বাসে উঠে সিটে বসতে বসতে রায়হান সাহেব পাশের সিটে বসা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হলেন।মেয়েটির চেহারা রায়হান সাহেবের অতি পরিচিত একটা মুখের সাথে হুবহু মিল। রায়হান সাহেবের বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটার শব্দ হচ্ছে। রায়হান সাহেব উত্তেজনা চেপে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন তোমার নাম কি মা?
জি আমার নাম অবনী । আর তোমার বাবা, মা’র নাম? অবনী বেশ অবাক হয়ে উত্তর দিল বাবা মিনহাজুর রহমান আর মা দোলা রহমান। আঙ্কেল আপনি আমার বাবা মা’র নাম জিজ্ঞেস করছেন? কারণ টা কি বলা যাবে। মায়ের নাম শুনে রায়হান সাহেব চমকে উঠলেন। কোন কারণ না গো মা, ভাবলাম এত মিষ্টি একটা নাম নিশ্চয়ই বাবা মা’য়ের নামের সাথে মিল রেখে রেখেছে তাই জিজ্ঞেস করলাম মা।
রায়হান সাহেবের বুকের ভেতর হুহু করে ওঠছে আস্তে করে আক্ষেপের সুরে বললেন তোমার মত এমন একটা মিষ্টি মেয়ে যদি আমার থাকতো! আঙ্কেল আপনার কোন সন্তান নেই? আছে গো মা, এক ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে বখাটে ছেলেদের সাথে মিশে নেশা করে আমার সাথে কথা বলে না কতদিন বাবা বলে ডাকেনি! বলতে বলতে রায়হান সাহেব চোখের পানি মুছলেন। বুঝলে মা পাপের শাস্তি পাচ্ছি। অবনী একটু অবাক হয়ে জানতে চাইল কিসের পাপ আঙ্কেল? কোন অসুবিধা না থাকলে আমাকে বলতে পারেন।
না গো মা কোন অসুবিধা নেই। আমার বিয়ের তিনবছর পরেও আমার স্ত্রীর সন্তান হচ্ছিল না ততদিনে আমি লাইলি নামের একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি সন্তানের আশায় আমি লাইলিকে বিয়ে করতে চাই কিন্তু স্ত্রীকে ডিভোর্স না দিলে লাইলি আমাকে বিয়ে করবে না বিনা অপরাধে শুধু মাত্র সন্তান হচ্ছে না এই অজুহাত দিয়ে আমি আমার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিই।আমার স্ত্রী আমার হাত ধরে অনেক অনুরোধ ও খুব কান্নাকাটি করেছিল আমার সংসার ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু আমি নিষ্ঠুরভাবে ওকে সংসার থেকে বিতাড়িত করে লাইলিকে বিয়ে করি।আমার সন্তান ঠিকই হয়েছে কিন্তু স্ত্রী সন্তান নিয়ে একমুহূর্তের জন্য সুখী হতে পারিনি। রায়হান সাহেবের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
আঙ্কেল আপনি কষ্ট পাবেন না একদিন দেখবেন আপনার ছেলে ভাল হয়ে আপনাকে বাবা বলে ডাকবে। স্টপেজ আসতেই অবনী বাস থেকে নেমে পড়ল। রায়হান সাহেবের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো।রায়হান সাহেব অবনীকে বলতে পারলেন না, মা গো তোমার মা দোলা আমার প্রথম স্ত্রী আজ যদি আমি অন্যায় ভাবে দোলাকে ডিভোর্স না দিতাম তাহলে তোমার মতো মিষ্টি মেয়ের মুখ থেকে আমি বাবা ডাক শুনতে পেতাম।