আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
আকাশটা কত বিশাল, কতই না সুন্দর।
কিন্তু এই বিশাল আকাশটার নিচে ক্ষুদ্র পরিমাণ ঠাই আমার জন্য নেই।
.
আমি নিহা, আমার জন্ম গ্রামে। গ্রামের কথা মনে হলেই সেই ছোট্ট বেলার দরশিপনার কথা মনে পরে যায়। ইস্ কতই না সুন্দর ছিল সেই দিন গুলো। থাক ওসব কথা, এসব মনে করে আর কষ্ট পেতে চাই না।
যেটুকু সময় হাতে আছে আমার জীবনের কথা গুলো আপনাদের জানিয়ে যেতে চাই।
.
ছোট বেলায় পড়াশুনা করতে আমার মটেও ভাল লাগতো না। সারা দিন আম গাছ, বড়ই গাছ, আর পুরো গ্রামে ছোটাছুটি করতে গিয়ে পড়াশুনার সময়টাই বা পেতাম কোথায়? তবুও মা বাবার বকুনির জন্য কোন মত মাধ্যমিক পর্যন্ত টেনে টুনে পড়ি। তারপর বাবা আর আমার জালা সহ্য করতে না পেরে আমার বিয়ে দিয়ে দেন। শহুরে চাকরিজীবী এক ছেলে সাথে। তারপর গ্রাম ছেড়ে আপনজনদের ছেড়ে শহরে চলে আসি। প্রথমে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও আমার উনি আমাকে অনেক আদরযত্ন দিয়ে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেন। ভালবাসা, অভিমান,খুনশুটির মাঝে পাড় হয়ে যায় তিন তিনটি বছর।
তারপর..
.
তারপর টা এতটাই জটিল যে, পূর্বে মানুষটার সাথে বর্তমানের মানুষ টিকে কোন ভাবেই মেলাতে পারতাম না। আমাদের পাশের ফ্লাটে সাবলেটে একটি মেয়ে আসে বয়স আমার মতই পড়াশুনা করে। সে আবার অনেক স্মার্ট আমার মত গেয়ো,আনকালচার না।
আমার সাথে ওর অনেক ভাবই ছিল। আমরা তিন জন আনেক আড্ডা দিতাম। মাঝে মাঝে আমি রান্নার কাজ করতাম, আমার উনি আর ও আড্ডা দিত। আমারা লুডো খেলতাম আমি কখন ঘুমিয়ে যেতাম,ওরা খেলত। উনি আবার ওকে কলেজে নামিয়ে দিত। আমি ওকে নিজের বোনের মত দেখতাম ভালই লাগতো ওকে। কিন্তু আমার আর উনার মাঝে কেমন জানি দূরত্ব হতে লাগলো।ঠিক ভাবে কথা বলে না, আমি কথা বল্লেও উনার কোন উওর নেই। আমার প্রতি মায়া তো দূরে থাক সামান্য পরিমাণ আগ্রহও তার নেই। ব্যবহার এতটাই খারাপ যে বাড়ির কুকুর বেড়ালের সাথেও এতটা বাজে ব্যবহার করে কিনা জানা নেই। একটা সময় গায়েও হাত তুলতে শুরু করলো, কিছু দিন পরে তার পর্যায় টা দূগুন বেড়ে গেল। সকাল,দুপুর, রাত মার খাওয়া টা একটা রুটিনের মতোই। তবু প্রতিবাত তো দূরের কথা মুখ ফুটে কিছুই বলতাম না। অথচ ঐ মেয়ে টার সাথে কি তার ঢলাঢলি, হাসাহাসি।
.
চলছিল দিন…
.
কিন্তু হঠাৎ এক রাতে আমার সামনে চলে আসে এক ওপ্রিয় কিছু ঘটনা। সেদিন আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পূরো দুনিয়াটা আমার ঘুরে গিয়েছিল। চোখে জলে বালিস ভিজিয়ে বুঝতে পারি এতদিনের এমন ব্যবহারের কারন,, এখন আমার সামনে সব পরিষ্কার। পর দিন সকালে বাবার বাড়ি চলে আসি। রাগে, খোবে বাবা মা কে সব খুলে বলি। কিন্তু বিশ্বাস করুন তখন পর্যন্তো আমি উনাকেই ভালবাসি। বাবা বিষয় গুলো মিটমাট করে দেবার জন্য উনাকে ফোন দেয়া হলে সে উল্টো আমারি দোষ দেয়। আমার নাকি উনার অফিসের কোন কলিকের সাথে..
বাবা ফোনটা কাটার পড় আমাকে অনেক মারধর করে বলে আমি চরিএহীনা,, আমার মত মেয়ে তার চাই না। আমি মরে গেলেই তার শান্তি। আমি বাবা পা ধরে অনেক বার মিনতি করি কিন্তু সে আমার কথা গুলো একবারের জন্য শুনেনি। পরে অনেক ভাবি অমি যাকে আমার দুনিয়া মানি, যার জন্য আমি হাসতে হাসতে মরতে পারি সে আমাকে এসব অপবাদ দিল। আর বাবা সে তো আমাকে জন্ম দিয়েছে সেও আমাকে বিশ্বাস করলে না। এটাই আমার জীবন।
.
কি বেপার? আমার বুকটা এমন জ্বলছে কেন?
– ওহ্,, আমি তো বিষ খেয়েছি। এমন জ্বালাপোড়া করতে করতেই আমি মারা যাব!! আর হয়তে কয়টা মিনিট এই পৃথিবীতে!! তারপর আর থাকবোনা!
কিন্তু এই অল্প সময়ে পৃথিবী, আকাশ,প্রকৃতি প্রতি মায়া হাজার গুন বাড়ছে। এখন খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে। ইস্ সেই সুযোগ আমি আর পাব না।
……………………………….সমাপ্ত …………………………….