প্রিয়তার চোখ

প্রিয়তার চোখ

অন্ধকার রাত,ঝিড়িঝিড়ি বাতাস,সাথে প্রিয় ব্র্যান্ডের এক প্যাকেট বেনসন।সব মিলিয়ে পরিবেশটা অপরুপ।আচমকা স্মৃতিগুলো ধোঁয়ার সাথে মিশে আন্দোলিত হচ্ছে।আর আমি সে আন্দোলিত স্মৃতিগুলোর কাছে থেকে প্রসন্নতা খুজছি।
.
২ বছর পুর্বে,
কোনো এক বৃষ্টির দিনে,
কলেজ ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে আছি।
-আচ্ছা,আপনার ছাতা থাকা স্বত্তেও বাসায় যাচ্ছেন না কেন?
আমি মেয়েটার দিকে কোনো রকম না তাকিয়েই জবাব দিলাম,
-বৃষ্টি দেখি।
-বৃষ্টি আবার দেখার কি আছে?
-ভুল বলেন নি।
-একটা উপকার করবেন আমার?
-বেশ খানিকটা হতবম্ব হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
-আসলে আমার বাসায় যাওয়াটা খুব জরুরি,যেহেতু আপনি বৃষ্টি দেখবেন নিশ্চয় বৃষ্টি থামার পর যাবেন।যদি আপনার ছাতাটা একটু দিতেন।
-খুব বেশি জরুরি?
-হ্যা আমার মা অসুস্থ,ওনার জন্য ঔষুদ নিতে হবে।
-আচ্ছা নিয়ে যান।
ছাতাটা নিয়ে সোজা চলে গেলো,কি মেয়েরে বাবা,একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলো না।যাই হোক এসবে আমার কিছু যায় আসে না,সমস্যাটা হচ্ছে ছাতাটা আমার এক বন্ধুর।আমার কাছে রাখতে দিয়েছিলো।মেয়েটা যদি নিজ ইচ্ছায় না দিয়ে যায় তাহলে মেয়েটাকে খুজে বের করে ছাতা উদ্ধার করা আমার জন্য এভারেষ্ট জয়ের সমান।যাই হোক কিছুক্ষন মনযোগ দিয়ে বৃষ্টি বর্ষন দেখি।
.
বৃষ্টি না থামার কারনে আজকে বাসায় ভিজেই ফিরতে হয়েছে।
-কি রে তুই ভিজলি কি করে,আর তোকে যে ছাতাটা দিয়ে আসলাম,ছাতা কোথায়?
-একটা মেয়ে নিয়ে গেছে।
-কি বলছিস এগুলো।মেয়ে নিয়ে গেছে মানে?
-মেয়ে নিয়ে গেছে মানে নিয়ে গেছে,বলছে আর দিবে না।
-দেখ,ছাতা কোনো বিষয় না কিন্তু মেয়ে আসলো কোথা থেকে?
-আসমান থেকে এসেছে,এবার আমায় আমায় একটু সাইড দে বাপ ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।
-বল না দোস্ত মেয়েটা কে?
-তুই যাবি এখান থেকে?
-আচ্ছা যাচ্ছি,তোর খাবার নিয়ে আসিস হোটেল থেকে।
-সরি দোস্ত সব বলবো,তবুও খাবার টা নিয়ে আয়,প্লিজ।
-ঠিক তো?
-হুম ঠিক একদম ঠিক।
-মনে থাকে যেনো।
-হুম থাকবে।
.
কলেজ ক্যাম্পাসে বসে মোবাইলে গেইম খেলছিলাম তখনি মেয়েটার আগমন।আমার কোনো ভাবান্তর নেই।
-আপনি এখানে আর আপনি আপনাকে খুজে হয়রান।
-ছাতাটা এনেছেন তো?
-হ্যা এনেছি তো!এই নিন।
-এটা কার ছাতা?
-আপনার ছাতা।
-কি আবল তাবোল বকছেন?
-আচ্ছা ঠিক আছে,এই ছাতাটা আপনার না।(পাশে বসতে বসতে বললো কথাটি)
-এবার ভালো করেই তাকালাম,চোখ দুটোই আমাকে আকার্ষন করছে।মেয়েটার চোখেই আমার সব স্বপ্ন আকঁতে ইচ্ছে করছে।
-কি হলো চুপ হয়ে গেলেন যে,পাশে বসলাম দেখে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?
-তা না,অন্যকিছু।
-অন্যকিছু কি?
-আপনার চোখ দুটো খুব সুন্দর।
-আপনি সুন্দর আর অসুন্দরের পার্থক্য করতে পারেন?
-পারি না হয়তো।আপনাকে দেখে শিখে নিলাম।
-আচ্ছা,একটা উপকার তো করতে পারলাম।
-কি উপকার?
-পার্থক্য শিখলেন।এবার ছাতাটা নিন তো।আমি আপনারটা রেখে দিলাম।
-কিন্তু ছাতাটা তো আমার কোনো এক বন্ধুর।
-সে যাই হোক,আমি আপনার থেকে নিয়েছি এটাই প্রধান বিষয়।আচ্ছা যাই আমি ক্লাশ আরম্ব হয়ে যাচ্ছে।
-শুনোন?
-কিছু বলবেন?
-আপনার চোখ দুটোর দেখা প্রতিদিন পাওয়া যাবে?
-জানিনা তবে পেতেও পারেন নাও পেতে পারেন।
-হারাতে যাচ্ছি।
-আরে এমন করে বলছেন কেন?
-এইটা তো আপনার চাওয়ার উপর নির্ভরশীল।
-এখন সময় খুব কম,যাই আমি
.
সেই যাই বলে যে গেলে আর এলে না।
একমাসের মতো করে আরও ২৪ টা মাস চলে গেলো তোমার দেখা নেই।দুইটা বছরে বুঝেছি তুমি আমার কতখানি জুরে মিশে আছো।হঠাৎ করে আসলে আবার হঠাৎ করেই চলে গেলো।
.
জানো প্রিয়তা,তোমার ঐই চোখ দুটি এখনো আমায় স্বপ্ন দেখায়।দুইটা বছর প্রতিনিয়ত তোমার চোখ দুটো নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম।
.
জানো প্রিয়তা,সেদিন আমি জীবনের প্রথম সেন্সলেস হয়েছিলাম,যখন শুনলাম তুমি আর নেই।দুই দিন পর জ্ঞান ফিরে আমার জন্য তোমার রেখে যাওয়া চিঠিটা পড়েছিলাম।
.
জানো প্রিয়তা চিঠিটা পড়ে আমি খুব কেদেছি।এখন বুঝতে পারছি তুমি কেনোই বা আর আসো নি আমার জীবনে।একবার বলেই দেখতে প্রিয়তা যে তোমার ব্রেইন টিউমার তুমি আর বেশিদিন বাঁচবে না।অন্তত তোমার সাথে কিছুটা দিন হলেও কাটাতে পারতাম।অন্তত তোমার মুখে শুনতে পারতাম তুমি আমায় আমায় ভালবাসো।
.
জানো প্রিয়তা,আমি তোমার চোখ দুটিতে আশ্রয় খুজে পেয়েছিলাম।একলা আমাকে তোমায় নিয়ে বাঁচাতে চেয়েছিলাম।বড্ড একা মনে হতো নিজেকে।যেদিন তুমি আমার পাশে এসে বসেছিলে তখন মনে হয়েছিলো আমার পাশেও কেউ আছে,যে চায় আমি ভাল থাকি।কিন্তু দেখো তুমিও চলে গেলে।
.
জানিনা কোনো চোখের দেখা আর পাবো কি না।কিন্তু আমার তো বেঁচে থাকতে হবে।তুমি যে আমার মাঝেই বেঁচে থাকবে।তুমি যে আমার মাঝেই বেঁচে থাকতে চেয়োছো।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত