দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি

দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি

আমার বরের যখন চাকরি চলে যায় তখন আমি হন্নি হয়ে টিউশনি খুঁজতে শুরু করি।চাকরি যাওয়ার পর থেকে ইফতি কেমন যেনো হয়ে গেছে।আমার সাথে ঠিক করে কথাও বলে না।অথচ বাসা থেকে যেদিন ইফতির সাথে পালাবো বলে ঠিক করেছিলাম,সেদিন থেকেই প্রমিস নিয়েছিলাম খারাপ সময় গুলো দুজন মিলেই মোকাবেলা করবো।

এক কাপ গরম কফি বানিয়ে ইফতির পাশে গিয়ে বসলাম।ইফতির চোখে মুখে হতাশার ছাপ।হাতে হাত রেখে বললাম,আমি তো টিউশনি খুঁজছি পেয়ে যাবো হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই।

ইফতি আমার হাত সরিয়ে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।

কফি নিয়ে আবার ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,এমন কিন্তু কথা ছিলো না।এতোদিন তো তোমার ভরসাতেই ছিলাম।এবার একটু আমার উপর ভরসা রাখো।

ইফতি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে কফি খাওয়ায় মন দিলো।

দুদিন পরে কয়েকটা টিউশনির খোঁজ পেলাম।ইফতিও নতুন চাকরির জন্য অনবরত ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।হতাশা ইফতিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে।

এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর আমার ইন্টারভিউয়ের ডাক পড়লো।টিকেও গেলাম,চাকরিও হলো।কিন্তু ইফতি কেনো জানি খুশি ছিলো না।সেটাও আমি বুঝতাম।বউয়ের টাকায় বর চলবে ব্যাপারটা ইফতি কিছুতেই মানতে পারছে না।

সেদিন সকালে হম্বিতম্বি করে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে রুমে এসে দেখি ইফতি অনবরত কাশছে।কাশির সাথে রক্ত পরছে।জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম।টেস্টের পরে রিপোর্ট বের হলো।

ইফতি আমার হাত দুটো ধরে বলল,আচ্ছা ধরো আমার বড় কোনো অসুখ হলো।আমি মরে গেলাম।তখন তুমি কি করবে?

আমি রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম,এসব কথা না বললেই নয়! আমার সবটুকু আয়ু নিয়ে তুমি দীর্ঘায়ু পাও।

ডক্টর যখন বললেন,ইফতির ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে আমার পায়ের তলা থেকে একটু একটু করে মাটি সরে যাচ্ছিলো।বাসায় ফিরে কেউ কারো সাথে কথা বলছি না।আমার চারপাশ কেমন যেনো অন্ধকার হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে এসব কিছু দুঃস্বপ্ন।ঘুম ভেঙ্গে জাগলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না কিচ্ছু ঠিক হলো না।

ডক্টর যেদিন বলল,ইফতির হাতে আর মাত্র এক মাস সময় আছে।ইফতি আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলো,এবার ছেড়ে দাও আমায়।এই একমাস ট্রিটমেন্ট করেও কি কিছু হবে!! টাকা জোগার করতে হিমসিম খাচ্ছো তুমি যেটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না।

ইফতির কথা পাত্তা না দিয়ে আমি ফোনে এক বড় ভাইয়ের সাথে টাকার ব্যাপারে কথা বলতে লাগলাম।

ইফতি আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো,আচ্ছা এভাবে আর কতদিন ভালোবাসতে পারবে আমাকে?

যত বছর,যত মাস,যত দিন,যত ঘন্টা,যত মিনিট,যত সেকেন্ড তুমি বাঁচবে।

ইতোমধ্যেই বড় ভাইয়ের ফোন এলো। হয়তো টাকার জোগার হয়েছে। আমি তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলাম।

টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে দেখলাম ইফতি সুইসাইড করেছে। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।চারপাশ থেকে কালো আধার আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। ইফতির হাতের মুঠোয় একটা কাগজের টুকরো যাতে লেখা,তুমি মুক্ত আজ থেকে। আমি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না। বিশ্বাস করো নিজের শারীরিক কষ্টের চেয়েও দিগুণ কষ্ট হতো যখন তোমাকে আমার জন্য অসহায়ের মতো মানুষের কাছে হাত পাততে হতো। ভেবে নিও একটা লম্বা দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি হলো।

আজ ইফতির মৃত্যুবার্ষিকি। কবরে ফুল দিয়ে অজানা এক গন্তব্যে হেটে চলেছি আর একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেরাচ্ছি___মুক্তি দিলেই কি মুক্তি পাওয়া যায়!!

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত