– ঐ মিয়া উঠেন, ওই মিয়া তারাতারি
উঠেন।
– উমমমমমম হুমমমম উঠতেছি।
– ঐ আপনার জন্য কীইইইই আমি
বকা খামু মালিকের কাছে।
– হুমমমমমম ভাই এই তো হয়ে
গেছে।
– যত্ত সব পাগল ছাগল আমার
কপালে আইসা জোটে, টাকা
দেন।
– ভাই আমার কাছে না কোন টাকা
নাই।
– ঐ তোর বাপের গাড়ি পাইছস
টাকা দে।
– ভাই আমি তো ঐ একটু জায়গায় আসছি
তাও আমার অনেক কাঁচা মাল ছিল।
– চুপ টাকা দিয়া যাবি, না হলে ঐ
মফিজ
সালারে কয়টা দে তো।
– ভাই সত্যি আমার কাছে কোন টাকা
নাই, এই মোবাইলটা আছে একদম
নতুন আপনি আমারে কিছু টাকা
দিয়ে নিতে পারেন।
– ভাল কথা বলছিস, আমার বউয়ের জন্য
ও একটা মোবাইল লাগত,দেখে তো
ভাল ঘরের পোলা মনে হয় তো এই
কাঁচা
মালের ট্রাক এ করে ক্যান আসছস।
– ভাই কপাল আর পেঁটের জন্য অনেক
কিছু করতে হয়, আপনারে বলার ও এত
টাইম নাই আপনার শোনার ও নাই।
– হুমমমমমম তো কয়টাকা নিবি
মোবাইল।
– ভাই আপনে যা দিবেন ভাড়াটা
রেখে
তাই দেন।
– দেখে তো ভালই মনে হয় দুই হাজার
পাবি।
– ভাই আমি মাত্র পাঁচ মাস আগে দশ
হাজার দিয়ে কিনছি।
আর কিছু দিয়েন।
– ঠিক আছে তিন হাজার দিমু
হইলে দে না হলে আর নিমু না।
– একটু ভেবে সিম আম মেমোরি কার্ড
খুলে ফোনটা তার হাতে দিলাম।
খুব কষ্ট হচ্ছিল ফোনটার জন্য
যা একটা সম্বল ছিল তাও শেষ।
মাঝে মাঝে একটু গল্প লিখতাম
সেইটা ও শেষ হয়ে গেল।
কই যাব কই থাকব সেই
ভাবছি।
আমি সাহরিয়া , অনেক
ফাজিল আর দুষ্টু ছেলে আমি।
মা নেই বাবা আর একটা বিয়ে করছে,
অনেক আগে থেকেই আমাকে
দেখতে পারত না ইদানিং আরো
বেশি
অত্যাচার শুরু করে দিছে, আমি
না থাকলেই তারা অনেক শান্তি
পাবে।
বাবা ও সেই মহিলার ভয়ে
কিছু বলতে পারে না। আমার মনে
হয় দুনিয়াতে যত শত মা আছে
সব গুলাই অনেক খারাপ।
গতকাল রাতে ও বাবা ঐ মহিলার
কথা শুনে আমার গায়ে হাত তুলছে।
মাত্র কিছু দিন আগে ইন্টার পাস করছি,
এমন অত্যাচারে কেউ থাকতে পারবে
কী না তা আমি জানি না, তবে
অনেক হয়েছে আর না যদি পারি
বড় হয়েই বাড়ি ফিরব নয় তো সাহরিয়া
নামের কোন একটা ছেলের এখানেই
সমাপ্তি। তাই গত কাল রাতে
আমাদের
বাজারের কাঁচা মালের ট্রাকে
করে
ঢাকাতে আসছি, কোন টাকা পয়সা
আনি নাই শুধু একটা ব্যাগ আর
কিছু কাপর, আর শখের ফোনটা
যেহেতু এখন আর সেটা আমার না।
ঢাকা শহরে আমি নতুন কিছুই
চিনি না, রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর
ভাবছি
যাই হোক না কেন পড়ালেখাটা
চালাই যেতে হবে।
না কোন চাকুরীর জন্য না এমনি
আমার শখ।
আমি যানি আমার কোন চাকুরী
এই দেশে হবে না, যেই ছেলের
বাবা মা নেই আর মামা খালু
কই পামু।
অনেক খিদে ও লাগছে, এমন দুপুর টাইম
এ আমি খেয়ে দেয়ে শুয়ে শুয়ে একটা
করে
গল্প লিখতাম, সেটা পোষ্ট করে
বিকেল
এর টাইম এ মাঠে গিয়ে খেলতাম।
ভালই ছিল সব সময় হাঁসি খুঁশি
থাকতাম নিজের কষ্ট নিজের মনেই।
এমন জীবনের জন্য কখন ও প্রেমে
পড়া হয়নি।
অযথা একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে
কী হবে।
ওই তো সামনে একটা হোটেল দেখতে
পাচ্ছি একটু খেয়ে আসি না হলে আর
চলতে
পারব না।
– ভাই আমাকে তিনটা পরোটা দেন।
– হুমমমমমম বসেন দিচ্ছি।
– না এখন সব টাকা শেষ করলে
চলবে না, আগে একটা কাজ পেতে
হবে।
– খেয়ে দেয়ে বিল দিতে আসলাম।
– ভাই কত টাকা হয়েছে।
– ৩০ টাকা দেন।
– হুমমমমমম ধরেন।
ভাই কিছু মনে না করলে একটা
কথা বলতাম।
– হুমমমমমম কন।
– ভাই আমাকে কীইইইই কোন একটা
কাজ
দিতে পারবেন।
যেমন হোক তেমন হলেই হবে।
– না না দেখে তো ভাল ছেলে মনে
হয় এই গুলো কাজ পরবা না,
কয় ক্লাসে পড়ছ।
– আমি এইবার ইন্টার পাস করছি।
– ঐ মিয়া তাইলে ঐ সামনে যান
দেখবেন
একটা বড় রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে
যোগাযোগ করেন।
– আচ্ছা ভাই আসি তাহলে।
– বাহ্ বিশাল বড় রেস্টুরেন্ট ভিতরে
ঢুকলাম,
অনেক সুন্দর পরিপাটি গোছালো।
একটা ছেলে ডাক দিলাম।
– ভাই এখান কার ম্যানেজার কই
বলতে পারেন।
– স্যার তো ওই রুমে।
– ঠিকআছে আপনি যান।
– ম্যানেজার এর রুমে ডুকলাম,
স্যার ভিতরে আসব।
– হুমমমমমম।
– স্যার একটা কথা ছিল।
– হুমমমমমম বলে ফেল।
– স্যার আমার একটা যেমন হোক তেমন
একটা
কাজ লাগবে স্যার,
প্লিজ না বলেন না।
– ঠিস আছে, কিন্তুু তুমি কী করতে
পারবে।
– স্যার আপনি যা দিবেন তাই পারব।
– হুমমমমমম নাম কীইইইই তোমার,
আর দেখে তো ভাল ঘরের মনে
হয় কাজ কেন করবে।
– স্যার আমার নাম সাহরিয়া,
তার পরে আমার জীবনের গল্প
বলে দিলাম, পেঁটে জন্য কী নাই
করতে হয় স্যার।
– ঠিকআছে কম্পিউটার পারো।
– জ্বী স্যার।
– আচ্ছা কাল থেকে জয়েন্ট করো,
দিনে
দুই তিনটে ডেলিভারি করতে হবে আর,
এখানে কয়েক ঘন্টা কাজ করতে হবে
আর
আমাকে একটু ভাল করে কম্পিউটার
শিখিয়ে
দিও।
– ঠিক আছে স্যার, কিন্তুু আপনি যে
এত্ত তারাতারি একটা কাজ দিবেন
আমি ভাবি নাই।
– না না তোমার মতো একটা ছেলে
আমার
দরকার ছিল, কারণ সবাই পরিপাটি
ছেলে
না হলে খাবার আর্ডার দেয় না।
– ঠিক আছে স্যার।
– হুমমমমমম এখন যাও।
কিন্তুু সমস্যা তো এখন, রাতে থাকব
কই।
আজকে না হয় স্টেশন এই রাতটা
পার করা লাগবে।
অনেক কষ্টে রাতটা পার হল,
তার পরে সকালে গেলাম কাজে।
– সাহরিয়া এই ঠিকানাই পিজ্জাটা
দিয়ে
আয়, আর হ্যা আমাকে স্যার বলা
লাগবে না
আমাকে রাজু ভাই বলিস কেমন।
– ঠিক আছে , তার পরে গিয়ে দিয়ে
আসলাম।
– রাজু ভাই ধরেন টাকা।
– কীরে ৮০০ টাকা কেন, পিজ্জা এর
দাম
তো ৭৫০ টাকা, বিলে তো লেখাই
আছে।
৫০ টাকা রেখে দে ওইটা তোর টিপস।
– ওহহহ, সেদিন মোটামুটি ভালই
রোজগার
হলো, বিকেলের দিকে চলে
আসছিলাম,
পিছন থেকে রাজু ভাইয়ের ডাক।
– সাহরিয়া শোন।
– হুমমমমমম বলেন।
– তুই কই থাকিস রাতে।
– না মানে, কালকে স্টেশনে ছিলাম
আজকে ও থাকতে হবে মনে হয়।
– কীইইইই স্টেশনে ক্যান থাকবি,
আজকে
থেকে এখানেই থাকিস, ওই আমার
রুমের সাইটে একটা ফ্রি রুম আছে।
কোথায় যেন শুনে ছিলাম, পথের
শেষে একটা লোক থাকে নতুন পথ
দেখানোর জন্য রাজু ভাই ঠিক তেমনই।
বিকেলে একটা পার্কে বসে আছি,
ফোনটাকে অনেক মিস করছি।
এখন হাতে তেমন টাকা ও নেই যে
নতুন একটা ফোন কিনব।
গল্প লেখা ও আর হচ্ছে না খুব
খারাপ লাগছে।
এভাবেই দিন কাটতে লাগল,
কেমন অগোছালো জীবন।
থাকা খাওয়াটা যোগার করতে
পারতেছি
এটাই অনেক।
ইচ্ছে ছিল গল্প লিখে অনেক বড় হব
মনে হয় সেটা আর হবে না।
এমনি একদিন পার্কে বসে বাদাম
খাচ্ছি। এখন চারপাশটা বেশ পরিচিত
হয়ে গেছে।
হঠাৎ একটা মেয়ে এসে বলল।
– আরে আপনি সাহরিয়া ভাইয়া না।
– হুমমমমমম, আমাকে কেমনে
চিনলেন।
– ভাইয়া আমি আপনার সব গল্প পড়ছি
বেশ ভাল লাগে, আর অনেক মজা পাই
পড়তে।
– শুনে বেশ অবাক হলাম, যাক তবু ও
মানুষ আমাকে মনে রাখে।
আমাকে ভাইয়া বলতে হবে না নাম
ধরে বলুন।
– ঠিক আছে, আপনি এইখানে কেন
আসছেন।
– আমি ঐ সামনের রেস্টুরেন্টটা আছে
না
ওখানে কাজ করি।
– কেন ভাইয়া, আপনি আর গল্প লিখেন
না কেন।
– আসলে পেঁটের জন্য, আসলে আমার
জীবন গল্পের মতো না, তার পরে
তাকে
জীবনের স্টোরিটা বললাম।
– আপনি দেখেন একদিন
অনেক বড় হবেন।
– হা হা হা সেই কপাল আমার না, ও হ্যা
আপনাকে তুমি করে বলি কেমন।
তোমার নামটা তো আমি জানি না।
– আমার নাম মালিহা, ঐ যে সামনে
যেই বাসাটা দেখা যাচ্ছে ওটাই
আমার বাসা।
– ওহহহহহ ভালো।
– আচ্ছা মালিহা নাও বাদাম খাও।
– না না থাক আমি খাব না।
– গবির মানুষ এর গরিব খাবার
তাই খাবা না তাই তো।
– ঐ রকম করে কেন বলো হুমমমমমম,
দাও খাচ্ছি।
– হি হি ধরো নাও।
– আচ্ছা সাহরিয়া তুমি কখন কখন ফ্রি
থাকো।
– এই ধরো সকাল ৭টাই তিনটা
ডেলিভারি থাকে,
তার পরে ১১টাই আসি এর মধ্যে ১ ঘন্টা
ফ্রি।
আবার দুপুরে কাজ থাকে একটু ৩ টা
পর্যন্ত,
তার পরে এখন ফ্রি, আবার রাতে একটু।
বাদ বাঁকি টাইম ফ্রি।
কেন বলতো।
– না এমনি, তোমার ফোন নাম্বার
দাও।
– ০১৭৪২৫৪৯৯..।আমার ফোন নাম্বার
আছে
কিন্তুু ফোন নেই হা হা।
– কীইইইই আজব ছেলে একটা। কীইই
এটাই ভাবছ তাই না।
– হুমমমমমমমমমমম।
– ঠিকআছে আমি এখন যাই কেমন।
বলে চলে আসলাম।
আজকে মাসের বেতন পাইছি ছয়
হাজার
টাকা।
সকল কাষ্টমার এর কাছে জনপ্রিয়
হয়ে গেছিলাম বলে সমনের মাস
থেকে এক
হাজার বেশি দিবে বলছে।
কিছু কেনা কাটার জন্য মার্কেটে
গেলাম,
তেমন কিছু না দুইটা গেঞ্জি দরকার।
মার্কেটে ঢুকতেই।
– আরে সাহরিয়া তুমি, কীইইইই কোন
ডেলিভারি আছে নাকি।
– আরে না না দুইটা গেঞ্জি নিতে
আসছি।
– ওহহ চলো আমি চয়েস করে দিচ্ছি।
– এই ভাইয়া গেঞ্জি দেখান তো,
এই দুইটা প্যাক করে দিন,
আর হ্যা শার্ট দেখান, এই দুইটা দিন,
এর পরে প্যান্ট ও দুইটা প্যাকেট করতে
বলল মালিহা।
আমি তো শেষ মাত্র কয়টা বেতন
পাইছি সব মনে হয় গেল।
– মালিহা একটু সাইটে চলে।
– হুমমমমমম, ভাইয়া সব গুলো প্যাক করে
দিয়েন।
– হুমমমমমম বলো কীইইইই হইছে।
– আরে বাবা আমার কাছে তো এত্ত
টাকা নাই
এই সব গুলো নিলে সারা মাস খাব
কীইইইই।
– দূর গাধা আমি জানি, তোমাকে
টাকা দিতে হবে না।
– না আমি তোমার টাকা নিব কেন।
– আচ্ছা নেওয়া লাগবে না, যখন
বড় হবা তখন শোধ করে
দিও কেমন।
– আমি কোনদিন বড় হব ও না
শোধ ও করতে পারব না।
– আচ্ছা করতে হবে না।
– না না শোধ করতে পারব হুমমমমম।
– হা হা ঠিকআছে।
তার পড়ে দুই জন চলে আসলাম।
মালিহা মেয়েটা ভালই।
হঠাৎ একদিন রাজু ভাই দৌড়ে আসল।
– সাহরিয়া তোর তো কপাল খুলে
গেছে ভাই।
– দূর ভাই কী বলেন, কপাল খুলব আমার
সেটা অনেক পরের কথা।
– নারে মাহবুবুর রশিদ বান্নাহ
ডিরেক্টর আছে
না নাটক টেলফ্লিম তৈরি করে।
– হুমমমমম যানি, তো কীইইইই হইছে।
– আরে তুই নাকি গল্প আর তোর ছবি
তারে
মেসেজ করছিলি।
– হুমমমমমম।
– ওনার নাকি তোর গল্প পছন্দ হইছে
আর তোরে ও।
– দূর ফাইজলামি করো নাতো যাও
হাতে
অনেক কাজ।
– আরে সত্যি, ওই যে ওখানে দেখ
তোর ছবি নিয়া বসে আছে।
– হঠাৎ চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
– তার সামনে দাঁড়াতেই।
– সাহরিয়া রাইট।
– শুধু মাথা নাড়ালাম।
– হুমমমমমম ভালো, তোমাকে দিয়ে
একটা
নাটক বানাবো তোমার গল্প দিয়ে
করবে,
– কানটা ও যেন আর ভুল শুনছে মনে হয়।
চোখে পানি আটকে রাখতে
পারিনাই
ডিরেক্ট কেঁদে ফেলছি।
আজকে আমি অনেক বড় হয়ে গেছি,
মালিহাকে নিয়ে বসে আছি, সেই
একই জায়গায় যেখান থেকে
আমার শুরুটা হয়ে ছিল।
– কীইইইই বড় হয়ে গেছ বলে কী
আর বাদাম খাবা না।
– আরে বড় হয়ে গেছি বলে কী
সাহরিয়া
টা বদলে গেছে নাকি।
এইতো পকেটে বাদাম আছে।
– মালিহা জানো আজকে আমার
খুব খুব একটা কাজ করতে
ইচ্ছে হচ্ছে।
– হুমমমমমম শুনি তোমার কীইইইই কাজ।
– যারা আমার গল্প পড়ত তাদের সকলকে
একটা করে পাপ্পি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
– কেন।
– তারা গল্প গুলো না পড়লে হয়তো
আজকের
এই সাহরিয়াই থাকত না।
এখন তো কেউ কাছে নেই, তুমি
ও তো আমার গল্প পড়তে তোমাকেই
একটা পাপ্পি দেই কেমন হি হি হি।
– শয়তান ছেলে, আচ্ছা দাও।
– ঠিক আছে উমমমমমম্মা।
…………………………..সমাপ্ত…………………………….
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক