“মামা, মাইয়ার ফিগার দেখেছো? পুরাই হট। উফফফ।” রনির মুখে এসব শুনে জয় খুব রাগান্বিত হলো। জয় বলল, “আচ্ছা তোর সমস্যা কি? মেয়ে দেখলেই এমন করস কেন? ”
– ওরে বাবা জ্ঞান ঢালছিস নাকি রে?
– আমার এত জ্ঞান নাই ঢালার মতো। তবে এটা বুঝি যে এই মেয়েটা কারো বোন, কারো মেয়ে। আর উনি এমন কোন অশ্লীল ড্রেস পড়ে নাই যে লোভে ফেটে পড়তে হবে।
– হইছে থাম। তোর লেকচার থামা।
রনি আর কোন কথা না বলে খেলার মাঠের দিকে চলে গেল। রনি জয়ের খুব ভাল ফ্রেন্ড। কিন্তু ইদানিং ক্যাম্পাসে অথবা ক্যাম্পাসের বাইরে মেয়ে দেখলেই রনি অশ্লীল অশ্লীল কথা বলে। ওর এই কথার রেশ ধরে বন্ধুদের আরো অনেকেই এসব ভাষা ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। জয়ের এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা হয়। যে করেই হোক এটা থামানো উচিত। বন্ধুত্বে আজকাল যদিও স্বার্থের রঙিন উপলক্ষ থাকে। কিন্তু কিছু বন্ধু আজও ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করে।
রাত ৯ টা বাজে। শহীদ মিনারের পাশের দূর্বাঘাসে রনি একা একা বসে আছে। পাশে গিটারটা রাখা। একা একা এসে গান গাইবে ভেবেছিল কিন্তু এখন আর মন চাইছে না। একটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা জ্বালিয়েছে। সিগারেটের ধোঁয়া কুয়াশার সাথে মিশে যাচ্ছে। দুটোর রংই সাদা। দেখতে ভালো লাগছে। তখন রনির ফোন বেজে উঠল। ফোন ধরতেও ইচ্ছে হচ্ছে না রনির। মন চাচ্ছে শুধু কুয়াশার ওপর তাকিয়ে থাকতে। এর কোনো কারণ নেই। অদ্ভুত ইচ্ছা। মানুষ কি করে না করে অনেক সময় সে নিজেই জানে না। অলস মানুষদের অদরকারী কাজের প্রতি আগ্রহ বেশি। ফোনটা আবার বাজছে। রনি হাতে নিয়ে তাড়াহুড়া করে রিসিভ করল। রনির ছোট বোন উর্মি ফোন দিয়েছ। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কান্না শুনতে পেয়ে রনির বুকটা কেঁপে উঠল। রনি বলল, “কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে?
– ভাইয়া আমাকে..
“তোকে কী?” রনির হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
– এলাকার কিছু ছেলে যখনি আমায় রাস্তায় পায় পিছন থেকে বলে বেড়ায় আমার ফিগার নাকি খুব সুন্দর আর আমি নাকি…
– হ্যাঁ বল আর কী কী বলে? বল?
– আরো অনেক কিছু বলে এসব আমি মুখে আনতে পারব না।
রনি রেগে বললো , “তুই ফোন রাখ। আমি কালকেই আসতেছি। একটা কুত্তার বাচ্চাকেও আস্তো রাখবো না। মেজাজ খারাপ করে রনি হলে ফিরলো। হল রুম মোটামুটি খালি। রনিকে আসতে দেখে জয় বলল, “বন্ধু ফেসবুক থেকে কয়েকটা মেয়ের পিক নিয়েছি। দেখে যা এসে। সেই জিনিস একেকটা। আয় তাড়াতাড়ি। ”
রনি কোন উত্তর না দিয়ে শুয়ে পড়লো। রনির চিন্তাশীল চোখ মুখ দেখে জয় খুব তৃপ্তি পেল। সারারাত নির্ঘুম থাকলো রনি। উর্মিকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে রনি। নিজের জন্য কিছু না কিনলেও বোনের জন্য কিনে। আদরের বোনের মুখে এসব শুনে তার দুনিয়াটা ঘুরছে। সকাল ৮ টার বাসে রনি ময়মনসিংহ থেকে কেন্দুয়া আসলো। এসেই উর্মির রুমে গেল। উর্মি কি একটা বই পড়ছিল। রনিকে দেখে তাড়াহুড়ো করে বললো, ” ভাই চলে এলি এত সকালে? ”
– হুম চলে এসেছি। এবার বল কে কে তোকে এমন করে?
– বলছি এর আগে আমায় বল তুই আমায় ভালোবাসিস?
– হাতটা কোপ দিয়ে কাটতে বলে দেখ আমি নিজের হাতটা কেটে ফেলবো। জঘন্য প্রশ্ন করবা না উর্মি। আমার মাথা গরম আছে। নাম বল ওদের।
– আচ্ছা বলছি এর আগে শোন। ভাই তোর একটা ব্যাপার শুনে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। কখনো তোর নামে এসব শুনবো কল্পনাও করিনি ভাইয়া।
– আরে আজব আমি কী করেছি?
– কী করেছি মানে? তুই রাস্তাঘাটে মেয়েদের দেখে খারাপ কমেন্ট করিস না বল? করিস কিনা? তুই প্রতিদিন এসব করিস?
– রনি চুপ করে আছে। মনে মনে পরিকল্পনা করে নিল এবার ক্যাম্পাসে গিয়ে জয়কে ভয়ানক পিটানো দিতে হবে। দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা আমি আসতেছি।
– শোন ভাই তুই আজ যেভাবে ছুটে এলি, যতটা কষ্ট পেলি আমার ব্যাপারে এসব শুনে ঠিক ততটা কষ্ট ওদের বেলাতেও হয়। আমি যেমন তোর বোন। ওরাও কারো বোন।
রনি উর্মির মুখে কথাগুলো শুনে অবাক হচ্ছে। ভাবছে, এটা কি সেই পিচ্চি উর্মি? হাফ প্যান্ট পড়ে সেদিনও ঘুরেছে সামনে দিয়ে। আর আজ সত্যিই অমায়িকভাবে বড় ভাইকে বোঝাচ্ছে। এই কথাগুলো জয় অনেকবার বলতো কিন্তু এতটা মনের গভীরে পৌঁছাতে পারেনি। রনি তার বোনের দিকে তাকিয়ে আছে অবুঝ শিশুর মত। রনির চোখটা ভিজে এসেছে।
উর্মির আনন্দ হচ্ছে ভাইয়ের করুণ মুখটা দেখে কারণ সে তার ভাইকে বোঝাতে পেরেছে। আচমকা রনি তার বোনকে জড়িয়ে ধরলো। একটু পর উর্মি আদুরে গলায় বলল, “হইছে হইছে। আবার যদি কখনো শুনেছি এসব এরপর দেইখো! আর শোন, জয় ভাইয়া আমাকে এসব বলেছে সবকিছু। আবার দেখিস গিয়ে উনার সাথে ঝগড়া করা শুরু করিস না। উনার প্ল্যান সব। আর আমাকে কেউ কিছু বলেনি রাস্তায়। তবে যদি শুনি গিয়ে ঝগড়া করেছিস জয় ভাইয়ার সাথে খবর আছে কিন্তু।”
রনির মনে রাগ নেই। জয়কেও জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আফসোস সে এখন এখানে নেই। বন্ধু তারা যারা অন্য বন্ধুকে ভালো পথে ফিরিয়েই ছাড়ে। রনি প্রতিজ্ঞা করলো আর কখনো কোন মেয়েকে দেখে নোংরা কথা বলবেনা। বেশ কিছুক্ষন পর উর্মি চিল্লান দিয়ে বললো, “আচ্ছা ভাইয়া তুই কতদিন ধরে গোসল করিস নারে? এক্ষুনি গোসলে যা। বিদঘুটে গন্ধ আসছে? ”
উর্মির চিল্লানি শুনে উর্মির মা বলল, ” আমি জানতাম রইন্না আইছে। ওর কাম ওইলো ছুডুডারে যন্ত্রণা দেওন। তোদের ছেলেমানুষী কোনদিন যে বন্ধ ওইবো সে আমি জানিনা।” রনি জলদি করে গোসলে গেল। বোনের আদেশ অমান্য করা অসম্ভব।