এযুগে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকা যেখানে একটা ফ্যাশান। সেখানে “সিংগেল-থাকা” ছিলো ‘হৃদয়ের ফ্যাশান। গায়ে না জড়ানো এক অসাধারন ছেলে। প্রেম-ভালবাসার ‘বিরোধিতা’ না হলেও.. এগুলো থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতো। কারণ
এযুগের প্রেম-পিরিতি,..লিটনের ফ্লাটে যেয়ে… ইত্যাদি! 😛 এসব প্রতিনিয়ত চোখে পরতো তার। তাই সে প্রেম-ভালবাসা থেকে সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখতো।
.
কিন্তু সব ভালোবাসাই যে এক নয়। সেটা প্রমান করতে’ই.. যেনো হৃদয়ের জীবনে আগমন ঘটল ‘ঐশীর
.
খুব’ই দুষ্ট মেয়ে ঐশী। যার তার সাথে খুব সহজে ভাব জমিয়ে ফেলতে পারে। দেখতেও ছিলো পরীর মতো। আর তার হাসিটা ছিলো অনেকটা ‘খুনে’ হাসি..
.
একটা ছেলের সামনে এই ‘খুনে’ হাসি দিলে ছেলের মনে আগুন ধরতে বাধ্য!!। <3এইসব খুনে হাসির মেয়ে গুলো কেনো যেনোও হাসেও প্রচুর 🙂
.
_
হৃদয়ের ছোট মামার’ বড় ছেলে ‘আবির ভাইয়ের বিয়েতে.. ‘হৃদয় আর ঐশীর পরিচয় হয়।
.
হৃদয় বিেয়র ২/১দিন আগেই নানু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়িতে উৎসবের আমেজ। চারিদিকে হৈ-হুল্লোড়, সাজ-গোজ।
.
রাতে হৃদয় এবং তার সব কাজিন’রা মিলে খেলতে বসে গেলো। খেলার নিয়মঃ একটি ঝুড়িতে আলাদা-আলাদা কাগজে সবার নাম লেখা থাকবে। প্রত্যেককেই একটি কাগজ তুলতে হবে। আর কাগজে যার নাম উঠবে তাকে সে নাচ, গান, কৌতুক, জিজ্ঞেস করতে পারবে।
কিছুক্ষন পর ঐশীও খেলায় যোগ দিল। হৃদয় তাকিয়ে দেখলো ‘বেশ মায়াকারা চেহারা, কাজলটানা মায়াবী চোখের, কিউট একটা মেয়ে এসে.. তাদের সাথে খেলতে বসলো।।
.
সো খেলা চলছে, সবাই খুব ইনজয় করছে। খেলার মাঝে হৃদয় বারবার আড় চোখে শুধু ঐশীকে দেখছিল। হটাৎ তখনি কাগজে মধ্যে হৃদয়ের নাম উঠল, এবং তাকে একটি কৌতুক শোনানোর জন্য বলা হল। হৃদয় চরম হাসির একটা কৌতুক বলল। সেই কৌতুক শুনে ঐশীতো হাসতে হাসতেই খুন। আর ঐশীর সেই হাসি’তে মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো হৃদয়। তার কাছে পৃথিবী তুচ্ছ মনে হচ্ছে। এই হাসি দেখার জন্য,, ‘সারাজীবন কারো জোকার হয়ে থাকলেও… জীবনটা হয়তো বৃথা যাবে না। 🙂
↑
সেদিন’ই প্রথম হৃদয়ের সর্বনাশ হয়েছিলো। সর্বনাশ হয়েছিলো বলছি কারণ, ‘হৃদয়, ঐশীর ঐ খুনে হাসির কবলে সেদিন’ই পড়েছিলো। <3
.
.
তারপর হৃদয় জানতে পারলো, মেয়েটি ‘আবির ভাইয়ার মামাতো বোন। নাম ঐশী, বয়সে হৃদয়ের থেকে দু-তিন বছরের ছোট।
.
.
পরদিন সকাল সকাল..
হৃদয়ের আম্মু তাকে কিছু টাকা দিয়ে দোকান থেকে কিছু গোলাপ কিনে নিয়ে আসতে বললো। হৃদয় বাধ্য ছেলের মতো দোকান থেকে গোলাপ কিনে আনলো, তারপর হৃদয়কে তার আবির ভাইয়া বলল..
-হৃদয় গোলাপ গুলো নিয়ে ঐশীকে দিয়ে আসো, ও ফুলের দায়িত্বে আছে…..
.
হৃদয় সাধারণত মেয়েদের সাথে খুব কম’ই কথা বলতো। তাই গোলাপ গুলো কিভাবে দিবে তা ভেবে পারছিলো না। ঘরে সামনে যেয়ে দেখতে পেলো ‘ঐশী ব্যাটালিয়ান বাহিনীদের নিয়ে বাসরঘর সাজাচ্ছে।
যদিওবা হৃদয় ঐশীকে চিনে, তবুও রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে একটু ভাব নিয়ে বলল…
– excuse me.. এখানে ঐশী কে?
ঐ ব্যাটালিয়ান বাহিনীর মাঝখান থেকে এক পিচ্চি ব্যাটালিয়ান বলে উঠল..
– জি আমি’ই ঐশী। কিছু বলবেন?
.
যেহেতু হৃদয় চিনতো ঐশী কে, তাই সে বলল..
– তুমি তো ঐশী না।(ঐশী দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে বললো) ও ঐশী না???
.
হঠাৎ আরেকটা পিচ্চি ব্যাটালিয়ান বলে উঠল..
-আরে বুঝোস না! হৃদয় ভাইয়া ঐশী আপুকে ফুলগুলো দিতে লজ্জা পাচ্ছিলো, তাই তার নার্ভাসনেস ঢাকতে এই খেলাটা খেলেছে। 😉
.
পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবই দেখছিল ঐশী। দ্বিতীয় পিচ্চীটার কথা শুনে ঐশী আর না হেসে পারলো না…..
“কোন হাসি জানেন?
তার ঐ কুখ্যাত ‘খুনে’ হাসি….. 😉
এই ভুবন ভোলানো হাসি দেখে। হৃদয় আবারো অপলক দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে রইলো, আর মনে মনে ভাবলো.. এত নিষ্পাপ ও কি হয় মানুষের হাসি!! 🙂
.
.
অনুষ্ঠান শেষ হলো।
সবাই যে যার মতো চলে গেলো। ঐশীও চলে গেলো। তবে রেখে গেলো তার হাসির সেই ক্ষুরধার আচড় হৃদয়ের বুকে। হৃদয় অনেক চেষ্টা করলো ঐশীর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে, তবে সে তা পারলো না। হৃদয় অনুভব করতে পারল ঐশীকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। <3
.
তারপর হৃদয় তার ‘আবির ভাইয়ের’ ফোন থেকে ঐশীর নাম্বারটা নিলো এবং ঠিক রাত ১২টায় কল দিলো। ঐশী তখন মোবাইলে তার ছবি ইডেটিং করতে ব্যস্ত। 😛রিং বাজার সাথে সাথে ঐশী ফোন রিসিভ করলো।
– হ্যালো কে?(ঐশী)
.
– হ্য,,হ্যা,,হ্যালো আমি বলছি(কাপাকাপা কন্ঠে বলল হৃদয়)
.
– আমি মানেহ্!! >:O কে আপনি! এতরাতে কেন ফোন দিয়েছেন?(ঝাড়ি দিয়ে বলল)
.
– আপনি এভাবে কথা বলেন কেনো?
আপনাকে দেখলে তো এমন মনে হয়
না 🙁
.
– আপনার হাত দেখলে কি আপনি বলতে পারবেন আপনার দেহে কতটা জীবাণু আছে, কত কোটি ব্যাকটেরিয়া আছে? যাই হোক, কে আপনি, কেনো ফোন দিয়েছেন।
.
– আমি ফুলওয়ালা।
.
– ফুলওয়ালা মানেহ্??? -_-
.
– ঐ যে.. ফুলওয়ালা। ‘আবির ভাইয়ের বিয়ের দিন! গোলাপ ফুলওয়ালা??
.
– ওওও.. আচ্ছা হৃদয় ভাইয়া আপনি?
.
-জি তাই তো মনে হচ্ছে। ^_^ কেমন আছো?
.
– এই তো ভালোই। আপনি?
.
– ভালো থাকার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেনো যেন ভালো থাকতে পারছি না। কিছু একটা নাই নাই মনে হচ্ছে। কি যেনো হারিয়ে ফেলেছি।
.
– হুমম.. পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি.. 😉
_
↑
এভাবেই শুরু হয়েছিল তাদের কথা বলার ট্রেন। এভাবেই চলছিলো তাদের সম্পর্কটা। মাঝে কয়েকদিন তারা দেখাও করে। আস্তে আস্তে করে তাদের সম্পর্কটা অনেক গভীর হয়, এবং ভালোবাসায় রূপ নেয়।
.
হৃদয় আর ঐশীর বিষয়টা “আবির ভাইয়া জানতো। তবুও তাদের বাধা দিতো না। বরং হৃদয়কে আরো সাপোর্ট করতো।
.
.
কিছুদিন পর ঐশীর জন্ডিস ধরা পড়লো। ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ ,আর ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করলো ডাক্তার। তবে প্রেম কি ডাক্তারের কথা মানে???
.
হৃদয় তার আবির ভাইকে বললো সে ঐশীর সাথে দেখা করতে চায়। আবির ভাই তাদের সাহায্য করল..
হৃদয়কে কোন একটা কারনে ঐশীদের বাসায় পাঠিয়ে দিলো। তবে মূল কারণ’টা ছিলো ‘হৃদয় আর ঐশী। 😉
.
বাসায় থাকতে থাকতে একঘেয়েমি ধরে গিয়েছিলো ঐশীর। তবে হৃদয়কে দেখে সে আবার আগের মতো হয়ে উঠলো। ঐশীর বাবা-মা.. হৃদয় আর ঐশীর বিষয়টা আচ করতে পারলো। যেহেতু তারা যথেষ্ট বড় হয়েছে এবং হৃদয়ও চেনা জানা তাই বিষয়টাকে নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামালো না।
.
.
হৃদয় বাইক দিয়ে চলাচল করত। ঐশীদের বাসা থেকে ফেরার সময়, ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো ঐশী। হৃদয় বারবার ঐশীর দিকে তাকাচ্ছিল। তাই বাইক স্টার্ট দেয়ার ফলেও.. স্টার্ট হচ্ছিলনা। এটা দেখে ঐশী খুব হাসতে লাগলো। আর বাইক চালু হওয়ার পরেও হৃদয় বারবার পিছনে তাকাচ্ছিল……..আর তখনি হঠাৎ…..একটি ট্রাক এসে হৃদয়কে চাপা দিয়ে গেলো……।
.
পুরো রাস্তা রক্তে রক্তাক্ত হয়ে গেলো। সেই রক্ত ছিলো.. লাল গোলাপের চেয়েও লাল।
.
.
হৃদয়কে আর শত চেষ্টা করেও বাচানো গেলো না। ঐশীর খুনে হাসিটা’ই কাল হলো হৃদয়ের…….।
.
.
ঐশীর চোখের সামনে ‘হৃদয়ের’ এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তারপর থেকে ঐশী আজও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। সারাদিন অন্ধকার ঘরে বসে থাকে আর কার সাথে যেনো কথা বলে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে তার বাবা মা। কিন্তু কোন লাভ হয় নি।
.
হৃদয়ের সাথে সাথে ঐশীর সেই ‘খুনে’ হাসিটাও সেদিন দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে।
.
.
হয়তবা হৃদয় ইচ্ছে করে ঐশীর খুনে হাসিটা নিয়ে গিয়েছে। সে হয়তো মৃত্যুর পরেও এ হাসির দ্বারা বার বার মৃত্যুবরণ করতে চায়…. 🙂