রিক্সা চালক

রিক্সা চালক

-এই রিক্সা কুমাড়শীল মোড় যাবে –
হুমম,যাব -চল.. . আমার রিক্সাতে একজন
প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে ওঠল। কুমাড়শীল
মোড়ে ওনাকে পৌঁছিয়ে বললাম, –
আফা নামেন কুমাড়শীল মোড় আইসা
পড়ছি -এই যে ভাড়াটা নেন যখন ভাড়াটা মেয়েটির হাত থেকে নিতে যাব,তখনি একটা বড় ধরণের শক
খেলাম। আরে এ তো আশা।যাকে আমি ভালোবাসতাম।কিন্তু আশাকে কখনো ভালোবাসার কথা বলা হয়ে
ওঠে নি।আশা আমাকে একজন রিক্সার ড্রাইভার দেখে চমকে ওঠল।আশা আমাকে কিছু বলতে গিয়ে বলতে
পারল না।কারণ আমি সাথে সাথে সেখান থেকে ভাড়া না নিয়ে চলে আসি। আমাকে আশা ডাকতেছে।
কিন্তু একবারের জন্যও পিছনের দিকে ফিরে তাকাই নি। চলে আসলাম সেখান থেকে। . আমি জুবায়ের।
বর্তমানে আমি আমার বন্ধুদের সাথে কলেজে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার কি ভাগ্য,আজ আমি একজন রিক্সা
চালক।এই শহরে থেকে পেটের দায়ে রিক্সা চালাই।কেন আমারএমন হলো। আজও পর্যন্ত কেউ জানতে চাই নি।

তাহলে আপনারাই শুনেন আমার অতিতের সব কথা। . ৫ বছর আগে……. . আমাদের পরিবারে মা-বাবা,আমার
এক বড় ভাই,আমি আর আমার বড়এক বোন। পাঁচ জনই আমাদের পরিবারের সদস্যসংখ্যা।খুব সুখি ছিলামআমরা।বড়
বোনকে বিয়ে দিয়ে দিছে।আর আমি সবে মাত্র ক্লাস নবম শ্রেণীতে পড়ি। বড় ভাই একটা ব্যাবসা করে।আর বাবা
একটা বেসরকারি চাকরি করে, যার বেতন ২০,০০০ হাজার।আনন্দে দিনকাল কাটছিল আমাদের।কিন্তু বাবা হঠাৎ
হার্ট এট্যাকে মারা যায়।নেমে আসে আমাদের পরিবারে দুর্গতি। এদিকে আমি আবার একটা মেয়েকে
পছন্দ করতাম।তার নাম হলো আশা।আমার সাথেই পড়ে।আমি আশাকে অনেক ভালোবাসি।কিন্তু আশাকে
ভালোবাসার কথা বলতে পারতেছি না।আমি জানি আশাও আমাকে ভালোবাসে।তার চাল- চলনে, কথা-
বার্তায় বুঝা যায়। যাই হোক পরিবারের এমন অবস্থা হওয়াতে আমি আর সেদিকে বাড়ি নাই।পরিবার
কোনো রকমে চলতেছে।সবার মনে অনেক কষ্ট।বাবা আমাদের কে এভাবে একা ফেলে চলে যাবে
আমরা তা কখনো ভাবি নি। আমি বাবাকে অনেক ভালােবাসতাম। বাব াও আ।আমাকে অনেক

ভালোবাসত।আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা।বাবা আমাদেরকে এভাবে ফেলে চলে গেছে। . এদিকে আমার
ভাইয়ে কোনো এক মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।বাবা না থাকাতে এমন সাহস ভাইয়ের
হয়েছে। বাবা থাকলে তা কখনো হতো না।মাও ভেঙ্গে পড়েছে,বাবার এমন মৃত্যুতে।আর বড় আপু বাবা মারা
যাওয়ার দিন এসেছিল,আর আসে নাই। মা ভাইয়ের এমন কান্ড দেখে আরো বেশি ভেঙ্গে পড়েছে।ভাইয়ের বউ
মা কে কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারে না। ওঠতে বসতে নানা ধরণের কথা মাকে শুনাই।আমাদেরকি থেকে
কি হয়ে গেল। বুঝতেই পারতেছি না। এদিকে মা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল।ঠিক মতো ঔষধ-পানি কিছুই খেতে পারে
না। ভাইয়েও সব ঔষধ কিনে এনে দেয় না। . এভাবেচলতে চলতে মা ও একদিন
আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায়, না ফেরার দেশে।তখন নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। জানি পৃথিবীতে আপন
বলতে কেউ আর রইল না।সবাই এক এক করে চলে যাচ্ছে আমাকে ফেলে।মা- বাবার এমন আকস্মিত মৃত্যুতে আমিও

ভেঙ্গে পড়লাম।খাওয়া দাওয়া সব কিছু ছেড়ে দিলাম।অনেক কষ্টে জীবন চলতেছে।এদিকে ভাইয়ের বউ এর
অনেক কটু কথা শুনতে হয় আমাকে।পড়া লেখারও কোনো খবর নেই।কি করব বুঝে ওঠতে পারতেছি না।সব কিছু হারিয়ে
আমি আজ নিঃস্ব।না এভাবে আর থাকা যায় না।এখন আমি আবার স্কুলে যাব। . স্কুলে গেলাম।সবাই আমার
দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি হলো তাদের। আমাকে আবার দেখার কি হলো।এক এক করে সব বন্ধুরা আমার কাছে আসল।সবাই
শান্তনাদিতেছে।হঠাৎ চেয়ে দেখিআশাও আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে।কিছু বলবে জানি।আমি কোনো কিছু না শুনে ক্লাসে চলে
গেলাম।জানতে পারলাম যেসামনে মাসের এক তারিখ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা।আমার সব কিছুর টাকা মিলে
৪৪৭০ টাকা হয়েছে।আশা আমার সাথে কথা বলার জন্যও চাইতেছে। আমি না শুনে,ক্লাস শেষ করে
বাড়িতে চলে আসি। সন্ধায় ভাইয়াকে যখন ৪৪৭০ টাকার কথা বললাম।ভাইয়া আমাকে বলল…… . –তকে
আর পড়তে হবে না।পড়ে কি করবি। বাবা তো মরে গিয়ে তকে আমার কাধে রেখে গেছে।যত্তসবঝামেলা।
তর জন্যও একটা টাকাও রেখে যায় নি যে তকে লেখা পড়া করাব।যা কালকে থেকে কাজে লেগে যাবি।
আর পড়তে হবে না।এখন থেকে কাজ করে খা,একদিন তো পড়ের ওপর খাইছত টের পাও নি।শুন তরে বলি বাবা মারা
যাওয়ার আহে সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে গেছে।আর যা টাকা ছিল, সব টাকা দিয়ে বাবার ঋণ সুদ করছি।আর
যা কিছু রেখে গেছে এগুলোর ভাগ তকে নিতে হবে না। আমিই সব কিছু ভোগ করব।এখন এখান থেকে যা।যাছ না
কেরে,যাইতে বলছি। -ভাইয়া আমি লেখা পড়া করব(আমি) -ঠাসসস,কি বললি তুই,লেখা পড়া করবি। একটা
রোজগাড় করার ক্ষমতা নাি যার সে নাকি লেখা পড়া করব। যা যা কালকে থেকে কাজ করে খাবি।

সাথে ভাইয়ের বউও আমাকে অনেক কথা বলল।চোখ থেকে তখন শুধু পানি ঝড়তেছে। কিছু বলার ক্ষমতা আমার
নেই।কোনো কিছুর ভাগ আমি পাব না। জানি আমার আপন কলতে যারা ছিল, তারাও এখন পর হয়ে গেল।আমার আর
পড়া লেখা হলো না।অনেক স্বপ্ন ছিল আমার।আমার মা-বাবারও অামাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল।সব কিছু আজ
শেষ হয়ে গেছে। আমি কি করব কিছুই ভাবতে পারতেছি না। . পরের দিন বাড়িত থেকে চলে আসি।কাউকে
কিছু না বলেই।আপন বলতে কেউ আর রইলা না।চলে আসলাম।অচেনা এক শহরে। যেখানে কেউ কাউকে চিনে
না।কেউ কারো আপন না। অনেক কষ্ট করে যখন কোনো কাজ পেলাম না।তখন এক চাচার সাহায্যে হয়ে গেলাম
রিক্সা চালক। হয়ে গেল পাঁচটি বছর।এই রিক্সা চালিয়ে অনেক শান্তিতে আছি। এই তো আশার কাছ থেকে
ভাড়া না নিয়ে চলে আসলাম। হয়তো আশা কি যে ভাবতেছে।আমার এই অবস্থা কেন।এগুলো যেন ভাবতেছে।
যাক গে আমার কিছু করার নেই। . কোনো একদিন আবার আশার সাথে দেখা হলো।তখন আশার কাছ থেকে
ছুটতে পারে নি। -তোমার কি হয়েছে
জুবায়ের (আশা) -সেগুলো তুমি শুনে
কি করবে (আমি) -তোমাকে আমি অনেক খুঁজেছি,কোথাও তোমাকে পাই নি।কোথাই
গিয়েছিলে আমাদেরকে ফেলে।কি হয়েছিল তোমার। বলো… তারপর আমি সব কিছু খুলে বললাম।যা শুনার জন্য
অাশাও প্রস্থুত ছিল না। আর হ্যা আশাদের পরিবার ৪ বছর হয়েছে তারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে এসেছে।আশা
আমাকে অনেক বুঝিয়েছে।তাদের সাথে থাকতে।কিন্তু তা কোনো ভাবেই হয় না। কারণ আমি একজন
রিক্সা চালক।আর আশা কোথাই। যাকগে সে কথা। আশার সাথে আমাকে যায় না।আমি আশাকে অনেক
বুঝিয়ে চলে আসি। . কোনো কিছু করার নেই।এটাই মেনে নিতে হবে। জানি না আর কখনো আশার সাথে
দেখা হবে কি না।হয়তো এই শহর ছেড়ে চলে যাব,অন্য কোনো শহরে।ভালো
থেকো মা- বাবা।ভালো থেকো ভাই এবং আপু।ভালো থেকো তুমিও আশা।আর ভালো থেকো পাঠক- পাঠিকারা। .

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত