হাতে একটা খাটো চিকন লাঠি নিয়ে ঠকঠক শব্দ করে ধীরে ধীরে বেডরুম থেকে বেলকুনিতে এসে ওয়ালের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে আরজু। চারতলা বাড়ি আর এখন ঠিক তিন তলার বেলকুনিতে অবস্থান করছে আরজু। ওর সামনে এখন রক্তিম সূর্যটা বিদায় নিচ্ছে, বিকেল হয়ে গেছে তো তাই সূর্যটা পৃথিবীর নিচে তলিয়ে যাচ্ছে আর সূর্যটার লাল আভা এসে ঠিক আরজুর মুখটাতে পরছে। আরজু সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকলেও সূর্য ওকে স্পর্শ করতে পারছে না, চোখ দিয়ে সূর্যকে অনুভব করার ক্ষমতা ওর নেই, শুধু হাতের নরম চামড়ায় সূর্যের যে তাপটা পরছে ঐ তাপ অনুভব করে আরজু বুঝতে পারছে ও এখন বিকেলের হিমেল পরশ প্রাপ্ত সূর্যটার সামনে দাঁড়িয়ে।
সূর্যটার লাল আভা আরজুর চোখটাকে স্পর্শ করতে না পারলেও আরজুর চোখের জলটা সূর্যমামা ঠিকই শুষে নিচ্ছে। সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ও, চোখ বেয়ে পরছে নোনতা পানির ঢল, টপটপ করে জল পরছে ওর চোখ দিয়ে, জলের প্রতিটি ফোঁটা নিচে পরার সাথে সাথেই গরম উত্তপ্ত বেলকুনির ফ্লোর আর সূর্য অশ্রুটুকুকে এক নিমিষেই চুষে নিচ্ছে। শুধু ওর চোখ দিয়ে জল পরছে না সাথে ডান হাতের তালু দিয়ে লাল রক্তও পরছে ফোঁটা ফোঁটা। লাল রক্তে বেলকুনির প্রায় অনেকটা ভিজে গেছে।
চোখের জলটা পরছে মনের ভেতর তীব্র কষ্ট আর যন্ত্রণায়, নিজের প্রতি ধিক্কার বোধ আর রক্তটা ঝরছে পরে গিয়ে,
কিছুক্ষণ আগে, সেই দুপুরে ঘুমিয়ে পরছিল আরজু আর উঠতে উঠতে বেজে গেছে চারটা, ঘুম থেকে উঠেই হাতের লাঠিটা খুঁজতে থাকে ও। ঘুমানোর আগে লাঠিটা কই যে রাখছিল একদম মনে নেই সেটা তাই নিজের হাত দুটি সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বদ্ধ ঘরের ভেতর নিজেই বৃথা চেষ্টা করে ওটা খুঁজতে। যদি চোখে দেখতে পেতো তাহলে হয়তো আজ ওই লাঠিটার কোনো দরকার হতো না, কিন্তু কি আর করবে? কপালের লিখনকে তো মেনে নিতেই হবে। সামনে সাবধানে চলার সময় লাঠিটাই হলো আরজুর একমাত্র ভরসা কিন্তু এখন তো কিছুতেই ওটা খুজেঁ পাচ্ছে না।
হাত দিয়ে সামনে নাড়াচাড়া করতে করতে হটাৎ ধপাস করে কিছু পরার আওয়াজ হয় আরজুর ঘরে আর তখনই আরজুর আম্মু দৌড়ে আরজুর ঘরে আসে ড্রয়িংরুম থেকে আর এসেই ওনি দেখতে পায়, টেবিলে রাখা দামী কাঁচের ফুলদানিটা আরজু ভেঙে দিছে আর সেটার উপর উপুড় হয়ে পরে আছে। রাগে গা জ্বলে উঠে ওনার, অতঃপর আরজুর গালে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে পাশে থাকা আরজুর লাঠিটা ওর দিকে ছুড়ে দিয়ে রাগে গড়গড় করতে করতে চলে যায় তিনি। আর তারপরই লাঠিটা নিয়ে ধীরে ধীরে বেলকুনিতে এসে দাঁড়ায় আরজু, হাতটা অনেকখানি ফুলদানির কাঁচে কেটে গেছে কিন্তু সেদিকে কারো খেয়াল নেই, আরজুর আম্মু এখন টিভি নিয়ে ব্যস্ত আছে আর বেলকুনিতে যে ছেলেটা কান্না করছে হাত দিয়ে রক্ত পরছে সেদিকে ওনার খেয়াল নেই।
আর আরজুরও তো খেয়াল নেই, থাকবেই বা কি করে? ও তো আর দেখতে পাচ্ছে না ওর হাতে কি হয়েছে শুধু একটু একটু অনুভব করতে পারছে ডান হাতটা ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছে। না, বেলকুনিতে আর ভালো লাগছে না, এবার রুমে যাওয়া দরকার। হাতের লাঠিটা সামনে ধরে আবার ধীরে ধীরে রুমের দিকে পা বাড়িয়ে দেয় আরজু। কখন যে ড্রয়িংরুমে এসে পরেছে খেয়ালই করেনি। আম্মুর সামনে আসতেই আম্মু আবার বলতে থাকে,
– এতো দামী ফুলদানিটা ভেঙেছিস এখন ওটার টাকা আসবে কোথা থেকে? ওটা কি বিনা পয়সায় এসেছে বাসায়?
এক টাকা আয় করার মুরাদ নেই সারাদিন শুধু ঘরে বসে থাকা আর ঘরের জিনিস নষ্ট করা। কথাটা গিয়ে আরজুর কলিজায় গিয়ে লাগে কিন্তু কষ্ট হলেই কি আর করার আছে ওর? কিছুই করার নেই, মাথাটা নিচু করে নিজের রুমের দিকে লাঠিটা সামনে ধরে আবার হাঁটা দেয়। রুমে এসে বিছানায় বসা মাত্রই বাসার কাজের বুয়া আসে ওর ঘর ঝাড়ু দিতে আর তখনই তিনি দেখতে পায় আরজুর হাত দিয়ে রক্ত পরছে,
– এই ভাই তোর হাত তো অনেকখানি কেটে গেছে, কাটলো কিভাবে? আয় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেই।
– কি জানি কখন কেটেছে, বুঝতেই পারিনি। আর কাটলেই বা কার কি! থাকুক এভাবেই।
– চুপ করো তুমি, আমি এখনই ওষুধ আনছি।
কাজের বুয়া দৌড়ে গিয়ে ওষুধ আর ব্যান্ডেজ এনে ওর কাটা জায়গাটায় লাগিয়ে দেয়। তারপর আরজুর বিছানাটা একটু ঠিক করে দিয়ে তিনি চলে যায় আর আরজু বিছানায় বসে বসে আশেপাশের জিনিস গুলোকে একটু বুঝতে চেষ্টা করে, আরজু চোখ দিয়ে দেখতে না পেলেও কান দিয়ে শুনেই বলে দিতে পারে কোথায় কি হচ্ছে। হটাৎ করেই নিজের দিকে খেয়াল করে আরজু, একটা ব্যর্থ জীবন নিয়ে পরে আছে পৃথিবীর বুকে। কিছু করার ক্ষমতা নেই ওর শুধু ঘরে বসে বসে খাওয়া, আর মাঝেমধ্যে ভুলবশতঃ জিনিস ভাঙচুর।
বড় ভাইয়া তো জব করে, প্রতি মাসে অনেক টাকা আয় করে, আম্মুও ওকে খুব আদর করে আর আমি শুধু অবহেলায়ই আছি। বাকি জীবনটা যে কি করে কাটবে কে জানে? আম্মু তো মাঝেমধ্যেই বলে, কাজকর্ম করিস না আর কতদিন ঘাড়ে বসে খাবি? কিন্তু আম্মু কেন বুঝে না, আমি যদি আজ দেখতে পেতাম তাহলে কি আজ আমি কাজ ছাড়া থাকতাম? আমিও ভাইয়ার মতো চাকরি করে অনেক অনেক টাকা উপার্জন করতাম কিন্তু আম্মু আমার সমস্যাটা বুঝেও যখন অবুঝের মতো আমাকে কথা গুলো বলে তখন হয়তো আম্মুর একটুও কষ্ট হয় না কিন্তু আমার বুকটা যে কষ্টে ছিঁড়ে যায় এটা কেউ দেখে না।
যার আয় আছে তারই আদর আছে যার আয় নাই তার আদরও নাই, আছে শুধু অবহেলা আর ধিক্কার। আজ যদি ভাইয়ার মতো আমিও কাজ করতে পারতাম তাহলে হয়তো ভাইয়ার সমান আদর পেতাম কিন্তু এই পোড়া কপাল নিয়ে তা আর হলো না। এই নষ্ট চোখ দিয়ে কেন যে আল্লাহ পৃথিবীতে আমাকে পাঠালো কে জানে! যার কিছু করার ক্ষমতাই নেই তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে আল্লাহ কি পায়? শুধু আমাদের মতো এই অসহায় মানুষ গুলোকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই কি আমাদের আল্লাহ পাঠিয়েছেন? এরকম আরো অনেক প্রশ্ন জেগে উঠে আরজুর মনে কিন্তু এই প্রশ্ন গুলোর উওর দেওয়ার মতো কেউই ওর পাশে নেই। সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়, হাতের কাটা অংশটায় কেমন যেন একটু জ্বালাপোড়া করতেছে,
– ভাইয়া এই ভাইয়া এখানে একটু আসো না!
– কি হইছে?
– ফ্রিজ থেকে জলের বোতলটা দিয়ে যাও না প্লিজ!
আরজু জলের বোতলটার জন্য ডাক দেয় ওর বড় ভাইয়াকে, ডাক দেওয়ার অনেকক্ষণ পর এসে দূর থেকে আরজুর বিছানায় বোতলটা ছুড়ে দিয়ে যায় ওর ভাইয়া। আরজু বিছানায় বোতলের শব্দ শুনে বুঝতে পারে বোতলটা দিয়ে গেছে তবুও ভাইয়াকে আস্তে করে বলে
– এনেছো ভাইয়া?
কিন্তু উওর দেওয়ার মতো কাছে কেউ ছিলো না তাই আরজু উপরের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে সামনে খুঁজতে থাকে বোতলটা, একটু পরই হাতের নাগালে এসে পরে সেটা আর তৃপ্তি ভরে জল খায় আরজু। আম্মুও আজ মারলো বকলো আর ভাইয়ার এমন আচরণ এটা তো নিত্য দিনের, নতুন করে আর কি বলবো? সারাদিন একাই থাকতে হয়, কথা বলার মতো আপাতত কেউ নেই। আব্বুও আসে না, আম্মুও আসে না কথা বলতে শুধু খাওয়ার সময় ডাক দেয় আর যদি বলি যেতে পারবো না তাহলে রুমে এসে দিয়ে যায় আর ভাইয়াকে যদি নিজ থেকে কিছু না বলি তাহলে আর কথা বলে না তবে কাজের বুয়াটা ভালো, যখন বাসায় কাজ না থাকে তখন ওনি এসে গল্প করে। আর বাকি সারাটি দিন একাই থাকতে হয় এই ছাদের নিচে। না দেখতে পারি টিভি না চালাতে পারি ফোন, কিছুই করার ক্ষমতা পাইনি আমি। কথাগুলো ভাবতেই মনের পাঁজরে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে।
বেশ কিছু দিন পর, সকাল বেলা, বিছানায় বসে হাঁটুর উপর বালিশটা নিয়ে একটা কিছু কল্পনা করছে আরজু আর তখনই ওর মনে পরে যায় আগামীকাল শুক্রবার আর বাসার সবাই মিলে ঘুরতে যাবে। আমিও যাব আব্বু আম্মু ভাইয়ার সাথে, ভাইয়াকে আজ একটা ড্রেস আনতে বলবো আমার জন্য। খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠে আরজু আর ওমনি কাছে থাকা লাঠিটা নিয়ে ভাইয়ার রুমের দিকে যায় আরজু। ভাইয়ার রুমের দরজার কাছে গিয়ে,
– ভাইয়া আসি?
– আয়, নিঃশব্দে গিয়ে বিছানায় ভাইয়ার পাশে বসলো,
– ভাইয়া আমার জন্য আজ একটা ড্রেস এনো।
– এখন ড্রেস দিয়ে কি করবি?
– কাল তো সবাই ঘুরতে যাবে তো নতুন পোশাক লাগবে তো।
– তুইও যাবি?
– হ্যাঁ যাব।
– কে নিয়ে যাবে তোকে? আর গিয়ে কি করবি?
– তোমরা যা করবে তাই করবো।
– আমরা তো নানান জিনিস দেখবো, তুই তো কিছুই দেখতে পাস না তুই গিয়ে কি করবি? চোখ দিয়ে যদি দেখতে পারতি তাহলে হয়তো যেতে পারতি, তোর যাওয়ার দরকার নাই, বাসায় বুয়ার সাথে গল্প করিস সারাদিন, যা এখন।
– আচ্ছা ভাইয়া।
চোখে জল টলমল করে উঠে ওর, কত আশা নিয়ে ভাইয়ার কাছে আসছিল, ভাইয়া ড্রেস এনে দিব, সবার সাথে ঘুরবে কিন্তু তা আর হলো না, ভাইয়াও কিছু ভুল বলেনি, আমি তো দেখতেই পাই না ওখানে গিয়ে কি করবো? আরো শুধু শুধু ওনাদের ঝামেলা হয়ে দাঁড়াবো তারচেয়ে বরং আমার বাসায় থাকাটাই ভালো হবে। পরের দিন আরজু বিছানায় বসে আছে আর ওর আম্মু সাজগোজ করছে ওর পাশেই।
– আম্মু আমাকে নিবা না?
– তোর ভাইয়া তোকে যেতে না করছে চুপচাপ ঘরে বসে থাক।
– আমি তোমাদের খুব বিরক্ত করি তাই না? আমার জন্য তোমাদের কত ঝামেলা হয়।
– জানো আম্মু আমিও আশা করিনি আমি কারো ঘাড়ের বোঝা হয়ে থাকবো কিন্তু কি করবো বলো, আল্লাহর নিয়ম কে তো আর ভাঙতে পারিনা।
আরজুর মা আর কিছু বলে না, ছেলের মুখে এমন কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পরেন তিনি তবুও তিনি নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় মূহূর্তের ভেতর। বিকেল হয়ে গেছে, আরজু ড্রয়িংরুমে চুপচাপ একা একা বসে আছে, আম্মু ভাইয়া কেউই এখনো ফিরে নাই, সেই সকালে ওনারা বেরিয়ে গেছে, সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে হয়তো ফিরবে এই আশায় বসে আছে আরজু। বুয়া তো একটু আগে চলে গেছে যাওয়ার আগে শুধু বলে গেছে, সাবধানে থেকো কোথাও যেও না আবার।
এইটুকু বলে তিনি চলে গেছে আর আরজু এখন বাসায় একা, হয়তো খুব শিঘ্রই সবাই আসবো।উফ্ খুব জল তৃষ্ণা পেয়েছে এখন এক গ্লাস জল না খেলেই নয় কিন্তু এখন পাব কই? এখন তো আবার সেই আম্মুর ঘরে যেতে হবে তাছাড়া আর অন্য কোথাও জল নেই, রান্না ঘরে তো আমি আর একা যেতে পারবো না আর বুয়াও তো জল রেখে যায়নি আশেপাশে তাই এখন আম্মুর ঘরেই যেতে হবে।সামনের দিকে এগুতে থাকে আরজু আম্মুর ঘরে যাওয়ার জন্য কিন্তু আরজু ভুল করে সিঁড়ির দিকে যেতে থাকে, হাতে লাঠি নেই শুধু হাত দুটি ভরসা। হাত দুটি সামনে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও।
নিচে তো এখন আর স্পর্শ করতে পারছে না তাই নিচের দিকে খেয়ালও নেই, হটাৎ সিঁড়ির কাছে আসতেই এক পা সিঁড়িতে চলে যায়। আর ওমনি আরেকটা পা ও ফসকে যায়। ব্যস, যা হওয়ার তাই হলো, আরজু পরে গেল।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, উপরে থেকে আঘাত পেতে পেতে একেবারে নিচে এসে পরে আরজু, ওর স্বাস্থ্যটাও ততটা ভালো নয়, অতঃপর নিচের বাসার লোক গুলো যখন ওকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেল তখন অনেক তাড়াহুড়ো করে ওনারা আরজুকে হসপিটালে নিয়ে গেল।
হসপিটালে নিয়েও কাজ হলো না, যার মৃত্যুর সময় আসে তখন হাজার চেষ্টা করেও তাকে ফেরানো যায় না আর আরজুকে হসপিটালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ডাক্তার ওকে মৃত ঘোষণা করে দিল। ভালই হয়েছে মরে গিয়ে, ওকে আর পরিবারের সবার অবহেলা সয্য করতে হবে না। প্রিয়জনদের অবহেলিত কথায় কষ্ট পেয়ে ওকে আর কখনো বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে কাদতেঁ হবে না। এরপর সবাই ওকে হাজার বার অন্ধ বললেও ও আর শুনতে পাবে না তাই ওকে আর কষ্টও পেতে হবে না।
ওর পরিবারের ঘাড় থেকে একটা মস্ত বড় বোঝা নেমে গেল। আর কখনো আরজু ওর আম্মুকে বলবে না, আম্মু আমার খাবারটা দিয়ে যাও, আম্মু আমার চলার লাঠিটা পাচ্ছি না একটু দিয়ে যাও। এইসব বলে ও আর ওর আম্মুকে বিরক্ত করবে না। পাশের ঘরে ভাইয়া শুয়ে থাকবে কিন্তু কেউ আর ওনার কানের কাছে এসে ভাইয়া ভাইয়া বলবে না।খাবার টেবিলে হয়তো একটা প্লেট আর একটা চেয়ার খালিই থাকবে, সেখানে হাজার পদের খাবার এনে দিলেও কমবে না, কারণ সেই চেয়ারে বসে খাওয়ার মানুষটা আজ অনেক দূরে।এখন আর আরজু এসে ওর ভাইয়াকে বলবে না, ভাইয়া জলের বোতলটা একটু দিয়ে যাও না প্লিজ। বেলকুনিটা এখন ফাঁকাই পরে থাকবে, এখন আর কেউ সেখানে এসে সূর্যমামার দিকে তাকিয়ে থাকবে না। আরজুর মাকেও এখন মুখের কথা খরচ করে বলতে হবে না, কাজকর্ম করিস না শুধু বসে বসে খাওয়া তাই না! অকর্মা কোথাকার!কাজের বুয়াটা এসে হয়তো ওর ঘরটা পরিষ্কার রাখবে কিন্তু ওকে আর কখনো দেখতে পাবে না।
ওর স্মৃতি হিসেবেও কিছু রইলো না, ওর মনের কথা গুলো লিখে রাখার জন্য নেই কোনো ডাইরি, থাকলেও তো আর লিখতে পারতো না, সামনের জিনিস চোখে না দেখলে লিখবে কি করে? পরিবার থেকে একটা অকর্মা বিদায় হলো আর ওর বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে না কারো, উপার্জন করতে পারে না সবসময় শুধু খাই খাই করে। এমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাটাই ভালো, অন্ধটা মরেছে বেশ ভালো হয়েছে।