মুখের কাছে ঘনঘন কেউ শ্বাস নিচ্ছে৷ গরম বাতাস চোখে মুখে লাগছে রফি সাহেবের৷ রফি সাহেব চোখ খুলে তাকালেন৷ প্রায় সাথেসাথেই চোখ বন্ধ করে ফেললেন৷ তার বুকের উপর একটা বিড়াল বসে আছে৷ ছোটখাটো না,বেশ বড় সাইজের বিড়াল। ঘরের লাইট বন্ধ তবুও তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন৷ চোখ বন্ধ করেই কিছুক্ষণ ভাবলেন তিনি।
ঘুমানোর আগে দরজা লাগানো হয়েছিল৷ জানালাও লাগানো ছিল৷ তাহলে বিড়াল আসবে কোথা থেকে! ধরা যাক বিড়ালটা খাটের নিচে ছিল৷ কিন্তু এতো বড় বিড়াল কিভাবে এলো? রফি সাহেবের প্রায় সারা শরীর জুড়ে বিড়ালটা বসে আছে৷ লেজ দিয়ে পায়ে বারি দিচ্ছে বারবার৷
এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো তিনি স্বপ্ন দেখছেন৷ কিন্তু স্বপ্ন তো চলে নিজের নিয়মে৷ সেখানে কেউ নিজের মত করে ভাবতে পারবে না৷ নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারবে না৷ কিন্তু রফি সাহেব সবই পারছেন৷ তিনি নিজের মত ভাবতে পারছেন,চোখ খুলে আরেকবার দেখা দরকার। ভুল দেখেননি তো! চোখ খুলতেই মুখের উপর বিড়ালটা ঝাপিয়ে আসলো৷ ধারালো নখ দিয়ে রফি সাহেবের মুখে আঁচড় কাটলো৷ রফি সাহেব ককিয়ে উঠলো৷ চোখ বন্ধ করেই ছটফট করতে লাগলো। সকাল নয়টা৷ রফি সাহেব খবরের কাগজ হাতে নিয়ে বারান্দার চেয়ারে এসে বসেছেন। নিতুকে বলা হয়েছে চা আনতে৷ ইদানিং নিতু তেমন কথা শুনছে না৷ মোবাইল টা কিনে দেবার পর থেকে কেমন যেন ব্যস্ত হয়ে গেছে৷ তার সমস্ত ব্যস্ততা ওই মোবাইল ফোনের ভেতর৷ কিন্তু এদিকে রফি সাহেব তেমন নজর দিচ্ছেন না৷ তার চিন্তা অন্য কিছুতে৷
কিছুদিন থেকেই তিনি ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখছেন৷ স্বপ্ন গুলো শুধু স্বপ্ন হলেই ভালো হতো৷ কিন্তু প্রতিদিন স্বপ্নে যা দেখে পরের দিন তার সাথে ওইরকম কিছু একটা ঘটে৷ স্বপ্নের মত না হলেও কিছুটা ওই স্বপ্নকে ঘিরেই থাকে৷ কিছুদিন আগে দেখলো–তিনি হেঁটে হেঁটে ছাদের দিকে যাচ্ছে৷ হঠাৎ তার পায়ে কিছু একটা আটকাল। নিচু হয়ে দেখলেন তার পায়ে একটা বড়সড় ইঁদুর বসে আছে৷ বসে বসে জুতা কুটকুট করে কাটছে৷ অনেকবার পা ঝাকানোর পরও কিছুই হলোনা৷ হঠাৎ ইঁদুরটি জুতা ছেড়ে রফি তার পায়ে কামড় দিলেন। সাথে সাথে রফি সাহেব ঘুম থেকে উঠে গেলেন। ঘুম ভাঙার পর বুঝতে পারলেন তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তার পরেরদিনই রফি সাহেব পাউরুটির প্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে পাউরুটি বের করতে যাচ্ছিলেন তখন তার হাতে ইঁদুর কামড়ে দেয়৷ ইঁদুরের খাবারে ব্যঘাত ঘটানোর জন্য এই ফল হলো তার৷
নিতু চা নিয়ে এসেছে৷ ট্রে তে দু কাপ চা,সাথে বিস্কিট৷ রফি সাহেবের ডায়বেটিক্স নেই তবুও কোন কারণে প্রায় এক মাস থেকে তাকে নোনতা বিস্কিট খেতে হচ্ছে৷ নিতু চায়ের কাপ নিতে নিতে বলল,কাজে যাবেনা? রফি সাহেব খবরের কাগজ ভাজ করে টেবিলে রেখে বললেন,না৷ আমার গিয়ে কোন লাভ নেই৷ আমার যাওয়া আর না যাওয়া একই কথা ওমা এ কি কথা! মালিক না গেলে ওরা ঠিকমত কাজ করবে? তোমার ভাই আছে তো। আকিল তো ফাকিবাজ। কখন কোথায় চলে যায় কে জানে! হু কি কি খাবে আজ? তা পরে দেখা যাবে৷ তোমাকে বলেছিলাম না আমি কিছু অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি! হ্যাঁ বলেছিলে। আমার মনে হয় ওগুলো স্বপ্ন না,আবার স্বপ্ন
কি যা তা বলছো! আচ্ছা আমি গিয়ে রান্না করি। এখন আবার বই নিয়ে বসো না,তাকের উপরে কিছু জিনিস আছে ওগুলো নামিয়ে নিতুর ফোন বেজে উঠলো৷ নিতু চায়ের কাপ রেখে ফোন নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। রান্না ঘর থেকে হাসির শব্দ আসছে৷ নিতু প্রায়ই কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলে৷ অনেক্ষণ চলে তার কথা। রফি সাহেব চিন্তিত মুখে উঠে দাঁড়ালেন৷ লাইব্রেরিতে গিয়ে বই খুঁজতে লাগলেন। স্বপ্ন বিষয়ক বই৷ এমন বই তার কাছে আছে দু একটা৷ নাম মনে করতে পাচ্ছেন না৷ মাথায় বারবার নিতুর কথা এসে ঠেকছে৷ কার সাথে এতো কথা বলে সে। তিনি এটাও জানে না কেন বই খুঁজচ্ছেন৷ স্বপ্ন তো সাধারণ জিনিস,সবার সাথেই এমনটা হয়।
রাতে নিতুকে ডাকলেন রফি সাহেব। ঘরে ঢুকেই নিতু রেগে গেল। সিগারেটের ধোয়ার ঘর ঢেকে গেছে। রফি সাহেব নিতুর রাগ কে পাত্তা দিলেন না। নিতুকে তার পাশে এসে বসতে বললেন। সিগারেটে বড় করে একটা টান দিয়ে রফি সাহেব বললেন,আকিল তোমার ভাই? নিতুর মুখ শুকিয়ে গেল। তার সামনে বসা লোকটিকে আজ অন্যরকম লাগছে৷ নিতু নিচু গলায় বলল,হ্যাঁ ভাই। কেমন ভাই? হঠাৎ ওর কথা বলছো যে? নিতু আমি আরেকবার প্রশ্ন করবো৷ সত্যি করে বলবে। মিথ্যা বলবে না৷ আকিল কি তোমার ভাই? হ্যাঁ আগেও তো বলেছি। তুমি মিথ্যে বলছো নিতু।মিথ্যা বলতে যাবো কেন? আকিলের আসল নাম সিয়াম৷ ও তোমার ভাই না,অন্য কিছু। অন্য কিছু বলতে আমি কি বুঝিয়েছি তা হয়তো বুঝতে পারছ। কিসব বলছো এগুলো!
তুমি যার সাথে হেসে হেসে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলো তার নাম সায়মা। একটা মেয়ে। তোমার ফোনে কাল আমি কল রেকর্ড করার একটা সফটওয়্যার দিয়েছিলাম। আজ রেকর্ড করা কল গুলো দেখতে গিয়ে বুঝতে পারলাম সায়মা নামের মেয়েটি আসলে মেয়ে না৷ ছেলে। কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম ওটা আকিলের গলা। আর কিছু বলতে হবে বলে মনে হয় না। হু ভালোবাসো সিয়ামকে? হু তুমি যে প্রতিদিন আমার খাবারে একটা ক্যামিকেল মিশিয়ে দাও এটা কি মিথ্যে? না কেন এমন করলে?
সিয়াম বলেছিল। ঔষধ গুলো সিয়ামই দিয়েছে আমাকে। বলেছে এগুলো তোমাকে খাওয়ালে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে। রাতের ভয়ানক স্বপ্ন গুলোর কারণ এটাই। তাই না? হু কি চাও তুমি? জানিনা। ডিভোর্স লেটার দিয়ে দিব,সাইন করে দিও৷ আর সিয়াম আর তোমার বিয়েতে স্বাক্ষী লাগলে বলো,আমি আছি। একটা কথা বলবো? বলো। তোমাকে একটু আগে যে চা দিয়েছি তাতে বিষ ছিল। তোমার সব সম্পত্তি নিয়ে নেবার জন্য সিয়াম এমন করেছে৷ ও আমাকে ব্যবহার করেছে।
রফি সাহেব মুচকি হাসলেন। আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন,আমি চা খাইনি৷ ফেলে দিয়েছি। শোন নিতু,কাল সকালে যেন তোমাকে এই বাড়িতে না দেখি। আজ রাতেই চলে যাও৷ কোথায় যাচ্ছো বলে যেও ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিব৷ অবশ্য তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষের বাসায় যাবে।
নিতু কাঁদছে। শরীর কেঁপে উঠছে তার৷ সে হয়তো বুঝতে পারছে সে ভুল ছিল৷ নিজের স্বামীর সাথে এমনটা করা উচিত হয়নি তার। চোখ বেয়ে নোনা পানি গড়িয়ে পরছে রফি সাহেবের পায়ে৷ রফি সাহেবর মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলো। তিনি পা সরিয়ে নিলেন।