অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম, আমার কাছে আর কোনো পথ নেই।
ইয়াস আমাকে মারাত্মকভাবে ঠকিয়েছে।নাহ!ইয়াস বিহীন জীবন অসম্ভব। লাইফ সাপোর্টেও আমি নিশ্বাস নিতে পারবো না ইয়াস কে ছাড়া।
কিন্তূ মরবো কিভাবে। অনেক বার হাতের শিরা কাটার চেষ্ঠা করছি। কিন্তূ না চামরা ফুটো হয়েছে, রক্ত বের হয়েছে, কিন্তূ শিরাচ্ছেদ হয়নি। তাই বেঁচে গেছি বার বার।
তবে যন্ত্রনা ঠিক ই হয়েছে …..
এইবার কি করবো… আমি মৃত্যুর এমন একটা পথ খুঁজছি যে প্রসেসে একবার ট্রাই করলেই সাক্সেস। অল্পের জন্য আর বেঁচে থাকতে হবে না।
আর সেই আরাম দায়ক মৃত্যু কেবল ঘুমের টেবলেট ই হতে পারে। অভার ডোজ স্লিপিং পিলস খেলে নিশ্চিত মৃত্যু।কিন্তূ প্রেসক্রিপসন ছাড়া ত কেউ স্লিপিং পিলস দেবে না তাছাড়া এতগুলা ত অবশ্যইই না। তবে প্রতিদিন এক্টা দিবে। তাই গত তিন মাস ধরে সপ্তাহে এক্টা স্লিপিং পিলস জমা করছি।
কারন আমার ভাবনা ছিলো হয়তো এই সময় টায় ইয়াস আমাকে বুঝবে আমাদের ভেজাল টা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তূ না শেষ হয়নি। আর হবে ও না। তাই আজ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। গুনে গুনে পিলসগুলা নিলাম। বারোটা পিলস। মনে হয় না আর বাঁঁচবো
খুব কষ্ট হচ্ছে ইয়াস জীবন থেকে এইভাবে মুক্তি নিতে হবে কোনোদিন ভাবতে পারিনি। শেষ নিশ্বাস টা তোমার কোলে ফেলবো স্বপ্ন ছিলো, তা ও অপূর্নই রয়ে গেলো….. তুমি আজ কত দূরে, আমার দৃষ্টির আড়ালে, আমার স্পর্শের বাহিরে…
…..
…….
আজ তিন দিন ধরে ঐশি হাসপাতালের আই সি ইউ তে আছে। ওর নিশ্বাস এখনো চলছে। তবে তার সেন্স নেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ইলেক্ট্রিক শক দেওয়ার পর ও অর ঘুম ভাঙ্গে নি। নিশ্বা:স নিচ্ছে তাই তার বাবা মা এখনো আশায় ভর করে আছেন হয়তো তাদের মেয়ে ঠিক হয়ে যাবে।
উনারা মেয়ের জন্য এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন যে তাদের মেয়ে এমন এক্টা কাজ কেন করলো সেই কারন টা ও ভাবে নি একবার।
তবে কারন ত এক্টা অবশ্যই আছে….
……
ইয়াস ঐশি একই সাথে পড়তো সেই হাইস্কুল থেকে ই। অরা দুজন খুব ভাল বন্ধু ছিলো। কিন্তূ বন্ধুত্ব টা এক সময় ভালবাসার রূপ নিলো। আর তাও সেটা এক তরফা। ইয়াস ঐশি ভালবাসতে শুরু করে। কিন্তূ কোনোদিন বলেনি বন্ধুত্ব নষ্ট হবে বলে।
ইয়াস আর ঐশির জীবনের ভয়ংকর অধ্যায় শুরু হয় ওই সময় টা। তাদের কলেজ জীবন। ঐশি দেখতে অনেক টা সুন্দর তাছাড়া ও দেখতে যেমন সুন্দর ওর ব্যবহার ও ততটাই ভাল।সকলের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ন ব্যবহার ছিলো ঐশির। যে কোনো ছেলে ঐশি কে ভালবাসার যথেষ্ট কারন রয়েছে। এদিকে ইয়াস ঐশি কে ভালবাসে কিন্তূ বলতে পারছে না তাই বলে অন্য কেউ ঐশির জীবনে আসুক ঐটা ইয়াস কিছুতেই মেনে নিবে না।
তাই ত সেদিন আয়ান যখন ঐশি কে প্রফোজ করে বসলো ইয়াসের মাথায় রক্ত চেপে বসে। ক্যাম্পাসে সকলের সামনেই ইয়াস আর আয়ানের মধ্যে প্রথমে তর্ক পরে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। যার কারন ঐশি। তখন ঐশির খুব রাগ হয় ইয়াসের প্রতি। ইয়াস ত ঐশির ভাল বন্ধু কাছের বন্ধু ও কি ঐশি কে চিনে না তবুও কেন সারা কলেজে আয়ানের সাথে ভেজাল করে ঐশি কে ছোট করলো। তাই ঐশি বন্ধুত্বের খাতিরেই ইয়াস কে ঠাস করে চড় মেরে বসে সকলের সামনে….
……
সেই থেকে ইয়াস আর ঐশির সাথে যোগাযোগ রাখে নি। কলেজ থেকে টিসি নিয়ে চলে গেছে।
এইদিকে ঐশি এসবের কিছুই জানে নি। ঐদিন ঐশির ও খুব কষ্ট হয়। ও কি করে এটা করতে পারলো নিজেই বুঝতে পারছে না। অনুতাপের আগুন অকে জ্বালিয়ে মারছে। ইয়াস কে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তূ বন্ধ।
পরের দিন ঐশি খুব সকালেই কলেজে যায়।কারন ইয়াসের রাগ ভাঙ্গাতে হবে যে করেই হোক
ঐশি জানে যে ইয়াস তার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না।
আর যদি খুব বেশি রাগ হয় ত ঐশি নিজেকে শাস্তি দিবে এক পা এ দাঁড়িয়ে থাকবে ইয়াসের সাম্নে এমন কি পা পর্যন্ত চেঞ্জ করবে না। তখন ইয়াস কোনো উপায় না পেয়ে নিজেও এক পা এ দাঁড়িয়ে থাকবে। এইভাবেই তাদের রাগ অভিমান শেষ হয়।
কিন্তূ এইবার আর সেটা হয় নি। ইয়াস ঐশিকে ক্ষমা চাওয়ার ও সুযোগ দেয় নি। ঐ দিন ইয়াস আর কলেজে আসে নি। কোনো দিন ই আর ইয়াস আসে নি।এইদিকে ইয়াসের সাথে দীর্ঘ বিচ্ছেদ ঐশি কে দূর্বল করে তোলে। এক সময় সে অনুভব করতে পারে যে সি ইজ ইন লাভ ইয়াস।
ইয়াস কে ছাড়া সে এক্টা দিন ও কল্পনা করতে পারছে না।
কিন্তূ ইয়াস ত তাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গেছে। এখন কিভাবে তার অনুভুতি ইয়াস কে জানাবে কি ই বা মনে করবে ইয়াস।
অনেক কষ্টে ইয়াস কে ফোনে পেলো। তার পর অনেক রিকুয়েস্ট করে যে ইয়াস একবার আমার সাথে দেখা করো ।
সেদিন ইয়াস আর ঐশি বিকালে দেখা করে। ঐশি তার ব্যবহারের জন্য ইয়াসের কাছে ক্ষমা চায়… ইয়াস ক্ষমা করে দেয় ঐশি কে….
কিন্তূ সেটা হয়ত মন থেকে নয়, কারন ঐদিন ঐশির ভালবাসাকে প্রত্যাক্ষান করে ইয়াস…
ঐশি যখন মানতে চাইছিলো না যে ইয়াস ঐশিকে ভালবাসে না,তখন ইয়াস সেটার প্রমান স্বরুপ বলে যে সে সত্যি ই ঐশি কে ভালবাসে না ঐশি ত তার ফ্রেন্ড এর বেশি কিছু না, তাছাড়া সে আফরা নামের একজন কে ভালবাসে….
আফরা নামের কেউ ইয়াসের ভালবাসা সেটা ঐশি ভাবতে পারেনি।
যে ইয়াস অর জন্য আয়ান কে আঘাত করেছিলো, সে আজ বলছে যে ঐশি শুধুই তার ফ্রেন্ড আর কিছুই না…..
…….
ঐশিকে ইয়াস ভালবাসে না, এই চরম মিথ্যা বলতে ইয়াসের গায়ে লাগে নি মনেও ঠিক লাগছে কি না জানি না,তবে নিশ্চিত রুপে সেদিন ঐশির পৃথিবী টা গভীর অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিলো…
তাই সে দিনের পর দিন জীবন থেকে মুক্তির পথ খুঁজেছে.
…
আর তার শেষ প্রয়াসে আজ ঐশি হাসপাতালে শুয়ে শেষ সময়ের প্রতীক্ষা করছে,নিশ্বাস নেয়াটা বন্ধ হলেই ধরা হবে ঐশি মৃত, এখন অর্ধ মৃত হয়ে আছে..
।
……
ইয়াস কে আজ সকালে খবর দেয়া হয়েছে, সে কি আসবে ঐশি কে দেখতে সেটা এখনো সন্দেহে জনক….
কারন যে মানুষ টা প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে নিজের ভালবাসা কে অস্বীকার করে, এক্টা তাজা প্রান কে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, সে কি ভালবাসতে জানে???
..
একটু পর ই ইয়াস আসে..তবে ততক্ষনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে, আজ সাত দিন ঐশি ঘুমন্ত অবস্থায় ও পার্লস রেসপন্স করছিলো তার… কিন্তূ এখন সেটা আর করছে না….
অর্থাৎ ঐশি আর নেই.
।।
……
ভালবাসা আর ইগোর মধ্যখানে চাপা পড়ে ঝরে গেলো আবারো একটি তাজা প্রান..
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক