আমি– আমার মেয়েটা কি করে??
মায়া– আমার ছেলেটা বসে আছে!!
আমি– ছেলে কোথায় পেলে??
মায়া– ছেলেই তো আমাদের!!
আমি– জ্বী না!! আমাদের মেয়ে হবে!!
মায়া– এ্যাঁ বললেই হলো! ছেলেই হবে…..
আমি– ছেলের বাবা তো আমি তাই আমি জানি মেয়ে হবে…
মায়া– আমি বুঝি মা নয়?? যেহেতু ও আমার ভেতর থাকবে তাই আমি জানি ও ছেলে হবে…
আমি– বেশিবেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু…
মায়া– যতকিছু হোক আমাদের ছেলেই হবে ব্যাচ…..
——
উপরে কথা হচ্ছিল আমার গফ মায়ার সাথে… মায়া আমার এক ইয়ার সিনিয়র!!
মেয়েটা এতটা মিষ্টি করে কথা বলতে পারে না শুনলে বুঝবেননা!! তারউপর বেশ ঢং করে কথা বলে!!
আমি মেঘ এবার অনার্স ভতি হয়েছি!! ফেবুতে আমার গল্প পড়ে মায়া তারপর বন্ধুত্ব মায়াও ভাল কবিতা লেখে!!
তারপর আমাদের ভালোবাসার শুরু একটু একটু করে…..
—
একদিন মায়া আমাকে বললঃ
মায়া– আচ্ছা তুমি সবসময় মেয়ে মেয়ে করো কেন???
আমি– বাসায় আমি আর ভাইয়া! ভাইয়া সবসময় জবের জন্য
ঢাকা আমি থাকিনা বাসায়! আম্মু সবসময় একা!! তাই আমি তখন থেকেই ভেবেছি আমাদের মেয়ে হবে যদি কখনো প্রেম করে বিয়ে করি….
মায়া– কেন আমি কি বিয়ের পর আম্মুর সাথে থাকবোনা?? নাকি আমাকে রাখতে চাওনা??
আমি– আরে কাদেনা কাদেনা!! আমি কি সেসব বলেছি নাকি!!
মায়া– আমি এতকিছু জানিনা! আমি শুধু জানি আমার একটা দুষ্টুমিষ্টি ছেলে হবে! সবসময় আমাকে আম্মু আম্মু ডাকবে….
হেয়ার কাটিং দিবো দারুণ করে! তারপর বাইক কিনে দিবো আমি! দামি স্মার্টফোন তো আছেই….
আমি– স্বপ্ন যেন স্বপ্ন হয়েই থাকে… আমার মেয়ে হলে তার চুলগুলো অনেক বড় রাখবো! আমার মেয়ের চুল দেখে সবায় ভিম্রি খাবে!!
মেয়ের সুন্দর মিষ্টি মুচকি হাসিটা হবে আমার মতো!!
মায়া— এসব বললে কিন্তু রাগ করব….
আমি– করলে করো!! তবুও আমি মেয়েই চাই!!!
——
আমার মিষ্টি পাগলি মায়া কিন্তু দেখতে খুব সুন্দরি!! আমি বলি মোটামুটি না হলে বেশি ভাব নেবে!
সিনিয়র মেয়ের সাথে আমার কোপালের রেখা খুব কাজ করে! তাই সিনিয়র মেয়েই বিয়ে করব ভেবেছিলাম.. একদিনঃ
আমি– মায়া তুমি একটু বেড় হবে? দেখতে ইচ্ছা করছে খুব!!
মায়া– হুম! তুমি পার্কে আস আমি যাচ্ছি….
–
বাহ আজকে তো তোমার অনেক সুন্দরি লাগছে! আচ্ছা জানু তোমার যদি একটা মিষ্টি মেয়ে সবসময় আম্মু আম্মু ডাকে!
তোমার ভাল লাগবেনা বলো??
মায়া– কি জানি! তবে ছেলে তোমার সাথে হাটবে আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে আম্মু ডাকলে আমার খুব ভাল লাগবে!!
আমি– ধ্যাত! কিসের মধ্যে কি!! বলছি মেয়ের কথা উনি আছে ছেলে নিয়ে!! তুমি ছেলে হতে পারোনাই বলে কি ছেলে আশা করো??
মায়া— একদম নাহ…. বরং তুমিই মেয়ে মেয়ে করো!! আমি একটা মেয়ে আমি জানি মেয়ে হবার যন্ত্রনা টা কি….
আমি– তা তো জানবাই!! সারাদেশে তুমি তো প্রেম করেছ জানবা না???
মায়া– করেছি?? আরও দ্বিগুণ করব তবুও আমার ছেলেই চায়…
আমি– খুদা লাগছে খুব বেশি কথা বললে তোমাকেই খেয়ে ফেলবো!! চলো খেয়েনি….
——-
রাতে আমি তখন আর বাজে কতো ৩ টা মতো হবে! আমি ঘুমিয়েই ছিলাম!! মোবাইলের শব্দে ঘুম টুক করে পালালঃ
আমি– এত রাতে কি হল??
মায়া– একটা স্বপ্ন দেখলাম! সকালে ভুলে যাব তাই ফোন করলাম জানাতে!!
আমি– আচ্ছা বলো!! ঘুমাব…
মায়া– আমি আর তুমি আর আমাদের ছেলে মিলে গেছি বন ভজনে!! তারপর আমাদের ছেলে একটা মুরগী শিকার করেছে
সেটা দিয়ে আমরা পিকনিক করেছিলাম!! হঠাৎ তোমার মেয়ে এসে সব খাবার নষ্ট করে দিলো!! তারপর আমি আমি তাকে একটা থাপ্পড় দিলাম!!
তোমার মেয়ের কান্না দেখে আমার ছেলের কি যে হাসি….
আমি— এটা কোন কথা হল?? আমার মেয়েকে মারলে?? গাধু ঐ মুরগীর মাংসে বিশ ছিল তাই আমার মেয়ে নষ্ট করেছে না
হলে তুমি আর তোমার ছেলে খেয়ে মরে যেতো!! বুঝছ কেন মেয়ের কথা বলি….
মায়া– ধ্যাত তোমার সাথে দেখি কিছুই শেয়ার করা যায়না…
_______
রাত ৩ টাই ঘুম ভাঙ্গিয়ে তার ছেলের প্রশংসা শুনাচ্ছে আমাকে!! উলটা পালটা মানুষের উদ্ভট স্বপ্ন… তারপর যখন আবার দেখা করতে এলামঃ
মায়া– আমি তোমার উপর খুব রাগ করেছি….
আমি– আমিও করেছি অনেক…
মায়া– কেন করেছো??
আমি– তুমি আমার মেয়েকে বকাঝকা কেন করছ??
মায়া– তো বকবোনা?? পড়ালেখা নাই! সবসময় টিভির রুমে কার্টুন দেখবে কেন??
আমি– সামান্য দেখলে কিছুই হবেনা! আমার মেয়ে ব্রিলিয়ান্ট সে ক্লাসে ফাষ্ট হবেই!! ও হ্যা- তোমার ছেলে সাইকেল আর
ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে সবসময় যে পরে থাকে সেদিকে চোখ আছে??
মায়া– শুনো ছেলেটা আমার তো? তাই আমি জানি ও কেমনে হবে….
আমি– মূল বিবেচনায় আসে যে আমাদের মেয়ে হওয়াই উওম।
—–*
মেয়েটি বোঝেনা কেন!! আরে বউ মেয়ে অনেককিছু পারে যা কোন ছেলে পারেনা! কই আমিও তো একটা ছেলে কিছু পেরেছি?
কিন্তু আমার মিষ্টি মেয়েটা কতকিছু পাড়বে। এসব না বুঝে আমার সামনে এক বকবক পেয়েছে!
–
আমি– তোমার শেষ কথা কি??
মায়া— জানিনা!! বলেই তো দিছি….
আমি– ওকে তাহলে বিয়ে করা থাক…
মায়া– বাহ! এই ছিল পেটেপেটে?
আমি– তুমিতো হ্যাপি তায়না??
মায়া— তুমি একটা খারাপ মানুষ!
আমি– কোন ছেলেই ভাল হয় চিনলাম নাহ!!
মায়া— আমিও তোমাকে বিয়ে করব না যাও!!
আমি– এই কারনে আর্সের ছাত্রীর সাথে প্রেম করতে নেই! কমার্স বা সাইন্স হলে এতক্ষনে বুঝে যেতে…
মায়া– কি বুঝিনি খুলে বলো……
আমি– কাঁচামাল তো আমি দিচ্ছি তাইনা?? সো আমি জানি কি পণ্য তৈরি হবে!!
মায়া– আবুল!! কোম্পানি তো আমার নাকি?? সো কিভাবে তৈরি হবে আমিই ভাল জানি…
আমি— ধুরো….
মায়া— ধ্যাত ছাতার মাথা…..
\____
মাঝেমাঝে মেজাজটায় বিগড়ে যায়! যখন মায়া বোঝেইনা!! তার প্রবলেম টা কি? আমার শর্ত মেনে নিতে??
আরে ভাই দুইটা সন্তানের যদি প্রথমটা মেয়ে হয় তাহলে পরেরটা ছেলে হোক! কিন্তু সব কেন ছেলেই হতে হবে??
যদি সমাধান না হয়! তাহলে হৃদার কথা মতো ২২টা বাবু নিবো তখন বুঝবা কেমন লাগে!! আমার কি দু’ফটা লেবুর রস! শরবত তো তুমিই বানাবে চান্দু…
—
পাশাপাশি বসে আছি দুজন! কারও মুখে কোন হাসি নেই! গম্ভির হয়ে আছি দুজন!! হাল্কা রাগে আমার সর্বাঙ্গে জ্বলাজ্বলি করছে!! কারন একটায়…..!!!
—
মায়া– চুপ থাকবে তো ডাকলে কেন??
আমি– চুপ
মায়া– কি কথা কানে যাচ্ছেনা??
আমি— কি বলবো?
মায়া– আজ কথা পালাল নাকি?
আমি– তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
মায়া– মানে কি? এত দ্রুত কেন?
আমি— আমি দেখিয়ে দিতে চায়…
মায়া— চুপ! এসব বেড বেড কথা বলতেছ কেন??
আমি– বাহ রে!! তুমিই বলো কিনা তাই বললাম!!
মায়া— আচ্ছা তুমি যেমন চাও তেমনি হবে!! আমার আর কোন কথা নেই!!
আমি– তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি খুশি হতে চায়না…
মায়া– স্বামীর সুখ মানেই স্ত্রীর সুখ তায় তুমি সুখি হলেই হল!!
আমি– বললাম তো! তোমার গোমরা মুখ সহ্য করতে পারবোনা আমি!!
মায়া– তুমি আমাকে এত ভালবাস কেন বাবু??
আমি– বাবুর আব্বু হবার জন্য…
মায়া— তুমি আমাকে বাবু ডাকো তাহলে আমাদের বাবু হলে তাকে কি ডাকবে??
আমি– এই প্রশ্নটা অনেক আগে করেছিলে! কেন ছেলের নাম ধরে ডাকবো! নাম তো ডাকার জন্য! আর তুমি তো বাবুই!!
মায়া– আমিই তো একটা বাবু! আমি আবার বাবু দিয়ে কি করব??
আমি– তাহলে আমাদের বেবি হবেনা??
মায়া– জানিনা তো! তুমি কিন্তু এখনো বেড বেড কথা বলতিছ মেঘ!!
আমি– আজব!! বাবুর কথাও তোমার কাছে বেড? তাহলে কি আমাদের বেবির প্রতি তোমার কোন আকর্ষণ বা মায়া নেই??
মায়া– আমি কি সেসব বলেছি! কিন্তু বিয়ের পর সেসব ভাববো! এখন ভাবলে তুমিই উলটা আমার উপর রাগ করবে আমি জানি!!!
আমি– মোবাইলে কথা বলা আর দেখা করার সময় আমার রাগ থাকেনা! যত রাগ হয় ফেবুতে! তুমি প্রিপারেড তো??
মায়া— না আমার কিছুটা সময় দাও…..
আমি— ৩ বছর???
মায়া– হুম হবে…….
________
মায়ার ব্যাপার সেপার আমার কাছে খু’বি ঝামেলাপূর্ণ লাগে! কারণ মায়া একজনের বাগদত্তা! তার নাম নীল…
মায়াকে তুলে এনে বিয়ে করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই! কিন্তু মায়া ওর আম্মুকে খুব ভালবাসে তায় রাজি হবেনা জানি!
কিন্তু ওর আম্মু আমার সাথে বিয়েও দেবেনা এও জানি….
একদিনঃ
মায়া— একটা কথা ছিল….
আমি– হুম বলো….
মায়া— তুমি আমাকে ভুলে যাও আর মাফ করে দিও….
আমি– মানেকি?? এসব কি বলছ তুমি??
মায়া– নীল আগামী মাসে আমাকে বিয়ে করবে!!
আমি- তাহলে আমার কি হবে??
মায়া– আমার খুব ভয় করতিছে আর কান্না আসছে….
আমি–/ আচ্ছা রাতে বলবো চিন্তা করোনা….
—
সেদিন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো! মায়া এসব কি বলছে আমাকে??? আমিকি তাহলে মায়া কে হারিয়ে ফেলব??
কিন্ত মায়াকে হারিয়ে আমি কিভাবে থাকবো?? মায়া কেন বোঝেনা এসব?? আর এর মানেই আমি মায়াকে হারাব??
মন কে শক্ত করলাম নিজেকে প্রস্তুত করলাম কারন সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না!! কিছু ভালোবাসা দূর থেকেই হয়…
আর কোন কারন থাকেনা ব্রেকাপের… মায়া চাইলেই পালাতে পাড়ি!! কিন্তু সে আসার মতো মেয়ে নাহ….
–;-
আমি— কি করো???
মায়া– শুয়ে আছি তুমি??
আমি– আছি!! আচ্ছা খেয়েছ??
মায়া– না খেতে ইচ্ছা করছেনা!!
আমি— আচ্ছা শোনো তুমি যা বলতেছিলে! যদি এমনি হয় তাহলে আজকের পর থেকে আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না!
ভাল থেকো! আর তুমিও আমার সাথে কথা বলোনা! কারন তুমি বিয়ে করে সুখি হলেই আমার সুখ…. ভালবাসা মানেই বিয়ে না!
আমি তোমাকে ভালবাসি! তুমি আমাকে ভালবাস এটায় অনেক! আমার আর কিছুই চায়না… বিয়ে করে ভালবাসা কমাতে চায়না!
তুমি আমাকে দূর থেকেই ভালবাস সেটায় ভাল হবে মায়া! ভাল থেকো…..
—
কথা বলতে পারছিলাম নাহ! কান্না আসছিল! কিন্তু কি করব আমি?? জানি মায়াও কান্না করছে! কারন দুজনি দুজন কে ছাড়া থাকতে পারবোনা!!
আর মায়ার (হৃদার) কোন দোষ নেই!! কারন আমার আফসোস শেষ কিছুই আমাকে বলতে দেয়নি!
সে নিজেই নীল কে এখন অনেক ভালবাসে তার কবিতা পড়ে বুঝি!! মেয়েরা পারেও…….
—
ভাল থেকো হৃদা… আর পারলে আমার মাফ করে দিও!! ভুল কার ছিলো জানিনা!! তবুও তুমি ভাল থেকো!!
তোমার মিষ্টি কন্ঠটা প্রচুর মিস করি! প্রতিটা সেকেন্ডে মিস করি! তুমি ছাড়া আমাকে কেউ শাষন করেতোনা!
কেউ আমার খোঁজখবর নিতোনা.. থাক সেসব কথা!! তুমি আমাকে সত্যি কি ভালবেসেছিলে হৃদা হাবিবা??