সিমেন্টের বেড

সিমেন্টের বেড

পৃথিবীতে চলার পথে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়। তেমনি আমারো একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। পরিচয় থেকে সেটা একটা সম্পর্কে পরিনত হয়। যে সম্পর্কটা করার আগে আমার ভাবা উচিৎ ছিলো যে মেয়েটা হিন্দু পরিবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আমি সেটা না ভেবেই আবেগের বসে তাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সেও আমাকে অনেক ভালোবেসেছে, আমার জন্য তার পরিবারের অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। আমার এখনো মনে আছে আমি স্কুলে পরি দেখি সেই স্কুলে টানা একবছর তাকে আসতে দেয়নি, কিন্তু তখনো সে আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছিলো। সে আমার চেয়ে এক বছরের জুনিয়র ছিলো, আমি এস এস সি পাশ করি তারপর তাকে তার বাবা স্কুল আসতে দেয়। দেখতে দেখতে ওর আর আমার সম্পর্কটা তিন বছর হয়ে গেছিলো।

দুজন দুজনকে এতটা ভালোবেসেছিলাম যে একজন আর একজনকে ছাঁড়া বাঁচতে পারব না। আমি কলেজে ভর্তি হলাম সে দশম শ্রেণীতে ক্লাস করলো, এস এস সি পাশ করলো আমিও দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম, তখন প্রায় প্রতিদিনেই আমার তার সাথে কথা হয়। তার সাথে কথা না বললে যেন আমার ভালো লাগেই না। সেও সবসময় কথা বলার জন্য পাগল হয়ে থাকতো। কারণ ভালোবাসাটা যে একটা গভীর সম্পর্কে পরিনত হয়েছে সেটা সে ভালো করেই জানতো।

একদিন সকাল বেলা ঠিক ১১টার সময় তার সাথে মোবাইলে কথা বলছিলাম। হঠাৎ করেই ফোনটা কেটে গেলো। আমি কিছু বুঝলাম না একটুপর আবার ফোন দিলাম। তখন ফোনটা বন্ধ দেখালো। মাথাটা এক নিমিশের মধ্যে খারাপ হয়ে গেলো। প্রায় ১৫ মিনিট পর অন্য একটা ফোন থেকে মেসেজ আসলো যে আমি ধরা খেয়েছি আজকে হয়ত বাবা আমাকে মেরেই ফেলবে। তখন আমি তাকে ফোন দিলাম, সে সব কিছু আমাকে খুলে বললো। তার সাথে যেই ফোনটা দিয়ে আমি কথা বলতাম সেটা তার বাবা দেখা পেয়ে কেরে নিয়েছে এবং তাকে মেরেছে। এগুলা বলেই সে ফোনটা কেটে দিলো।

তখন আমায় এতটা খারাপ লেগেছিলো যা বলে বোঝাতে পারব না। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি আমি তাকে আমার জীবন থেকে হারিয়ে ফেললাম। সেদিন রাদে ভালো করে ঘুমাতে পারিনাই। দেখতে দেখতে চার দিন পর সে আবার আমাকে ফোন দিলো আর বললো, আমি তোকে ছাঁড়া বাঁচবনা যে করেই হোক একটা ফোন পাঠিয়ে দাও। কথা না বলে আমি থাকতে পারব না। বাবা আমায় কথা বলেনা সবসময় খারাপ ভাষায় কথা বলে। আমি বললাম আমি কারো দারায় ফোনটা পাঠিয়ে দিব। তরিঘরি করে একটা ফোর জোগার করলাম, কিন্তু কার দারায় তাকে ফোনটা পাঠিয়ে দিব সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না। ফোন পাঠিয়ে দেওয়া আর হলো না। আমি ভালোবাসার কষ্টের পাহার বাস করতে শুরু করলাম। যত দিন যায় যন্ত্রনার মাত্রাটা বেশি হয়। তখন বুঝেছিলাম ভালোবাসায় কষ্ট কাকে বলে। দেখতো দেখতে একমাস গেলো দুই মাস গেলো তবু তার সাথে আমি যোগাযোগ করতে পারলাম না। একজনের কাছ থেকে শুনেছি তাকে নাকি চাপের মধ্যে রেখেছে বাড়ি থেকেও বের হতে দেয় না। এমন সময় কি করব সেটা ভাবার কোন কুল কিনারা খুজে পেলাম না। শুধু রাত হলে বিছানায় মুখ লাগিয়ে দিয়ে অঝড়ে চোখ দিয়ে জল পরত। কাঁদাটাই যেন আমার নিত্য দিনের সাথী হয়েছিলো।

তাকে যে আমার খুব মনে পরছিলো তাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করতেছিলো। কষ্টটা আমি সহ্য করতে পারতেছিলাম না। মনে হচ্ছিলো বুঁকের বা পাশে কে যেন সবসবময় নির্দয়ের মত হানতেছে। আর আমি ব্যাথাতে কেঁদে উঠতেছে। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। আমার কষ্ট সহ্য না করতে পেরে, একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে আমি আর বেঁচে থাকব না আত্নহত্যা করব। কারণ তাকে ছাঁড়া আমার বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না।

একটা মানুষ তখনোই আত্নহত্যা করার কথা চিন্তা করে যখন তার কাছে পৃথিবীর সবকিছুই অসজ্ব লাগে। আর নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। হয়ত আমিও বিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলেছিলাম।

আত্নহত্যা করার কথাটা শুধু বারবার মাথায় ঘুড়তে লাগলো। যখনি তার স্বৃতীগুলো মনে পড়তেছিলো তখনি মন বলতেছিলো এখনে মরব এভাবে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তখন বাজার গিয়ে বিষ কিনে আনলাম। বাড়ি এসে ঘরে বিষের খাপাটা খুলতে গন্ধ লাগলো, তখন বুঝলাম খালি গন্ধতে খেতে পারবনা কিছু দিয়ে খেতে হবে। তখন বাড়ির পাশের দোকান থেকে একটা জুস কিনে আনলাম, জুস নিয়ে ঘরে এসে মোবাইলে তার ফটোটা দেখে কেঁদে কেঁদে বিষের সাথে জুস মিশিয়ে খেয়ে ফেললাম।

বিষ খাওয়া কিছুক্ষণ পর আমার খুব খারাপ লাগছিলো বুঁকটা কেমন কেমন করতেছিলো মনে হচ্ছিলো আমার দেহ থেকে আমার প্রানটা বেড় হয়ে যাচ্ছে। তখন মনটা বললো এভাবে মরা যাবে না, আমায় বেঁচে থাকতে হবে। তাকে নিজের বউ বানাতে হলে আমার বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরী। তখন ঘর থেকে ছুটে গেলাম মায়ের ঘরে। মা ঘুমিয়ে ছিলো মাকে ডাকলাম আর বললাম মা আমি মরে যাব আমি বিষ খেয়েছি। তখন মা চিৎকার করে বাবাকে ডাকতেছিলো কিন্তু বাবা বাজারে ছিলো। মায়ের চিৎকার শুনে আমাদের বাড়িটা মানুষের ভিড়ে জমে গেলো, একটে দাদা দৌরে এসে আমাকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বাইরে নিয়ে গেলো, যত সময় হচ্ছিলো আর ততো আমি নিস্তেজ হয়ে পড়তেছিলাম, গায়ে কোন প্রকার শক্তি ছিলো না। বাইরে আমার চাচা মটর সাইকেল নিয়ে দারিয়ে ছিলো। দাদা আমাকে মটরসাইকেলে চরিয়ে দুজন মিলে আমাকে ধরে সৈয়দপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলো।

যাওয়ার সময় রাস্তায় আমি আরো নিস্তেজ হয়ে পরলাম। বিষের রিয়াকশনটা বাড়তে শুরু করলো এবং আমার মুখটা কাপতেছিলো। প্রায় ২০ মিনিট পর আমায় সৈয়দপুর ১০০শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলো। হাসপাতাল গিয়েই ডাক্তার আমার মুখটা দেখে বললো এই ছেলেকে ওয়াশ করতে হবে নাহলে বাঁচানো সম্ভব না। তখন আমার দাদা ও চাচা নিচতলার একেবারে শেষের রুমটায় নিয়ে গেলো। তখন একটা বৃদ্ধ বয়সের মানুষ আসলো, তিনি নাকি বিষ খাওয়া রোগীদের ওয়াশ করেন। রুমটার ভিতরে ডুগেই দেখতে পেলাম একটা সিমেন্টের বেড আর বেডের দুই মাথায় চারটা রডের শিকল লাগানো আছে আর প্রত্যেকটাতে একটা করে দরি লাগানো ছিলো।

আমি সিমেন্টের বেড দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম যে আমায় ওখানে শুইয়ে হাত পা বাধবে। বৃদ্ধ লোকটা আমায় সিমেন্টের বেডে চিৎ হয়ে শুয়ে রাখলো তারপর আমায় বললো বাবা একটু কষ্ট হবে তাহলে ভালো হয়ে যাবি। বেঁচে থাকতে চাইলে একটু কষ্ট সহ্য কর। তার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে অঝড়ে জল পরতে লাগলো। তারপর তিনি দাদা ও চাচাকে আমার হাত পা বাধতে বললেন। দাদা ও চাচা আমার হাত পা খুবই টাইট করে বাধলেন। বৃদ্ধ লোকটা দাদাকে বললেন ও কিন্তু লাফিয়ে উঠার চেষ্টা করবে আপনারা ওকে ঠেসে ধরবেন। তখন ওরা আমাকে ঠেসে ধরলো।

ওই সময়ে আমার গরু জবাই করার কথা মনে পরলো। গরু জবাই করার সময় গরুর হাত পা বাধে যেন লাফাতে না পারে। আমার মন বলছিলো হয়ত আজ ওয়াশ করতে যন্ত্রনাতে আমার দেহের প্রানটা বের হয়ে যাবে। তখন বৃদ্ধ লোকটা আমাকে হা করতে বললো হা করতেই একটা লোহার এঙ্গেল আমার মুখে লাগিয়ে দিলো। এঙ্গেলটা এমন করে লাগানো ছিলো আমি মুখ বন্ধ করতে পারতেছিলাম না। এঙ্গেলের মাঝ বরাবর একটা গোল ফুটো দিয়ে একটা প্লাস্টিকের পাইপ আমার মুখে ডুগিয়ে দিলো। পাইপাটা ঠেলতে ঠেলতে আমার পেটের ভিতর চলে গেলো। তখন আমি চিৎকার করতে লাগলাম আর হাত পা নরানরি করতে লাগলাম। কারণ এতটা কষ্ট হয়েছিলো যা কেউ বুঝবে না।

আমি যন্ত্রনায় নরানরি করতেছি আর সিমেন্টের বেডটা ঠাকাস ঠাকাস করে লাগতেছে। দাদা আর আংকেল আমায় ঠেসে ধরার চেষ্টা করতেছে, কিন্তু তারা আমায় আটকাতে পারতেছে না। তখন বৃদ্ধ লোকটা পাইপাটার মুখ পাশে থাকা টেপে লাগিয়ে দিলো।টেপের পানি গুলো যখন আমার ভিতরে যাচ্ছিলো আমি গলাকাটা গরুর মত হাহাহা করে চিৎকার করতেছিলাম। মনে হচ্ছিলো এখনেই মরে যাচ্ছি। মুখ থেকে পাইপটা বের করার চেষ্টা করতেছিলাম কিন্তু আমার হাতপা রডের সাথে বাধানো ছিলো, খুব জোরে জোরে চিৎকার করতেছিলাম আর কাঁদতেছিলাম। এদিকে বৃদ্ধ লোকটা পাইপ দিয়ে ডুগিয়ে পাইপটা একটু চেপে ধরছে তখন পেটের ভিতর থেকে বিষ আর পানিগুলো বমি হয়ে গলগল করে বের হচ্ছে।

আমি চিৎকার করতেছিলাম আমার লাগতেছে কিন্তু মুখে পাইপ থাকার কারণে আমার কথাগুলো স্পস্ট হচ্ছিলোনা। যতই নরানরি করছিলাম ততই আংকেল আর চাচা আমায় ঠেসে ধরছিলো। তখন আমি কাত হয়ে পাইপটা বের করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তারা এমন ভাবে ঠেসে ধরছিলো যে আমি পারছিলাম। প্রচুর কষ্ট আর যন্ত্রনায় বার বার শুধু চিৎকার করতেছিলাম।কিন্তু আমার চিৎকার না শুনে তারা ওয়াশ করা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো।

তখন মনটা বলেছিলো কেন বিষ খাওয়ার সাথে সাথে আমি মরে গেলাম না। এই ওয়াশ করাটা যে আমায় ধুকে ধুকে যন্ত্রনা দিয়ে মেরে ফেলছে। প্রায় আধা ঘন্টার মত আমাকে ওয়াশ করেছে। ওয়াশ করার সময় প্রত্যেকটা সেকেন্ডের জন্য শুধু মনটা বলতেছিলো খোদা আমার প্রানটা বের করে নাও। আমার এই যন্ত্রনা যে সহ্য হচ্ছে না। ওয়াশ করা শেষ হলো আমার মুখ থেকে পাইপটা বের করলো তখন একটু ভালো লাগছিলো। দাদা আর আংকেল ঠেসে ধরেছিলো তখন আমার ঠোটটা এঙ্গেলটায় লেগে ফুলে যায়। আর হাত পা গুলো দরির বাধনে ছটফট করার সময় লাল টকটকে হয়ে গেছিলো। আমার হাত পায়ের বাধন খুলে দিলো। তখন আমার গায়ে এক ফোটা শক্তিও ছিলো না। সিমেন্টের বেডটা থেকে উটতে পারছিলাম না। দাদা আমায় উঠিয়ে বাথরুমে নিয়ে গোসল করে দেয়।

তারপর ওখান থেকে স্টেকচারে করে আমায় চারতলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের ১২ নং বেডে রেখে আসে তারপর ডাক্তার এসে আমায় ইনজেকশন দেয় স্যালাইন লাগায়। প্রায় চারদিন হাসপাতালে থাকার পর আমি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি।

ওয়াশ করার যন্ত্রনাটা শুধু সেই বুঝে যে ওই সিমেন্টের বেডটাতে একবার শুয়ে ওয়াশ হয়েছিলো। একটা কথা সচারচর শুনেছিলাম। বিষ খেয়ে মরা ভালো, তবু বেঁচে থাকা ভালো না। হ্যা কথাটা একেবারেই সত্যি কারণ ওয়াশ করার মত মৃত্যুর যন্ত্রনা এত কষ্টের যা বলে বোঝানা সম্ভব না। মানুষ যেন বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করার চেষ্টা না করে। কারণ বেঁচে গেলেই ওয়াশ রুমের যন্ত্রনাটা তার আজীবন মনে থাকবে। আমার যখনি সিমেন্টের বেডের কথা মনে পরে গাটা থমকে উঠে চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসে কারণ আমি যে কষ্টটা পাইছি ওই কষ্ট মরার আগ পর্যন্ত মনে থাকবে। ভালোবাসা করার আগে সবকিছুই ভাবতে হয় নাহলে নিজের সুন্দর জীবনটা যন্ত্রনায় তসনস হয়ে যায়।

সমাপ্ত—–

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত