ব্রেকাপের ১ বছর পরও মিলা নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি। মিলার সবচাইতে ভালো বন্ধু আভা। মিলার সব কিছুই ওর জানা। অনেকবার মিলাকে অভিক কে ভুলে যাওয়ার কথা বললেও মিলা সেটা করে উঠতে পারেনি।
-কিরে মিলা কি খবর?
-ভালো।
-কলেজ যাবি না?
-ইচ্ছে করছে না রে।
-তুই মাসের মধ্যে কয়দিন কলেজ যাস? এই মাসে তুই ৫ দিন কলেজ গিয়েছিস।
-উফ যা তো। বিরক্ত করিস না।
-আজকে অভিকের সাথে তোর প্রথম দেখা হয়েছিলো। তাইতো?
-তো..র মনে আছে?
-সব মনে আছে। আচ্ছা তোর সাথে অভিকের আর কখনো কথা হয়েছিলো?
-ও আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমি করিনি।
-তীব্র ঘৃণার জন্য। তাইতো?
-হু।
-তুই অভিক কে ভুলতে পারছিস না কেন জানিস?
-ওকে আমি love করি তাই?
-তাতো করিস। তার সাথে তুই ওকে তীব্র ঘৃণাও করিস। তাই। এটা খুব মারাত্মক, জানিস?
-মানে?
-মানে তুই একই সাথে অভিক কে ভালো ও বাসিস আবার ঘৃণাও করিস। তুই এক কাজ কর ওকে ঘৃণা করা টা ছেড়ে দে।
-সেটা কীভাবে করবো?
রাস্তায় অভিকের সাথে মিলার দেখা। অন্য সময় অভিক কে দেখলে মিলা না দেখার ভান করে চলে যেত। তাই আজ অভিক নিজেই মিলা কে না দেখে চলেযাচ্ছিলো। কিন্তু মিলা নিজেই আজ অভিক কে ডাকলো।
-ওই অভিক অভিক থেমে গেল। মিলা পেছন থেকে দ্রুত হেঁটে এসে বলল
-কি ব্যাপার শুনতে পারছিস না যে ডাকছি।
মিলা আর অভিক বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। একে অপরকে তুই বলেই ডাকতো। কিন্তু রিলেশনে যাওয়ার পর থেকে তুমি করেই ডাকতো। আজ মিলার মুখ থেকে আবার সেই তুই ডাক টা শুনে কিছুটা অবাক ই হলো অভিক।
-তুমি..মানে তুই..
-কি তুমি তুই করছিস?? তুই করে বল আমাকে। কেমন আছিস?
-ভালো। তুই কেমন আছিস?
-ভালো। শোন আমার সাথে একটু চল তো।
-আমি! কোথায় যাব?
-আমার কিছু কেনাকাটা করা লাগবে। তুই আমার সাথে যাবি। অভিক একটু ইতস্তত করে বলল
-আমার তো একটা কাজ ছিল। মিলা বলল
-রাখ তো তোর কাজ। এখন আমার সাথে চল।
মিলা আগের মত করেই অভিক কে জোর করেই সাথে নিয়ে গেল। আগেও যখন ওর সাথে কোথাও যেতে চাইতো না তখন জোর করে নিয়ে যেত। মিলাকে যেন অভিক আজকে চিনতে পারছে না। অভিক নিজেই মিলার সাথে ব্রেকাপ করেছিল। রিলেশনের একটা পর্যায়ে এসে মনে হয়েছিল মিলার সাথে ওর যাচ্ছে না। কিন্তু এর জন্য অভিকের অনেক অপরাধ বোধ টাও ছিল। সেজন্য ও অনেক বার মিলার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল, স্যরিও বলেছিল কিন্তু মিলা কোন যোগাযোগ করেনি। রাতে মিলার ফোন কল। ১ বছর পর মিলার ফোন কল। অভিক কল টা রিসিভ করলো।
-হ্যালো
-ওই বারান্দায় আয়।
-বারান্দায়?? কেন?
-আরে আয় তো।
অভিক ফোন টা কানে নিয়েই বাইরে বের হলো। নিচের দিকে তাকাতেই দেখল মিলা হাতে অনেক গুলি বেলুন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেলুনের প্রত্যেকটিতে হ্যাপি বার্থডে লেখা। অভিক নিজেই নিজের বার্থডে ভুলে গেছে। মিলা ফোনে বলল
– শুভ জন্মদিন অভিক।
অভিক এতটাই অবাক হয়ে গেল যে ধন্যবাদ জানাতেই ভুলে গেল। মিলা ফোন টা কেটে দিয়ে আবার নিজের বাসার দিকে রওনা দিল। এত রাতে মেয়েটা রাস্তায় একা বের হয়েছে। এই মেয়েটার ভয়ডর আগের থেকেই কম। অভিক ভাবতে লাগলো ঠিক একই ভাবে দুই বছর আগে মিলা অভিক কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। মিলা কি আবার রিলেশন টা ঠিক করতে চাইছে?? ও এমন আচরণ কেন করছে? অভিক ভেবেও কোনো কূলকিনারা খুঁজে পেল না।
মিলার ব্যবহার ঠিক আগের মত হয়ে গেছে। এমনকি ক্লাসে গিয়ে অভিকের পাশেও বসছে। অভিক নিজে থেকে খুব একটা কথা বলছে না। মিলা নিজেই অভিকের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। অভিক হা হু করে উত্তর দিচ্ছে। একটা সময় অভিক নিজেও মিলার সাথে কথা বলা শুরু করলো। মাঝখানের কতগুলি দিন যেন ওরা দুইজনেই ভুলে গিয়েছে। ছুটির সময় মিলা অভিক কে দাঁড়াতে বলল। ক্লাস শেষ করে দুইজনে একসাথে ফুটপাত ধরে হাঁটছে। রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। মিলা বলল
-তোর নতুন গফ কেমন আছে?
-ইয়ে মানে…
-আচ্ছা বাদ দে এসব।
-তোকে একটা কথা বলবো?
-হ্যা বল।
-তুই কি আবার রিলেশন টা কন্টিনিউ করতে চাচ্ছিস? হঠাৎ করে তুই আগের মত ব্যবহার করছিস। মিলা হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে বলল
-তোর সাথে রিলেশন!! জানিস আমাদের ব্রেকাপের পরও আমি তোকে ভুলতে পারছিলাম না। কেন বল তো?
-আমাকে তুই ভালো…
-একদম না। আমি তোকে ঘৃণা করতে লাগলাম।
প্রচন্দ ঘৃণা। এত টা ঘৃণা কাউকে আমি করিনি। আভা বলল আমি যদি তোকে ঘৃণা করাটা ছেড়ে দিতে পারি তাহলেই নাকি আমি তোকে ভুলতে পারবো। আর তাই তোকে ঘৃণা করাটা ছেড়ে দিতে শুরু করলাম। আগের মত কথা বলতে লাগলাম।
-আমার প্রতি তোর ঘৃণা টা কমেছে? মিলা হেসে বলল
-নাহ। তোর প্রতি আমার ঘৃণা টা আরো বেড়েছে।
আর সেটা এতটাই বেড়েছে যে আমি তোকে একটা চলন্ত গাড়ির নিচে ফেলে দিতেও দুই বার ভাববো না। কথা টা শেষ হতে না হতেই মিলা অভিক কে একটা ধাক্কা দিয়ে ফুটপাত থেকে রাস্তার দিকে ফেলে দিলো। আচমকা এমনটা ঘটে যাওয়ার জন্য অভিক ও নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি। সামনে থেকে আসা চলন্ত বাস এসে অভিক কে ধাক্কা মারলো। রাস্তায় অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। মিলা রাস্তায় পড়ে থাকা অভিকের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
-তোর প্রতি ঘৃণা টা আমার কোনোদিন যাবে না। তোকে ভুলাটাও বোধহয় আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। অভিক মিলার দিকে চেয়ে রইলো। জ্ঞান হারাবার আগে অভিক শুনতে পারলো মিলা আম্বুলেন্স আম্বুলেন্স বলে চেঁচাচ্ছে।