স্মৃতির ডায়েরীটা

স্মৃতির ডায়েরীটা

মাথা ভর্তি চুল,মুখ ভর্তি দাড়ি ,দেখতে পাগলের মতন।
তার একান্ত নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গি বলতে তার সাথে থাকা ডায়েরীটা।
ছেলেটি আজ সমাজের চোখে একটা বদ্ধ পাগল ছাড়া আর কিছুই না,কিন্তু কে বুঝবে তার পাগল হওয়ার পিছনে লুকিয়ে থাকা হাজার ক্ষত চিহ্নের সেই লুকিয়ে থাকা ব্যাথা গুলো।
হুম এটাই সেই ডায়েরী,যেটাতে লিপিবদ্ধ করা আছে,হাজারো চাপা পড়ে যাওয়া দুটি অবুঝ মনের রঙ্গিন স্বপ্ন গুলো।
যেটা দুজনে জোৎস্না প্রহর রাতে দেখতো।
আর সে গুলোকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে ডায়েরীটাতে লিখে রাখতো।
আজ ডায়েরীটা আছে কিন্তু ডায়েরীটার সেই স্বপ্নময়ী বালিকাটি অনেক দুরে।
হয়তো সে খুব ভালো আছে,কিন্তু সে কি জানে না,তাকে ছাড়া আমি একদমই ভালো নেই।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ই চোখ দিয়ে দু ফোটা অশ্রু পড়ে গেলো নীলের।
নিজের অশান্ত মনটা যখন নীলার জন্য খুব ব্যাকুল হয়ে যাই,তখন সে ডায়েরীটা পড়া আরম্ভ করে,আর অঝোর ধারাতে নদীর স্রোতের মতন দু নয়ন আখিঁ জ্বলে ভাসায়।
ডায়েরীর ১ম পৃষ্টাতে লেখা আমাদের “রঙ্গিন স্বপ্ন”

আজ বসন্তের প্রথমদিন। প্রকৃতিতে ফাগুনের ছোঁয়া। গাছে গাছে নূতন পাতা। কোকিলের কুহু কুহু ডাক জানিয়ে দেয় বসন্ত এসেছে। এই বসন্ত যেন বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে। তাই চারিদিকে বসন্ত উৎসব। সবকিছু মিলিয়ে অনাবিল আনন্দের দিন আজ।পৃথিবীটা যেন নতুন করে প্রান ফিরে পেয়েছে,ঠিক এমন বসন্তের দিনে নীলাও আমার জীবনে এসেছিলো ভালোবাসার এক অনাবীল হাতছানি নিয়ে।
সেদিন টা কখনো ভুলবার নয়,রাস্তা দিয়ে আনমনে হাটছিলাম,এমন সময় একটা অপরিচিতো মেয়ে পিছন থেকে ডেকেই চলেছে,কিন্তু আমি কোনো সাড়া না দিয়ে হেটে চলেছি।
এমন সময় পিছন থেকে হাতটা ধরে,,
:-এই যে মিষ্টার আপনার এতো ভাব কেন,হুম?সেই কখন থেকে ডেকে চলেছি আপনাকে।।
:-আপনি আমাকে ডাকছেন কেন।।আমি তো আপনাকে চিনি না।
:-চিনি না বলে কি ডাকা যাবে না।বলেই মুখ বাঁকা করলো।

মুখ বাঁকা করলে তো মেয়েটি খু্ব সুন্দর লাগে,,সেই জন্য মনে হয় মুখ বাঁকা করেছে।

:-হুম,বলেন কি বলবেন?
:-একসাথে হাটা যাবে একটু।

কিছুক্ষন চুপ থাকার পরে, হ্যা সুচক মাথা নড়িয়ে,আচ্ছা চলুন।

:-আপনি কি সব সময় এমন?
:-কেমন?
:-এই যে একটা সুন্দরি মেয়ে আপনার পাশে হাঁটছে আপনার তার দিকে কোনো খেয়াল ই নাই,অন্য ছেলে হলে তো এতক্ষনে হাত ধরে ফেলতো।
:-আমি আপনার হাত ধরতে যাবো কেন?আপনাকে চিনি না জানি না।।
:-ও হ্যালো এতো ভাব নেওয়ার কি আছে,আমি একটা মেয়ে কোনো কিডন্যাপাার না বুঝলেন,,

বলে আবার মুখ ঘোরা দিলো।

:-আচ্ছা আপনার মতলব টা কি বলেন তো।
:-হুম,,এইতো বুঝতে পেরেছন,মতলব তো আছেই একটা।
:-হুম বলেন কি সেটা।
:-দেখো আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না,যা বলার সোজাসোজি বলতে পছন্দ করি
আমি খুব বদমেজাজি আর জেদি, বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে আমি।
কোনো কিছু ভালো লাগলে সেটা পাওয়ার জন্য বেশি সময় অপেক্ষা করতে পারি না।
তাই আই লাভ ইউ,,,আজকের পর থেকে তুমি আমার বি এফ।
আর অন্য কোনো মেয়ের দিকে যদি তাকাও বা কথা বলো,তোমার খবর আছে।
শুধু আমার সাথে সারাদিন থাকবা, ঘুরবা।
এখন তোমাকে উত্তর দিতে হবে না,পরে বলো আমি এখন যাই কালকে সেইম জায়গাতে দেখা হবে।

বলেই নীলা হাতে থাকা ব্যাগ টা নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গেলো।
আমি ঠায় দাড়িয়ে আছি,ভাবছি আর অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটির চলে যাওয়া দেখছি।
মেয়েটির মাথাতে কি প্রবলেম আছে নাকি?
চিনি না জানি না,হুট করে এসে ভালোবাসি বলে কি সব বলে।
আরো কত কি দেখতে হবে কে জানে।
বলেই হাটা শুরে করে দিলাম,,
পর দিন আবার বাড়ি ফেরার পথে, পিছনে থেকে শুনতে পেলাম নীলা ডাকছে।

:-এই যে মিষ্টার কি হুম,,মনে নাই নাকি?
:-আপনার মাথাতে কি কোনো প্রবলেম আছে নাকি?চিনি না জানি হুট করে ভালোবাসি বলছেন।
:-চিনলে জানলে তো ভালোবাসার ভিতরে আনন্দ নাই,একটা অপরিচিতো মুখ একটা নতুন জীবন, নতুন মানুষ তার সম্পর্কে জানবো

তাকে ভালোবাসবো এটার ভিতরে অনেক আনন্দ আছে,অজানাকে জাানার আনন্দ।

নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি,তার কথা বলা দেখছি।
অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারে তো মেয়েটা।

:-এই যে কি হলো,,আমি কিন্তু নিরব থাকা পছন্দ করি না।
আমার সাথে বকবক করতে হবে বুঝেছো।

এভাবে দিন যেতে লাগলো,একটা সময় আমারো নীলাকে ভালোলাগা শুরু হতে লাগলো।
ভালোবেসে ফেললাম নীলাকে।
আসলে নীলার একটা জিনিস আমার সাথে খুব ভালো লাগে,সেটা হলো তার সরলতা।
মনের ভিতরে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখে না,সব কিছু সামনা সামনি বলে দেয়,আর অনেক কেয়ারিং একটা মেয়ে ।
বেশ ভালোই যাচ্ছিলো,আমাদের প্রেমের মিষ্টি দিন গুলো।
ঠিক যেন টমজেরির মতন,সারাদিন যত যা করি, কেও কাওকে ছাড়া থাকতে পারতাম না।

আজ ১ সপ্তাহ নীলার ফোন টা বন্ধ,ক্যাম্পাসেও আসে না,কি হয়ছে নীলার।
মাথাতে কোনো কাজ করছে না,একটা মুহুর্ত নীলাকে ছেড়ে পারি না,সাতটা দিন আছি কি করে।
বুকে সাহস রেখে নীলাদের বাসাতে গেলাম,গিয়ে দেখি তালাবন্ধ।
নীলাদের বাড়ির কেয়ারটেকার এর কাছে জানতে চাইলে,সে বললো নীলা আজ ১ সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে,খুব খারাপ অবস্থা তার।
:-কি হয়ছে নীলার?
:-তোমার নাম নীল?
:-জ্বি?

সাদা একটা কাগজের টুকরা পকেট থেকে বার করে,আমার হাতে দিয়ে বললো।
:-নীলা এটা তোমাকে দিতে বলেছিলো,তবে আরো কিছুদিন আগে আসলে ভালো হতো।

:-কাগজ টা খুলে পড়তে লাগলাম,জানার জন্য।
কাগজ টা পড়ার পর পায়ের নিচ থেকে মুহুর্তের ভিতরে মাটি সরে গেলো আমার।
নীলার ২ বছর ধরে ক্যান্সারজনিত রোগে আক্রান্ত, কিন্তু আমি এর কিছুই জানি না।
নীলার হাসি মাখা মুখ দেখে কেও বুঝতেও পারবে না তার ভিতরের কষ্টটাকে।
নীল আকাশ টা কেমন যানি কালো মেঘে ছেয়ে গেলো হঠাৎ।
তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে ছুটে গেলাম,নীলার উদ্দ্যেশ্য।
কাচ ঢাকা ঘরের ভিতরে আমার পাগলিটা নিস্তব্দ নিরব হয়ে সুয়ে আছে,মুখে অক্সিজেন,হাতে সিরিন্জ লাগানো স্যালাইন চলছে।
দুরুন্ত পনা বালিকাটিও আজ কেমন জানি নিরব হয়ে গেছে।
পা টিপে টিপে নীলার কাছে গেলাম।
যতই কাছে যাচ্ছি বুকের ভিতরে কেমন যানি শুন্যতা টা বেড়ে যাচ্ছে।
কাছে গিয়ে নীলার মাথাতে হাত দিলাম।
নীলার চোখ দুটো খুলতে খু্ব কষ্ট হচ্ছে,তবুও খুললো।
আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমার দু চোখ বেয়ে অশ্রুর বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
:-আমাকে বললে কি এমন হতো,সব কথা তো সেয়ার করতে তবে কেন এটা আড়ালে রেখেছিলে।

মুখে অক্সিজেন থাকা অবস্থাতেই কথা বলছে নীলা

:-তোমাকে বলি নি,যদি তুমি আমাকে ছেড়ে দাও সেই ভয়ে।

:-তোমার কি মনে হয়,তোমাকে ভালোবাসেছিলাম ছেড়ে দেওয়ার জন্য,না কখনো না।সারাজীবনের জন্য ভালোবেসেছি তোমাকে।

:-হুম,তারপরও

:-কি তারপরও আমাকে একটা বারের জন্য বলতে পারতে।
:-সরি,,বাবু রাগ করে না।
:-কি করবো,নীলার অবস্থা দেখে বাচ্চা ছেলের মতন কেঁদে ফেললাম।
:-বাবু, ,দেখো আমি সুস্থ্য হয়ে গেছি তো,আবার আমরা মেঘের বুকে চরকা কাটবো,তুমি মেঘের দেশে স্বপ্ন বুনবে আমাকে নিয়ে।
:-নীলা তুমি চুপ থাকো,একটাও কথা বলবে না।
খু্ব ভালোবাসো তো কেন করলে এটা,তোমাকেও তো নিজের থেকে ভালোবাসি।
:-সরি,বাবু প্লীজ।
নীল আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে প্লীজ।
:-না,,ধরবো না বলে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নীলাম।
:-নীল, প্লীজ একবার জড়িয়ে ধরো,আমার শেষ ইচ্ছাটা পুরন করো প্লীজ।
:-এই শেষ ইচ্ছা মানে,কিছু হবে না তোমার, আমি তোমার কিছু হতে দিবো না, বলে নীলাকে বুকের ভিতরে জড়িয়ে ধরলাম।
:-নীল,আমাকে এভাবে সারাজীবন বুকের ভিতরে জড়িয়ে রাখবে তো
:-হুম,,রাখবো তোমাকে ছাড়া আর কাকে রাখবো বলো।

নীলা আমার বুকে মাথা রেখে কান্না করছে,কি বলবো নিজেও বুঝতে পারছি না।
কারন আমি নিজেও নীলার থেকে ভেঙ্গে পড়েছি।
তবুও নিজেকে শক্ত করে নীলাকে শান্তনা দিচ্ছি।

:-নীল আই লাভ ইউ
:-লাভ ইউ টু পাগলি।
নীলা আবার আমার বুকে মাথা দিলো,আমিও নীলার হাত ধরে তাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি।
হঠাৎ করে একটা দির্ঘশ্বাস ছেড়ে নীলা হাত টা ছেড়ে দিলো।
নীলার শরির টা কেমন জানি ঠান্ডা হয়ে গেলো মুহুর্তের ভিতরে।

নীলাকে ধরে খুব চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম,কেন হলো আমার সাথে কি করে থাকবো নীলাকে ছেড়ে।
সারাজীবন একসাথে পথচলার শপখ নিয়ে ছিলাম দুজনে,আজকে কেন একা একা চলতে হবে আমাকে।
হাসপাতালে নীলার রুম থেকে লাফ দিলাম নিচে,মুহুর্তের ভিতরে আমার চোখেও অন্ধকার নেমে এলো,,,
কিন্তু ভাগ্য হয়তো চাই নি আমি এত সহজে নীলার কাছে যাবো।
তাই আত্মহত্যা করতে গিয়েও বেঁচে গেলাম।
কিন্তু একজন মানুষিক রোগি নামে,সবাই এখন আমাকে পাগল বলে।
আমি এখনো নীলার অস্তিত্বকে অনুভব করতে পারি,তার সাথে সবসময় কথা বলি, একাসাথে ঘুরি।
কিন্তু সেটা আমার নিজের ভিতরেই সিমাবদ্ধ।
কারন নীলাকে এতটাই ভালোবেসে ছিলাম যে নীলা চলে গেছে কিন্তু তার স্মৃতি গুলো এখনো আমার সাথে দিন যাপন করে প্রতিটা মুহুর্ত প্রতিটাক্ষন।

ভালোবাসি তোমাকে, আর ভালোবেসে যাবো যতদিন বেঁচে থাকবো……..

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত