ভালো আছি, ভালো থেকো

ভালো আছি, ভালো থেকো

“পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। ইনি হলেন রুদ্র শেখর, আমার অফিসের বস। আর স্যার, ও হলো মহুয়া, আমার স্ত্রী।”

আমি মিষ্টি করে হাসলাম মহুয়ার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু মহুয়ার চোয়াল বিস্ময়ে ঝুলে পড়েছে।

“রুদ্র তুমি? এত্ত দিন পর?…. তুমি আবীরের বস? অথচ অথচ….”

অথচ আমি তার প্রাক্তন প্রেমিক, এ কথাটা মহুয়ার মুখ দিয়ে বেরোল না।

আবীর সাহেবও বেশ অবাক হয়েছেন বলে মনে হলো।

“মহুয়া, তোমরা আগে থেকে পরিচিত?”

মহুয়া কিছু বলার আগেই, আমি দ্রুত বললাম-“হ্যা আবীর সাহেব, মহুয়া আমার ইউনিভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড।”

আবীর সাহেব মুক্তাঝড়া হাসি দিলেন-“রিয়েলি? দ্যাট’স আ গ্রেট সারপ্রাইজ!”

মহুয়া এখনো ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর চিন্তা আমি স্পষ্ট ধরতে পারছি। আমি একসময় বইয়ের মতো পড়তে পারতাম এই মেয়েটাকে।

মহুয়া নিশ্চয়ই ভাবছে, চার বছর আগে যে ছেলেটার সাথে দীর্ঘদিনের ভালবাসার সম্পর্ক কোন কারণ ছাড়াই এক লহমায় চুকিয়ে দিয়েছে, কাউকে না জানিয়েই বাবার পছন্দে আমেরিকা ফেরত ছেলের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে, সেই ছেলে এত দ্রুত শক কাটিয়ে এত ভাল একটা পজিশনে স্টাবলিশড হলো কি করে?

“কি ভাবছ মহুয়া?”

আবীর সাহেব তার এক কলিগের সাথে গল্প করছেন, এদিকে খেয়াল নেই। এই ফাঁকে প্রশ্নটা করলাম মহুয়াকে।

“কিছু ভাবছি না, তুমি ভালো আছো?”

“কিছু তো একটা ভাবছই!”

“আমি…আমি আসলে অবাক হচ্ছি তোমাকে দেখে। আমি ভাবতাম খুবই দুর্বল মনের ছেলে তুমি। আমি তোমাকে না জানিয়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করেছি, এই ধাক্কাটা এত দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে ধারণা ছিল না আমার। সবসময়ে এক ধরনের অপরাধবোধে ভুগতাম তোমার কথা ভেবে। অথচ তুমি দিব্যি সুখেই আছো!”

আমি মৃদু হেসে বললাম, “দেখলে তো তোমার ধারণা ভুল। আসলে তোমার যেদিন বিয়ে হলো, সেদিনই আমি স্কলারশিপ নিয়ে ডেনমার্কে পাড়ি জমাই। দু’বছর পর পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরি। তারপর ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাজটা জুটিয়ে ফেলি তোমার হ্যাজব্যান্ডের অফিসে। অবশ্য আবীর যে তোমার বর সেটা আগে জানতাম না!”

মহুয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল-

“যাক, তুমি বাঁচালে আমায়। আমি তো সবসময় তোমার কথা ভেবে ভেবে দুঃশ্চিন্তায় ভুগতাম।”

আমি আস্বস্তের হাসি হাসলাম।

দু’ঘন্টা পর। অফিস পার্টি শেষ। আবীর আর মহুয়া হাত ধরাধরি করে গাড়িতে গিয়ে উঠল। মহুয়াকে উঠিয়ে দিয়ে আবীর হেটে এল আমার দিকে। আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল-

“ধন্যবাদ রুদ্র। সত্যি, আপনার অভিনয়ের প্রশংসা করতে হয়। এই অভিনয়টুকু না করলে মহুয়া কখনো সুখী হতো না।”

আমি আমার সেই আস্বস্তিকরণ হাসিটা দিলাম আবার।

আবীর-মহুয়াদের গাডিটা চলে গেল দূরে, অনেক দূরে……ওরা চলে যেতেই আমার বুকটা হাহাকার করে উঠল, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হলো- “আমি মিথ্যে বলেছি মহুয়া। আমি অফিসের বস নই! আমি টিউশনী করে চলা, পুরনো ঘিঞ্জি মেসে থাকা অকর্মা-বেকার যুবক। যেদিন তোমার বিয়ে হলো, সেদিন আমি ডেনমার্ক যাইনি। আমি সারারাত ছাদে বসে থেকেছি… তোমার কথা ভেবেছি । তোমার ধারণা ঠিক, আমি মানসিক ভাবে আসলেই দুর্বল। আমি ভালো নেই মহুয়া, আমি ভালো নেই!”

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত