একাকীত্বের সঙ্গী

একাকীত্বের সঙ্গী

দীর্ঘ ৩ বছর পর ঢাকার কোন এক ব্যস্ততম সড়কে আবারো কথা হল রিহান ও অহনার।
.
রিহান ছোট থেকেই ছিল খুবই চুপচাপ প্রকৃতির একটি ছেলে। স্কুল জীবনে রিহানের কোন বন্ধু ছিল না।বই-ই ছিল তার প্রিয় বন্ধু।
.
আর অহনা? সে ছিল খুবই চঞ্চল প্রকৃতির একটি মেয়ে। ছোট থেকেই সে তার চঞ্চলতার জন্য সবার কাছেই ছিল পছন্দের।
.
কলেজ জীবনের শুরুতে কেউই কাউকে চিনত না। এভাবেই কেটে গেল তাদের প্রথম বর্ষ। দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম দিকে অহনা একটা ছেলেকে লক্ষ্য করলো। যাকে সে এর আগে কখনই লক্ষ্য করেনি। ছেলেটি ছিল রিহান। ক্লাস শেষে অহনা রিহানের সামনে দাঁড়ালো-
অহনাঃ এই ছেলে তোমার নাম কি?
রিহানঃ রিহান আহমেদ
নামটা বলেই রিহান চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো।
অহনাঃ এই কি হলো? চলে যাচ্ছ কেন?
রিহানঃ না মানে ক্লাস তো শেষ। তার জন্য……..
অহনাঃ চলো।
রিহানঃ আপনার সাথে কই যাবো?
অহনাঃ এই তুমি আমাকে আপনি করে কেন বলছো?
রিহানঃ আমি সবাইকে আপনি করেই বলি।
অহনাঃ কিন্তু আমাকে বলবা না।
রিহানঃ কেন?
অহনাঃ কারন,আমি তো তোমার ক্লাসমেট।
রিহানঃ দুঃখিত। আমার পক্ষে হয়তোবা সম্ভব না। (এটা বলেই রিহান চলে আসলো)
.
এভাবেই কিছুদিন কেটে গেলো। শারিরিক অসুস্থতার জন্য রিহান দুইদিন কলেজ-এ যেতে পারলো না। অসুস্থতা কাটিয়ে রিহান কলেজ এ যেতেই—
.
অহনাঃ তুই ২দিন কলেজ এ আসলি না কেন?
রিহানঃ অসুস্থ ছিলাম। তার জন্য আসতে পারিনি।
অহনাঃ তোর ফোন নাম্বার টা দে।
রিহানঃ আপনাকে নাম্বার দিবো কেন?
অহনাঃ আমি দিতে বলেছি এজন্য দিবি। আর আমাকে আপনি আপনি করা বাদ দিয়ে আজ থেকে তুই করে বলবি।
রিহানঃ আপনাকে কেন তুই করে বলতে হবে?
অহনাঃ কারন আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিহান তার ফোন নাম্বার টা অহনাকে দিলো।
রাত্রে আননোন নাম্বার থেকে রিহানের নাম্বার এ ফোন আসলো। রিহান ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে-
.
অহনাঃ কিরে,কি করিস?
রিহানঃ বসে আছি। কিন্তু আপনি………?
অহনাঃ তুই আবারো আপনি বললি কেন?
রিহানঃ ও তুই?
অহনাঃ হুম। আচ্ছা দোস্ত বলতো আমার নামটা কি?
রিহানঃ স্যরি।
অহনাঃ জানতাম জানিস না। কারন তুই আমাকে বন্ধুই ভাবিস না।
রিহানঃ স্যরি বলেছি তো। আচ্ছা আজকে বল তোর নামটা কি, আর জীবনেও ভুলবনা।
অহনাঃ অহনা। আচ্ছা তোর আর কোন বন্ধু নেই কেন?
রিহানঃ সেটা তো জানি না।
অহনাঃ ওকে দোস্ত তাহলে কালকে কলেজ এ কথা হবে। বাই…
রিহানঃ বাই…
এভাবেই কাটছিল তাদের দিনগুলো।
ক্লাস শেষে একদিন-
অহনাঃ আচ্ছা দোস্ত,তুই আমাকে কতোটা ভালোবাসিস?
রিহানঃ সেটা তোকে কীভাবে বোঝাবো? তবে হ্যা আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।
অহনাঃ আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি। নিজের পরিবারের পরে যদি কাউকে ভালোবেসে থাকি, তাহলে সেটা তোকে। তোকে কখনই হারাতে চাই না রে দোস্ত।
রিহানঃ অনেক সময় হয়েছে। চল উঠি।
অহনাঃ হুম চল।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো সময়গুলো। কিন্তু তাদের এই সম্পর্কের মধ্যে একসময় ভাঙন দেখা দিলো।দ্বিতীয় বর্ষের শেষের দিকে অহনা তাদের কলেজের এক ছেলের সাথে নতুন রিলেশন এ জড়ায়। আগের মতো সে রিহানকে সময় দেওয়া বাদ দিলো। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পরে রিহান একদিন অহনাকে প্রশ্ন করলো-
.
রিহানঃ দোস্ত তুই যেন কেমন একটা হয়ে গেছিস। আমার সাথে আর আগের মতো সময় পার করিস না। আমি কি করেছি বল?
অহনাঃ রিহান,ও (ছেলেটি) চাই না আমি তোর সাথে মিশি, তোর সাথে কথা বলি। আর আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। আমি ওকে হারাতে পারব না। তাই আমি চাই তুই আমার সাথে আর কথা না বলিস।
.
অশ্রুভেজা চোখে রিহান সেদিন অহনার সামনে থেকে চলে আসে। রিহানের দিনগুলো খুবই কষ্টে ও একাকীত্বে কাটতে লাগলো। ঐ দিনগুলাতে রিহান বুঝতে শিখলো একাকীত্বের উপরে কোন বন্ধুত্ব হয়না। যে একাকীত্বকে বরন করে নিতে পারবে সেই ভালো থাকবে।
.
কলেজ জীবনে রিহান আর অহনার সাথে কথা বলেনি। কলেজ জীবন শেষ করে রিহান তার ভার্সিটি জীবন শুরু করে। ৩ বছর পর আবারো তাদের মাঝে কথা হলো-
.
অহনাঃ কেমন আছিস,রিহান?
রিহানঃ আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
অহনাঃ আমাকে ক্ষমা করে দে রিহান। সেদিন আমি ভুল করেছিলাম। দোস্ত সবভুলে চল আবারো আমাদের বন্ধুত্ব টা আবার নতুন করে শুরু করি।
.
রিহান তখন একটা উপহাসের হাসি উপহার দিয়ে অহনার সামনে থেকে চলে আসে।
রিহান আজ একাকীত্বকে তার সব চাইতে পছন্দের বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছে। সে বুঝতে শিখেছে একাকীত্ব কখনই তাকে ঠকাবে না।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত