চন্দ্রবিন্দু

চন্দ্রবিন্দু

মেয়েটা নিজেকে সুনিপুণ ভাবে সাজাতে ব্যস্ত।টুলের উপরে বসে আয়নার সামনে চোখে কাজল টেনে দেয়,

ভ্রু-যুগলের কুঁচি বাঁকিয়ে দেয় এঁকে।যেনো কোনো অপ্সরী রাজ্যের মায়াবতী।
ছেলেটা নিশ্চুপ ছাদের উপরে বসে পুকুরে পাতি হাসগুলোর সাঁতার দেখছে।ছোট পাখা জোড়া প্রাণীগুলোর মাঝে

কোনো বিষন্নতা নেই।প্রকৃতিকে তারা নতুন ভাবে রাঙায়।
-হ্যালো কি করছো?
-সাঁজতেছি এখন ফোন দিছো কেনো?
-একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো।
-কি বলো?
-তুমি কি ব্যস্ত?বিরক্ত হচ্ছোনা তো?
-না না বলো।
-আজ থেকে তুমি আমাকে কখনো ফোন দিবেনা।
-এটা তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা?
-শুনোনা,আমি কিন্তু তোমাকে বার বার ফোন দিবো।আমার ফোন ধরবে না কিন্তু।
-হুম।
-আমি তোমাকে প্রতিদিন অনেকগুলো মেসেজ পাঠাবো মেসেজগুলো দেখিও না আবার।ইমোশনাল হয়ে পড়বে তখন।
-হুম।
-শুনো,জ্যোছনা রাতে স্বামীর সাথে ছাঁদে বসে চাঁদের দিকে না তাকিয়ে শুধু জ্যোছনাটাই উপভোগ করো কেমন।

তা না হলে চাঁদটা আমি ছিলাম পাশের শুক তারাটা যে তুমি ছিলে এটা দেখে খুব কষ্ট পাবে।
-হুম।
-আর হে,কখনো নদীর পাড়ে হেঁটোনা।নদীর চরের বালুতে লিখা আমার ‘ভালোবাসি’ কথাটা চোখে ভেসে উঠবে।তখন আবার কেঁদে ফেলবে।
-হুম।
-আমি যদি তোমাকে বার বার ফোন দেই।তোমার বর জিজ্ঞেস করলে ‘কে? তুমি বলবে রং নম্বর ফালতু ছেলে।
শুনো আজ তুমি অনেক সেঁজেছো না।চোখে কাজল দিছো বুঝি?কাজল টানলে তোমাকে অনেক মায়াবী লাগে।

মাঝে মাঝে কাজল দিও তোমার বর তোমাকে অনেক ভালোবাসবে।
এই শুনোনা তোমার আব্বু আম্মু অনেক সুন্দর ছেলে পাইছে না।সুখে থাকবে অনেক।তুমি সুখি হও।
তোমার ফোনটা না এখনি বন্ধ করে দাও।তা না হলে আবার তোমাকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবো তোমার ঝামেলা হবে।

আর একটা নতুন সিম কার্ড নিও। আমি তাহলে তোমাকে ফোন দিয়ে পাবোনা। আমি কিন্তু নতুন সিম কার্ডের নম্বরের নেওয়ার জন্যও খোঁজ করবো।

তুমি বরং তোমার নম্বর তোমার পরিচিতো কাউকে দিওনা।ফোন করতে করতে একদিন ঠিক ফোন দেওয়া বন্ধ করবো।আমার জন্য চিন্তা করিও না।

তুমি বলেছিলে না কোনোদিনও ধূমপান করবে না।সত্যি আমি তা করবো না।আমি অসুস্থ হবোনা আর ডাক্তার বলেছে ঠিক মতো ঘুমোতে।

আমি না ঘুমোতে পারিনা।জানো ঘুমোতে গেলেই চোখ দুটো বন্ধ করার সাথে সাথে বাঁকা চোখে কাজল টানা মায়াবতী চলে আসে।

এ কিছুনা কিছুদিন হয়তো অসুস্থ হবো ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি টেনশন করিও না। টেনশন করলে তুমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে।
-হুম।
মেয়েটা অঝরে কাঁদছে।চোখের কাজল মুছে যাচ্ছে।ফোনে আবার কল আসে মেয়েটা কেটে দেয়।

মেসেজ আসতে থাকে একটার পর একটা মেয়েটা মেসেজ সিন করে না।মেসেজ দেখলে যে আর নিজেকে সামলাতে পারবেনা।
নতুন সিম কিনে ব্যবহার করে মেয়েটা।ছেলেটা নিঃস্তব্ধ হয়ে নদীর বালুচরে হাঁটে অন্ধকারে। আকাশে চাঁদের জ্যোছনা।

জ্যোছনার আলোতে ছেলেটা বালুচরে বসে কিছুটা যায়গা জুড়ে চন্দ্রবিন্দু লিখে।…

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত