অবন্তী এবং কিছু মুহূর্ত

অবন্তী এবং কিছু মুহূর্ত

বড় অদ্ভুত মেয়েটা ! যতবার চেয়েছি দূরে চলে যাবো এরপর একদম ভুলে গিয়ে নিজেকে নিয়ে ভালো থাকবো ততবারই মেয়েটা
আমার আত্নাতে আঘাত করেছে প্রচন্ড ভাবে । মগজে হৃদয়ে সারা শরীরে প্রবেশ করে আবার আমায় অতীতে টেনে এনে দাঁড়
করিয়ে দিয়েছে বার বার । এমনকি যখন আমি কয়েকটা রাত কানের কাছে প্যাঁন প্যাঁন না শুনে ঘুমে মত্ত ঠিক তখন হঠাত্ একটা রাতে ফোনের ওপাশ থেকে চাঁপা কান্নার শব্দ পেয়েছি । পুরুষ মানুষ তো আর যাইহোক কত দিন ওভাবে নিজেকে ঘুমের নাম করে কাপুরুষের মতো মুখ ঘুরিয়ে দিয়ে রাখতাম ? বিলিয়ে দিয়েছি যখনই সুযোগ পেয়েছি । নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ভালোবেসে গেছি একান্তভাবেই । ওপাশ থেকে পেয়েছি সেটা আরো গাঢ় ভাবেই !
.
এইতো যেদিন প্রথম দেখা করতে যাই সেদিন আমায় দেখা মাত্র মেয়েটার সেকি কান্না ! এক ঘন্টা যায় দু ঘন্টা যায় এমনকি তিন ঘন্টা অবদ্ধী মেয়েটার ফুঁপিয়ে উঠা কান্না আমি থামাতে পারি নি । শেষ পর্যন্ত যখন উঠে আসছিলাম তখন তো জড়িয়ে ধরে নাক মুখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো । ওর এক বান্ধবীকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে ওকে হোস্টেল পর্যন্ত পৌছে দিয়ে তবেই আমি ফিরতে পেরেছিলাম । ফিরে আসতে আসতে যে অনুভূতিটা আমি সাথে নিয়ে ফিরে ছিলাম তা তখন টিকে ছিলো এখনো টিকে আছে এবং সেটা যে চিরকাল টিকে থাকবে তা খুব ভালো করেই জানি ।
.
একবার একটু অসুখ বাঁধলো আমার । যখন অবন্তীর কানে গেলো কথাটা তখন দূরে থেকে নিজেকে অভিশাপ দিতে লাগলো
যে কিজন্য সে আমার কাছে থাকতে পারলো না । শেষ পর্যন্ত এটা নিয়ে টেনশন করতে করতে নিজেই একটা অসুখ বাঁধিয়ে ফেলেছিলো ! ঐ অসুখে আমার যতটা না কষ্ট হয়েছিলো তারচেয়ে বেশী কষ্ট বোধহয় পেয়েছিলো অবন্তি নামের অষ্টাদশী মেয়েটা কয়েকশো মাইল দূরে থেকে । অদ্ভুত কিন্তু ব্যাপারটা !
.
একবার বুয়া ছিলো না ! ভাতের দেখা পাচ্ছিলাম না । ধারে কাছে যা পাচ্ছিলাম তা দিয়েই পেট পুরে নিচ্ছিলাম কোনভাবে । কথাটা অবন্তীর কানে যেতেই তাগিদ দিলো ওর সাথে দেখা করার জন্য । শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে গিয়েছিলাম এতো খাবার রান্না করে এসে খাইয়েছিলো যে উঠে আসাই মুশকিল হয়ে গিয়েছিলো ! সব নিজে হাতে রান্না করে এনেছিলো অথচ আগে বলতো কিছুই রান্না করতে পারতো না ! সেই রান্নার স্বাদ এখনো আমার মুখে লেগে আছে ।
.
ফোন ওয়েটিং অথবা বিজি কিংবা ম্যাসেজ করতে দেরি হলে দূরত্বটা বাড়াইতে চাইতো তবে ভালোবাসাটা কমতো না । বরং অভিমানটা কমে গেলে ফিরে আসলে ভালোবাসাটা বেড়ে আরো কয়েকগুন হয়ে যেত । আমার সাথে কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাঁধলে লক্ষ্য করতাম ঐ সময়টাতে অবন্তীর কন্ঠ কাঁপা কাঁপা হয়ে আসতো । আমি ঐ কন্ঠটা শোনার পর কেন জানি দুকথা আর বাড়াতে পারতাম না । কারণ খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারতাম ঐ কাঁপা কন্ঠটা কত কষ্ট চেপে আমার সাথে ঝগড়া করে ! বুঝতে পারতাম সে কতগুন কষ্ট পেয়ে আমায় একটু কষ্ট দিতো ।
.
অবন্তী কেন জানি খুব কম হাসতো । আমি চাইতাম সবসময় হাসিখুশী থাকুক । চেষ্টা করে যেতাম সবসময় ওর হাসি শুনার । কখনো সফল কখনো বা ব্যর্থ তবে তৃপ্তি পেতাম দুটোতেই ! অবন্তীর সেই ক্ষণস্থায়ী ঝরনার ধারার মতো হাসিটা আমি এখনো
মাঝরাতের ঘুম কেড়ে নেয় । গভীর ঘুমের মধ্যে থাকলেও আমি চমকে লাফ দিয়ে উঠি । উঠে হাতের কাছে পানি খোঁজার আগে খুঁজতে থাকি সেই মুখটা সেই মেয়েটাকে ।
.
যেদিন পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়েটা পাকাপোক্ত হয়ে গেলো সেদিন মেয়েটার খুশি কে দেখে । বারে বারে ফোন দিয়ে আমায় ওর স্বপ্নগুলোর কথা শুনাতো । আমি শুনতাম আর বুক ভরে নিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে অবন্তীকে আশ্বাস দিতাম তোমার সব স্বপ্নকে আমি বাস্তবে রুপ দিবো যদি সৃষ্টিকর্তা সহায় থাকে ।
.
কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সহায় হলো না ! কারণ আমি জানতে পেরেছিলাম কিজন্য আমার এতোটা চাওয়া উপেক্ষা করেও কেন অবন্তী তার ক্ষণস্থায়ী হাসিটাকে দীর্ঘস্থায়ীত্ব দিতে পারতো না । কেন আমায় হারানোর ভয়ে বারে বারে কুঁকড়ে যেত । মেয়েটার ফর্সা মুখটা আমার সামনে হলুদ হয়ে গিয়েছিলো । না আমি কিচ্ছু করতে পেরেছি না ওর পরিবার কিচ্ছু করতে পেরেছে । অনেক চেষ্টা করেও পারি নি মেয়েটার হাতটাকে সারা জীবন ধরে রাখতে উপরন্তু মেয়েটার নিথর দেহটাকে ফেলে আসতে হয়েছে সাড়ে তিন হাত মাটির ভেতরে ।
.
মেয়েটার সাথে শেষ কথা গুলো এখনো আমার কান মাথায় বাজতে বাজতে গরম করে দেয় । অবন্তী বলেছিলো আবার ভালোভাবে শুরু করে সুন্দর জীবন গড়তে আর তার মৃত্যুর পর আমি তাকে ভুলে যাবো কিনা ? গালে একটা হাত রেখে চোখের
পানি ছেড়ে দিয়ে মাখাটা নাবোধক ভাবে নাড়িয়েছিলাম ! অবন্তীর মৃত্যুর পর আর ওর স্মৃতি হাতড়াতে যাই নি শুধু ওকে দেওয়া কথা ভালো থাকবো বলে । হ্যাঁ এখন ভালো আছি তবে অবন্তীকে না পাওয়ার অতৃপ্তি বেদনাকে একপাশে সরিয়ে রেখেই ।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত