:হ্যালো ভাইয়া।
:বলো
:ভাইয়া আপনি আমাকে ফোন দেন না ক্যান?
:ব্যস্ত থাকি তো। বোঝই তো মেডিকেলের স্টুডেন্ট।
:এইটা কোন কথা না। আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ফোন দিতে পারেন। আপনি কেন দ্যান না?
:বললামই তো একটু ব্যস্ত থাকি।
:এখন কি ব্যস্ত?
:না একটু ফ্রি। রাতে ডিউটি আছে।
:ভাইয়া।
:বল
:না থাক কিছু না।
:আচ্ছা ঠিক আছে।
:আপনি কি জানতে চান না?
:কি জানতে চাইব?
:উফ। আপনি একটা ছাগল।
:ঠিক বলেছ আমি ছাগল।
:আপনি গাধা একটা।
:হ্যা আমি গাধা।
:ধুরর!!!
:কি হয়েছে?
:কিছুনা।
:আচ্ছা।
:ভাইয়া।
:বলো
:আপনার মনে আছে?
:কি?
:আমি ছোট থাকতে ১ম একটা চিঠি দিয়েছিলাম আপনাকে?যখন আপনারা আমাদের পাশের বাসায় ছিলেন?
:হুম মনে আছে?
:পড়েছিলেন?
:খেয়াল নেই
:কি লিখেছি মনে আছে?
:না মনে নেই।
:ও। কি করেছেন চিঠিটা?
:মনে নেই।
:আপনি এরকম কেন?
:কিরকম?
:কেমন বোকা বোকা।
:জানি না তো
:আপনি কি আগের মতই আছেন ? নাকি মোটা হয়েছেন আরো?
:হুম মোটা হয়েছি।
:ভাবি মাইর দেয় না।
:থাকলে অবশ্যই দিত।
:আপনাকে আমার মাইর দিতে ইচ্ছা করে। দেই?
:দাও।
:না থাক। বোকা মানুষকে মারা ঠিক না। মা নিষেধ করেছেন। আপনি একজন সহজ সরল বোকা সোকা ভদ্র ভাল মানুষ।
:হুম
:বিয়ে করবেন কবে?
:দেরী আছে
:কেন?
:টাকা পয়সা নাই। বউ না খেয়ে মারা যাবে।
:আন্টি কেমন আছেন?
:ভালো। তোমার বাবা মা?
:ভাল। আপনার ছোট বোন কিসে পড়ে?
:ইন্টার।
:ঢাকায়?
:হুম।তোমার বড় ভাই কোথায় এখন?
:ভাইয়া বিদেশে। সামনের মাসে আসবেন।
:ও আচ্ছা।
:আপনি এমন ক্যান। জানেন আমি আপনাকে সেই ক্লাস এইট,এস এস সি, এইচ এস সি সব কিছুর রেজাল্ট জানিয়েছি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে আমি আপনাকেই প্রথম জানাই?
:না জানতাম না। এখন জানলাম।
:আপনি আমাকে কখনই বুঝলেন না।
:হয়ত
:আসলেই আপনি বোঝেন না।
:হুম
:আপনাকে আমি মোট আটটা চিঠি দিয়েছিলাম। একটাও পড়েছেন?
:মনে নেই।
:কই সেগুলো?
:জানি না।
:থাক জানার দরকার নেই।একটা কথা ছিল।
:বলো
:আপনাকে আমার এটাই শেষ কল।আমি আর আপনাকে ফোন দিব না।
:এই নিয়ে কয়বার বলেছ এমন?
:অনেকবার। কিন্তু এবার আমি সিরিয়াস।
:ও আচ্ছা।
:ভাইয়া
:কি?
:আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সামনের মাসের শেষে বিয়ে। ভাইয়া অবশ্যই আসবেন। আপনাকে এ কথা জানাতেই ফোন দিয়েছি। কার্ড ছাপানো শেষ। আপনাদের বাসায় কয়েকদিনেই তা পৌছে যাবে।
:কংগ্রাটস!!
:বিয়েতে আসবেন।
:অবশ্যই আসব।
:ভাইয়া
:কি?
:একটা কথা বলতে চাই।
:বল
:আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না?
:জানি না,মনে হয় না।
:আপনি একটা মিথ্যুক।
:তুমিও মিথ্যুক।
:কেন???
:এ নিয়ে ৪ ৫ বার তোমার বিয়ের কথা আমায় বলেছ।সবই মিথ্যা।এবারেরটাও মিথ্যা।
:তারমানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন?
:(চুপ)
:প্লিজ ভাইয়া একবার শুধু শুনতে চাই আপনার মুখ থেকে,প্লিজ।
:বোকা মেয়ে ফোন রাখ। বোকা বোকা কথা বলা বন্ধ করো।
:(কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) ভাইয়া এবার আমি সত্যিই বলছি।
:ওকে
:আমি আপনাকে ভালোবাসি।
: …….
:রাখি ভাইয়া। আর কথা হবে না
: …….
:রাখি
:রাখো।
:আপনি একটা ভীতুর ডিম
:হুম।
মেয়েটা ফোন রেখে দিলো। পরে আসলেই ওর বিয়ের কার্ড পেয়েছিলাম। বাসার সবাই গিয়েছিল।আমি যাই নি।
আকাশে কালো কালো মেঘ। পশ্চিমে একটু খোলা আকাশের সন্ধান পেয়ে তা থেকেই ঠিকরে পড়ছে আলো। বৃষ্টির দিনে বুড়িগঙ্গার পানি পরিষ্কার। ক্যাম্পাসের পেছনের গেট থেকে বের হয়ে সোজা বুড়িগঙ্গার পাড়ে যাই। গুনে গুনে আটটা কাগজের নৌকা বানাই ও ছেড়ে দেই।নৌকাগুলো ভেসে যাচ্ছে।
শেষ বিকেলের আলো,নদীর জলে প্রতিফলন তার মাঝে নৌকাগুলোর ভেসে যাওয়ার দৃশ্যটা সত্যিই অদ্ভুত। সেদিকে তাকিয়ে আছি। যতক্ষণ পারলাম তাকিয়ে ছিলাম। ফিরে আসার আগ মুহুর্তে মনে হল আমি কাঁদছি। সূর্য অস্ত গেল। ধীরে ধীরে মনের মত, ব্যস্ত শহরটাও একসময় ডুবে গেল অন্ধকারে।
কেমন যেন একটা হাহাকার।
অদ্ভুত সেই অনুভূতি।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক