চোখের জল

চোখের জল

নাইলা কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিলো না । বারবার মনে হচ্ছিলো যে ও রায়হানের সামনে দাড়াতে পারবে না । কোন মুখ নিয়ে দাড়াবে ? সামনে গিয়ে কি বলবে যে শুনো তোমাকে আমার বাবা ঠিক পছন্দ করছে না, তাই তোমাকে আমি বিয়ে করতে পাপরবো না । আমি বাবার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে করে ফেলছি । অবশ্য নাইলার মনে আরেকটা ভয়ও আছে । রায়হান মানুষ হিসাবে খুব রাগি । রেগে গেলে ওর মাথা ঠিক থাকে না । যদিও নাইলার সাথে রায়হান কোন দিন খারাপ ব্যব হার করে নি তবুও এই একটা সম্ভাবনা আছে যে ও নাইলাকে একটা কষে চড় মারতে পারে । নাইলা মনে মনে ঠিক করে নিলো যে যদি একটা চড় মারে সেটা সে খাবে । এটা সম্ভবত ওকে সাহায্য করবে রায়হানকে ভুলতে ।

গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় জায়েদ বলল, আমি আসবো ? জায়েদের দিকে তাকিয়ে একটু দম নিল । তারপর বলল, নাহ ! আসতে হবে না । আমি যাবো আর চলে আসবো ! জিয়া উদ্যানের ঠিক মাথায় গাড়িটা থামিয়ে রেখেছে জায়েদ । নাইলা গাড়ি থেকে বের হয়ে এল । রায়হান কোথায় বসে আছে সেটা ও জানে । মাঝে মাঝেই ওরা এই ক্রিসেন্ট লেকের পাশে এসে বসে গল্প করতো । স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে রায়হান কত গল্প করতো সাথে । \নাইলা হাটতে হাতে এগিয়ে গেল সেদিকে । ঐ তো দেখা যাচ্ছে রায়হানকে ! মাথা নিচু করে বসে আছে । নাইলা জানে রায়হান এখন পানিতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখার চেষ্টা করছে । আগে ওরা দুজন মিলে এই কাজটা করতো ।

নাইলার পা দুটো যেন একটু কাঁপছে । বারবার মনে হচ্ছে ও কিভাবে রায়হানের সামনে যাবে । কি বলবে ? ফোনে যখন রায়হান ওর সাথে দেখা করতে চাইলো ও কিছুতেই মানা করতে পারে নি । না বলতে পারে নি । এখন মনে হচ্ছে যে মোটেই আসাটা ঠিক হয় নি । কিভাবে সে রায়হানের সামনে এসে দাড়াবে ? যখনই মনে হল ওর ঘুরে চলে যাওয়া উচিৎ তখনই রায়হান ওর দিকে মুখ তুলে তাকালো । একটু হাসলো । নাইলা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল রায়হানের দিকে । কাছে যেতেই ওর চোখের দিকে চোখ পড়লো । সেখানে কালো বলিরেখা দেখা যাচ্ছে । নিশ্চিত ভাবে না ঘুমানোরর ফল । ওর জন্য ঘুম চলে গেছে !

-বস !

নাইলা চুপ করে বসলো ওর পাশে । কি বলবে খুজে পেল না । রায়হানের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না । রায়হান বলল, সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ । আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আসবেই না । নাইলা কিছু বলতে পারলো না । কয়েকবার চেষ্টা করলো কিছু বলার । লাইন গুলো গলার কাছে এসে আটকে গেল । মুখ দিয়ে বের হল না । তারপর বলল, বাবার সাথে দেখা হয়েছিলো ? রায়হান হাসলো । তারপর বলল, হ্যা, কাল দেখা হয়েছে ।

-কি বলল?

নাইলা জানে ওর বাবা রাায়হানকে কি বলেছে । রায়হানের জন্য একটা ভাল চাকরি সে জোগার করে দিয়েছে । বেশ ভাল বেতনের । বিনিময়ে নাইলার জীবন থেকে চলে যেতে হবে । নাইলার হ্যান্ডব্যাগের ভেতরে এক হাজার টাকার নোটের মোট ৫টা বান্ডিল রয়েছে । সে নিয়ে এসেছে রায়হানকে দেওয়ারর জন্য । যেন বিয়েতে কিংবা বিয়ের পরে রায়হান যেন কোন সমস্যা সৃষ্টি না করে । হঠাৎ রায়হান নিজের পকেট থেকে একটা খাম বের করে দিয়ে নাইলার হাতে দিল । তারপর বলল, এটা নিয়ে যাও । তোমার বাবাকে দিয়ে দিও । চাকরির আসলে আমার দরজার নেই । নাইলা বলল, এটা বাবা খুশি হয়ে দিয়েছে । রায়হান হাসলো আবার । তারপর বলল, ঐ সব কথা থাকুক । কত সময় বসবে ? নাকি হাতে সময় নেই ।

-জায়েদ গাড়িতে বসে আছে ।
-ও !

রায়হান কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । তারপর বলল, তোমার হাতটা একটু ধরতে দিবে ? আর তো সুযোগ হবে না! নাইলা কথাটা শুনে কেমন যেন পাথর হয়ে গেল , কি তীব্র ভাবে যে কথাটা ও বুকের ভেতরে লাগলো ও বলতে পারবে না । নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিল রায়হানের দিকে । রাহয়ান খুব আলতো ভাবে হাতটা স্পর্শ করলো । কিছু সময় ধরেই থাকলো । তারপর একটু পর অনুভব করলো ওর হাতের তালুর উপর একফোটা চোখের জল পড়লো । নাইলা সেদিকে কেবল তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । ওর মাথার ভেতরে কাজ করা বন্ধ করে দিল কিছু সময় । রায়হানের এই দিকটা ওর চোখে পড়ে নি কোন দিন । একটা ছেলে ওর জন্য চোখের পানি ফেলছে । পৃথিবীর শুদ্ধতম ভালবাসা বুঝি এই চোখের জল দিয়েই প্রকাশ পায় । নাইলার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হল না । রায়হান হাত ছেড়ে দিতেই ও উঠে দাড়ালো । একটা কথাও বলল না । গাড়ির দিকে হাটা দিল । গাড়িতে গিয়ে যখন বসলো তখন পাশ থেকে জায়েদ বলল, কি হয়েছে ? কিছু বলেছে ।

-নাহ !

নাইলা নিজের হাতুর তালুতে সেই চোখের জলটা ধরেই রেখেছে । এক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে ওটার দিকে । যখনই গাড়িটা সিগনাল ছেড়ে ফার্মগেটের দিকে যেতে লাগলো তখনই নাইলার কি হল ও বলতে পারবে না । জায়েদকে বলল, গাড়ি থামাও !

-মানে ?
-বললাম গাড়ি থামাও ।
-কেন ? নাইয়া এবার জায়েদের দিকে তাকিয়ে বলল, কারন হচ্ছে আমি আমি তোমাকে বিয়ে করবো না । গাড়ি থামাও ।
-নাইলা পাগলামো করো না । আমরা আগে এখান থেকে যাই তারপর কথা বলি !
-তুমি গাড়ি থামাবে কি না বল ?
-না থামাবো না ।
-আমি চিৎকার করবো ।
-পারলে কর ! শোনো চুপ চাপ বসে থাকো । তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাচ্ছি আমি ।

জায়েদ ভেবেছিলো নাইলা এমনিই কথা গুলো বলছে । কিন্তু যখন সত্যিই সত্যি ও চিৎকার করতে শুরু করলো ও অবাক হয়ে গেল । কি করবে বুঝতেই পারলো না । সব থেকে ঝামেলা বাঁধলো যখন গাড়িটা সিগনালে এসে থামলো । একজন ট্রাফিক পুলিস এগিয়ে ওদের দিকে । জায়েদের মনে হল ওর এখনই পালাতে হবে ব্যক গিয়ারে গাড়ি ঘোরাতে গিয়েই পেছনের গাড়ির সাথে ধাক্কা মেরে দিল । পুলিশ এসে দরজা খুলে নাইলাকে বের করলো । নাইলা পুলিশের কাছে বলল, এই মানুষটা আমাকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করছিলো ! প্লিজ হেল্প ।

আর যাবে কোথায় । সাথে সাথে জায়গাতে জটলা পেঁকে গেল। নাইলা এই সুযোগটাই খুজছিলো । সবার চোখ যেখানে জায়েদের দিকে । ও সুযোগ বুঝে আবারও পেছন দিকে হাটা দিল । তারপর এক সময় দৌড়াতে শুরু করলো । ওর কেবল মনে হল যতদ্রুত সম্ভব ওর এখন রায়হানের কাছে পৌছাতে হবে । রায়হানের চোখের জল নিশ্চয়ই এখন মাটিতে পড়ছে । এতো মূল্যবাড চোখের জল ও কোন ভাবেই মাটিতে পরতে দিবে না । কোন ভাবেই না । ওর রায়হানের কাছে পৌছাতেই হবে ।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত