জানালার পাশে বসে আকাশ দেখার অভ্যাসটা অনুর অনেক আগে থেকেই।
সেই সন্ধ্যা থেকে জানালার পাশে বসে আছে, এমন সময় অনুর মা তার পাশে এসে দাড়ালো….,
→কিরে মা, মন খারাপ নাকি?(অনুর মা)
→কই না তো!(অনু)
→তাহলে একা একা বসে রইলি যে?
→এমনি, কিছু বলবে?
→না, মানে
→বুঝেছি, কাল পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে, তাই তো?
→মারে, এভাবে কেনো বলিস? আমরা তো তুর খারাপ চাই না।
→শুনো মা, আজ কয়েক মাস ধরেই তোমার এই কথাগুলো শুনে আসছি। আমার আর এই সব ভালো লাগে না।
→ছেলে না অনেক ভালো, শহরে চাকরি করে। বিয়ের পর তোকেও শহরে নিয়ে যাবে।
→এই সব আমাকে বলছো কেনো। আর ওরা আমার সম্পর্কে সব জানে তো।
→তোর বাবা বলেছে পরে সব জানাবে।
→ওহ, পরে বুঝি গ্রামের মানুষদের তামাশা দেখানোর জন্য জানাবে?
→না মা,,
→আমি চাই না মিথ্যে দ্বারা কোনো সম্পর্ক শুরু হোক। কারন, তুমি তো জানোই মিথ্যে দ্বারা শুরু হওয়া কোনো সম্পর্ক বেশি দিন টিকে না।
→আচ্ছা ঠিক আছে, তুই যা বলবি তাই হবে। এখন খেতে আয়
→আমার ক্ষুদা নেই, তুমি যাও,এই নিয়ে প্রায় অনেক গুলো বড় বড় ঘর থেকেই অনুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে।
কিন্তু, অনুর সম্পর্কে সব কিছু জানার পর পাত্রপক্ষ নানা বাহানা দিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। তিন বছর আগে একদিন সকালে,,
→বাড়িতে কেউ আছেন?(একজন অচেনা ছেলে অনুর বাড়ির সামনে এসে কারো খুজ করছিলো)
→কাকে চাই?(অনু)
→এটা কি রহমত আলীর বাড়ি?(রহমত আলী-অনুর বাবা)
→হুম,
→অনু মা,, কার সাথে কথা বলিস?(অনুর বাবা)
→তোমাকে একজন খোজ করতেছে।
→আমি অনিক, গ্রামের মাস্টার সাহেব আমাকে পাঠিয়েছেন(অনুর বাবাকে লক্ষ করে বললো)
→ওহ হে, এসো ভিতরে এসো। ওনি আমাকে তোমার কথা বলেছিলো।(অনুর বাবা)
→জ্বী(অনিক)
→ও আমার মেয়ে অনু। তাকেই তোমাকে পড়াতে হবে(অনুকে দেখিয়ে)
→ঠিক আছে।
→অনু মা, তাকে তার ঘরটা দেখিয়ে দে। আমি একটু বাহির থেকে ঘুরেআসি।
→ঠিক আছে।,অনিক অনুকে পড়াতে তাদের বাড়িতে এসেছিলো। কিন্তু আস্তে আস্তেদুই জন দুজনকে ভালোবাসতে শুরু করে।
তাদের ভালোবাসার দিন গুলো খুব ভালোই যাচ্ছিলো। একদিন সকালে,,
→অনিক তোমাকে কিছু বলার ছিলো।(অনু)
→হুম, বলো(অনিক)
→আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি।
→মানে?
→কেনো কি বলেছি শুনতে পাও নি। অনিক আমার না খুব ভয় করতেছে। কেউ যদি জানতে পারে তাহলে,
→যদি আমাদের ধর্ম এক হতো তাহলে তোমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতাম। এখন কি আর করার যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
→কি করবে এখন?
→কি আর করবো, পালাবো। আজ রাতই আমি তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলেযাবো।,ওই দিন রাতে আর তাদের পালানো সম্ভব হয় নি।
কারন, পালানোর সময় গ্রামের লোকেরা তাদের ধরে পেলে এবং অনিককে নির্মম ভাবে মেরে হত্যা করে।
অনু গ্রামের লোকদের তার বাবাকে অনেক অনুরোধ করে তাকে না মারার জন্য, কিন্তু কে শুনে কার কথা।
কিছু দিন পর অনুর পরিবার অনিক আর তার সন্তানের কথা জানতে পারে আর নিজেদেরমান সম্মানের জন্য বাচ্চাটিকে নষ্ট করার জন্য বাধ্য করে।
অনুও নিরূপায় হয়ে তাদের সব কথা মেনে নেয়।.অনু কাপড় পড়ে বড় করে ঘোমটা টেনে পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে।
ছেলের মা একের পর এক অনুকে প্রশ্ন করতে থাকে,অনুও বাধ্য মেয়ের মতো জবাব দিতে থাকে।
এক সময় ছেলে জানায় যে তার অনুকে পছন্দ হয়েছে। কথাটি শুনে অনু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।
না পারাটাই স্বাভাবিক, তার সম্পর্কে সব কিছু জানার পর কেউ যে তাকে বিয়ে করতে চাইবে সেটা ছিলো তার কল্পনার বাহিরে।
খুব ধুমদাম করে রহমত আলী মেয়ের বিয়ে দেয়, একমাত্র মেয়ে বলে কথা। বিয়ের পর অনুর স্বামী তাকে শহরে নিয়ে আসে।
খুব ভালোই যাচ্ছিলো তার ছোট্ট সংসারটি। কেটে যায় কয়েক মাস, অনু এখন অন্ত: সত্ত্বা। একদিন বিকেলে,,
→কি হলো আজ এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলা যে?(অনু)
→আমার বউকে খুব মিস করছিলাম তাই(অনুর স্বামী)
→তাই নাকি?
→হুম, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
→সারপ্রাইজ!!
→হুম, তোমাকে আজ থেকে আর একা একা সময় কাটাতে হবে না
→বুঝলাম না
→রিয়া, আমার বসের মেয়ে। আজ থেকে কিছু দিন আমাদের সাথে থাকবে(দরজার বাহিরে একটি মেয়েকে দেখিয়ে)
→আপনি বাহিরে দাড়িয়ে কেনো ভিতরে আসুন।
→আপনার যদি আমি থাকলে কোন সমস্যা হয় তাহলে বলতে পারেন, আমি কিছু মনে করবো না।(রিয়া)
→আরে কি বলো তুমি? ওর কেনো সমস্যা হবে। তাই না অনু(অনুর স্বামী)
→হুম(অনু),রিয়ার থাকার ব্যাপারটা অনুর কাছে খুব সুবিধার মনে হচ্ছিলো না।
তাই তার স্বামীর কাছে রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ও বলে যে, রিয়া নাকি কোনো বিষয় নিয়ে তার বাবার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে এসেছে।
তাই কিছু দিন এখানে থাকবে, পড়ে চলে যাবে। অনুও বোকার মতো যাচাই করা ছাড়া তার স্বামীর কথা বিশ্বাস করে ফেলে।
যার পরিণাম হিসেবে একদিন রাতে অনু তার স্বামীর সাথে রিয়াকে ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখতে পায়। অনু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।
যাকে সে এতো বিশ্বাস করেছে সে তাকে এভাবে ধোকা দিবে কল্পনা করতে পারে নি।
পরদিন অনু তার স্বামীর কাছে রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সে অনুর উপর হাত ওঠায়। অনু মেঝেতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে পেলে।
জ্ঞান ফিরে সে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো। ডাক্তারের কাছে তার সন্তানের কথা জানতে চায়।
তার সন্তানকে তারা বাঁচাতে পারে নি বলে জানিয়ে দেয়। অনু মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পরেছিলো।
কাউকে কিছু না জানিয়ে অনু হাসপাতাল থেকে চলে আসে। মনের ভেতর হাজারোলুকানো কষ্ট নিয়ে নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছে সে।
এমন সময় পিছন থেকে,,
→অনু….
→অনিক তুমি?(পেছন পিড়ে খুব অবাক হয়ে)
→হুম আমি
→কোথায় ছিলে এতোদিন? (ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে)
→আমিতো সবসময় তোমার সাথেই ছিলাম। তুমি দেখতে পাও নি
→সরি, আমি আমাদের সন্তানকে বাঁচাতে পারি নি…সেও আমাকে ধোকা দিয়েছে
→যাবে আমার সাথে?→কোথায়?
→যদি বলি ওই দূর আকাশে
→যাবো।,অনিকের হাত ধরে অনু নতুন পথের যাত্রা শুরু করে।
চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তারা দুই জন ও তলিয়ে যায় নদীর অতল গহ্বরে…।
বি:দ্র:- অনিক তিন বছর আগেই মারা যায়। ফিরে আসাটা ছিলো অনুর কল্পনা মাত্র।