রক্ত আলতা পায়

রক্ত আলতা পায়

দীর্ঘ ৭ বছরের সম্পর্ক ছিলো ওর সাথে।এই সাতটি বছরের মধ্যে ছিলো কখনও হাসি,কখনও জগড়ার কারণে কান্না আবার কখনও বা ছিলো

অপরিসীম সুখ যা কখনও ভুলার মত নয়।
প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে ওর সাথে কথা হতো।এক কথায় প্রতি ৫ মিনিট পর হয় সে আমাকে কল দিতো আর না হয় আমি তাকে ফোন করতাম।

কথা বলতে বলতে হঠাৎ কোনু এক সময় হয়তো আমার কোনু কথায় সে আঘাত পায় নতুবা আমি তার কথায় আঘাত পেতাম।অবশ্য আমি

আঘাত পেলে মনটাকে বুজিয়ে নিতাম।কিন্তু সে আঘাত পেলে বিষয়টাকে অনেক বেশি বড় করে দিত।
কোনু এক সময় ওর ছুটো ভাই আমাকে ফোন দিয়ে জগড়া টা সমাধান করে দিত।তারা ভাই-বোন দুজনেই খুব বেশি ফ্রী ছিলো।ওদের বাড়ির

সবাই আমাকে চিনে-যানে।অনেক দিনের সম্পর্ক তো কম বেশ সবাই-ই জানে।একটি সূর্য অস্ত যায় আর আরেক টি সূর্য আপন আলোতে জ্বলে উঠে,

এইরকমই দুজনের জীবন থেকে একটির পর একটি দিন অতীত হয়ে যায়।
দুজনের কথা-বার্তা এগিয়ে যাচ্ছে সম্পর্কের আপণ ধারায়।মাঝে মধ্যে আবার দুজনেই দেখা করতাম অচীন দুরের কোন এক জায়গায়।
যেদিন আমি ওর সাথে দেখা করতাম সেদিন আমি অনেক বেশি খুশি থাকতাম। ওর চোখের দিকে থাকালেই আমার মনটা একদম নরম হয়ে যেত।

ওই অচীন দুরের যায়গার পুকুর ঘাঠে যখন সে আমার পাশে এসে বসত তখন মনে করতাম আমিই প্রিথীবির সবচেয়ে সুখি।
রাতে যখন ঘুমাতাম তখন ওর চাদের মতো সুন্দর মুখটি যখন ভাসতো আমার চোখের জ্বলে,আদর করে মুছে দিতাম তার গালে।
সপ্ন অনেক সপ্ন, যা ভুলার মত নয়।দেখা করার কিছু দিন পর সকাল বেলা ওর সাথে কথা হচ্ছে।দুজনেই জগড়া-বিবাদ ছাড়া কথা বলতেছি।

খুব সুন্দর চলছিলো।আমি জানিনা ও আমার কথায় কোন আঘাত পেয়েছে কি না?তবুও কথা বলতেছি ওর সাথে।সুখের সপ্ন এগিয়ে যাচ্ছে আপন মনে।
দুপুরের খাবার খেয়ে ওর ফোনে কল দিলাম………?ফোন বন্ধ?পাজড়ের ঠিক কোণায় খুব জুরে কে যেন একটা ঘুশি দিলো।বুজতে পারছি আমার কলিজা

মনে হয় কেউ চিরার চেষ্টা করতেছে।
ওর ফোনে বার বার ট্রাই করছি,কিন্তু ফোন বন্ধ,,,বুজতেছি আমি, আমার ধম টা এই বুজি বেরিয়ে গেলো….এই বুজি বেরিয়ে গেলো?

এই আজব প্রিথীবির কোন কিছুই আমার ভালো লাগছিল না।কে যেন আমার কলিজাটা ছিড়ে নিলো রে……আর থাকতে পারছি না।

ফোন দিলাম ওর ছুট ভাইকে,,, আমার কলটা সে রিছিভও করছে না,বার বার কেটে দিচ্ছে।প্রায় হাজার খানিক কল দিলাম।প্রচন্ড আধারে

শুরু হলো গভীর রাত।ঘুম আসছে না,,,বন্ধি ঘরে মনটা থাকতে চায় না।
বার বার দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা হয়,,,,,কিন্তু আব্বুর ভয়ে যেতে পারছি না।দম টা আমার বন্ধ হয়ে গেলো রে……ভাবলাম আমার

কলিজাটা কেউ একজন চিরাড় পর খুশি হবে। প্রচন্ড আধারের রাতে অল্প অল্প ঠান্ডাও আছে,,,সারাটা রাত ওর কথা ভাবি,,,ঘুম আসে না,

কোন ভাবেই না।যার সাথে সকাল বেলা এত সুন্দর কথা বললাম কোথায় গেলো সে।পুকুর ঘাঠে যে আমার বুকের মদ্ধে মাথা রেখে ঘুমুতো

কোথায় গেল সে?যার সাথে জগড়া করলে ওর ছুট ভাই রাগান্বিত মনকে ভালো করে দিতো,কোথায় গেলো সে,,,নাকি চলে গেলো সে আমার

কলিজা নিয়ে।শরীরটা কাপতেছে….কোথায় গেল সে….কোথায় গেলে পাবো থাকে।নেই কেউ, কেউ নেই…কেউ উত্তর দেয় না আমার প্রশ্নের?

কাদঁতে কাদঁতে চোখ লাল হয়ে গেল?চোখের নোনা জলটা ভুক ভেসে পড়তে লাগলো।
মসজিদে ফজরের আযান হচ্ছে অপেক্ষায় আছি আমি কখন একটু আলো আসবে?মরি আর বাচিঁ আমার তো বাইরে বেরিয়ে যেতেই হবে!!!
অল্প,একদম অল্প একটু দিনের আলো হলো।কলিজা ছিড়ার বেদনায় থাকতে পারলাম না আর বেশিক্ষণ ঘরে।বেড়িয়ে গেলাম বাইরে।দোকানেও

মানুশ নেই,,,কয়েক জন মুরুব্বি মানুশ টুপি মাথায় দেখা যাচ্ছে।আমার চোখ দুটো লাল হয়ে অবাক আক্রিতি ধারণ করেছে।বেশিক্ষণ এখানে না

দাঁড়িয়ে সামনে হাঠতে হাঠতে ওর ছুট ভাইয়ের ফোনে কল দিতে থাকি,,,,বার বার ও কেটে দেয়?দুকানে পরোটা বানানো হচ্ছে,কিন্তু পকেটে তো

টাকা নিয়ে বের হইনি,,,তাছাড়া খিদেও নেই,,,কেমন যেন আমি হা করতে পারছিনা।মনের বেদনা কোন ভাবেই থামাতে পারি না।মনে মনে ঠিক

করলাম আজ যা হবার হউক তবুও আমি ওদের বাড়িতে যাবো।আল্লাহ’র নাম ধরে শুরু করলাম দোউড়ানো।অনেকটা ঘুরিয়ে গেছি,,,,, কারণ

ওদের বাড়ি আর আমাদের বাড়ি মাত্র ২ কিঃমিঃ এর রাস্তা, অনেকে আমায় চিনে ফেলবে ভেবে ওদের বাড়ির সামনের দিকে না যেয়ে পিছনের

দিকে যাচ্ছি।
বুকের ভেতর ঠাস ঠাস করে কি যেন উঠা-নামা করছে।দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখলাম……কিছু মানুশ দেখা যাচ্ছে আর কিছু হৈ-হৌল্লোর এর শব্দ।

কিছুই বুজতেছি না,,,,অস্তে অস্তে অদের বাড়ির পিছনে একটু কাছে আসলাম।
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি লাল-নীল বাতি আর ছুটো – কাটো একটা ফেন্ডেল।ফেন্ডেলের আশ-পাশে বয়স্ক কয়েক জন মানুশ বড় বড় হাড়ি-পাতিল পানি

দিয়ে ধুইতেছে।আমার আশ-পাশে কাউকেই দেখছিনা।আরও একটু এগিয়ে যেয়ে ছুটো একটা বাচ্চা কে জিজ্ঞেস করলাম “ভাইয়া অইখানে এত

মানুশ কি হচ্ছে ওইখানে”কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই ভু-দৌড় দিলো সে।এবার একটু ঘুরিয়ে বাড়ির সামনের বড় রাস্তায় সুজা-সুজি দাড়ালাম।
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি?!!!
অনেক বড়, অনেক সুন্দর একটা বিয়ের গেইট।গেইটের দুই পাশ থেকে লাল-নীল মরিচ বাতির দুইটা শাড়ি ওদের বাড়ির ভেতর অবদি চলে গেছে।

গেইটের সামনে মধ্য বয়স্ক অচেনা কয়েকটা ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি,,,,সাহস পাচ্ছি না কিভাবে কি বলব।ওর ছুটো ভাইকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।
চলতে শুরু করলাম ওদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। দেখলাম পরিচিত মানুশ গুলাও আমাকে দেখে না চেনার ভাব করতেছে,,,,সাহস করে বললাম এক মধ্য বয়স্ক মহিলাকে”চাঁচি আপনাদের বাড়িতে কি হচ্ছে”???
উত্তর দিলেনঃওমা আপনি জানেন না আমাদের মোনিয়ার বিয়ে আজ,,,,গতকাল রাতে কত্ত ধুম-ধাম করে হলুদ,আলতা আরও কত কী দিয়ে গায়েঁ হলুদ করলাম।আমাদের মেয়ের জামাই বড্ড ভালো মানুশ,অনেক টাকা,জায়গা জমির মালিক তিনি।
ভাবলাম আমার কলিজাটা সত্যিই কেউ ছিড়ে নিয়ে গেছে।কলিজা ছিরার বেদনা সজ্জ করতে পাচ্ছি না রে।
আমার কলিজাটা কে নিয়ে গেলো রে………
কেউ আমার কলিজাটা ফিরিয়ে দে………..
ফিরিয়ে দে আমার কলিজা…….
আমি আর সজ্জ করতে পারছি না।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত