যখন দেখলাম ছোট বোন একটা ছেলের বাইকে চেপে বসেছে তখন লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল আমার। বন্ধুদের সাথে বের হচ্ছিলাম বিকেলে, তখন দেখলাম ছোট বোন তৈরি হচ্ছে হয়তো কোথাও বের হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
আমিঃ কই যাচ্ছিস তুই?
বোনঃ এইতো ভাইয়া সুমাইয়ার সাথে একটু শপিং এ যাবো।
আমিঃ ওহ আচ্ছা, তুই কিছু কিনবি?
বোনঃ তুই টাকা দিলে কিছু কিনবো।
আমিঃ টাকা নাই যা সর..
বোনঃ লাগবে না যাহ।
আমি বের হয়ে নদীর তীরে এসেছি বন্ধুদের নিয়ে, কিছুক্ষণ পরে দেখলাম আমার ছোট বোন দূরে একটা ছেলের বাইকে চেপে বসতেছে। যদিও ও আমায় দেখেনি আর আমিও দেখিনি কিন্তু যখন সমির(বন্ধু) বললো “দেখ মারুফ ওইটা তোর বোন না?”
আমি তাকিয়ে দেখলাম হ্যাঁ ওইটা আমার ছোট বোন সিমি! ওদের সামনে তখন লজ্জায় দাড়াতে পারছিলাম না। ওরা তো সাথে সাথে ওই ছেলেরে ধরবে বলে যেতে নিয়েছিলো বাইক নিয়ে কিন্তু বাধ সাজলাম আমিই কারণ ছেলেটা তো আর জোর করে উঠায়নি আমার বোনকে। বরং আমার বোন উঠেছে ওর বাইকে তো এইখানে কিছু বলতে গেলে আরও লজ্জা পেতে হবে।
কিছুক্ষণ বন্ধুদের সাথে থেকে চলে এসেছিলাম আমি কারণ ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আগের মতো মাথা উঁচু করে কথা বলতে সক্ষম ছিলাম না। বলবোই বা কিভাবে! ওরা সবাই আমার বোনকে খুব ভালভাবেই জানে যে সিমি খুব ভদ্র একটা মেয়ে আর আমিও ওইভাবেই ওদের সামনে বোনের জন্য সুনাম অর্জন করতাম। আজ যেনো সব কিছুই পাল্টে গেলো নিমিষেই। তাই আমি সোজা বাসায় চলে এলাম আর এসে ঘরে যাইনি, ছাদে এসে বসে আছি। যেমন রাগ হচ্ছে তেমনি হচ্ছে কষ্ট কিন্তু কমানোর কোনো উপায় খুজে পাচ্ছিলাম না যে কি করবো আমি! ঠিক রাত সাড়ে সাতটায় বাসায় ফেরেছে সিমি। খুব হাসিমুখেই আছে সে, আমি বাসার কাউকে ওর কথা বলিনি আর প্রতিদিনের মতো ওর সাথে ব্যবহার করেছি ওরেও বলিনি যে আমি দেখেছি। দেখতে চেয়েছি যে কি হয় এখনই যদি ওরে বলি তাইলে ও গোপন ভাবে কিনা সামনে আগাতে থাকে আর তখন তো অজান্তেই কিছু অঘটন ও হতে পারে তাই চুপিচুপি বিষয়টা নিয়ে সামনে আগাতে চাইতেছি আমি।
বোনঃ ভাইয়া তোর কাছে ৩০০ টাকা হবে?
আমিঃ এই সকালে টাকা চাইতে আসলি কই দিয়া ফকিন্নি! ঘুমটা দিলি শেষ কইরা আমার।
বোনঃ আরে দে না ভাইয়া আমার একটু লাগবে জরুরি।
আমিঃ ওইখানে ওয়ালেট আছে যা নিয়ে নে কিন্তু বেশি যদি নাও তাইলে পরে আর পাবি না। টাকাটা নিয়েই,
বোনঃ এইটার জন্যই সকাল সকাল তোর ঝাড়ি শুনতে হল নয়তো তরে বুঝাইতাম ফকিন্নি কে!
আমিঃ দাড়া তুই দিচ্ছি টাকা।
বলতেই দৌড়ে পালালো সিমি, নিত্যদিনের কত এমন ঘটনা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন আবার শুয়ে ঘুমিয়ে পরতাম কিন্তু আজ পারছি না। মনের ভিতর থেকে একটা প্রশ্ন জাগছে, “সিমি কি এখন ওই ছেলের সাথে বের হবে?” আর পারিনা বাসায় থাকতে। ওর তৈরি হওয়ার আগেই নিজে তৈরি হয়ে না খেয়েই নেমে পরেছি আমি।
দূর থেকে অনুসরণ করছি আমি। হ্যাঁ আজও সিমি ওই ছেলের সাথেই বের হয়েছে। রাগে আর কষ্টের মিশ্রণে এতো খারাপ অবস্থা হচ্ছিলো যে মন চাইছে গিয়ে ওরে লাগিয়ে দেই গালের উপর দুইটা! কিন্তু ওর ভবিষ্যৎ ভেবে যাইনা কারণ এসব বিষয় মানুষের হুটহাট হস্তক্ষেপ কোনো ভাবেই সহজ হয় না বরং আরও খারাপ পরিস্থিতি হয়। আজ ছেলেটার বাসার ঠিকানা জোগাড় করেছি যদি কখনো লাগে। প্রায় দিন দিন এসব দেখতে দেখতে মন মানসিকতা একদম নিচে চলে যাচ্ছে আমার। বাসায় খিটখিটে মেজাজের হয়ে উঠছি আমি আর সিমিরে তো অসহ্য লাগছিলো আমার। ওর যে কোনো কথাতেই রাগ উঠে যেতো যা ওর গায়ে হাত তোলার পর্যায় যাচ্ছিলো কিন্তু হাত তুলিনি আমি, এতো নিচে নামতে পারছি না। হিমার(আমার প্রেয়সী) সাথে যখন বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করলাম তখন ও খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলো,
হিমাঃ আমি তোমার সাথে সম্পর্কে আছি এইটা যদি ভাইয়া জানে তাইলে তার কেমন লাগবে ভেবে দেখেছো?
আমিঃ হুম বুঝতে পারছি কিন্তু দেখো সব সম্পর্কে কি আজকাল কোনো ভালবাসা আছে? এখন তো সব নোংরামিতে ভরপুর।
হিমাঃ হুম তা ঠিক। কিন্তু আমাদের মধ্যে কি নোংরামি নেই মারুফ? তোমাকে ভালবাসি এটা বুঝাতে আমার যে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে তা কি ভুলে গেলে?
আমিঃ দেখো ওইটা ওইসময়ে আমার আবেগ ছিলো ভুলবশত করে ফেলেছি কিন্তু আমারা কেউ তো কাউকে ছেড়ে যাইনি।
হিমাঃ তাইলে ওদের উপরে ভরসা রাখো কিছু হলেও ওরা আলাদা হবে না। ‘ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলাম হিমার গালে!’
আমিঃ সিমি আমার বোন। ওরে নিয়ে কোনো বাজে কথা যেনো আর না শুনি আমি।
হিমাঃ দুঃখিত তোমাকে এটা বলার জন্য। হ্যাঁ আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে যাইনি তাই বলে যা হয়েছে সেটা মোটেই ভালো ছিলো না মারুফ। আমারও বড় ভাই আছেন তারও এমনই লাগবে যেমন তোমার লেগেছে। কই তখন তো নিজের বোনের কথা ভাবলে না তাইলে এখন কি হল তোমার?
আমিঃ চুপ করো বলছি।
হিমাঃ হুম এইটাই বলবা এখন কারণ মুখ তো নেই তোমার আর কিছু বলার জন্যে। ভালবাসি বলে কত কি সহ্য করতে হয়েছে আমার তবে দোয়া করি যেনো সিমির এমন কিছু না হয়। আসছি আমি।
আমি তাকিয়ে আছি হিমার ফেলে যাওয়া পথের দিকে আর ভাবছি কিছু ভুলের শাস্তি আল্লাহ দুনিয়াতেই দিয়ে দেন। নাহ আর দেরি করলে হবে না আমার ভুলের জন্য আমার বোন কেনো শাস্তি পাবে! বসে আছি ওই ছেলের বাসায়, বললাম সব খুলে ওর পরিবারে আর তারাও বিষয়টা খুব ভালভাবেই পরখ করেছেন বটে। জানিয়েছেন তারা ওদের দুজনের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিবেন। এই আশ্বাস নিয়ে খুশি মনেই ফিরলাম বাসায় আর আম্মু আব্বুরে জানিয়ে বললাম সিমি যেনো না জানে। ভাবছি এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি না করে চাকরি নিয়ে নিবো তারপর হিমাকে ঘরে আনতে হবে নয়তো যদি মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায় তাইলে আর নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি।