সেই ঠিকানা

সেই ঠিকানা

আমি তোমার জন্য কফি নিয়ে আসছি তুমি বসো এখানে।( ফারিহা মানে আমার স্ত্রী)
রাত তেমন হয়ে উঠে নাই ১০:৩২ বেলকুনিতে বসে আছি। রাতের বেলায় আকাশটাকে অন্যরকম ভাবে ভালো লাগে! আকাশ ভালো লাগে বৃষ্টি হওয়ার পর! অন্ধকার ভালো লাগে যদি মিটিমিটি জোনাকিপোকা আলো ছড়ায়!
তেমনি আজ এই রাতে অদ্ভুত ধরনের ভালো লাগা কাজ করছে মনের ভিতর।
.
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি বেলকুনির গ্রীলের আবরণ বেধ করে দূর আকাশের পানে!
আজ মনটা কি যেন চাচ্ছে! কিছু অতীত খুব মনে করিয়ে দিচ্ছে! আজ কেমন যেন এক অনুভূতি কাজ করছে ভেতরে! আজকের এই রাত খুব চেনা চেনা লাগছে! মনে হচ্ছে যেন ঠিক এমন কোন রাতে এভাবেই আমি বসে ছিলাম আর আকাশ দেখছিলাম। এইতো কয়েকবছর আগের ঘটনা…
.
-এই নাও তোমার কফি….(ফারিহা)
কফিটা হাতে নিয়ে মিনিট খানেক পর পর একটা একটা চুমুক দিচ্ছি কাপে!
-এই তুমি কি কিছু ভাবছো? (ফারিহা)
-না! কি ভাববো।
-আমি বুঝতে পারছি তুমি কিছু ভাবতেছো। (ফারিহা)
-ফারিহা! মানুষের কিছু অতীত কখনো ভুলার মতো নয়। হোক সেটা ভালো বা খারাপ আনন্দের বা কষ্টের! কিন্তু সকল অতীত মানুষকে অসহনীয় কষ্ট দেয়!
-হুম। তোমার কি তেমন কোন অতীত আছে যে অতীত তোমায় খুব কষ্ট দিচ্ছে?
.
-হা ফারিহা! আছে, এবং কি প্রতিটা মানুষের একটা করে অতীত থাকে! আমার অতীতটা সেই অতীত যেই অতীত আমাকে খুব কষ্ট দেয়! যে অতীত আমার নিঃশ্বাস আটকে দেয়!
-কই তুমি তো আমাকে আগে কখনো বলোনি তোমার অতীতের এমন যন্ত্রণাকর কথা!
-কিন্তু আজ বলতে ইচ্ছে করছে আমার!
-হা বলো আমি শুনবো……
.
সে এক সুখের দেশের কথা! যখন আমি ছাত্র বয়সী! ভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে একটা মেয়েকে অনেক ভালো লাগতো!
আমার প্রতিটা দিন খুব আনন্দে কাটতো সেই মেয়েটাকে দেখে! মেয়েটার নাম ছিলো সোমা।
সে ছিলো এমন একজন যাকে দেখলেই আমি সকল দুঃখ যন্ত্রনা ভুলে যেতাম। দেখতেও অনেক রূপবতী ছিলো! আমি তাকে ভালোবাসতাম এটা জানাইনি।
.
কিন্তু অনেকদিন যাওয়ার পর আর ভালো লাগছিলো না এভাবে না জানিয়ে আমার মনের কথাগুলো। কিছুদিনের মধ্যে আমি সোমাকে আমার ভালোবাসার কথা জানালাম এবং সে আমাকে মেনেও নিলো! বেশ ভালোই যাচ্ছে দুজনের প্রেমের সম্পর্ক। এর কিছুদিনের মধ্যে একটা ঘটনা ঘটলো!
.
কোন একটা ভ্যালেন্টাইন ডে তে সোমা আমাকে বলেছিলো ওকে নিয়ে আজ ঘুড়তে বের হতে হবে!
পরদিন সকাল সকাল আমি সোমাকে ফোন দিলাম এবং আমরা একসাথে বাহিরে বের হলাম!
সেদিন আমি একটা কালো পাঞ্জাবী পড়েছিলাম!
.
কালো পাঞ্জাবী পড়তে বলেছিলো সোমা।
পার্কের একটা কোনায় গিয়ে বসলাম!
যেহেতু আজ ভ্যালেন্টাইন ডে সেহেতু সোমাকে একটা গোলাপ না দিলেই নয়।
সোমাকে বললাম তুমি বসো আমি দু-মিনিটের মধ্যে আসতেছি!
আমি চলে গেলাম একটা গোলাপ কেনার উদ্দেশ্যে। গোলাপটা হাতে নিয়ে আসছিলাম।
তখন কিছু ছেলে আমার পথ আটকালো।
আমাকে বলতে লাগলো…..
-কই যাস? (ছেলেগুলো)
-জ্বী! এইতো সামনে যাচ্ছি!
-সামনে কেন? ওখানে কি?
-কিন্তু আপনারা কারা! আর আমার পথ আটকিয়েছেন কেন?
.
-আমরা কারা সেটা পরে জানবি! তার আগে বল সোমার সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
-আমরা একে অপরকে ভালোবাসি..
-আজ থেকে আর ভালোবাসতে পারবি না! নিজের ভালো চাইলে ওকে তুই ত্যাগ কর।
-আর যদি ত্যাগ না করি?
-তাহলে তোর বিপদ তুই নিজেই ডেকে আনবি! ত্যাগ করবি কিনা বল?
-না করবো না!
.
তখন তাদের মধ্যে একটা ছেলে আমায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে!
তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি! তারপর কি হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না!
চোখ খুলে দেখতে পেলাম আমি হসপিটালের বেডে! পাশে আমি প্রথমে কাউকে দেখতে পাইনি!
.
কিছুক্ষণ পরে দেখলাম সোমা আমার পাশে বসে কাঁদছে!
কথা বলার মতো শক্তি আমার ছিলো না! প্রচন্ড ব্যথা করছিলো মাথায়! কিন্তু চোখ বেয়ে অঝর ধারা বয়ে যাচ্ছে!
নিজের বাড়িতে এই বিষয়ে কিছুই জানাই নি! যতদিন হসপিটালের বেডে ছিলাম ততদিন সারাটাদিন আমার পাশে ছিলো সোমা!
আমাকে খাইয়ে দিতো।
পরপর ১৫দিন হসপিটালে থাকার পর আমি শারীরিক ভাবে অনেকটা সুস্থ্য হয়ে উঠি!
.
আবারো চলতে থাকলো আমাদের সম্পর্ক। সেই ছেলেগুলোর বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না! এমনকি আমি সোমাকে প্রশ্ন করিনি এই বিষয়ে। সোমাও নিজ থেকে আমায় কিছু বলেনি।
আবারো কোন একদিন আমরা বের হয়েছিলাম।
সেদিনও ছেলেগুলো আমায় এবং সোমাকে আটকালো। আমি মুখ খুলে বললাম ভাই আমি আপনাদের কি এমন ক্ষতি করেছি যার জন্য আপনারা আমার পিছু নিয়েছেন! তারা উত্তর দিলো…
.
-ক্ষতি তুই করিস নি করেছে ওই মেয়েটা..
-কি ক্ষতি করেছে আপনাদের?
তার মধ্যে একটা ছেলে বললো সে আমার সাথে সম্পর্ক করতে রাজি হয়নি।আর এর জন্য বাধা হচ্ছে একমাত্র তুই। তোর কারনে আমি সোমাকে পাইনি। এখন তোদের দুজনকেই মরতে হবে।
.
কথাটা বলতে বলতেই ছেলেটা তার পকেট থেকে কিছু একটা বের করে বরাবর গুলি করে দেয় সোমার বুকের উপর!
আমার কাছে পুরো পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে গেল!
যখনি আমায় গুলি করবে তখন মানুষজন ঝড়ো হয়ে যায় ছেলেগুলো পালিয়ে যায়।..
আমি সেদিনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারবো না।
তখন আমি আমার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলি।
সবাই ধরাধরি করে সোমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়! কিন্তু সোমাকে আর বাঁচানো যায়নি সেদিন।
.
আজ এই সেই রাত! যেই কালো রাতে আমি বাসায় ফেরার পর এভাবেই বেলকুনিতে বসেছিলাম। এভাবে এক ঝড়ের পর আকাশ নিস্তব্ধ ছিলো। আজ খুব মনে পড়ে সেই দিনটির কথা সেই রাতের কথা।
.
ফিরে আসি সেই অতিতের স্মৃতি থেকে। ফারিহা আমার উদ্দেশ্যে বলে….
.
-জানিনা আমি কখনো তোমায় সেইরকম ভাবে সেবা দিতে পারবো কিনা যেই ভাবে তোমায় সেবা দিয়েছিলো সোমা।
আমি তোমার দ্বিতীয় সোমা হতে চাই। তুমি কি আমায় আপন করে নিবে শাকিল? (ফারিহা)
আজ যেন আমি আমার সোমাকে খুজে পাচ্ছি ফারিহার মাঝে।
ফারিহার চোখ দুটি ছলছল করছিলো। দুটি চোখ যেন আরো অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না। আমি বুঝে নিতে পেরেছি চোখের সেই না বলা কথা গুলো।
—————–…………সমাপ্ত………….————–

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত