অভি আর অনুর সংসারের বয়স বছর পাঁচেক। তাদের সংসার আলো করে আছে তিন বছরের ফুটফুটে একটি ছেলে। অভি সেই সকালে অফিস যায় ফেরে রাতে। সারাদিন অনু বাসায় ছেলেকে নিয়ে মেতে থাকে। অভি সারাদিন অফিস করে এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। অভি অনুর একাকীত্ব বা চাওয়া গুলো বুঝার তেমন প্রয়োজন মনে করে না। কেমন যেন উদাসীন অনুর প্রতি। অভি যে অন্য নারীতে আসক্ত তাও কিন্তু না। অভির স্বভাবটাই এমন… যে ঘরের বৌ ঘরে থাকবে, রান্না বান্না করবে, সংসার সামলাবে আর স্বামীর প্রয়োজন মেটাবে। এর বাইরেও যে একটা জীবন আছে তা বুঝতে রাজী নয় অভি।
নিজে কোন আত্মীয়ের সাথে মেশে না। কোন অনুষ্ঠানে যায় না তবে ছুটির দিনগুলোতে বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকে।
এদিকে অনুকেও বিয়ের পর তার আর কোন আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে দেয় না। কারো বাসায় বেড়াতে যেতে দেয় না। সংসার নামক চারদেয়ালের মাঝে বন্ধী করে রেখেছে। সাথের বান্ধবীদের স্বামী নিয়ে ঘুরতে যাওয়া বা রেষ্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার কাপল রোমান্টিক ছবিগুলো যখন ফেসবুকে দেখে বুকের গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে অনুর। অনু নিজেকে একা ভাবতে থাকে। তার সুখ – দুঃখ গুলো শেয়ার করার মত কাউকে খুঁজে বেড়ায়। অনুর একাকীত্ব অনুকে নেটে আসক্ত করে। সময়ে অসময়ে ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। একদিন… ফেসবুকে পরিচিত হয় তার পূর্ব পরিচিত এক ছেলের সাথে। ছেলেটির নাম ইভান।
কথা বলতে বলতে একজন আরেকজনের ভালোলাগা, মন্দলাগা জানতে জানতে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে দুইজনের। ভালো লেগে যায় একে অপরকে। অনুর একাকীত্বে ভাগ বসায় ইভান। একে অপরের মনের আবেগ অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে থাকে দুইজন দুইজনের কাছে। অনু তার স্বামীর সব কথাই ইভানকে জানায়। ইভান অনেক রকম কথা বলে দুষ্টুমি করতে থাকে অনুর সাথে। তাদের দুইজনের সম্পর্কটা এমন এক পর্যায়ে গড়ায়… যখন তখন একে অন্যকে মেসেজ করতে থাকে। কখন কি ঘটলো তা নিয়ে মজা করা। কে কি খেলো সব একে অন্যকে জানানো চাই।
ইভানের অনুর প্রতি যথেষ্ট কেয়ারনেস অনুকে ইভানের উপর নির্ভর শীল করে তুললো। কিছুক্ষণ কথা না হলেই অনু অস্থির হয়ে উঠে। ইভান ও ঠিক তেমনি। অনু আর ইভানের মাঝে গড়ে উঠে নামহীন একটা সম্পর্ক। তা বন্ধুত্ব ছিলো না। বন্ধুর চাইতেও বেশী কিছু। তবে কি তা প্রেম নাকি ভালোবাসা? এর কোন নাম অনুর জানা ছিলো না। শুধু জেনেছিলো…. ভুল সময়েও মানুষ একবার প্রেমে পড়ে। এমন একজনকে ভালোবেসে ফেলে যাকে জীবনে পাওয়ার কোন আশাই নেই। তদের দুইজনের সম্পর্কের টানটা এতো তীব্র ছিলো যে… সম্পর্কের টানে একে অপরের কাছে ছুটে যায়। অনু ইভানকে ছাড়া এক মুহুর্ত ও ভাবতে পারে না। ইভানকে ছাড়া তার দম বন্ধ হয়ে আসে।
এ কোন নিষিদ্ধ ভালোবাসা। যার টানে স্বামী সংসার ছেড়ে দিতেও মন সায় দেয়। অভির অগোচরে.. অনু আর ইভানের সম্পর্ক চলতে থাকে। সংসারের প্রতি উদাসীনতা, অনীহা এসে যায় অনুর। সারাক্ষণ ইভানের ভাবনা তাকে আষ্টে পিষ্টে বেঁধে রাখে। একদিন ইভানের সাথে কথা না হলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভি রাতে কাছে আসতে চাইলে বিরক্তিপ্রকাশ করে তাকে দূরে ঠেলে দেয়। অনু সিদ্ধান্ত নেয়। স্বামীকে এভাবে না ঠকিয়ে সে অভিকে ডিভোর্স দিয়ে ইভানকে বিয়ে করবে। তার আগে ইভানের সাথে কথা বলাটা জরুরী। অনু.. ইভানকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ইভান যেন আকাশ থেকে পড়ে। ইভানের আসল রুপটা বেরিয়ে আসে নিমিষেই। কি পাগলের প্রলাপ বকছো অনু।
অনুঃ ঠিক ই তো বলছি। এভাবে আরেকজনের সংসারে থেকে তাকে ঠকিয়ে তোমার সাথে সম্পর্ক না রেখে আসো আমরা বিয়ে করে নিই।
ইভানঃ তা কখনোই সম্ভব নয় অনু। কেন সম্ভব নয়? তুমি একজন বিবাহিতা আর সন্তানের মা। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমার পরিবার মেনে নিবে না।
আর সমাজের লোকে নানা কথা বলবে।
অনুঃ যখন সম্পর্ক করেছিলে তখন মনে ছিলো না তোমার পরিবার আর সমাজের কথা আর জানতে না আমি বিবাহিতা আর আমার সন্তান আছে? তবে কেন সম্পর্কে জড়িয়েছিলে?
ইভানঃ এতো কথা জানি না। সম্পর্ক হয়ে যায়। এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। আর কোন প্রশ্নের রিপ্লাই দেয় না ইভান। অনু ভেঙ্গে পড়ে। সে কি করে এতো বড় ভুল করলো। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। এই সংসারে কিসের অভাব রেখেছে অভি। কেন সে অভিকে ঠকালো। নিজে নিজেই অনুশোচনা করতে থাকে। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা চাইতে থাকে আল্লাহর দরবারে। অনু শকড কিছুটা কাটিয়ে উঠে। ফেসবুক ডিএক্টিভ করে দেয়। মেসেঞ্জার, ইমু,ভাইভার সব ডিলেট করে দিয়ে সংসারে মনোযোগী হয়। ইভানের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নেয়। এতে অনেক কষ্ট হয় এবং প্রচুর সময় ও লাগে। কিন্তু একসময় সে সফল ও হয়।
তার এই গোপন অপ্রকাশ্য নিষিদ্ধ প্রেম কখনো প্রকাশ পেতো না যদি না ইভান আবার ঝামেলা শুরু করতো।
কিছুদিন পর… ইভান অনুর ফোনে ফোন দেয়। অনু স্পষ্ট জানিয়ে দেয়… তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ। সবকিছু ভুলে যাও। তাতে দুইজনের ই মঙ্গল। কিন্তু ইভান তা মেনে নেয় না। অনুকে হুমকি দেয় তার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করতে। তা না হলে ইভানকে তাদের সম্পর্কের কথা সব জানিয়ে দিবে। তার কাছে অনুর ভিডিও ক্লিপ আছে তা অভির কাছে পাঠিয়ে দিবে। অনু এবারো শকড। কিভাবে মানুষ এতো নীচ হতে পারে। ভয় পায় অনু তবে ভেঙ্গে পড়ে না। ভিডিও এর কথা বিশ্বাস করে না অনু। তার মনে সাহস ছিলো যে… এমন কিছুই সে ইভানের সাথে করে নি। অনুর সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে অজানা আতঙ্কে।
তবুও সে দমে না। মনে মনে ভেবে নেয় এভাবে সবসময় ইভান ব্ল্যাকমেইল করতেই থাকবে। তারচেয়ে অভির সব জানা দরকার। ভয় নিয়ে বেঁচে থাকা মানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করা। অভি সব জানুক। তাতে যদি তার সংসার ভেঙ্গে যায় তাতেও কোন আপত্তি নেই অনুর। অনু পাপ করেছে তাকে তো তার প্রায়চিত্ত করতেই হবে। অনু মেসেজগুলো আজ আর ডিলেট করে না। অভি অফিস থেকে বাসায় ফেরে। অনুকে কেমন যেন দেখাচ্ছে। অনু ব্যাগ গুছাচ্ছে। কি ব্যাপার অনু ব্যাগ কেন গুছাচ্ছো? কোথায় যাবে। অনু কোন জবাব দেয় না। অনু রান্না ঘরে গিয়ে রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে ইভান একের পর এক মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে অনুকে। এবার সে অনুর ফোনে অনুর ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে দেয়। পরে অনু সেই ভিডিওতে দেখে যে… একদিন অনু ইভানের সাথে দেখা করতে তার বাসায় গিয়েছিলো তখন ইভান অনুকে কোল্ড ড্রিংকস খেতে দিয়েছিলো। সেই কোল্ড ড্রিংকসে ইভান ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে অনুকে অচেতন করে ভোগ করেছিলো। অনুর কাছে সব অবিশ্বাস্য মনে হয়। কি করে মানুষ এতোটা জঘন্য হতে পারে। সাথে অনুর সাথে চ্যাটিং করা সমস্ত ম্যাসেজও পাঠায়। অনু তখন রান্নাঘরে। অভি অনুর ফোন হাতে নেয়। কিছুই আর জানতে বাকী থাকে না অভির। অনু রান্নাঘরে খাবার তৈরি করতে করতে চোখের জল অনবরত গড়িয়ে পড়ছে। কখন যে অভি পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে টের ও পায় নি অনু। এসব কি অনু? সব কি সত্যি?
আমি মিথ্যে বলবো না অভি। একসময় ইভানের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো তার জন্য আমি অনুতপ্ত। তবে তুমি যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাই মেনে নিতে রাজী আছি। আমি সকালে উঠেই চলে যাব। এ মুখ আর কখনো তোমাকে দেখাবো না। রাতে দুইজনের কেউ কিছু খায় না। সারারাত ঘুমাতে পারেনা অভি। জেগে বসে থাকে। অনুটা কাঁদতেই থাকে অনবরত। রাতটাও যেন দীর্ঘ। কিছুতেই আজ ফুরোচ্ছে না। অভি অনুকে সব বুঝিয়ে দেয়। সকালে অভি বেরিয়ে যায়। অনু ইভানকে ফোন দেয় বাসায় আসতে। ইভান খুশীতে লাফাতে লাফাতে অনুর বাসায় আসে। এদিকে অভিও পুলিশ নিয়ে হাজির হয়। ইভানকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। অভি অনুকে বুকে জড়িয়ে নেয়। তোমায় আমি ক্ষমা করে দিয়েছি অনু।
যে তার ভুল বুঝতে পারে এবং নিজেই অনুতপ্ত হয় তাকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন। আর ইভানকে পুলিশে দেয়ার কারণ..সে যেন তোমাকে আর কখনো ব্ল্যাকমেইল না করতে পারে। জেলে গিয়ে শুধরে আসুক। এরপর থেকে…. এখন অভি অনুকে সময় দেয়, ঘুরতে নিয়ে যায়।মন খুলে দুইজনে গল্প করে। অভিও মনে মনে ভাবে… আমার উদাসীনতাও হয়তো কিছুটা দায়ী ছিলো অনুর অন্যায়ের পেছনে। সে আগের চেয়ে বেশী সময় দিতে থাকে সংসারে। এমনি একদিন… অনু জানতে চায় অভি কেন তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো? আমি অনেক বড় ভুল করেছি।
অভিঃ আর কখনো এসব কথা মুখে আনবে না।সব ভুলে যাও। তুমি আমার স্ত্রী। আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি আমার সন্তানের মা। আজ থেকে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলো যেন নিজের সন্তানের কাছে আদর্শ মা হতে পারো। অনু অভির দিকে তাকিয়ে ভাবে… মানুষ কি করে এতোটা ভালো হতে পারে।