকে ফোন দেই! বেটার পাগলামী তে যদি মনটা একটু ভালো হয়! সাথে সাথেই রাতুলকে ফোন তবে দুইবার রিং হওয়া সত্বেও ওপাশ থেকে রিসিভ হলো না ফোনটা!!

দুঃসময়ে সব কিছুই বিটরে করছে! তৃতীয় বারে রিসিভ হলো ফোনটা!ওপাশ থেকে কথা আসলো,

-কি রে? এতো ফোন দিস কেন! প্রেমিকারে ফোন দিতে পারিস না!
-দোস্ত, কই তুই?
-আকাশে! কেন?
-দোস্ত তোর সাথে কথা আছে! আইতো!
-গোল্ডলিফ আর চা খাওয়াবি তো?
-হ খাওয়ামুনে। আই!

আধাঘন্টা পরই আবিদ রাতুল একসাথে! রাতুলের চোখ দুইটা আজ কেন জানিনা একটু লাল লাল! চোখ অতিরিক্ত মুছলে যেমনটি হয় আর কি!!

-তোর চোখ লাল কেন?
-বাদ দে! আগে বল তোর কি হইছে?
-দোস্ত, প্রেম তো গেছে!
-আলহামদুলিল্লাহ!
-ধুর বেটা আমার দুঃখে তুই আলহামদুলিল্লাহ পড়ছিস ? মজা নিস নাকি!
-সিগারেট দে! টানবি নাকি?
-তুই জানিস না, আমি সিগারেট খাই না!
-তাহলে চকলেট চুষ! প্রেম গেলো কেন?
-ফোনটা আধাঘন্টা ওয়েটিং ছিলো তাই!
-ধুর! বাদ দে! চল চা খাই!
-মজা করিস না!
-আচ্ছা করলাম না! ফেইসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেন্জ করেছিস?
-নারে!
-কইরা ফেল! মাইয়া খারাপ ছিলো! এতো সহজে প্রেম ভাঙে নাকি! মাইয়া পুরা ফোর টুয়েন্টি!
-এভাবে বলিস না!
-ওরে প্রেম রে! তোকে যখন এক সেকেন্ডই ছেড়ে দিতে পারে তাহলে মাইয়া কি!
-আমি কি এতো বড় অন্যায় করে ফেললাম!
-ধুর বেটা! বাদ দে! চল যাই!
-কই যাবি?
-বন্ধুর মেসে কার্ড খেলে আসি!
-আমি যাবো না!
-তুই বইসা বইসা তোর প্রেমিকার কথা ভাবিস! আমি খেলমুনে!

যেই কথা সেই কাজ!
আবিদ বসে আছে আর রাতুল চুটিয়ে কার্ড খেলছে! খেলার মধ্যে চিল্লাচিল্লি করছে রাতুল সাথে হাসছে! আর আবিদ মাঝেমধ্যেই তার দিকে তাকাচ্ছে! ছেলেটা পারেও! একটা মানুষ কিভাবে এতো হাসতে পারে রাতুলকে না দেখলে বোঝা সম্ভব নয়!

মনটা কিছুক্ষণের জন্য ভালো হয়ে গেলো আবিদের!

রাতুল ক্ষনিকের জন্য হলেও আবিদের মনটা ভালো করে দিলো!

সেইদিন রাতেই আবিদ বাসায় এসে ফেইসবুকে ঢুকেছে রিলেশনশিপ চেন্জ করা জন্য। হঠাৎ করেই আবিদের সামনে একটি রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস
চোখে পড়লো যেখানে একটি মেয়ে “গেট ম্যারিড ” দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে! একটু ধাক্কা ই খেলো আবিদ!
মেয়েটা রাতুলের গার্লফ্রেন্ড ছিলো!

সাথে সাথেই রাতুলকে ফোন দেই আবিদ!
ফোনটা অফ! আইডি ডিএক্টিভেট করা!

রাতুল ফোন অফ করে ছাদে গেছে! আকাশ দেখছে আর নিকোটিন উড়াচ্ছে! এখন সময়টা তার একান্তই নিজের! সারাদিন সবাইকে হাসিয়ে সে এখন কাঁদছে অথচ কাউকে এতটুকু বুঝতে দেইনি সে!!

উপরের টা গল্প! বাস্তবতায় আসি!

“প্রতিটি ব্যাচেই কিছু বন্ধু এমন থাকে যাদের ছাড়া আড্ডা জমে না! তাদের ছাড়া মন ভালো হয় না!
সর্বদা হাসি দিয়ে মজায় রাখে সবাইকে!
তারা একদিন না আসলেই
আড্ডা ফাঁকাফাঁকা লাগে!

অনেকেই হয়তো জানে না, এই জোকার মানুষগুলোর জীবনেও কঠিন একটা অধ্যায় আছে!
আছে কষ্টের পাহাড়! যেগুলোকে তারা হাসির দ্বারা আড়াল করে রাখে!

এরা অনেক ক্ষমতার অধিকারী হয়!
কারণ, তারা কষ্টকে হাসি দিয়ে আড়াল করে!
কয়জন পারে এটা!

সবাই পারে না!

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত