আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায় হাসপাতালেই দেখা হয়ে যাবে আমার প্রাক্তন সিমনের সাথে এটা কখনো কল্পনাও করিনি। বিগত সাত বছর ধরে মনেপ্রাণে দোয়া করে আসছি আর কখনো যেন তার মুখ না দেখতে হয় আমার। প্রতিবার বাসা থেকে বের হওয়ার পর কতশত দোয়া পড়ে বের হই। পরিচিত রাস্তাঘাটে চোখ বন্ধ করে হাঁটা শুরু করি যে সিমনকে দেখতে না হয়। কিন্তু!
আজ তা হয়েই গেলো। নিয়তি আর কে পরিবর্তন করতে পারে? সিমনের সামনে আসা ছিলো আমার আজকের নিয়তি। আসলে আমি রিপোর্ট নিতে এসেছিলাম। জানতে এসেছিলাম আমার গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে? কিন্তু হঠাৎ করেই সিমন সামনে চলে আসায় আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। রিপোর্টটাও খুলে দেখলামনা। সিমনের চোখে চোখ পরতেই আমি এলোমেলো হয়ে যেতাম। এখনো যাই। টান কমেনি হয়ত। নয়ত অন্যকিছু কাজ করছে হয়ত।
রিপোর্ট হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পরলাম। খুব দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। যদিওবা আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু সেই বিষয়টা একদম মাথায় ছিলনা। আমি হেঁটেই চলছি। অথচ কয়েকদিন আগেও আমি সাবধানে পা ফেলেছি মাটিতে। কিন্তু আজ? সব এলোমেলো। মাথায় হাবিজাবি চিন্তা নিয়ে নেমে আসছি সিঁড়ি বেয়ে। প্রচণ্ড ঘাম হচ্ছে। কপালে চিকচিক করছে ঘামে বিন্দুগুলো। পিছন থেকেই সিমন ডাকছে ইতি! ইতি! এই ইতি, শুনে যাও একবার। আমি এভোয়েড করছি তার ডাক। কিন্তু বেশিক্ষণ পারবোনা জানি। এদিকে সিমন ডেকেই যাচ্ছে। অবশেষে থামতেই হল আমাকে। সিমন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সরে দাঁড়াও।
:আচ্ছা। কেমন আছো তাহলে? অবশ্যই খুব ভালো। তোমার আশীর্বাদ আছে আমার সাথে। ভালো না থেকে কি পারি?
:তুমি এখানে? কিসের রিপোর্ট নিতে এসেছ? কিসের রিপোর্ট মানে?
:ওহ! সরি। আমার বুঝা উচিৎ ছিল। তো কয় মাসের? ছয় মাস।
:ওহ! ফার্স্ট বেবি? হুম্ম। তুমি জেনে কি করবে?
:কিছুইনা। তোমার হাজবেন্ড আসেনি? চোখে কম দেখো? দেখতে পারছোনা আমি একাই এসেছি।
:হুম্ম! কিন্তু তুমি প্রেগন্যান্ট আমার বিলিভ হয়না। না হলে নাই। মনে করো বালিশ বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছি। দূর হও। যাও। সময় নষ্ট করবেনা আমার।
:হা হা হা! আমার জন্য তোমার কাছে সময় নেই? আমার বিশ্বাস হয়না ইতি। তুমি আমাকে সর্বোচ্চ সময় দিয়েছ।
আজও আমার জন্য তোমার মনে ফিলিংস আছে। আমি বুঝি। আমি তাকিয়ে আছি সিমনের দিকে। মনটা চাচ্ছে থুথু ছিটিয়ে ইচ্ছেমত। কিন্তু না এতে আমার থুতুরও অপমান হবে। তোমার জন্য আমার মনে *ল আছে। সরে দাঁড়াও যেতে হবে আমার।
:ওকে। দাঁড়ালাম। যাও।
বেবির নাম ঠিক ওটাই রেখো যেটা দুজন মিলে ঠিক করে রেখেছিলাম। খুব রাগ হচ্ছিল আমার। কিন্তু কিছু না বলেই চলেই আসছিলাম। এমন সময় আবার বলছে ___
:তোমার স্বামীকে দিয়ে কিছুই হবেনা। কিছুইনা। এমন একটা লোককে বিয়ে করেছ যে তোমাকে সময়ই দেয়না।
রিপোর্টও একাই নিতে এসেছ। ছিঃ ছিঃ। একা থাকতে পারতে না। অপেক্ষাতো করতে পারতে। আমি না আসা পর্যন্ত? তুমি আসতে? তুমি কখনওই আসতেনা। কখনওই না। আর এখনো আসোনি। তোমার আসা আর না আসাটা সমান ছিল সিমন। তুমি মন থেকে চাইতে আমি দূরে চলে যাই। আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগের কথা তোমার মনে আছে সিমন?
আমার বিয়ের ঠিক একসপ্তাহ আগেও তুমি বলেছিলে, “আমাকে কোথাও যেতে দিবেনা?” কারোও হতে দিবেনা। যেকোনো কিছু বিনিময়ে আমাকে তুমি নিয়ে যাবে এখান থেকে। আমিও তোমার অপেক্ষা করতাম। বিশ্বাস করে বাসায় কত যুদ্ধ করেছি। কিন্তু? বাবা বুঝতে পেরে আমাকে ত্যাহ্য করে দিলেন। তোমাকে বিয়ে করলে আমি কোনোভাগ পাবোনা। বাবার সিদ্ধান্তে আমার একটুও কষ্ট হয়নি। কারন সম্পত্তি টাকা পয়সার উর্ধে আমি তোমাকে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোমার হাত ধরে সুখী হবো।
আর তুমি কি করলে? যখন শুনলে আমার কিছুই নেই তখন মাঝরাস্তায় আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে বললে, ইমনকে বিয়ে করো। তোমার বাবার পছন্দের ছেলে। সুখী হবে। বন্ধুমহলে বললে আমাকে বিয়ে করে তোমার লস হবে। আর তুমি এটার সম্মুখীন হতে চাওনা। হাই প্রোফাইল তিসাকে সেদিন রাতেই বিয়ে করেছিলে। আমার কথা সেদিন একটুও ভাবোনি তুমি। ভালবেসেছিলা? টাইমপাস করেছিলে তুমি। শুধুই টাইমপাস। আর আমার স্বামীর কথা বলছ তুমি? সে বেস্ট। তার মতো আর কেউ হয়না। আমার সব জেনে বিয়ে করেছিল। এবং আমার বাবার দেয়া সমুদয় সম্পত্তি সে বাবাকে ফেরত দিয়েছে। আজও একপয়সা চায়নি। আমিই তার কাছে সব। খুব সুখে আছি।
:সত্যিই সুখে আছো?
হ্যাঁ! খুব সুখে আছি। সত্যি, সত্যি এবং তিন সত্যি।
:তুমি বলতে না ইতি, আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে তোমার লাশের বিয়ে হবে। তবে কি তুমি_
না! না! না! আমি মোটেও ভুল বলতাম না। ইমনের সাথে ইতির জীবন্ত লাশের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু জীবন্ত লাশও যে প্রাণ ফিরে পায় তা ইমনেত নিখাদ ভালবাসায় বুঝেছি। আর এই জীবন ফিরে পেয়ে আমি অনেক হ্যাপি। হয়ত আমার কোনো পূন্যের ফল ছিল যে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়নি। সিমন দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। একবারের জন্যেও তার দিকে তাকিয়ে দেখিনি। শুনেছি মায়েরা যা দেখে তার প্রভাব তার সন্তানের উপর পরে। মাকে গর্ভে সন্তান রেখে খারাপ কিছুই দেখতে হয়না। তাই একবারের জন্যেও সিমনকে দেখিনি। চাইনা আমার সন্তানের উপর প্রভাব পরুক সিমনের মতো কীটের।
:ওকে। কী ওকে? নিজের ওয়াইফকে নিয়ে ভালো থাকো। বাই।
:আমার ওয়াইফের সাথে সংসার দুমাসও স্থায়ী হয়নি।
এটাতো হওয়ার ছিল। তবে কি তুমি আফসোস করো? করলেওবা কি? ভালোতো হওনি। দুর্দশা আরোও বাকী আছ।ওয়েট এন্ড সী। বাই। বলেই চলে আসলাম। জানিনা সিমন সেখানে ছিল কিনা কিন্তু আমার পিছনে ফিরে দেখা নিষেধ। দেখার প্রয়োজন মনে করিনা। সিমন ভালো থাকুক এটা বলিনা কখনো শুধু বলি সে তার কৃতকর্মের ফল সুদে আসলে ভোগ করুক। আমার নিয়তির লিখনে আমি সন্তুষ্ট।